সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

উইপোকা থেকে ‘উই’কিপিডিয়ার পথে? ফিকশন কিন্তু ফেক নয় !

 

৯৮৭৬৮৫৭৩৮০ – সেলফোনের কী-প্যাডে, নির্দিষ্ট দশ অংকের নাম্বারটা টিপে ডায়াল করতেই কানে ভেসে এল – বিখ্যাত হিন্দি গানের সুরেলা মুখড়া, “পিয়া তু আব তো আ যা”!  দু এক লাইন বেজে যাওয়ার পর কেউ একজন ফোনটা ধরে ভারী গলায় একবার 'হ্যালো' বলেই চুপ করে গেলেন। কোনো জায়গায় ফোন করলে আমার বরাবরের অভ্যাস হল ঠিক জায়গায় কল করেছি কি না সেটা একবার যাচাই করে নেওয়া। এক্ষেত্রেও তার অন্যথা হল না। জানতে চাইলাম, “আচ্ছা, উইপোকার অফিস তো?” উত্তর এল, “হ্যাঁ, বলুন...”  প্রথমবার ফোন করেছি, তাই বেশ বিনয়ের সঙ্গে, যদিও তিনি তা জানতে চাননি, তবু গড় গড় করে তাকে জানিয়ে দিলাম ফোন নাম্বারটা আমি কোথা থেকে জোগাড় করেছি।
গতকাল রাত্রে বাড়ি ফেরার সময় হঠাৎই আমার চোখ চলে যায় রাস্তার ধারে, বিদ্যুতের পোতে সাঁটা পোস্টারটির দিকে।
A-4 সাইজের ঘন বাদামী রঙের পোস্টারটির বিশেষত্ব হল অনেক হাবিজাবি কথা ঠুসে ঢুকিয়ে দেওয়া নেই এর মধ্যে। শুধু ইংরেজিতে লেখা দুটি মোবাইল নাম্বার, আর তার মাঝখানে বড় করে ‘’উইপোকা’ কথাটি লেখা, বাংলায়।  কাছে গিয়ে, ভালো করে দেখলে তবে বোঝা যাবে বেশ কয়েকটি আবছা উইপোকার স্কেচও রয়েছে পোস্টারটির এদিক ওদিক করে। উইপোকাগুলিকে দেখা ইস্তক, আমার জানি না কেন উইপোকা পোষার সাধ জেগেছে মনের মধ্যে। বাড়ি ফিরে, খাওয়ার টেবিলে ছেলে মেয়ের সামনে প্রস্তাবটা রাখতেই ওরা তো কিছুক্ষণ কোনো কথা বলতে পারে না। আক্ষরিক ভাবেই হাঁ করে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে। কিছু ক্ষণ এই ভাবে কাটার পর লক্ষ করলাম, একটা বিস্ময় মাখা কৌতুকের হাঁসি নিয়ে এ-ওর দিকে চাওয়াচায়ি শুরু করেছেনীরবতা ভেঙ্গে আমার ছেলেই প্রথম বললো, “বাবা, তুমি কি উইপোকা সাপ্লাই করার কথা বলে দিয়েছ?” “বলবো কি শোন না...,” আমার কথা শেষ করতে না দিয়েই গিন্নী প্রায় ঝাঁঝিয়ে উঠে বলল “বাড়িতে বই খাতা কিছু কি আর আস্ত থাকবে?” “বলি কি ভেবেছ কি তুমি, আচ্ছা এমন উদ্ভট ভাবনা তোমার মাথায় আসে কোথা থেকে বলতো!”
 রাতে বিছানায় শুয়ে কিছুতেই ঘুম আসছিলো না চোখে। কতকগুলো বেঢপ চিন্তা মাথার মধ্যে ঢুকে প্রায় হানাহানি শুরু করে দিয়েছিলো, বলা যায়। অগত্যা, গড়পড়তা বাঙালি রাতে ঘুম না এলে যা করে আর কি – মোবাইল নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি; আমিও তাই করলাম। মাথার কাছে টেবিল থেকে সেল ফোনটা নামিয়ে একটা একটা করে যত জট পাকানো প্রশ্ন মাথার মথ্যে ঘুরছিল এদিক ওদিক উদ্দেশ্যহীন ভাবে, একে একে সবগুলোকে প্রায় ঘাড় ধরে গুগুল সার্চ ইঞ্জিনের মধ্যে ঢুকিয়েই যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মোবাইলের পর্দায় যেই না ভেসে উঠল অসংখ্য সাদা সাদা পিঁপড়ের মত উইপোকার ছবি, আমার তো আনন্দে একেবারে গদগদ অবস্থা; কারণ আমার বহু আকাঙ্খিত প্রায় 'সেলিব্রিটি' এই প্রাণীটিকে এত কাছ থেকে চাক্ষুষ করতে পারছি। স্বতঃপ্রণোদিত ভাবেই আমার মুখ থেকে বেরিয়ে এল, “কি কিউট!”
শুনতে অবাক লাগলেও, প্রায় ২০০০ এর মত প্রজাতি থাকা এই ‘কিউট’ পতঙ্গটাই যে পৃথিবীর সব থেকে প্রাচীন প্রানীদের মধ্যে একটি, সেটা না মেনে কোনো উপায় নেই। সেই ডাইনোসরের সঙ্গে বাস করা এই উইপোকা প্রায় ১৪ কোটি ৫০ লক্ষ বছর (
Late Jurassic Age) ধরে একই ভাবে টিকে আছে এই দুনিয়াতে।
যুগের পর যুগ পেরিয়ে গেছে, বিবর্তনও এসেছে একের পর এক। বিবর্তনের ধাক্কায় কত কিছু পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে চিরতরে, যাদের অতীত অস্তিত্ব আজ শুধুই ফসিল; অভিশপ্ত অহল্যার মত বরফের তলায় চাপা হয়ে পড়ে আছে। কিন্তু আজও যারা যুগের সঙ্গে সমানে পাল্লা দিয়ে টিকে রয়েছে তারা বিজ্ঞানী ডারউইনের মতে অবশ্যই যোগ্যতম; সে তারা উইপোকার মত ক্ষুদ্র হোক বা না হোক, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যে তাদের মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা অসীম, সেটা বলে দেওয়ার অপেক্ষা রাখে না।
ইতিমধ্যে মোবাইলের স্ক্রিনের আলোয়, পাশে শুয়ে থাকা ছেলের ঘুম ভেঙে গেছে দেখে ফোন বন্ধ করে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ি। ভান করি ঘুমিয়ে পড়ার। ঠিক করে রাখি আগামীকাল ছেলেকে স্কুলে দিয়ে আসার পর আবার ফোন করবো উইপোকার অফিসে। শেষ বার তো আমার কথা শুনে মাঝপথেই ফোন কেটে দিয়েছিলেন উইপোকার ভদ্রলোক। এবার গিন্নীর ফোন থেকে করবো যাতে তিনি বুঝতে না পারেন আমি আবার ফোন করেছি। তবে ভদ্রলোককে আর উইপোকা সরবরাহ করার অনুরোধ করবো না। জাস্ট, তাকে এমন অদ্ভুত বিড়ম্বনার মধ্যে ফেলার জন্য ক্ষমা চেয়ে নেব।
এরমধ্যে, সময় কত হল দেখতে মোবাইলটা আবার অন করি। দেখি ১ টা বেজে ২০ মিনিট। না! আর দেরি করলে, কাল সকালে ঠিক সময়ে ওঠা যাবে না। খানিক জোর করে চোখটা বন্ধ করার চেষ্টা করি। কিন্তু কোথায় কি। দেখি ইতিহাস টিচার বিভূতি স্যার তাঁর স্বভাব সুলভ বেজার মুখে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন, পড়া ধরায় ভঙ্গিমায়। হঠাৎ এত দিন পর কেন যে স্যারের কথা মনে পড়ল এই ভাবে, কে জানে। তবে মনে হচ্ছে, আমি আর এক প্রস্থ কোনো পুরনো স্মৃতির দেরাজের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়েছি। এবার হয়তো স্মৃতির সামান ঝাড় পোঁচ করতে করতেই রাতের ঘুমটা না চলে যায় মায়ের ভোগে
। এদিকে ঘাড়ে পিঠেও কেমন ব্যথা ব্যথা ভাব, যেন কেউ হাত বুলিয়ে দিলে ভালো হয়। বালিশটাকে তাই বুকের কাছে নিয়ে তার উপর উপুড় হয়ে শুয়ে খানিকটা আরাম খোঁজার চেষ্টা করলাম বটে লাভ কিছু হল না।
ঠক ঠক করে কানের কাছে কেউ যেন হাতুড়ি মেরে মেরে মনে করিয়ে দিচ্ছে বিভূতি বাবুর সেই কথা,
“Book Worm,  হও!” “ভালো নম্বর পেতে হলে, উইপোকার মতন বই গুলোকে খেয়ে নাও কুরে কুরে”। স্কুলে, বিভূতি বাবুকে সর্বদা দেখেছি একটা আপাত কাঠিন্যের বর্মে নিজেকে ঢেকে রাখতে। নিঃসন্তান বিভূতি স্যারের শখ বলতে ছিল পুরনো বই সংগ্রহ করা এবং তাকে সন্তান স্নেহে স্কুলেরই লাইব্রেরীতে একটা কাঠের র‍্যাকে গুছিয়ে রাখা। স্যার একদিন ক্লাসে নিজে থেকেই শুনিয়েছিলেন বই আবিষ্কারের ইতিহাস। সেই প্রথম শুনেছিলাম, খ্রিস্টের জন্মের প্রায় ৩০০০ বছর পূর্বে কিভাবে মেসোপটেমিয়ায় প্রথম শুরু হয় মাটির ফলকের উপর (Clay Tablet)  কীলকের সাহায্যে ছবি এঁকে এঁকে তথ্য লিপিবদ্ধ করার কাজ। অবসান হয় শুনে শুনে মনে রাখার দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা প্রথা - শ্রুতির। প্রায় সমসময়ে মিশরের ইজিপ্টে শুরু হয় নীল নদীর দুই ধারে জন্মানো প্যপিরাসের (নল খাগড়া) পাতার উপরে লেখাজোখার পর্বও। তার অনেক পরে আসে ছাগল বা গরুর চামড়ার (Parchment) উপরে লিখে রাখার চল। এবং সবশেষে চীনে কাগজ আবিষ্কার হওয়ার পর শুরু হয় তথ্য সম্বলিত একাধিক কাগজকে একটার পর একটা সাজিয়ে তৈরি করা বইয়ের দীর্ঘ যাত্রাপথের শুভ সূচনা। স্যার যখন এইসব বলতেন, স্যারের চোখ চলে যেত জানালা দিয়ে সোজা ফুটবল খেলার ফাঁকা মাঠটাতে। যদিও, আজকের দিনে ছাপা বইয়ের সর্বশেষ বিবর্তিত রূপ ই-বইয়ের কোনো সংস্করণ স্যার তাঁর জীবৎকালে দেখে যেতে পারেননি।  
আচমকা রাস্তা থেকে ভেসে আসা কুকুরের হল্লায়, নিরবিচ্ছিন্ন স্মৃতি মন্থনে হঠাৎ একটু ছেদ পড়লেও, অচিরেই মনের পর্দায় ভেসে ওঠে খেই হারানো সেই স্মৃতির সুতো; মনে পড়ে যায় - স্কুলে ঘটা সেই বিশেষ দিনকার কথা।
সে দিন স্যার প্রায় মাস খানিক ছুটি কাটানোর বাদে প্রথম স্কুলে এসেছিলেন। ফিরেই সবার আগে ছুটে গেছিলেন তাঁর প্রানাধিক প্রিয় লাইব্রেরীতে; বর্ষা কাল, স্যার কোনোরকম ভেজা ছাতাটাকে বন্ধ করে হন হন করে হেঁটে যাচ্ছিলেন লাইব্রেরীর দিকে। আমরা যে যার ক্লাসে চলে গেছিলাম। কিন্তু কিছু সময় পরে ভীষণ জোর একটা চেঁচামেচিতে যেন ধ্যান ভেঙে জেগে উঠেছিলো পুরো স্কুল বাড়িটা। সবাইকে দেখছিলাম লাইব্রেরীর দিকে ছুটে যেতে। কারণ ওখান থেকেই শব্দটা আসছিল। শেষ পর্যন্ত ওখানে গিয়ে যা দেখেছিলাম সেদিন, তা কোনোদিনই আমার পক্ষে ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। লাইব্রেরীর এক কোণে বসে তথাকথিত কঠিন মেজাজের বিভূতি স্যার হাউ হাউ করে প্রায় বাচ্চা ছেলের মত কাঁদছেন। সন্তান হারানোর দুঃখে মানুষ যে ভাবে কাঁদে, বিভূতি স্যারও বোধহয় সেদিন নিজেকে সামলে রাখতে পারেননি লাইব্রেরীতে রাখা তাঁর দুষ্প্রাপ্য বইগুলোকে এইভাবে উইপোকায় কেটে নষ্ট করে দিয়েছে দেখে। আমাদের সঙ্গে পড়তো সাজিদ রসিকতা করে বলেছিল, স্যার তো বলতেন উইপোকার মতন বইকে কুরে খেতে, আর এখানে তো উইপোকার মতন কেউ নয়, একেবারে স্বয়ং উইপোকায় খেয়েছে। তা দুঃখ করার কি আছে। 
এতদিন পরে তাই আমার মনে হয়েছে বই কে ছেড়ে উইপোকাকে ধরার কথা। হয়ত একটা সময় আসবে কালের গর্ভে নষ্ট হয়ে যাবে বইয়ের ডিজিটাল সংস্করণও। কিন্তু পৃথিবীতে থেকে যাবে সেলুলোজ -খোর উইপোকা এবং সঙ্গে সঙ্গে তার পেটে চলে যাওয়া দুনিয়ার সমস্ত প্রবহমান জ্ঞানের আদি অন্ত। 
আমার প্রিয় সাহিত্যিক, সম্পাদক সুদর্শনদা বড় প্রাচীন পন্থী লোক। তাঁর সম্পাদিত মাসিক সাময়িক পত্র দীঘল পত্রের কোনো ডিজিটাল সংস্করণ উনি বার করেন না। পরের দিন সকালে উঠে প্রথমেই আমি দীঘল পত্রের গাদা পত্রিকাকে ডাঁই করে রেখে এসেছিলাম খিড়কির দরজা লাগোয়া মাটির দাওয়ায়। জানি, কিছু দিন পরে বইয়ের গাদা ঘিরে উইয়ের ঢিপি হবে। আর সেই উইয়ের ঢিপি ভেঙে ঋষি বাল্মিকীর মত বেরিয়ে আসবে উইকিপিডিয়ার নতুন পাতা, যাতে জমা থাকবে সুদর্শনদা সম্পাদিত ম্যাগাজিনের যত গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, সম্পাদকীয়, প্রচ্ছদ নিবন্ধ এবং সব কিছু।
 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...

জনগণমনঃ জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার ইতিহাস ও কিছু প্রশ্নের উত্তর!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ব্রহ্ম সঙ্গীত ‘ জনগণমন অধিনায়ক’ কে দেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে মান্যতা দেওয়ার সর্ব সম্মীলিত সিদ্ধান্ত হয় ১৯৫০ সালের ২৪ শে জানুয়ারি । কিন্তু কেন এত দেরী? দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও কেন তিন বছর সময় লেগেছিল জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন করতে? ‘ভারত বিধাতা’ শিরোনামে লেখা, স্বদেশ পর্যায় ভুক্ত (গীতবিতান অনুসারে) এই রবীন্দ্রগীতিটি কিভাবে -  দেশের জাতীয় সঙ্গীত হওয়ার পথে একটু একটু করে এগিয়ে গেল! ‘জনগনমন’র জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার নেপথ্য কাহিনীই আজ আমরা ফিরে দেখবো এই প্রবন্ধে।  ১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট - দীর্ঘ ২০০ বছর ধরে পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরে অবশেষে দেশবাসীর ভাগ্যাকাশে এসে উপস্থিত হোল বহু আকাঙ্খিত সেই দিনটি। উদিত হোল স্বাধীনতার নতুন সূর্যের।   স্বাধীন হোল দেশ। কিন্তু সদ্য ব্রিটিশ অধীনতা মুক্ত দুটি দেশ ভারত এবং পাকিস্থান তখনও পায় নি স্বতন্ত্র সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা। ১৯৪৭ এর ১৮ই জুলাই তারিখে লাগু হওয়া ভারতীয় স্বাধীনতা আইন অনুসারে নিজ নিজ সংবিধান প্রণয়নের আগে পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্থান এই দুটি ভূখণ্ড কমনওয়েলথ দেশের অধীনস্থ দুটি অধিরাজ্য হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে পারা...