সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

অক্টোবর, ২০২৪ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

গঙ্গা তীরের শ্মশানে গড়ে ওঠা ঠনঠনিয়া কালীবাড়ির ইতিকথা!

ইংরেজ সাহেব জোব চারনক কর্তৃক কথিত কোলকাতা শহরের গোড়াপত্তন হয় ১৬৯০ সালে। গঙ্গার পাড় ধরে তখন জলা জঙ্গলে ভর্তি ছিল সুতানটি, গোবিন্দপুরের বিস্তীর্ণ পশ্চিম অংশ। কোথাও কোথাও আবার ছিল শ্মশান।  নদীর ধারে শ্মশান থাকাটাই বরাবরের ঐতিহ্য। কিন্তু এমন জলা জঙ্গল বেষ্টিত শ্মশান থেকে প্রায়শই ভেসে আসতে শোনা গেল  ঠনঠন করে ঘণ্টা বাজার শব্দ! তখন অষ্টাদশ শতাব্দীর সূচনা লগ্ন, আনুমানিক ১৭০৩ সাল, বাংলায় ১১১০। কিন্তু সকাল, সন্ধ্যা য় কেই বা বাজায় এই ঘণ্টা?  কথায় আছে ভগবান তাঁর পূজার স্থল নিজেই নির্বাচন করেন। ঠনঠনিয়া কালীবাড়ির সিদ্ধেশ্বরী কালীর মূর্তি!  কোলকাতা শহরের প্রাচীন কালী মন্দিরগুলোর মধ্যে অন্যতম ঠনঠনিয়া কালীবাড়ির মা সিদ্ধেশরীও তাঁর আজকের ঠিকানা কলেজ স্ট্রীট মোড় থেকে অদূরে - বিধান সরনীর ওপরে অবস্থিত কথিত ঠনঠনিয়া কালীবাড়ির বর্তমান অবস্থান নিজেই ঠিক করে নিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে মা  তাঁর মাধ্যম করেছিলেন এক ভবঘুরে তন্ত্রসাধককে। উদয়নারায়ন ব্রহ্মচারী নামের সেই মাতৃ সাধক তাঁর সাধনার লক্ষ্য বিন্দু ঠিক করতে নিজের হাতে ই , জল মাটি দিয়ে গড়েছিলেন মায়ের মূর্তি। প্রসঙ্গত ঠনঠনিয়া কালীবাড়ির মাতৃ মূর্...

‘মিথ্যেবাদী’ ইয়াকুব ও সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়!

কল্পনা আসলে এক রকমের আগুন। যে আগুন সব মানুষের মধ্যেই থাকে, তবে ছাই চাপা হয়ে। কল্পনার আগুন ছাড়া এমনকি বিজ্ঞানেও নতুন কোনো আবিষ্কার সম্ভব নয়। সাধারণত শিশু বয়সে যদি সেই আগুন উসকে ওঠার সুযোগ পায় তাহলেই ভবিষ্যৎ জীবনে কল্পনা প্রবণ মানুষ হিসেবে বড় হয়ে ওঠার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়। বিশেষ করে সাহিত্য কলা বা শিল্প সংস্কৃতির জগতে, যেখানে নিত্য কল্পনার চাষ, সেখানে সফল হতে গেলে অবশ্যই একজনকে কল্পনা শক্তির অধিকারী হতে হয়।   যদিও কল্পনা প্রবণদের অন্যদের তুলনায় অনেক বেশী দুঃখ সহ্য করতে হয় কারন কল্পনাতে আকাশ আর জমিন সহজে মিশে যেতে পারলেও বাস্তবে তা গাঁজাখুরি ছাড়া কিছু নয়। বয়স বাড়লে কিন্তু হাজার প্রণোদনাতেও কল্পনার আগুন আর জ্বালানো সম্ভব হয় না।  কারন বাস্তবের রূঢ় অভিজ্ঞতা সেই আগুনকে স্ফুরিত হতে দেয় না, আমৃত্যু দমিয়ে রাখে তাকে।   এবারে প্রশ্ন শিশুবেলার সেই অবোধ বিস্ময় ঠিক কোন রসায়নে কল্পনার রসদে পরিনত হয়,  যা দিয়ে শিল্প সাহিত্যের আঙিনায় ফুটে ওঠে কালজয়ী সব ফুল? সম্ভবত রূপকথার গল্প – সে বইয়ের মুদ্রিত অক্ষরে হোক কিংবা ঠাকুরদা ঠাকুমার মুখ থেকে শোনা পুরানের কাহিনী থেকে। যদিও বর্তমানে বিভিন্ন...

শালুক সন্ধানে!

  শালুক দিয়েই শ্রী রামচন্দ্র, দেবী দুর্গার  অকাল বোধন সম্পন্ন করেছিলেন । সে ত্রেতা যুগের কথা। রামায়ণের কালে। আসলে সেই সময়েও - সোনার লঙ্কার  পুকুর ,  দীঘি ,  সরোবর চারিদিকেই রাশি রাশি নীল শাপলা ফুটে থাকতো। " আশ্বিনের শারদ প্রাতে " তাই রঘুনন্দন শ্রী রাম ১০৮ খানা নীলকমল দিয়েই সেরেছিলেন দেবীর আরাধনা।   সাদা শাপলা আজো দেবীর পুজোয় তাই শালুক ফুলের ভীষণ কদর। নবমীর পুজোর ডালিতে থাকতেই হবে নীল শাপলা। রাবন বধ সাঙ্গ হয়েছে কত সহস্র বছর। কিন্তু রাবনের দেশ আজও ভোলেনি নীল মাহানেল কে।   শ্রীলঙ্কায় শালুককে নীল মাহানেল নামেই ডাকা হয়। তাই তদানীন্তন স্বর্ণলঙ্কা , অধুনা দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কায় - শালুক পেয়েছে জাতীয় ফুলের সম্মান। এ কথা ঠিক , অকাল বোধন করে শ্রী রাম আসলে লঙ্কা পতি রাবনকেই বধ করার রাস্তা পরিস্কার করেছিলেন কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না ক্ষত্রিয় রামের হয়ে দেবীর সেই আবাহনী অর্চনায় মুনি পুত্র রাবনই ছিলেন মূল তন্ত্র ধারক। তাই কথিত ১০৮ টি শালুক ফুল আসলে রাবনের হাত দিয়েই অর্পিত হয়েছিল দেবীর পায়ে। শালুক...

মায়ের জীবনে ট্র্যাজেডি!

আমি মা, আমিই এই সৃষ্টির মূল কারিগর। এই প্রকৃতি, নদী, সাগর, পাহাড়, মালভূমি সব আমার ইচ্ছেয় গড়ে উঠেছে। রাত্রির অন্ধকার, ভোরের আলো, অপরাহ্নের বৈরাগ্য - স্রেফ আমার ঈশারাতেই সুখ দুঃখের ব্যঞ্জনা বয়ে আনে। ফুল ফোটা না ফোটা তাও নির্ভর করে আমার ওপরেই। পাখিদের কলতান, গাছে গাছে বাতাসের মর্মর ধ্বনি সব আমার বীনার তারে ওঠা সুর মূর্ছনা হয়ে বেজে যায়। আমার অমোঘ লীলার ছোঁয়াতেই পাতার রং সবুজ, ফুলের বর্ণ গোলাপী। আমার সৃষ্টির অমোঘ জাদুময়তায়, শুঁয়োপোকা অবলীলায় প্রজাপতি হয়ে যায়, নদী দিকভ্রান্ত হয়ে বয়ে যায় দুকূল প্লাবিত করে, সমুদ্রের জলস্ফীতি মুদ্রা স্ফীতির মত বেড়ে চলে দিনদিন। আমার চেতনার গর্ভ থেকেই জন্ম নিয়েছে অতীত, সেজে উঠছে বর্তমান, দিগন্তের ওপারে আঁকা হচ্ছে অনাগত ভবিষ্যতের ছবি। সময়ের বিবর্তন সেও আমারই খেলা। হাট থেকে বাজার, বাজার থেকে বাজার অর্থনীতি এমনকি শেয়ারের উত্থান পতন ও গিরগিটির মত নিত্য রং বদলায় রূপান্তরের অঙ্গ হিসেবে। কাশফুলের দোলা দিয়ে আমিই কবির ভাবনায় নীলাকাশে ভেসে মাওয়া অমন কিম্ভুতকিমাকার মেঘ গুলোকে পর্যন্ত শারদীয় ফেনিল উচ্ছাসের সঙ্গে তুলনা করতে উদ্বুদ্ধ করেছি। শিউলি তলায...

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...