সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

ডিসেম্বর, ২০২২ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

ভোররাতে শিশির ভেজা পথে!

 শিশির ছড়ানো পথ বড় কোমল এক রূপোলী চিত্রপট, অপাপবিদ্ধ তৃণ দল পরম যতনে ধরে রাখে সে রূপোর উষ্ণীষ। রাতের অন্ধকারে শ্বাপদ জন্তু দের থেকে বাঁচিয়ে রাখে তাদের অক্ষত কৌমার্য। কেউ আসবে ভোররাতে, বড় আকাঙ্খিত। তখনো অপাদবিদ্ধ শিশির ভেজা সেই পথে রেখে যাবে তার প্রথম পায়ের চিহ্ন।    হৃদয়ের হাওয়ায় ছড়িয়ে থাকা আর্দ্রতা শীতের রাতে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে হতে চায় সম্পৃক্ত। সে সম্পৃক্ততা এক সময় সকল সহন সীমা ছাড়িয়ে স্খলনের অভিলাষে হয়ে পড়ে উন্মুখ। এবং অবশেষে সে  নিদারুন পতন ঘটে ঘনীভূত আবেগের; ভোররাতের পথে, পথে পাতানো তৃণ শয্যায় ছড়িয়ে পড়ে রজত শুভ্র শিশিরের কণা।    ভোররাতের শিশির ধোয়া পথ রাতের ক্লেদ মুক্ত ঝরঝরে, নবারুনের নরম আলোয় শুচিশুদ্ধ। পথের পাশে শিউলি গাছ সে পথে অবলীলায় ঝরিয়ে দেয় কমলা বৃন্তের সাদা ফুল। এমন সিক্ত পথের বুকে মধুর পেলবতা মাড়িয়ে যেতে যে বড় বাধে।  অনেক কাল আগে, মুনিঋষিরা আদুল পায়ে ভোররাতের শিশির ঝরা পথে  হেঁটে যেতেন নদীর ঘাটের দিকে। দূর্বা ঘাসের শিশির শুদ্ধ গালিচায় সেই সকল পরম পুরুষদের দৃপ্ত পদচারনা আজ রূপকথা।  বর্তমান যারা এ পথের পথিক, তারা কেউ ক...

তালবাগান ও তালবাগানের পথ এবং আমি!

তালবাগানের যে কুহকী ছবি তার টুকরো টুকরো অস্তিত্ব নিয়ে কোন এক দুরূহ কারণে পুনরায় মনের বায়স্কোপে ফুটে উঠতে চায় তা বেশ রোমাঞ্চের। তালবাগানের সেই মন কেমন করা ক্যানভাসে তাল পাতার খড় খড়,  ভাদ্র মাসে পাকা তালের  ভূপতিত হওয়ার ঢপ্পা-নিনাদ - নির্মাণ করে অদ্ভুত এক স্মৃতি মথলে উঠে আসা পরমান্নের মত আবহ প্রেক্ষিত, যেন মায়াবী ঝাঁপতালে সন্তুর-ফনকারী।      যেখানে, প্রকাণ্ড এক দীঘির পাড়ে গুটিকয় ঢ্যাঙা তালগাছ, প্রখর ভাবে ঋজুরেখ হয়েও ঢলে ঢলে পড়ে কারনে-অকারনে, শুকনো তালপাতার হাওয়ায় শালিখেরা খানিক আমোদ-উড়ানে গা ভাসায়, আর গাছগুলির গোড়ায় দড়ির মত কালো কালো শক্ত শেকড় বেয়ে ওঠা রাবণ লতার ঝোপ আর তাদের মাঝে মুথা ঘাসের মখমলি জমি যেন এক একটি সবুজ উপত্যকা সঙ্গে ইতি উতি ফুটে থাকা উড়ে এসে জুড়ে বসা হলুদাভ বেগুনি ফুল, সেখানে ব্যস্ত মন কোন বাদ-বিচার ছাড়াই এক পলকের জন্য হলেও বিফল অতীতে হারিয়ে যাওয়া মিষ্টি উদাসীনতায় হয়ে যায় বিকল-বিবশ, তাই সে তালবাগান এবং তালবাগানের পথ বড়ই জাদুময়।                              ...

দূরের পথিক কিশোর কুমার

  "সে যে পথিক, হৃদয়পথের পথিক"। ১৯২৯ এর ৪ ঠা আগস্ট মধ্যপ্রদেশের খানডোয়ায় শুরু হয়েছিলো সে পথিকের পথ চলা, ৫৮ বছর পরে ১৯৮৭ এর ১৩ ই অক্টোবর মুম্বাই এর গৌরী কুঞ্জে খানিকটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই ছেদ পড়ে সে যাত্রাপথে। ৫৮ বছরের এই জীবন এবং তার যাত্রাপথ ছুঁয়ে গেছে বহু পথ, বহু পথকে দিয়েছে নতুন দিকচিহ্ন, বহু পথ পেয়েছে নতুন দিশা, বহু পথের ফলকে লেখা হয়েছে নতুন নাম কিশোর কুমার। হ্যাঁ, কিশোর কুমার আসলে ছিলেন বহু পথের পথিক।  দূরের পথিক কিশোর কুমার।   কিশোর কুমার যে আসলে কি ছিলেন, তা এক কথায় বলে বোঝানো মুশকিল।  সঙ্গীত শিল্পী কিশোর কুমার, রুপোলী পর্দার  হিরো কিশোর কুমার, সুরকার কিশোর কুমার, গীতিকার কিশোর কুমার, চিত্র পরিচালক, চিত্র প্রযোজক কিশোর কুমার! প্রত্যেকটি সত্তাই তাদের স্ব-স্ব ক্ষেত্রে রেখে গেছে  অনপনেয় ছাপ; নিজ নিজ ক্ষেত্রে স্বকীয়তায় স্বমহিম উজ্জ্বলতা। কিন্তু দিনের শেষে এরা সবাই যে পথে  এসে মিলিত হয় সে পথ মানুষের স্মৃতির স্মরণিকায় চির অমর এক সরণি;  যুগের পর যুগ ধরে অক্ষয় এবং অমোঘ তার অস্তিত্ব, তিনি কিশোর কুমার।   পথিকের যেমন পথ চলাতেই আনন্দ। কিশো...

পথ বাতিঃ তোমার আলোয় এ পথ মায়ারুন!

 পথ বাতি, তুমি পথের সাঁঝবাতি, আঁধারের গোপনীয়তা ভেঙ্গে জ্বলে ওঠা দৃষ্টিপ্রদীপ; তোমার এ হেন শ্যেন আলোকপাতে আঁধার গুলো যেন সদ্য গোঁফ ওঠা চ্যাংড়া ইভটিজার - পিছু হঠতে হঠতে চোখের নীচে পড়া কালির মত জমতে থাকে বাতি স্তম্ভের নীচে। গুটি সুটি মেরে অপেক্ষা করে যতক্ষণ না পর্যন্ত ভোরের আলো ফোটে এবং তুমি তোমার প্রাসঙ্গিকতা হারাও। প্রভাতে, পথ বাতি যেন অতীতের কোন গৌরবজনক অধ্যায়ের নিছকই এক স্মৃতি স্তম্ভে ধরা এক খণ্ড নিষ্প্রভ বস্তু, কাক পক্ষীদের বিষ্ঠা ত্যাগের আদর্শ স্থল ছাড়া আর কোন প্রয়োজন নেই তার সভ্য শহরে। অন্ধকার গুলো তখন গর্তে আর পথের বাতি দণ্ড গুলোর এ হেন পাল হীন মাস্তুলের মত  অহেতুক দাঁড়িয়ে থাকা দেখে ভারী মজায়। আসলে, সূর্যাস্তের পর যখন আঁধার প্রসবিত হয় পৃথিবীতে, গর্তে থাকা অন্ধকারের তো পোয়াবারো তখন। এই ভেবে যে তাদের নেতৃত্বেই বসবে নৈশ সভা। নৈশ প্রহরীর দল তাদেরকে করবে সমীহ। ডাকাতেরা আওয়াজ তুলবে জয়তু অন্ধকার; অন্ধকার আরও ঘন হোক  এবং আরও হোক নিশ্ছিদ্র। এমনই জমাটি নৈশ নাটকের আসরে পথ বাতি খামোখাই এক দলবদলু বেসুরো। আকাশ থেকে নেমে আসা তমসাবৃত দৈত্য গুলি কে করে রাখে জবু থবু, পদানত! ...

এ পথ যদি না শেষ হয়!

'সপ্তপদী'র এই বিখ্যাত গানের লাইনে যে পথের কথা বলা হয়েছে তা আসলে প্রেমের পথ। যুগের পর যুগ ধরে প্রেমের রসে সিক্ত মানুষ জন এই কামনাই করে এসেছে যে এ পথ যেন শেষ না হয়। কিন্তু সময়ের মাইলস্টোন তা কখনোই হতে দেয় না। পথ এগিয়ে যায়, সময় দাঁড়িয়ে যায় তার পিঠে সওয়ার মানুষকে তার গন্তব্যে নামিয়ে দিতে।  প্রেমের লঙ  ড্রাইভে বেরিয়ে পড়া উত্তম কুমার এবং তার পৃষ্টলগ্না সুচিত্রা সেন দুজনেই কল্পনার বাঁধ ভাঙা রোমান্সে যে গান গেয়েছে তা আসলে এ পথ যদি শেষ না হত তাহলে কেমন হত! এই ভালো লাগা এবং এই ভালো লাগার রঙ, রূপ, রস কি তখনো থাকতো একই উজ্জ্বলতায় রঙিন,  থাকতো একই মাধুর্যে মধুর।   গানের শেষে নেপথ্য শিল্পী দ্বয় হেমন্ত মুখোপাধ্যায় এবং সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় যে মুখর আসক্তি নিয়ে একে অপরকে "তুমিই বল", "না না তুমিই বল" বলছিলেন তাতে লাভ-হরমোনের ক্ষরণ মুহূর্তে ঝরনা হয়ে লাভাতুর মানুষকে ভিজিয়ে দিতে পারে সে অদ্ভুদ বসন্ত-স্নানে।    কিন্তু এ তো প্রেমের পথ।  জীবনের পথ যে সব সময় মধুর হয় না, তা যে বড়ই বন্ধুর। সেখানে সাধ আর সাধ্যের, আশা-আকাঙ্খা আর তার পূরণ না হওয়ার লড়াই লড়তে লড়তে মানুষ যে ...