সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পথ বাতিঃ তোমার আলোয় এ পথ মায়ারুন!

 পথ বাতি, তুমি পথের সাঁঝবাতি, আঁধারের গোপনীয়তা ভেঙ্গে জ্বলে ওঠা দৃষ্টিপ্রদীপ; তোমার এ হেন শ্যেন আলোকপাতে আঁধার গুলো যেন সদ্য গোঁফ ওঠা চ্যাংড়া ইভটিজার - পিছু হঠতে হঠতে চোখের নীচে পড়া কালির মত জমতে থাকে বাতি স্তম্ভের নীচে। গুটি সুটি মেরে অপেক্ষা করে যতক্ষণ না পর্যন্ত ভোরের আলো ফোটে এবং তুমি তোমার প্রাসঙ্গিকতা হারাও। প্রভাতে, পথ বাতি যেন অতীতের কোন গৌরবজনক অধ্যায়ের নিছকই এক স্মৃতি স্তম্ভে ধরা এক খণ্ড নিষ্প্রভ বস্তু, কাক পক্ষীদের বিষ্ঠা ত্যাগের আদর্শ স্থল ছাড়া আর কোন প্রয়োজন নেই তার সভ্য শহরে। অন্ধকার গুলো তখন গর্তে আর পথের বাতি দণ্ড গুলোর এ হেন পাল হীন মাস্তুলের মত  অহেতুক দাঁড়িয়ে থাকা দেখে ভারী মজায়। আসলে, সূর্যাস্তের পর যখন আঁধার প্রসবিত হয় পৃথিবীতে, গর্তে থাকা অন্ধকারের তো পোয়াবারো তখন। এই ভেবে যে তাদের নেতৃত্বেই বসবে নৈশ সভা। নৈশ প্রহরীর দল তাদেরকে করবে সমীহ। ডাকাতেরা আওয়াজ তুলবে জয়তু অন্ধকার; অন্ধকার আরও ঘন হোক  এবং আরও হোক নিশ্ছিদ্র। এমনই জমাটি নৈশ নাটকের আসরে পথ বাতি খামোখাই এক দলবদলু বেসুরো। আকাশ থেকে নেমে আসা তমসাবৃত দৈত্য গুলি কে করে রাখে জবু থবু, পদানত! পথ বাতির আলোক ফলায় বিদ্ধ, একেবারে দুর্গার পায়ের নীচে মহিষাসুরের মত।    
পথ বাতি কি অন্ধকার দূর করে নাকি আলো আধারি মাখা এক মায়াবী পরিবেশ রচনা করে ভর সন্ধ্যার পথ গুলিতে। আরও যদি সেই পথে থাকে ঝাঁকড়া ছাতিম। নিশুতি পথে নিশি পোকার নিক্কন আর সেই ছাতিমের তলায় প্রেমিক-প্রেমিকার ঘনিষ্ঠ সন্ধ্যারতি ফিসফিসে সিম্ফনীর আবহে। অন্ধকার তখন সিঁধেল চোরের মত পথ বাতির আলোর সাথে ছাতিমের ডালা পালা, আর গুচ্ছ পাতা নিয়ে লুকো চুরি খেলে বাতাসের হিন্দোলে।  
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছাত্রাবস্থায় পথ বাতির (গ্যাস বাতি) আলোয় তার সান্ধ্য পাঠ সাঙ্গ করতেন। এ কথা সকলের জানা। আর এখন প্রেমে পড়া মানুষ প্রেম সারে পথ বাতির অন্ধকারে। বড়ই আদুরে, বড়ই মায়া-মেদুর। 
গভীর রাতে যখন কুয়াশার কাপড়ে পথ বাতির মাথায় জড়িয়ে যায় এক আশ্চর্য সফেন মলিনতা, মনে হয় সোনার কাঠির জাদু-স্পর্শে যেন দূর হবে সেই মায়া ঘোর।  নিস্তেজ পথ বাতির আলো তখন শুধুই তন্দ্রাচ্ছন্ন পথ রমনী যেন। 
 কোন এক ভাগ্যবান মানুষ তার বাড়ির তোরণে বেয়ে যাওয়া হাসনুহানা লতার, পথ বাতির আলোয় আলকিত হওয়ার মধুময় লাবন্য বাড়ির ব্যালকনি থেকে দেখতেন আর যারপরনাই আহ্লাদিত হতেন।  আবার পথ বাতির হলুদ আলো শোবার ঘরে এসে উঁকি দেয় যদি, নব দম্পতির সে বড় আমোদের। 
পথ পাশে কামিনী ফুলের গন্ধে, শিউলীর ফুলশয্যা হয় পথের পরেই পথ বাতির মায়াবী আলোয়।  তাই পথ বাতি, তোমার আলোয় এ পথ সত্যিই মায়ারুন।   


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট, কোথায় ছিলেন গান্ধীজী?

১৫০/বি বেলেঘাটা মেন রোড। শিয়ালদহ স্টেশন ও ই-এম বাইপাস এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন কারী মূল রাস্তা - বেলেঘাটা মেন রোড তথা সুরেশ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় রোডের ওপর পড়া এই বিশেষ ঠিকানা টি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে এক গৌরবময় স্মৃতির সাক্ষ্য বহন করছে । বিশেষ করে, প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময় আসন্ন হলে, এই ঠিকানার কথা স্মরণ না করে থাকা যা য় না। কারণ ১৯৪৭ এ গোটা দেশ যখন স্বাধীনতার আনন্দ উদযাপনে ব্যস্ত, বিশেষ করে রাজধানী দিল্লিতে স্বাধীনতা লাভের (১৫ ই আগস্ট) দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখতে আয়োজিত হয়েছে অভূতপূর্ব রাজকীয় সমারোহের - যার শুভ সূচনা হয়েছে, ১৪ ই আগস্টের মধ্যরাতে; ১৫ তারিখ পদার্পণ করতেই দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর ঐতিহাসিক বক্তৃতা দিয়ে শুভারম্ভ হয়েছে স্বাধীনতা দিবস পালনের মহা নির্ঘণ্ট। এই উচ্ছ্বাস যদিও কাঙ্ক্ষিতই ছিল। কারণ দীর্ঘ ২০০ বছরের পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরেই দেশবাসীর কাছে এসে পৌঁছেছিল সে বিরল মাহেন্দ্রক্ষণ। সমাগত হয়েছিল সেই মহা মুহূর্ত যখন প্রায় শত বর্ষ ধরে চলা স্বাধীনতাকামী মহাযজ্ঞে মুক্তিলাভের সিদ্ধি স্পর্শ করছিল তার চূড়ান্ত শিখর দেশ। কিন্তু এই যজ...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...