সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

জুলাই, ২০২৪ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

খুঁটি পুজা এবং কোলকাতার বাটাম ক্লাব!

ত্রিশূলধারিনী মা দুর্গা আর কবে উপেক্ষা করতে পেরেছেন মাতৃবৎসল সন্তানের কাতর আহ্বান ? সেই রামায়ণের সময় থেকে, বারংবার তিনি তার নিদর্শন দিয়ে এসেছেন । ভাবুন একবার , লঙ্কেশ রাবনের হাত থেকে প্রাণাধিক পত্নী সীতাকে উদ্ধার করতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হয়ে যাওয়া দশরথ নন্দন যখন দেবীর শরণাপন্ন হলেন , তিনি সটান সব নিয়ম ভেঙে তাঁর বসন্ত কালীন যাত্রা কে এগিয়ে আনলেন একেবারে শরতের রোদ বৃষ্টির মধ্যে। অবতার শ্রেষ্ঠ রামের ব্যাকুল আহ্বানে শেষমেশ অকাল বোধন হয়ে গেল মহিষাসুরমর্দিনী দেবী দুর্গার। এবং কালে, কালে মা তাঁর শরৎকালীন অধিবাসেই নিজেকে মানিয়ে নিতে শুরু করলেন। বিশেষ করে বাংলার বর্ষা উত্তর সজল , স্নিগ্ধ শিউলী, শালুকের শুচি-শুভ্র বন্দনায় মা বিগলিত না হয়ে পারলেন না। তখন ১৪৮০ খ্রীস্টাব্দ। রাজশাহী জেলার তাহিরপুরের রাজা কংস নারায়ণের উদ্যোগে দুর্গা পুজো শুরু হলো রাজবাড়ীর মন্দিরে। সূচনা হলো রাজবাড়ীতে বাৎসরিক দুর্গা আরাধনার। এরপরে যে বিখ্যাত রাজবাড়ীর পুজার কথা জানা যাচ্ছে , তা - কৃষ্ণনগর রাজ বাড়ীর পুজো।  সে সময় দিল্লিতে চলছে, মোঘলদের শাসন। মোঘল সম্রাট আকবরের কথিত রাজত্ব কালেই (১৫৬৯-১৬০৫) শুরু হয়েছ...

পাতাখোরের বৃষ্টি বিস্ময়!

কোনো একদিন এক পাতাখোর, শিয়ালদহ স্টেশন থেকে বেরিয়ে বাঁদিকের - রেল ব্রীজের ওপরে বসেছিল, দু পা ছড়িয়ে। একেবারে রাজার মেজাজে। ঘোলাটে চোখে, ব্রীজের তলা দিয়ে হরেক ট্রেনের যাওয়া আসা লক্ষ করছিল নিবিষ্ট দৃষ্টিতে। পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়ে ছিল নোংরা ঝুল কালো কম্বল আর ছেঁড়া কাঁথার কুণ্ডলী, যেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে উপবিষ্ট সম্রাট পঞ্চম জর্জের পায়ে কৃষ্ণ পাথরে তৈরি কুঞ্চিত উত্তরীয় লুটোচ্ছে রাজ আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে। হয়তো কোনো পাগলের ফেলে যাওয়া জিনিসপত্র এগুলো। তার উপরেই বসেছিল সে। পাশে নীলরতন সরকার মেডিকেল কলেজের বড় কদম গাছটি পাঁচিলের ওপার থেকে তার উপুড় ডালাপালা মেলে একেবারে ঝেঁপে থাকে ব্রীজের ওপরে। তারই ছায়ার নীচে, পাতাখোরদের মুক্ত রাজত্ব। তা বেশ ছিল। হঠাৎ ঝেঁপে এল বৃষ্টি। কিছুটা সময় পাতার সাহারা পেয়েছিল বটে পাতাখোর টি। কিন্তু সে আর কতক্ষন! খানিক বাদেই ভেজা পাতা চুইয়ে মাটির দিকে ঝুলে থাকা কদম্ব পল্লবের সূচালো অগ্রভাগ দিয়ে টপকাতে লাগলো বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা। কোনটা পড়ল তার মাথায়, কোনটা তার দীর্ঘ অযত্নে বেড়ে ওঠা লালচে দাঁড়ির চুলে, কোনটা ভুসা কালির কদর্য ছোপ লেগে থাকা, কলার ছেঁড়া জামায়...

সবুজ ছাদের নীচে ফুটপাথের দিনরাত!

আকাশের ছাদ, নীল। আর মেঘের ছাদ - কখনো আমলকী-সবুজ রঙের ছানা কাটা দুধে ভরা উল্টানো কড়াই তো কখনো ফুলো ফুলো সাদা তুলোর মত সংযুক্ত রাষ্ট্রের ছেঁড়া মানচিত্র। কখনো শুভ্র ফেনিল উচ্ছ্বাস তো কখনো ধূসর, ঘন নিশ্চল ক্যানভাস। যে ক্যানভাসে হঠাৎ অশনির ঝিলিক - মেঘের ছাদ ভেঙে পডার বার্তা বয়ে আনে, মুগ্ধতার বিস্ময় ভেঙে। আকাশের ছাদ গলে পড়া রোদ্দুর, কখনো বিকিনি বেলার আদুরে চুম্বন ধারা তো কখনো গলিত লাভার স্পর্ধিত, দুঃসহ ছ্যাঁকা। কখনো আঁধার মুক্তির আশার আশিস রেখা, কখনো ওজন মুক্ত অতি বেগুনি রঙের কর্কশ, কর্কট সংক্রান্তি রেখা। তবু যদি আকাশ ঢাকে মেঘের শামিয়ানায়, ছায়া তার শতরঞ্জি পেতে দেয় মাঠে, ঘাটে, বাজারে, ফুটপাথে। কিন্তু তাও তো স্থায়ী হয় না! কারণ মেঘের সে ছায়াসুখ, অচিরেই যে ছিন্ন হয়ে পড়ে। তখন মেঘের ছাদ গলে নেমে আসে, সজল বৃষ্টি ধারা। সুখের সুললিত জানালায় হয়তো তা পূর্ণিমার আলোর মতন রূপোলী জলপ্রপাত কিন্তু দুঃখের ছাদহীন শিয়রে তাই বিষমাখা জলবাণ পতনের সকরুন উৎপাত বৈ কিছু নয়। তখন মাথা গোঁজার কেবল একটাই ঠাঁই থাকে অক্ষত - পাতায় পাতায় হাত ধরাধরি করা নিটোল, নিকষ ঘন সবুজ ছাদ যার নীচে নিশ্চিন্তে হেঁটে যায়...

কলেজ স্ট্রীটের প্রাচীনতম বইয়ের দোকানে কিছুক্ষণ!

  এ ক শনিবারের দুপুরে কলেজ স্ট্রিটে হানা দিয়েছিলাম মেয়ের জন্য ক্লাস ইলেভেনের নৃ-তত্ত্ববিদ্যার পাঠ্য বই কিনবো বলে। এ দোকান , ও দোকান ঘুরে বই খুঁজে না পেলেও খুঁজে পেয়ে গেলাম ২০০ বছরেরও বেশী প্রাচীন কলেজ স্ট্রিটের বুকে এখনও টিকে থাকা সবচেয়ে পুরনো বই দোকানটিকে। ৫৪/৩ কলেজ স্ট্রিট , দাশগুপ্ত অ্যান্ড কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড। দ্বিশতবর্ষ প্রাচীন (১৮১৭) প্রেসিডেন্সি কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে রাস্তার উল্টোদিকে তাকালে নজরে পড়বে এই দোকানের হোর্ডিং। ' বড় দোকান ' বলে পরিচিত এই দোকান চলছে সেই ১৮৮৬ সাল থেকে। তবে শুরুর দিনে অর্থাৎ ১৮৮৬ তে কিন্তু দোকানের অবস্থান এখানে ছিল না, বর্তমানে যেখানে রয়েছে। দোকানটি প্রথমে চালু হয়, শ্যামাচরন দে স্ট্রীটে। দীর্ঘ ১৬ বছর সেখানে থাকার পরে ১৯০২ সালে, উঠে আসে বর্তমান ঠিকানায়।  এখন দোকানে ঢুকলেই চোখে পড়বে বড় বড় মোটা অক্ষরে লেখা - বুক সেলার্স সিন্স ১৮৮৬। ক্রেতাদের ভিড় সামলে দোকানের বর্তমান কর্ণধার অরবিন্দ দাশগুপ্ত শুধু বললেন , " এখনও কলেজ স্ট্রিট দিয়ে ট্রাম চলে তবে তা বৈদ্যুতিক। এই দোকানের প্রতিষ্ঠার সময়ে চলতো ঘোড়ায় টানা।" জিজ্ঞাসা করলাম প্...

সত্যজিৎ এর সিনেমাটোগ্রাফার সুব্রত মিত্রের ‘হেরিটেজ’ বাড়ির বর্তমান দশা!

মেঘলা দিনে , বাড়ির সামনে এত গাছ গাছালী - শাখা প্রশাখা মেলা  বড় নিম , বুড়ো গোলাজ ফুলের ডালা পালা তো - বাড়ির দেওয়ালে গা লাগিয়ে উঠে গেছে একেবারে চিলে কোঠা ছাড়িয়ে , তার সঙ্গে গেটের কাছে বিশাল একটা কদম গাছ , যার ঘন পাতার ছাউনিতে দিনের আলো থমকে দাঁড়ায় , নীচে আসতে পারে না । বাড়ির সামনেই কমন পাঁচিল দক্ষিণ কোলকাতা গার্লস কলেজের । বিশাল বড় দেবদারু গাছ সারা বছর ঝেঁপে থাকে বাড়ির উঠোনের উপরে । ভালো করে না দেখলে বোঝা যাবে না ওটা কলেজের গাছ । বৃষ্টির দিনে ছায়া আর পাতা গলে পড়া বৃষ্টি ফোঁটায় উঠোনের মাটি কেমন স্যাঁতস্যাঁতে , শ্যাওলা সবুজ হয়ে থাকে । ফাঁক ফোঁকর গলে যতটুকু আলো পড়ে তাও ঠিকঠাক প্রতিফলিত হতে পারে না । সত্যজিৎ রায় যদি এখানে কোনো ছবির শুটিং করতেন নির্ঘাত   চিত্রগ্রাহক সুব্রত মিত্রের কথাই তাঁর মনে পড়তো, সর্বপ্রথম ।  ' অপরাজিত ' এর সেটে যেভাবে সাদা কাপড়ের ফ্রেমে স্টুডিওর কৃত্রিম আলো ফেলে দিনের পর্যাপ্ত আলোর অনুভব এনেছিলেন এখানেও নিশ্চিত একইভাবে আলোর বন্যা ...