সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

নভেম্বর, ২০২৩ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

জীবনানন্দের মৃত্যু ঃ আত্মহননের উপশম নাকি নিছক দুর্ঘটনা?

ট্রামের ক্র্যাচারে জড়িয়ে গিয়েছিল তাঁর শরীর। গুরুতর আহত অবস্থায় শম্ভু নাথ পণ্ডিত হাঁসপাতালের দু নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন, আট দিন। চিকিৎসকদের সর্বত চেষ্টা এবং নিজের বেঁচে থাকার সমূহ ইচ্ছা সত্ত্বেও শেষ রক্ষা হয় নি। মৃত্যুর মায়ায় পড়ে তাঁকে চিরদিনের জন্যে পাড়ি দিতে হয়েছিলে, পৃথিবীর ওপারে। যিনি বাংলা কবিতার আপাত সরল ধারায় আধুনিকতার দ্বন্দময় খর স্রোত বইয়ে দেওয়ার দায়ে সমালোচিত হয়েছিলেন বারবার। মৃত্যুর দু দিন আগে, যিনি হাঁসপাতালের বেডে শুয়ে বলছিলেন, “আকাশে দেখছি ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’র রং।“  তিনি, কবি। বাংলার চির অভিমানী কবি, জীবনানন্দ দাশ। আপাত দৃষ্টিতে দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু বলে মনে হলেও, মৃত কবির শরীরকে কিন্তু লাশ কাটা ঘরে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় নি। বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায়ের হস্তক্ষেপে, অনিবার্য ব্যাবচ্ছেদের হাত থেকে সেদিন রেহাই পেয়েছিল কবির শরীর। কিন্তু তাতে তাঁর মৃত্যুর কারণ নিয়ে কাটা ছেঁড়া করা থামেনি কোনো ভাবে। অবশ্য তার পেছনে সঙ্গত কারণ ও আছে যথেষ্ট। প্রথমত ট্রামের মত একটি ধীর গতির যানের ধাক্কায় মৃত্যুর নজির প্রায় নেই বললেই চলে। তবে নজির নেই বলেই যে ঘটবে না বা ঘটতে পারে...

সুনীলের নাক বোঁচা হওয়ার নেপথ্য কাহিনী।

বনলতা সেন কে বাদ দিয়ে জীবনানন্দকে ভাবা যায় না। আবার নীরা কে বাদ দিয়ে, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়কে। শুভ্র কেশ যুক্ত লম্বা দাঁড়ি বাদ দিলে যেমন রবীন্দ্রনাথের পরিচিত লুক, একেবারেই ঢিলে পড়ে যায়। তেমনি উদ্দেশ্যহীন ভাবনায় নিমগ্ন দুটি চোখকে বাদ দিলে, জীবনানন্দকে ফুটিয়ে তোলা, অন্তত ছবিতে তো প্রায় অসম্ভবের পর্যায়েই পড়ে। নজরুলের কথা উঠলেই, চোখে ভেসে ওঠে কান ঝাপা কোঁকড়ানো চুলের তরতাজা এক সুদর্শন মুখের। তেমনি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মুখ মনে করতে বসলে, সুনীলের  মঙ্গোলিয়ান শৈলীর মুখাবয়বের সেরা বৈশিষ্ট্য ওই বোঁচা নাকেটাকেই আগে মনে পড়ে। এবারে আসা যাক আসল কথায়। কুলীন ব্রাহ্মণ বাড়ির সন্তান হয়েও, সুনীলের নাক টিকালো হওয়ার পরিবর্তে বোঁচা হল কি করে সে কাহিনী বেশ রসাত্মক এবং রহস্যময়। সুনীল নিজেই বলেছেন তাঁর বংশের কৌলীন্য নিয়ে কোনোরকম প্রশ্নের সম্ভাবনা ছিল না। সুনীলের বাবা কালীপদ গঙ্গোপাধ্যায়, কোনো অসবর্ণের মেয়েকে বিয়ে করেননি। কারণ, তখন বিয়ের ব্যাপারে জাত পাত ছিল প্রধান বিবেচ্য বিষয়। বিশেষ করে ব্রাহ্মণদের কাছে। সুনীল তাঁর আত্মজীবনী ‘অর্ধেক জীবন’ এ লিখছেন – “বংশে একটি বিয়েও ঠিক ঠিক স্ব – বর্ণে না হলে বংশ পতিত হয়ে য...

ফিরিঙ্গী কালী ও অ্যান্টনি সাহেবের কথা!

এখনকার ঠিকানা -  ২৪৪ নং বিপিন বিহারী গাঙ্গুলী স্ট্রিট, বউবাজার, কোলকাতা। কিন্তু আজ থেকে ৫০০ বছর আগে, এই ঠিকানার কোনো তাৎপর্য ছিল না। কারণ কোলকাতা শহরেরই গোড়াপত্তন হয় ১৬৯০ সালে। তারও ২০০ বছর আগে কেমন ছিল এই স্থান, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়াটা এই নিবন্ধের পক্ষে খুব জরুরী। প্রকৃত পক্ষে, ভাগীরথী নদীর বিভিন্ন খাঁড়ি নদীতে বিভক্ত, জলা জঙ্গলে ভর্তি ছিল তখনকার এই কোলকাতা শহরের ভিত্তিভূমি। সেই সময় জনৈক ডোম, যিনি শ্রীমন্ত ডোম নামে তৎকালীন সময়ে পরিচিত ছিলেন স্থানীয় এলাকায়, পাতায় ছাওয়া এক কুটিরের মধ্যে প্রতিষ্ঠা করেন শিব ও শীতলার মূর্তি। নিচু জাতীর বলে, শ্রীমন্ত নিজেই ছিলেন তাঁর মন্দিরের পূজক। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে সেই পর্ণ মন্দিরই আজকের বিখ্যাত, ফিরিঙ্গী কালীর মন্দির। মধ্য কোলকাতার বউবাজার এলাকায় অবস্থিত এই মন্দিরের প্রধান মূর্তি এখন আর শিব বা শীতলার নয়, শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালী মাতা ঠাকুরানীর। মন্দিরেরর পুরোহিতও এখন আর সেই ডোম পরিবারের কেউ নন। এখন মায়ের প্রধান সেবাইত, পোলবার বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা। মন্দিরের গায়ে খোদাই করা যে প্রতিষ্ঠা সালের উল্লেখ রয়েছে সেই অনুযায়ী ৯০৫ বঙ্গাব্দে অর...

কোঝিকোড়কে, ইউনেস্কো দিল সাহিত্য শহরের স্বীকৃতি!

সে আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগের কথা। পর্তুগীজ নাবিক ভাস্কো ডা গামার বাণিজ্য তরী, তার দীর্ঘ সমুদ্র যাত্রার শেষে ১৪৯৮ সালের এক শীতের সকালে এসে পৌঁছল, কেরালার মালাবার উপকূলে। চুম্বকে, সেই স্থানটির নাম ছিল কালিকট। জাহাজ থেকে অবতরণের পর ভাস্কো ডা গামা, কালিকটের সোনালী সৈকতেই প্রথম তাঁর পা রেখেছিলেন। প্রকৃত পক্ষে ভাস্কো ডা গামার এই মহা পদার্পণের সঙ্গে সঙ্গে, ইউরোপীয় দেশ গুলির সামনে উন্মোচিত হয়ে গিয়েছিল ভারত নামক এক নতুন সম্ভাবনার দরজা। আবিষ্কৃত হয়েছিল ভারত ভূখন্ডের মধ্যে প্রবেশ করার প্রথম গেটওয়ে, কালিকট। যা বর্তমানে কোঝিকোড় নামে পরিচিত। অতীতে, মশলার শহর হিসেবে কোঝিকোড়ের খ্যাতি ছিল বিশ্ব জোড়া। ২০২৩ এ এসে কোঝিকোড়ের মুকুটে জুড়ল আর এক মর্যাদার পালক। কারণ, ইউনেস্কো City of Spices কে দিল City of Literature এর সম্মান। ইউনেস্কো কৃত সৃজনশীল শহরের তালিকায় (UCCN - UNESCO's Creative Cities Network) এবছর ঢুকে পড়ল কেরালার এই উপকূলবর্তী শহরের নাম। ৩১ শে অক্টোবর, বিশ্ব নগর দিবসের সন্ধ্যায় ইউনেস্কো মহাসচিব,  Audrey Azoulay তাদের  অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে বিবৃতি দিয়ে জানালেন কোঝিকোড়কে এই স্বীক...

ঘাটশিলায় বিভূতিভূষণের অন্তিম দিনের কথা!।

ঘাটশিলা এবং বিভূতিভূষণের মধ্যে সম্পর্ক ছিল আত্মার সঙ্গে শরীরের। একান্ত নিবিড় এবং পরম আত্মীয়তার। 'চাঁদের পাহাড়' এর লেখককে তাঁর ঘাটশিলা যাপনের কথা বাদ দিয়ে বিচার করার ভাবনা, সূর্যকে বাদ দিয়ে সৌরজগতের বর্ণনা করার মত অর্থহীন। কারণ, বিভূতিভূষণের শুধু সেরা সৃষ্টি গুলির পটভূমিই ছিল না ঘাটশিলা, বাংলা সাহিত্যের প্রথম আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস 'পথের পাঁচালী' র সৃজণভূমিও ছিল বন্য নান্দনিকতায় ভরা এই নাতি উচ্চ পাহাড়ী জনপদটি। অন্তত, 'পথের পাচালী' র সূচনা পর্ব গুলি বিভূতিভূষণ লিখেছিলেন এখানে বসে। ঘাটশিলায়, বিভূতিভূষণ প্রথম এসেছিলেন কাজের সূত্রে। খেলাত ঘোষ এস্টেটের সহকারী ফরেস্ট ম্যানেজার হিসেবে। প্রকৃত পক্ষে ঘাটশিলা ছিল বিভূতিভূষণের Love at first sight। আমৃত্যু সেই প্রেমে বিচ্ছেদ ঘটেনি। জীবনের শেষ নিঃশ্বাসটাও নিয়েছিলেন এই ঘাটশিলাতেই। ১৯৫০ সালের ১লা নভেম্বর, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় বিভূতিভূষণের। মাত্র  ৫৬ বছর বয়সে। বাংলা সাহিত্যের এই মহান লেখকের মৃত্যু দিনের, রোমহর্ষক ঘটনার কথা  অনেকেরই অজানা। কিন্তু সেই দিনকার ঘটনা পরম্পরার উপর আলোকপাত করার  আগে একটু প্রেক্ষাপটটা ...