সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

জনগণমনঃ জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার ইতিহাস ও কিছু প্রশ্নের উত্তর!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ব্রহ্ম সঙ্গীতজনগণমন অধিনায়ক’ কে দেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে মান্যতা দেওয়ার সর্ব সম্মীলিত সিদ্ধান্ত হয় ১৯৫০ সালের ২৪ শে জানুয়ারি কিন্তু কেন এত দেরী? দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও কেন তিন বছর সময় লেগেছিল জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন করতে? ‘ভারত বিধাতা’ শিরোনামে লেখা, স্বদেশ পর্যায় ভুক্ত (গীতবিতান অনুসারে) এই রবীন্দ্রগীতিটি কিভাবে -  দেশের জাতীয় সঙ্গীত হওয়ার পথে একটু একটু করে এগিয়ে গেল! ‘জনগনমন’র জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার নেপথ্য কাহিনীই আজ আমরা ফিরে দেখবো এই প্রবন্ধে। 

১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট - দীর্ঘ ২০০ বছর ধরে পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরে অবশেষে দেশবাসীর ভাগ্যাকাশে এসে উপস্থিত হোল বহু আকাঙ্খিত সেই দিনটি। উদিত হোল স্বাধীনতার নতুন সূর্যের। স্বাধীন হোল দেশ। কিন্তু সদ্য ব্রিটিশ অধীনতা মুক্ত দুটি দেশ ভারত এবং পাকিস্থান তখনও পায় নি স্বতন্ত্র সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা। ১৯৪৭ এর ১৮ই জুলাই তারিখে লাগু হওয়া ভারতীয় স্বাধীনতা আইন অনুসারে নিজ নিজ সংবিধান প্রণয়নের আগে পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্থান এই দুটি ভূখণ্ড কমনওয়েলথ দেশের অধীনস্থ দুটি অধিরাজ্য হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে পারার স্বীকৃতি পেয়েছিল মাত্র।  তাই যত সত্বর সম্ভব সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত হয়েছিল সংবিধান সভা বা গণপরিষদ নিয়মানুসারে দেশের জাতীয় সঙ্গীত বেছে নেওয়ার দায়িত্ব, সংবিধান সভার ওপরেই বর্তায়। 
কিন্তু ১,৪৫,০০০ শব্দ বিশিষ্ট পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সংবিধান রচনার কাজ, অল্প সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা কোনোমতেই সম্ভবপর ছিল না সংবিধান প্রণেতাদের পক্ষে।  এদিকে সেনাবাহিনীতে বা বৈদেশিক প্রতিনিধিত্ব মূলক অনুষ্ঠানে ন্যাশনাল অ্যানথেম বা জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া বা ব্যাণ্ডের সঙ্গে জাতীয় সঙ্গীতের সুর বাজানোর প্রয়োজনীয়তা প্রায় অপরিহার্য হয়ে উঠেছিল। এবং যে কারণে ঘনঘন সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলি থেকে জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে আর্জি আসতে থাকে। এই বিষয়ে দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর বয়ানে পাওয়া যায় তারই উল্লেখ।  “স্বাধীনতার
পরে আর গড সেভ দ্য কিং আমাদের সেনাবাহিনীতে বাজানো সম্ভবপর ছিল না তাই বারংবার বাজানোর জন্য একটি সুর আমাদের থেকে চাওয়া হতে থাকে কিন্তু আমরা তার কোনও সদুত্তরই দিতে পারি না, কারণ এই সংক্রান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী একমাত্র সংবিধান সভা   
এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো আনুষ্ঠানিক ভাবে তখনও
জনগনমনকে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়া হলেও বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ইভেন্টে কিন্তু জনগনমনকেই জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে পেশ করা হয়েছিল।  যেমন ১৯৪৭ এ স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পরেই নিউ ইয়র্কে আয়োজিত জাতি সংঘের একটি অনুষ্ঠানে অর্কেস্ট্রেশন সহজনগনমনগাওয়া হয় এবং বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের দ্বারা তা উচ্চ প্রশংসিতও হয় যেটা হোল এর পর থেকে প্রতিরক্ষা বাহিনীর ব্যান্ড গুলিতেজনগনমনএরই সুর বাজানো হতে থাকে পাশাপাশি বৈদেশিক দূতাবাস কিংবা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রয়োজনেও রবীন্দ্রনাথের লেখা এই গানটিই হয়ে যায় অঘোষিত জাতীয় সঙ্গীত
সিংহাবলোকনে যদি দেখা যায়, ‘জনগনমন’ নিয়ে প্রথম আগ্রহ তৈরি হয়েছিল কিন্তু স্বাধীনতা লাভেরও এক দশক পূর্ব সময়কালে। ১৯৩৭ সালে ফইজাবাদে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের ৫০ তম বার্ষিক অধিবেশনে প্রথম এই নিয়ে প্রস্তাব ওঠে
 গান্ধীজী এবং জহরলাল নেহেরু সহ আরও অনেক বরিষ্ঠ নেতাদের সমক্ষে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুই সর্বপ্রথম  ‘জনগনমনকে জাতীয় সঙ্গীত করার প্রস্তাব পেশ করেনপ্রসঙ্গত জহরলাল নেহেরু ছিলেন ওই অধিবেশনের সভাপতি তবে শুধু প্রস্তাব দিয়েই ক্ষান্ত থাকেন নি সুভাষ চন্দ্র  ১৯৪৩ এর ৫ই জুলাই, আনুষ্ঠানিক ভাবে আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠনের ঘোষণার দিন, মূলত তাঁরই অনুপ্রেরনায় জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গাওয়া হয় জনগনমন সেই শুরু, যদিও সেটা ছিল বিদেশের মাটিতে   এর পরে ৪৩ এরই ২১ শে অক্টোবর, সিঙ্গাপুরে আর্জি হুকুমতএ হিন্দ এর প্রতিষ্ঠা দিবসে ফের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গাওয়া হয়জনগনমন আজাদ হিন্দ ফৌজের সেনাপতি হিসেবে সুভাষ চন্দ্র এর অব্যবহিত পরেই ফৌজের সেক্রেটারি আনন্দমোহন সহায়ের ওপরজনগনমনএর হিন্দি সংকলন তৈরি করার ভার অর্পণ করেন কিন্তু দেশের মাটিতে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবেজনগনমনগাওয়া হয় তারও এক বছর পরে অর্থাৎ ১৯৪৪ এ ৪৪ এর মার্চ মাসে, আজাদ হিন্দ ফৌজ সেই প্রথম মিত্র সেনাকে হারিয়ে ভারতের মাটিতে পা রেখেছিল জহরলাল নেহেরুর লেখাতেও দেখা যায় তার উল্লেখ, “কিঞ্চিৎ পরিবর্তনের সহিত 'জনগণমন' এর সুর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আজাদ হিন্দ ফৌজ কর্তৃক জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গৃহীত হয়েছিল এবং সেই সঙ্গে ভারতেও তার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছিল তাইজনগনমনএর স্বপক্ষে একটা প্রেক্ষাপট তৈরিই ছিল ইত্যবসরে নেহেরুও যতদিন না সংবিধান সভা কর্তৃক আনুষ্ঠানিক অনুমোদন আসছে ততদিন পর্যন্ত প্রতিরক্ষা বিভাগ বা বৈদেশিক দূতাবাসে জাতীয় সঙ্গীত সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নির্দেশ পাঠাতে  ক্যাবিনেটের সভায় সাময়িক একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার লক্ষে তিনি সমস্ত প্রাদেশিক গভর্নর কে চিঠি লিখে জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচনের ব্যাপারেজনগনমনবা অন্য কোনো বিকল্প গান নিয়ে তাঁদের মতামত জানতে চান যদিও চিঠিতে পরিষ্কার করে উল্লেখ করে দেন এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী কেবল মাত্র সংবিধান সভাই মজার ব্যাপার হোল সমস্ত প্রদেশ ‘জনগনমন’ এর পক্ষে সায় দিলেও মধ্য প্রদেশ কিন্তু এর বিরুদ্ধে মত দেয়। যদিও সিংহভাগের সমর্থন থাকায় ‘জনগনমন’ এর পক্ষেই ক্যাবিনেটে সিদ্ধান্ত হয়ে যায়। ব্যক্তিগত ভাবে প্রধানমন্ত্রী নেহেরু ও ‘জনগনমন’ এর বিপক্ষে ছিলেন না।  আসলে সেই মুহূর্তে নেহেরুর কাছে ‘জনগণমন’ ছাড়া অন্য কোনো অপশন ও ছিল না। কারণ ১৯৩৭ এ জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি দানের প্রস্তাব আসলেও, তার বহু বছর আগে থেকেই দেশের একাধিক ঐতিহাসিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ এবং সর্বোচ্চ স্তরের অনুষ্ঠানে গীত হওয়ার গৌরব গানটিকে পছন্দের শিরোস্থানে এনে ফেলেছিল রচনার কয়েকদিনের মধ্যেই গানটি গাওয়া হয়েছিল ঐতিহাসিক ভাবে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ এক অনুষ্ঠানে। ভারতে আগত রাজা পঞ্চম জর্জের অভ্যর্থনা মঞ্চে প্রথম গাওয়া হয় গানটি। দিনটি ছিল ১৯১১ সালের ৭ ই ডিসেম্বর।  উল্লেখ্য পঞ্চম জর্জের সংবর্ধনা জ্ঞাপনী অনুষ্ঠানের উপযোগী করে একটি গান লিখতে অনুরোধ করা হয় রবীন্দ্রনাথকে। যদিও রবীন্দ্রনাথ এতে যথেষ্ট রুষ্ট হয়েছিলেন কিন্তু সে অন্য প্রসঙ্গ। তার কয়েকদিনের মধ্যে কোলকাতায় শুরু হয় জাতীয় কংগ্রেসের ২৬ তম বার্ষিক অধিবেশন। অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ২৭ শে ডিসেম্বর, সমবেত কণ্ঠে গাওয়া হয় ‘জনগণমন’। দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুর সুরারোপিত ‘জনগণমন’, উপস্থিত সবার মন জয় করে নিতে সমর্থ হয়। এছাড়াও দেশ বিদেশের বিভিন্ন কৃতি ব্যক্তির উচ্ছ্বসিত প্রশংসা ও ‘জনগনমন’ কে দৌড়ে অনেকটা এগিয়ে রাখে। স্বয়ং গান্ধীজী রবীন্দ্রনাথের এই গানকে মনে করতেন একটি দিব্য স্তোত্র বলে। তাঁর মতে, এটি চরিত্রে স্বতন্ত্রভাবেই জাতীয় এরগায়নযোগ্যতা”- আছে  বিখ্যাত আইরিশ কবি জেমস এইচ কাজিনস প্রবল ভাবে জনগমনএর পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর পেশ করা প্রস্তাবটি বিশেষ প্রণিধানযোগ্য  ডক্টর রবীন্দ্রনাথের গভীর দেশাত্মবোধক, আদর্শ প্রণোদিত এবং একই সঙ্গে বিশ্বাত্মবোধক মর্নিং সং অব ইন্ডিয়া (জনগণমন), যা বিগত কুড়ি বছর বেসরকারিভাবে ভারতের জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত, তাকেই সরকারিভাবে অনুমোদন করা হোক।"  দ্বিতীয় পছন্দ হিসেবে কেবলমাত্র বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘বন্দেমাতরম’ গানটিই ছিল বেছে নেওয়ার পক্ষে অন্যতম বিকল্প - যদিও গানটিতে দেশকে হিন্দু মাতৃ প্রতিমার আদলে বন্দনা করার প্রয়াস রয়েছে বলে তথাকথিত পৌত্তলিকতা বিরোধী মুসলিম জনগনের প্রবল আপত্তি ছিল এই ব্যাপারে।  সর্বোপরি দেশের জাতীয় সঙ্গীত রচয়িতা হিসেবে দেশের একমাত্র নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী কবি রবীন্দ্রনাথকেই বেছে নেওয়াটা বেশী স্বাভাবিক ছিল। তাই শেষ পর্যন্ত ১৯৫০ সালের ২৪ শে জানুয়ারি - ‘জনগনমন’ কেই জাতীয় সঙ্গীতের স্বীকৃতি দেয় সংবিধান সভা। পাঁচটি স্তবক বিশিষ্ট গীতি কবিতাটির কেবলমাত্র প্রথম স্তবকটিই জাতীয় সঙ্গীতের মর্যাদা পায়।
২৪ শে জানুয়ারির সভায় সংবিধান সভার সভাপতি রাজেন্দ্রপ্রসাদ বলেন, জনগণমন নামে পরিচিত গানটি কথা সুরসহ ভারতের জাতীয় সংগীতরূপে সরকারিভাবে গীত হবে কোনো নির্দিষ্ট কারণ উপস্থিত হলে সরকার এই গানের কথায় যে কোনো রকম পরিবর্তন আনতে পারবেন। 'বন্দেমাতরম' গানটি যেহেতু ভারতের জাতীয় সংগ্রামে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থানের অধিকারী, সেই হেতু এটিও জনগণমন-এর সমমর্যাদাসম্পন্ন হবে 
১৯১২ সালের জানুয়ারি সংখ্যায় প্রকাশিত 'জনগনমন', ভারত বিধাতা শিরোনামে। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট, কোথায় ছিলেন গান্ধীজী?

১৫০/বি বেলেঘাটা মেন রোড। শিয়ালদহ স্টেশন ও ই-এম বাইপাস এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন কারী মূল রাস্তা - বেলেঘাটা মেন রোড তথা সুরেশ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় রোডের ওপর পড়া এই বিশেষ ঠিকানা টি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে এক গৌরবময় স্মৃতির সাক্ষ্য বহন করছে । বিশেষ করে, প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময় আসন্ন হলে, এই ঠিকানার কথা স্মরণ না করে থাকা যা য় না। কারণ ১৯৪৭ এ গোটা দেশ যখন স্বাধীনতার আনন্দ উদযাপনে ব্যস্ত, বিশেষ করে রাজধানী দিল্লিতে স্বাধীনতা লাভের (১৫ ই আগস্ট) দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখতে আয়োজিত হয়েছে অভূতপূর্ব রাজকীয় সমারোহের - যার শুভ সূচনা হয়েছে, ১৪ ই আগস্টের মধ্যরাতে; ১৫ তারিখ পদার্পণ করতেই দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর ঐতিহাসিক বক্তৃতা দিয়ে শুভারম্ভ হয়েছে স্বাধীনতা দিবস পালনের মহা নির্ঘণ্ট। এই উচ্ছ্বাস যদিও কাঙ্ক্ষিতই ছিল। কারণ দীর্ঘ ২০০ বছরের পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরেই দেশবাসীর কাছে এসে পৌঁছেছিল সে বিরল মাহেন্দ্রক্ষণ। সমাগত হয়েছিল সেই মহা মুহূর্ত যখন প্রায় শত বর্ষ ধরে চলা স্বাধীনতাকামী মহাযজ্ঞে মুক্তিলাভের সিদ্ধি স্পর্শ করছিল তার চূড়ান্ত শিখর দেশ। কিন্তু এই যজ...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...