সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রাজপথে ধোনি ও গেইলের যৌথ ব্যাটিং!

রাজপথে ক্রিকেট? রেড রোডে ঈদের নামাজ আর ধর্মঘটের দিন রাজপথে, জমিয়ে ব্যাট-বলের ঠোকাঠুকি - দৃশ্যগুলি প্রায় মহালয়ার ভোরে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে চণ্ডী পাঠ শোনার মত স্বাভাবিক এবং রুটিন ঘটনা। কিন্তু ছবিটা গত এক দশকে খানিকটা পাল্টেছে। ২০২২ থেকে রেড রোডেই শুরু হয়েছে দুর্গাপূজা কার্নিভ্যাল। পাশাপাশি উৎসবে-আন্দোলনে রাজপথ কাঁপানো মিছিল, শোভাযাত্রা আগেও ছিল এখনো আছে। কিন্তু ধর্মঘটের দিন, রাজপথে ব্যাট এবং বলের লড়াই আর দেখা যায় না গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে। সেই সময়ে দেখেছি ধর্মঘটের দিন, ভর দুপুরেও বিবাদী বাগের অফিস পাড়ায় বিরাজ করতো মধ্যরাতের নীরবতা! যানবাহন এবং মানুষের কোলাহলমুক্ত স্টিফেন হাউসের সামনের রাজপথটায় দিব্যি চলতো ব্যাট হাতে বল পেটানোর ধুম। রাজপথের কালো পিচে লেখা হতো ক্রিকেট বলের উত্থান এবং পতনের রোমাঞ্চকর সব গল্প
 আমরা জানি ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়।
সম্প্রতি ভারত এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই প্রাক্তন অধিনায়ক এম এস ধোনি এবং ক্রিস গেইলকে একই সাথে রাজপথের বিজ্ঞাপনী পর্দায় দেখা যাওয়ার মধ্যে কি তেমনি কিছুর ইঙ্গিত আছে? 
রাজপথের মাথায় মুকুটের মত - ফুট ব্রিজের গায়ে লাগানো বিশাল ব্যানারে এই দুই স্কিপারকে দেখা যাচ্ছে একই সঙ্গে। তবে কোনো টিমের জার্সি পরে নয়। স্পোর্টস জ্যাকেটে! মহাসাগরীয় -নীল রঙের। হাতে ব্যাট না থাকলেও, ছবিতে ক্যাপ্টেন কুল এবং মারকুটে গেইল দুজনেই ব্যাট মারার ঢঙে ধরে আছেন SKIPPER ব্র্যান্ডের CPVC PLUMBING পাইপ। ধোনির, ক্লিন শেভড হাঁসি মুখ। হুবহু মার্ক সিম্পসন বর্ণিত মেট্রোসেক্সুয়াল লুকে। হেলিকপ্টার শট মারার ঢঙে ধরে আছেন ১০০% লিড ফ্রি SKIPPER পাইপ। গেইলকেও দেখা যাচ্ছে হাঁসি মুখেই। মাথা থেকে নেমে এসেছে লম্বা কোঁকড়ানো চুলের বিনুনি। জামাইকার রাস্তাফেরিয়ানদের হেয়ার স্টাইল এটা, যার পোশাকি নাম - Braided Dreadlock.  জন্মগত জামাইকান গেইল, ব্যানারে দৃশ্যতই রাস্তাফেরিয়ানদের মতন চুলের স্টাইলে। সঙ্গে তাঁর স্বভাবসিদ্ধ দাঁড়ি গোঁফে ভরা মুখ, অনেকটা আমাদের তান্ত্রিক কিংবা বিদেশের রকস্টারদের মত। রীতিমত অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বল কে মাঠের বাইরে ফেলার ভঙ্গিমায়। তবে ব্যাট হাতে নয়, পাইপ হাতে। সঙ্গে ক্যাচলাইন 'SKIPPER ফর লাইফ'। সব মিলিয়ে রীতিমত সরগরম রাজপথের এই ব্যানারগুলি।
প্রসঙ্গান্তরে গিয়ে বলি, ক্রিকেটার যদি বিয়েও করতে যান, তাঁর ক্রিকেটার সত্তা তাকে ছাড়ে না। ক্রিকেটার অনুষঙ্গ তাকে তাড়া করে ফেরে। আর তাই এই দুই ক্রিকেটারের যুগলবন্দী, সশরীরে না হলেও ছবিতে অন্তত অনেক দিন পর রাজপথে ক্রিকেটের রোমান্টিকতাকে ফিরিয়ে এনেছে শহরবাসির স্মৃতিতে। যদিও ক্রিকেটের সঙ্গে এই অ্যাডের দূর দূর পর্যন্ত কোনো সম্পর্ক নেই।
রাজপথে অ্যাড দিতে এর আগেও দেখা গেছে ব্যানার আলো করে বিভিন্ন ক্রিকেটারকে। তবে সবসময় একক ভাবে। প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে যেমন দেখা গেছে ক্যাপ্টেন টি এম টি বারের অ্যাড দিতে।
পরিশেষে এটাই বলব, এই ব্যানার এই জন্যই সবার নজর কেড়েছে,  এখানে একজন নয় দুই জন খ্যাতনামা ক্রিকেটার রয়েছেন একই প্রোডাক্টের ব্র্যান্ড দূত হয়ে। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট, কোথায় ছিলেন গান্ধীজী?

১৫০/বি বেলেঘাটা মেন রোড। শিয়ালদহ স্টেশন ও ই-এম বাইপাস এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন কারী মূল রাস্তা - বেলেঘাটা মেন রোড তথা সুরেশ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় রোডের ওপর পড়া এই বিশেষ ঠিকানা টি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে এক গৌরবময় স্মৃতির সাক্ষ্য বহন করছে । বিশেষ করে, প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময় আসন্ন হলে, এই ঠিকানার কথা স্মরণ না করে থাকা যা য় না। কারণ ১৯৪৭ এ গোটা দেশ যখন স্বাধীনতার আনন্দ উদযাপনে ব্যস্ত, বিশেষ করে রাজধানী দিল্লিতে স্বাধীনতা লাভের (১৫ ই আগস্ট) দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখতে আয়োজিত হয়েছে অভূতপূর্ব রাজকীয় সমারোহের - যার শুভ সূচনা হয়েছে, ১৪ ই আগস্টের মধ্যরাতে; ১৫ তারিখ পদার্পণ করতেই দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর ঐতিহাসিক বক্তৃতা দিয়ে শুভারম্ভ হয়েছে স্বাধীনতা দিবস পালনের মহা নির্ঘণ্ট। এই উচ্ছ্বাস যদিও কাঙ্ক্ষিতই ছিল। কারণ দীর্ঘ ২০০ বছরের পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরেই দেশবাসীর কাছে এসে পৌঁছেছিল সে বিরল মাহেন্দ্রক্ষণ। সমাগত হয়েছিল সেই মহা মুহূর্ত যখন প্রায় শত বর্ষ ধরে চলা স্বাধীনতাকামী মহাযজ্ঞে মুক্তিলাভের সিদ্ধি স্পর্শ করছিল তার চূড়ান্ত শিখর দেশ। কিন্তু এই যজ...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...