সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সবুজ ছাদের নীচে ফুটপাথের দিনরাত!

আকাশের ছাদ, নীল। আর মেঘের ছাদ - কখনো আমলকী-সবুজ রঙের ছানা কাটা দুধে ভরা উল্টানো কড়াই তো কখনো ফুলো ফুলো সাদা তুলোর মত সংযুক্ত রাষ্ট্রের ছেঁড়া মানচিত্র। কখনো শুভ্র ফেনিল উচ্ছ্বাস তো কখনো ধূসর, ঘন নিশ্চল ক্যানভাস। যে ক্যানভাসে হঠাৎ অশনির ঝিলিক - মেঘের ছাদ ভেঙে পডার বার্তা বয়ে আনে, মুগ্ধতার বিস্ময় ভেঙে।

আকাশের ছাদ গলে পড়া রোদ্দুর, কখনো বিকিনি বেলার আদুরে চুম্বন ধারা তো কখনো গলিত লাভার স্পর্ধিত, দুঃসহ ছ্যাঁকা। কখনো আঁধার মুক্তির আশার আশিস রেখা, কখনো ওজন মুক্ত অতি বেগুনি রঙের কর্কশ, কর্কট সংক্রান্তি রেখা। তবু যদি আকাশ ঢাকে মেঘের শামিয়ানায়, ছায়া তার শতরঞ্জি পেতে দেয় মাঠে, ঘাটে, বাজারে, ফুটপাথে। কিন্তু তাও তো স্থায়ী হয় না! কারণ মেঘের সে ছায়াসুখ, অচিরেই যে ছিন্ন হয়ে পড়ে। তখন মেঘের ছাদ গলে নেমে আসে, সজল বৃষ্টি ধারা। সুখের সুললিত জানালায় হয়তো তা পূর্ণিমার আলোর মতন রূপোলী জলপ্রপাত কিন্তু দুঃখের ছাদহীন শিয়রে তাই বিষমাখা জলবাণ পতনের সকরুন উৎপাত বৈ কিছু নয়।

তখন মাথা গোঁজার কেবল একটাই ঠাঁই থাকে অক্ষত - পাতায় পাতায় হাত ধরাধরি করা নিটোল, নিকষ ঘন সবুজ ছাদ যার নীচে নিশ্চিন্তে হেঁটে যায়, বসে রোদ পোহায়, শুয়ে থাকে শহরের যত বাঁধানো ফুটপাথ।

রাতে ত্রিফলা আলোর ব্যঞ্জনায়, হাওয়া এসে এখানে ম্যাজিক দন্ড ছুঁয়ে দিয়ে যায়। চকিতে রূপকথা হয়ে যাওয়া সবুজের মহিমা, চলকে চলকে পড়ে ফুটপাথের ষড়ভুজী টাইলসের রঙচটা সমতলী চাতালের বুকে। দিনের বেলার ঘাম, জল দিয়ে ধোয়া সবুজের ছাদের তলায় শুয়ে নিদ্রাচ্ছন্ন ফুটপাথ স্বপ্ন দেখে - হতশ্রী মানুষগুলো, তার শরীর আঁকড়ে বাঁচতে চাইছে; বাঁধতে চাইছে নতুন সংসার। সুচতুর স্বপ্নের বাজার বসানো ভোরের স্বপ্ন যদি ভেঙে যায় বুলডোজারের ভূমিকম্পে! ভয়ে, ভয়ে থাকে। সবুজ ছাদের তলায়, অলস পাশ ফিরে শোয় ঘুম ভাঙা ফুটপাথ।
ছবিগুলি কোলকাতারই এখনো অদখলীকৃত কোনো এক ফুটপাথের। অপূর্ব সবুজের ছাদ, মাথায়। তলায় লম্বা, আঁকাবাঁকা ফুটপাথ শুয়ে, সু-শ্যামল আচ্ছন্নতায়।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...

জনগণমনঃ জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার ইতিহাস ও কিছু প্রশ্নের উত্তর!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ব্রহ্ম সঙ্গীত ‘ জনগণমন অধিনায়ক’ কে দেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে মান্যতা দেওয়ার সর্ব সম্মীলিত সিদ্ধান্ত হয় ১৯৫০ সালের ২৪ শে জানুয়ারি । কিন্তু কেন এত দেরী? দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও কেন তিন বছর সময় লেগেছিল জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন করতে? ‘ভারত বিধাতা’ শিরোনামে লেখা, স্বদেশ পর্যায় ভুক্ত (গীতবিতান অনুসারে) এই রবীন্দ্রগীতিটি কিভাবে -  দেশের জাতীয় সঙ্গীত হওয়ার পথে একটু একটু করে এগিয়ে গেল! ‘জনগনমন’র জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার নেপথ্য কাহিনীই আজ আমরা ফিরে দেখবো এই প্রবন্ধে।  ১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট - দীর্ঘ ২০০ বছর ধরে পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরে অবশেষে দেশবাসীর ভাগ্যাকাশে এসে উপস্থিত হোল বহু আকাঙ্খিত সেই দিনটি। উদিত হোল স্বাধীনতার নতুন সূর্যের।   স্বাধীন হোল দেশ। কিন্তু সদ্য ব্রিটিশ অধীনতা মুক্ত দুটি দেশ ভারত এবং পাকিস্থান তখনও পায় নি স্বতন্ত্র সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা। ১৯৪৭ এর ১৮ই জুলাই তারিখে লাগু হওয়া ভারতীয় স্বাধীনতা আইন অনুসারে নিজ নিজ সংবিধান প্রণয়নের আগে পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্থান এই দুটি ভূখণ্ড কমনওয়েলথ দেশের অধীনস্থ দুটি অধিরাজ্য হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে পারা...