সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

ধর্মতলার শিমুলতলা ও বসন্ত!

পৃথিবীতে যে কটি জায়গা রয়েছে যেখানে প্রতিটি মুহূর্তই ছবি হয়ে উঠতে পারে, কোলকাতার ধর্মতলা অবশ্যই তাদের মধ্যে একটি। অনেকটা আলিবাবা চল্লিশ চোর গল্পের সেই খাজানা ভর্তি গুহার মতন, কোনটা ছেড়ে কোনটা নেব অবস্থা হয় এখানে এলে। সিগন্যালের লাল সবুজ, এখানে যে ধরনের নাটকীয়তা আনে যানবাহনের গতি মুখরতায় তা এককথায় স্বর্গীয় অথবা নারকীয় ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। ধর্মতলার শিমুলতলা! মানুষজনের তুমুল ব্যস্ততা দেখে মনে হয় কুম্ভমেলার মাহেন্দ্রক্ষণ বুঝি এই বেরিয়ে গেল হাত থেকে। বিশেষ করে দূরপাল্লার বাস স্ট্যান্ড গুলোর দিকে, বোঁচকা বুঁচকি, লটবহর সমেত মানুষের ছুটে যাওয়ার দৃশ্য ধর্মতলার একটি অতি পরিচিত ছবি। এখানে সবাই ছুটে চলেছে নিশ্চিত অথবা অনিশ্চিত গন্তব্যের পথে। নিত্য যাতায়াতের তোড়ে, ধর্মতলা যেন কোনো সুনাব্য নদীখাত, শত শত মলিন অমলিন, সুখে দুঃখে থাকা মুখচ্ছবি গুলো নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে ভেসে চলে কাতারে কাতারে যানবাহনের চলমান জানালার ধারাস্রোত ধরে। কিন্তু এত ব্যস্ততার মাঝেও দু একটা পাগল রয়েছে যারা কে সি দাশের মিষ্টি দোকানের সামনে দাঁড়িয়েও, অবলীলায় সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে টিপু সুলতান মসজিদের দ...

কার্জনের ঘাড়ে বাংলা ভাষার দায়!

১৯০৫ সালে বঙ্গ ভঙ্গের ফতোয়া দিয়েছিলেন তিনি, যদিও তার ফল হয়েছিল উল্টো। ব্রিটিশ শক্তি বিরোধী আন্দোলনে এসেছিল নতুন জোয়ার। কলম ধরেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ। ঈশ্বরের কাছে বাংলার ঐক্য এবং সমৃদ্ধি প্রার্থনা করে লিখেছিলেন, “বাংলার মাটি, বাংলার জল, ...পুণ্য হউক পুণ্য হউক হে ভগবান।" সে সময়কার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে বাংলাকে ভাগ করার সেই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বাংলা ভাষাই সেদিন  দুই দিকের মানুষকে এক সুতোয় বেঁধে রেখেছিল। কার্যত শাপে বর হওয়া এই বঙ্গ ভঙ্গের প্রস্তাব, পরোক্ষে বাংলা ভাষার অন্তর্নিহিত শক্তিকেই পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করেছিল।  পরিনাম – বঙ্গ ভঙ্গের প্রস্তাব যার মাথা থেকে বেরিয়েছিল সেই তদানীন্তন ভাইসরয় লর্ড কার্জনকেই শেষ পর্যন্ত সরে যেতে হয়েছিল তাঁর পদ থেকে। লর্ড কার্জন ভারত ভাইসরয় হিসেবে, তদানীন্তন ভারত রাজধানী কোলকাতায় পদার্পণ করেন ১৮৯৯ সালের জানুয়ারী মাসে। তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ ভাইসরয়, পূর্বতন লর্ড এলগিনের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। ১৯০৫ এর ১৬ই আগস্ট তারিখে, রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড এর নির্দেশে কার্জনের সাত বছরের শাসনকাল শেষ হয়ে যায়। কিন্তু কার্জন চ...

মাতৃভাষায় জেনারেশন গ্যাপ!

মাতৃভাষা মায়ের ভাষা, আমার ভাষা তবে কি? প্রশ্নটা কি একটু অর্বাচীনের মত করা হয়ে গেল? বোধহয় নয়। আমার ভাষায় তো মা কথা বলেন না, আমিও মায়ের ভাষায় কথা বলি থোড়িই। তাহলে কি দাঁড়ালো, মাতৃভাষায় - জেনারশন গ্যাপ ! সে গদগদ স্বরে যতই বলি না কেন মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধের সমান কিন্তু সে  তো জন্মের পরে ছয়মাস অবধি। তারপরে? সব গুবলেট হয়ে যাচ্ছে তো? সারা পৃথিবী জুড়ে মাতৃভাষা দিবস পালনের এত ঘটা, অমর একুশে বলে চেঁচিয়ে আকাশ বাতাস ফেড়ে ফেলা, মাতৃভাষা রক্ষার লড়াইয়ে মৃত্যু বরণ করা বীর শহিদদের কথা মনে করে গৌরবে বুক ফুলে ওঠা এ সবের কি তবে কোনো তাৎপর্য নেই? আছে, অবশ্যই আছে। পৃথিবীর সমস্ত সংরক্ষণ যোগ্য বস্তুর নামেই ইউনেস্কো এক একটি আন্তর্জাতিক দিবস পালনের ফতোয়া দিয়ে রেখেছেন। সে মাতৃ দিবস হোক কি মাতৃভাষা দিবস। মায়েদের ঠিকানা যেমন বৃদ্ধাশ্রমে, মাতৃভাষার অস্তিত্ব ও তেমনি আজ সাহিত্যের চতুরাশ্রমে নির্বাসিত হয়েছে। তবে হ্যাঁ, গ্রামীন চাষাভুষা মানুষের মুখে এখনও বাংলাই একমাত্র ভাব বিনিময়ের মাধ্যম। সেও উপায়ান্তর নেই বলে। আজকাল গ্রামের লোকেরাও তাদের ছেলেমেয়েদের ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করানোর পক্ষে। যেখানে বাংলা আবার মুখ্য ভা...

ভ্যালেন্টাইন ভ্রান্তি।

ভ্যালেন্টাইন আর প্রেম ব্যাপারটা প্রায় সমার্থক হয়ে উঠেছে। ক্যালেন্ডারের পাতায় ১৪ই ফেব্রুয়ারী তারিখটি - নামে ভ্যালেন্টাইন ডে হিসেবে পালিত হলেও, আম জনতার চোখে তা প্রেমের দিন হিসেবেই পরিগণিত হয়। বিশেষ করে প্রেমিক প্রেমিকাদের কাছে ভ্যালেন্টাইন নামটি শুধু মাত্র প্রেমের দ্যোতনা নিয়েই হাজির হয়। তাদের কাছে ভ্যালেন্টাইন ডে মানে নিখাদ প্রেম উদযাপনের দিন বৈ কিছু নয়। যদিও ৭ই ফেব্রুয়ারী থেকে ধাপে ধাপে প্রথমে রোজ ডে, তারপরে প্রপোজ ডে, পরের দিন চকোলেট ডে, এই ভাবে ক্রমান্বয়ে টেডি ডে, প্রমিস ডে, হাগ ডে এবং কিস ডে' হয়ে শেষে ভ্যালেন্টাইন ডে এসে হাজির হয়। সারা সপ্তাহ ধরে চলে ভ্যালেন্টাইন ডে পালনের প্রাক প্রস্তুতি।  কিন্তু কে ছিলেন এই ভ্যালেন্টাইন, জানতে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে ২০০০ বছর আগের রোম শহরে।  যত কাণ্ড রোমেঃ তখন   ২৬৯ সাল। কিন্তু দুঃখের বিষয় খ্রিষ্ট জন্মের এত বছর পরেও ইতালির রোমে তখনো খ্রিষ্ট ধর্মের প্রচার নিষিদ্ধ ছিল। তাই পাদ্রী ভ্যালেন্টাইনকে, তখনকার রোম সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস, আইন ভেঙে ধর্ম প্রচার করার অপরাধে কারারুদ্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ধর্ম  যাজনার পাশাপাশি ভ্যালেন...

কথার কথা!

সৌন্দর্য বাপু গাছে ফলে না! দাঁড়াও দাঁড়াও, একটু ভাবতে দাও। কথায় আছে বলে বেদবাক্য তো নয়। এই যে দিনরাত আহ্ ফুল, ওহ্ ফুল বলে এত শিহরিত হও, সেই ফুল কি গাছে ফলে নাকি ঘরের ওয়ার্ডরোবে! খালি কথার কথা; অতীতের কিছু বুড়ো হাবড়া চন্ডিতলা, শীতলাতলায বসে, থেলো হুঁকোয় টান মারতে মারতে এমন অনেক ভুলভাল কথার ফতোয়া দিয়ে গেছে। যত্ত সব ফুট কাটা, গেঁয়ো কথা। তাছাড়া বেদবাক্য হলেই কি তার সাত খুন মাফ! ও সব মুখেন মারিতং জগৎ  মার্কা বাণী । নাহলে কি আর বেদের অপর নাম শ্রুতি হয়! সব কথা ব্যাদে আছে বলে অনেক দিন চলেছে, আর নয়। এখন হোয়াটসাপ, ফেসবুক, ইনস্টার যুগ। খালি বললেই হলো! এতদিন এসব ছিল না বলেই চলছিল, কিছু তো একটা বলতে হবে নাকি! শুধু কথাতে তো আর চিড়ে ভেজে না। কথার মাঝে একটু প্রবাদ প্রবচনের পাঁচফোড়ন না ছেটালে কি আর কথকতা জমে! এইভাবে মুখে মুখে বলতে বলতে কত এগোবেগো কথাই যে প্রবচন হয়ে গেছে তার হিসেব প্রশান্ত চন্দ্র মহালনবীশের কাছেও নেই। হিসেবের কথা যখন উঠলোই তখন হিসেব করে কি লাভ সে প্রশ্ন তো উঠবেই; কারণ কথাতেই তো আছে সব হিসেবই শেষ পর্যন্ত নাকি শূন্যতে এসে ঠেকে। দেখুন মজা। কতকগুলো হেদো মানুষ যাদের কা...