সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

"পথের পাঁচালী" এবং তার তিন বছরের প্রকাশ-যন্ত্রণা !

জন্ম এক অজ্ঞাতকুলশীল লেখকের মননে।   তখনো লেখক বাংলা সাহিত্যের আকাশে মহা নক্ষত্র সম রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্রদের উপস্থিতির সামনে নেহাতই তুচ্ছ একজন।   অনেক নবাগতদের মধ্যে তিনিও   একজন। যার আত্মপরিচয় দেওয়ার মত তখন শুধু একটি  দুটি  ছোট গল্প - 'প্রবাসী' পত্রিকায় প্রকাশিত "উপেক্ষিতা" এবং পরে "উমারানী"। এছাড়া "মৌরিফুল" গল্পের জন্য ১৯২৩ সালে  প্রথমবার একটা পুরস্কার প্রাপ্তি।  হ্যাঁ,  এমনই এক স্বল্প পরিচিত লেখক  বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তার প্রথম উপন্যাস "পথের পাঁচালী" লেখা শুরু করেন ১৯২৫ সালের ৩শরা এপ্রিল ভাগলপুরে। কিন্তু ভাগলপুর কেন?
নিয়তিতাড়িত বিভূতিভূষণ দ্বিতীয় বারের জন্য শিক্ষকতার চাকরি হারিয়ে ভাগলপুরে এসেছিলেন একেবারে অন্য ধরনের চাকরি নিয়ে, এক অন্য অবতারে। জমিদার খেলাত ঘোষ এস্টেটের ভাগলপুরস্থিত জঙ্গল মহলের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হয়ে। বিধাতা পুরুষ হয়তো The Song of Road - এক সরল পথের মায়াবী পাঁচালী লেখার জন্য বিভূতিভূষণকে বাংলা সাহিত্যের আর এক দিকপাল শরৎচন্দ্রের বিচরনধন্য ভাগলপুরের এই লোকালয় থেকে দূরে নির্জন আরন্যক পরিবেশে এনে ফেলেছিলেন।  যেখানে তিনি ক্রোশের পর ক্রোশ পথ পায়ে হেঁটে, ঘোড়ার পিঠে ঘুরে বেড়িয়েছেন জঙ্গল তদারকি করার কাজে।  বিজন প্রান্তর, মৌন পাহাড়, অরন্যের গভীরতার সামনে তিনি যে বড়ই অসহায়।  দূর উপত্যকার শুষ্ক বাতাস তাকে বড়ই উদাস করে।  ফিরে যেতে চান তার সবুজ-সজল-সকরুন  ইচ্ছামতী ও তার চরস্থিত  স্বপ্নের 'নিশ্চিন্দিপুরের' পথে পথে। যা তার বড়ই প্রিয়। তার বাল্যকাল আর তাকে ঘিরে অজস্র অম্লমধুর  স্মৃতি বিভূতিভূষণকে করে তোলে উন্মন। "কিছু একটা লিখতে হবে।"


 ভাবনার ভ্রূণ প্রোথিত হয় "পথের পাঁচালী" র।  যেটি  হবে তাঁর লেখা প্রথম এবং সেরা উপন্যাস; যে উপন্যাস তাকে রাতারাতি খ্যাতির মধ্যগগনে নিয়ে যাবে।  রবীন্দ্রনাথ-শরৎচন্দ্রের পর জনপ্রিয় লেখক হিসেবে তাঁর নাম উচ্চারিত হবে। কিন্তু এ হেন উপন্যাস প্রকাশ হতে পেরিয়ে যাবে সুদীর্ঘ তিন বছর। লেখককে ফেলতে হবে চোখের জল।  সইতে হবে প্রত্যাখ্যান।  সেই কথা লেখার জন্যই এই নিবন্ধের অবতারণা। 

১৯২৫ সালের ৩শরা এপ্রিল তারিখে "পথের পাঁচালী" লেখা শুরু করে বেশ কয়েক পাতা লেখা হয়ে গেলে পরে বিভূতিভূষণ ফিরে আসেন কলকাতায়, মিরজাপুরের মেসে। বলে রাখি এখানে, নীরদ চন্দ্র চৌধুরী - প্রখ্যাত লেখক এবং ঠোঁটকাটা হিসেবে যার সুখ্যাতি বা কুখ্যাতি যথেষ্ট। তিনি কিন্তু বিভূতিভূষণের এই "পথের পাঁচালী" র সুদীর্ঘ প্রকাশ- যাত্রায় একেবারে প্রথম দিন থেকে সঙ্গী।  কারণ বিভূতিভূষণ কলকাতায় ফিরে এই নীরদ সি চৌধুরীকেই প্রথম দেখিয়েছিলেন ভাগলপুর থেকে লিখে আনা সেই কয়েকটি পাতা পাণ্ডুলিপি।  "দেখো তো কেমন হল?"  
পড়া শেষ করে সেদিন গোলদিঘির ধারে "আত্মঘাতী বাঙ্গালী" র লেখক নীরদ  বাবু "অসাধারন" বলে জড়িয়ে ধরেছিলেন 'পথ কবি' বিভূতিভূষণকে।
বিভূতিভূষণ, মনে বল পেয়েছিলেন নীরদ চন্দ্রের কথায়। একদিকে চাকরি, পাশাপাশি লেখা সেই অদ্ভুদ পথের কথকতা।  যে পথ দিয়ে ছিল তাঁর অনায়াস-অকপট যাতায়ত।  এগিয়ে যেতে থাকল লেখা। বাংলা তথা ভারতের সাহিত্য জগতে যেটি তৈরি করবে এক বেনজির আলোড়ন । সম্ভবত "পথের পাঁচালী" ই বাংলা তথা ভারতে লেখা প্রথম অটোবায়গ্রাফিক্যাল উপন্যাস। কিন্তু এইসময় বাদ সাধল একটি ঘটনা।
যার জন্য বিভূতিভূষণকে "পথের পাঁচালী"র পুনর্লিখন করতে হল। লেগে গেল পুরো একটা বছর। কি সেই ঘটনা? বিভূতিভূষণ দিনলিপিতে লিখছেন, "একদিন হঠাৎ ভাগলপুরের রঘুনন্দন হল - এ একটি মেয়েকে দেখি। চুলগুলো তার হাওয়ায় উড়ছে। সে আমার দৃষ্টি এবং মন দুই-ই  আকর্ষণ করলো। তার ছাপ মনের মধ্যে আঁকা হয়ে গেল।" এর পরে তাঁর মনে হয়েছে এই মেয়েটিকে উপন্যাসে না আনলে চলবেনা। যদিও বিভূতিভূষণ নিজে এ কথা কোথাও বলেননি যে "পথের পাঁচালী" র প্রথম পাণ্ডুলিপিতে ওই চরিত্রটা ছিল না। কিন্তু সেই সময়কার কিছু ভাগ্যবান মানুষ যেমন যোগেশ চন্দ্র সিনহা, গোপাল হালদার প্রমুখ যারা সাহিত্যরস বোদ্ধা হিসেবে ভাগলপুরে উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে সাহিত্য আড্ডায় নিয়মিত যাতায়ত করতেন এবং  সেই সুবাদে "পথের পাঁচালী" র পাণ্ডুলিপি দেখার দুর্লভ সৌভাগ্য লাভ করেছিলেন, তারাও মনে করেন প্রথমে চরিত্র টি ছিল না  অর্থাৎ পুনর্বার লিখিত  পাণ্ডুলিপিতেই এই  মেয়েটি জায়গা করে নিয়েছিল। বলাই বাহুল্য মেয়েটি "পথের পাঁচালী" র দুর্গা। আসলে, বিভূতিভূষণের স্মৃতির পাতায় থাকা তাঁর ছোট বোন সরস্বতী, যে বাল্য বয়সে সবার মায়া কাটিয়ে  চলে যায়  এই ধরিত্রী ছেড়ে; ভাগলপুরে দেখা ওই মেয়েটি যেন বিভূতিভূষণেকে কাতর করে দিয়েছিল সরস্বতীর স্মৃতিতে। 
তিনি দুর্গার চরিত্রকে তাই তাঁর সকল সাহিত্য শুশ্রূষায় গড়ে তুলেছিলেন এক সরল-  সাদামাটা অথচ এক মহান জীবনের প্রতিভু হিসেবে, যার অকাল মৃত্যু পাঠকের হৃদয়- এ তৈরি করে সেই অমরত্বের মন্দির যেখানে দুর্গা সর্বদা পাঠকের চোখের জলে ধুয়ে নেয় তাঁর জীবনের পাঁচালী পাঠ।  
অবশেষে এল সেই দিন, ১৯২৮ এর ২৬ শে এপ্রিল, যেদিন সম্পূর্ণ হল "পথের পাঁচালী" র পাণ্ডুলিপি লেখা। তিন বছরের বিরাম হীন তপস্যা। আর তারপর শুরু হল তাকে প্রকাশের আলো দেখানোর পালা। বিভূতিভূষণ যথারীতি সেটি 'প্রবাসী' তে পাঠালেন। কিন্তু কি  আশ্চর্য 'প্রবাসী' তা ফেরত পাঠায়। সেদিনকার সেই নিষ্ঠুর সত্য, যা আজকের দিনে নিতান্তই মিথ্যে মনে হয়। যে কারণে 
বিভূতিভূষণ ভীষণ হতাশ হয়েছিলেন। আসলে ভগবান আগে থেকেই নির্দিষ্ট করে রাখেন কোন লেখা কোন পত্রিকার পাতায় ছাপা হবে। এ ক্ষেত্রেও তাই হল। একটু খুলে বলা যাক।  ভাগলপুরের উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়, যিনি অনেক দিন ধরে একটা মাসিক পত্রিকা বের করবেন বলে মনের মধ্যে একটা সুপ্ত ইচ্ছা  সযত্নে  লালন করতেন, ঘটনাচক্রে, সেই সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উৎসাহে তাঁর অনেকদিনের মনস্কামনা  শেষমেষ পূর্ণ হয়। পত্রিকার নামকরণ করেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ, 'বিচিত্রা'। সম্পাদক উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় 'প্রবাসী' প্রত্যাখ্যানের কথা জানার পর তিনি  সযত্নে 'পথের পাঁচালী" কে 'বিচিত্রা'র পাতায় ছাপবেন বলে বিভূতিভূষণের কাছে তাঁর আগ্রহ প্রকাশ করেন। বিভূতিভূষণ ও কাল বিলম্ব না করে পাণ্ডুলিপি 'বিচিত্রা' য় পাঠীয়ে দেন।  
'বিচিত্রা' য় দ্বিতীয় বর্ষ প্রথম সংখ্যা থেকে "পথের পাঁচালী" ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হওয়া শুরু হয়, কিন্তু এত দেরী কেন?  যে কারণে এই অনভিপ্রেত বিলম্ব তা "পথের পাঁচালী" র স্রষ্টা বিভূতিভূষণের কাছে খুব একটা সুখদায়কতো ছিল না বরং বেশ বিড়ম্বনার ছিল।  বিভূতিভূষণ 'বিচিত্রা'য় কপি পাঠানোর বেশ কয়েকদিন পর ছাপানো হচ্ছে না দেখে তিনি সটান পত্রিকার দপ্তরে চলে যান। এটা জানতে যে তাঁর পরে পাঠানো দুটো গল্প 'বউ চণ্ডীর মাঠ' এবং 'নববৃন্দাবন' ছাপানো হয়ে গেলেও 'পথের পাঁচালী' কেন প্রকাশ করছেন না সম্পাদক। তো সেদিন উপেন্দ্রনাথ দপ্তরে ছিলেন না। কিন্তু যারা সেদিন অফিসে ছিলেন তাদের কাছ থেকে বিভূতিভূষণ খুব একটা সদুত্তরতো পেলেন না বরং বেশ অপমানিতই বোধ করলেন তাদের অবজ্ঞা ভরা ব্যবহারে।  নিজেকে খুব একটা অকিঞ্চিৎকর মনে হচ্ছিল বিভূতিভূষণের তখন।  বিষণ্ণ লেখক প্রায় পথে দাঁড়ানোর নিঃস্বতা নিয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন রাস্তায়। হঠাৎ সেই সময় উপেন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়ে যায়। মুহ্যমান বিভূতিভূষণকে উপন্দ্রেনাথ সাদরে ডেকে পত্রিকা অফিসে ফেরত নিয়ে যান এবং তাঁর ঘরে নিয়ে গিয়ে বসান। বলেন তাঁর অসহায়তার কথা। যার মূল নির্যাস হল "পথের পাঁচালী" তাঁর খুব পছন্দ হলেও অন্য সকলের কাছে এটাকে ছাপানো বেশ ঝুঁকির হয়ে যাবে বলে কেউ ছাপাতে চাইছেনা। তবে এর সঙ্গে তিনি এও বলেন যে কয়েকদিনের মধ্যে তারা লেখাটা নিয়ে সকলে বসবেন। বিভূতিভূষণের কাছে আশার কথা এইটুকুই। অবশেষে এল সেই দিন। 'বিচিত্রা'র দপ্তরে উপেন্দ্রনাথ সমীপে উপস্থিত হলেন বিভূতিভূষণ। উপস্থিত হলেন নীরদ সি চৌধুরী, গোপাল হালদার ছাড়াও আরও অনেকে। বিভূতিভূষণ পড়ে শোনালেন তাঁর পাণ্ডুলিপি।  সবাই বিস্ময়াবিষ্ট এবং যারপরনাই মুগ্ধ। বলাই বাহুল্য ওই বৈঠকেই "পথের পাঁচালী" প্রকাশের সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিক ভাবে পাকা হয়ে গেল। পনেরোটা কিস্তিতে "পথের পাঁচালী" প্রকাশ সম্পূর্ণ হয় 'বিচিত্রা'র পাতায়। 
পরিশেষে বলে রাখি, কেউ কেউ দাবী করেন বিভূতিভূষণ "পথের পাঁচালী" সরাসরি 'বিচিত্রা'য় পাঠান।  প্রথমে 'প্রবাসী'তে পাঠানো এবং সেখান থেকে ফেরত আসার কথায় তারা দ্বিমত পোষণ করেন।  

ঋণ স্বীকার - অপু ও দুর্গার খোঁজে, পুলক চট্টোপাধ্যায়। 
                      বিভূতিভূষণকে কতটুকু চিনি, চিত্তরঞ্জন সরকার

[ কিন্তু "পথের পাঁচালী" কে বই হিসেবে প্রকাশিত করতে গিয়ে আর এক প্রস্থ  বিভূতিভূষণকে প্রত্যাখ্যানের সামনে পড়তে হয়েছিল, শুনতে হয়েছিল কটাক্ষ, কটূক্তি; ফেলতে হয়েছিল চোখের জল।
সে কাহিনী অন্য এক সংখ্যায় বলবো।  ] 

 



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট, কোথায় ছিলেন গান্ধীজী?

১৫০/বি বেলেঘাটা মেন রোড। শিয়ালদহ স্টেশন ও ই-এম বাইপাস এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন কারী মূল রাস্তা - বেলেঘাটা মেন রোড তথা সুরেশ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় রোডের ওপর পড়া এই বিশেষ ঠিকানা টি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে এক গৌরবময় স্মৃতির সাক্ষ্য বহন করছে । বিশেষ করে, প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময় আসন্ন হলে, এই ঠিকানার কথা স্মরণ না করে থাকা যা য় না। কারণ ১৯৪৭ এ গোটা দেশ যখন স্বাধীনতার আনন্দ উদযাপনে ব্যস্ত, বিশেষ করে রাজধানী দিল্লিতে স্বাধীনতা লাভের (১৫ ই আগস্ট) দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখতে আয়োজিত হয়েছে অভূতপূর্ব রাজকীয় সমারোহের - যার শুভ সূচনা হয়েছে, ১৪ ই আগস্টের মধ্যরাতে; ১৫ তারিখ পদার্পণ করতেই দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর ঐতিহাসিক বক্তৃতা দিয়ে শুভারম্ভ হয়েছে স্বাধীনতা দিবস পালনের মহা নির্ঘণ্ট। এই উচ্ছ্বাস যদিও কাঙ্ক্ষিতই ছিল। কারণ দীর্ঘ ২০০ বছরের পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরেই দেশবাসীর কাছে এসে পৌঁছেছিল সে বিরল মাহেন্দ্রক্ষণ। সমাগত হয়েছিল সেই মহা মুহূর্ত যখন প্রায় শত বর্ষ ধরে চলা স্বাধীনতাকামী মহাযজ্ঞে মুক্তিলাভের সিদ্ধি স্পর্শ করছিল তার চূড়ান্ত শিখর দেশ। কিন্তু এই যজ...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...