সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কার্জনের ঘাড়ে বাংলা ভাষার দায়!

১৯০৫ সালে বঙ্গ ভঙ্গের ফতোয়া দিয়েছিলেন তিনি, যদিও তার ফল হয়েছিল উল্টো। ব্রিটিশ শক্তি বিরোধী আন্দোলনে এসেছিল নতুন জোয়ার। কলম ধরেছিলেন, রবীন্দ্রনাথ। ঈশ্বরের কাছে বাংলার ঐক্য এবং সমৃদ্ধি প্রার্থনা করে লিখেছিলেন, “বাংলার মাটি, বাংলার জল, ...পুণ্য হউক পুণ্য হউক হে ভগবান।"
সে সময়কার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে,
দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে বাংলাকে ভাগ করার সেই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বাংলা ভাষাই সেদিন  দুই দিকের মানুষকে এক সুতোয় বেঁধে রেখেছিল। কার্যত শাপে বর হওয়া এই বঙ্গ ভঙ্গের প্রস্তাব, পরোক্ষে বাংলা ভাষার অন্তর্নিহিত শক্তিকেই পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করেছিল।  পরিনাম – বঙ্গ ভঙ্গের প্রস্তাব যার মাথা থেকে বেরিয়েছিল সেই তদানীন্তন ভাইসরয় লর্ড কার্জনকেই শেষ পর্যন্ত সরে যেতে হয়েছিল তাঁর পদ থেকে। লর্ড কার্জন ভারত ভাইসরয় হিসেবে, তদানীন্তন ভারত রাজধানী কোলকাতায় পদার্পণ করেন ১৮৯৯ সালের জানুয়ারী মাসে। তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ ভাইসরয়, পূর্বতন লর্ড এলগিনের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি। ১৯০৫ এর ১৬ই আগস্ট তারিখে, রাজা সপ্তম এডওয়ার্ড এর নির্দেশে কার্জনের সাত বছরের শাসনকাল শেষ হয়ে যায়। কিন্তু কার্জন চলে গেলেও রয়ে যায় কার্জনের নামাঙ্কিত উদ্যান।  ধর্মতলার কার্জন পার্ক সেই কথাই মনে করিয়ে দেয়, যদিও এই পার্কের নাম পালটে বর্তমানে সুরেন্দ্রনাথ পার্ক রাখা হয়েছে কিন্তু সে কথায় একটু পরে আসছি।  অবস্থানগত ভাবে, তদানীন্তন বড়লাট ভবন, বর্তমানে যেটি রাজ ভবন নামে পরিচিত তার ধর্মতলা মুখী  ১  নং গেটের ঠিক মুখোমুখি, রাস্তার উল্টো পাশে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে রয়েছে এই কার্জন পার্ক। এইখানে আর এক টুকরো ইতিহাসের কথা না মনে করলেই নয়। কার্জন ভারতে আসার কয়েক মাস আগে, বর্তমান পার্কের পশ্চিম দিকে একটি সৌধ নির্মাণ করা হয়। জয়পুরী শ্বতপাথর দিয়ে  তৈরি এই সৌধটি নির্মাণ করা হয়েছিল সদ্য প্রয়াত বড়লাটের সচিব দেমেত্রিউস পানিওতির নামে। সেটা ১৮৯৮ সালের শেষ দিকের কথা।


পানিওতির সৌধ, বর্তমানে

প্রসঙ্গত এই পানিওতি জাতিগত ভাবে একজন গ্রীক হলেও প্রায় চার  পুরুষ ধরে তাঁর পূর্বপুরুষেরা এই কোলকাতার বাসিন্দা ছিলেন। যাই হোক পরে এই সৌধের পার্শ্ববর্তি ফাকা জায়গাতেই গড়ে ওঠে কার্জনের নামাঙ্কিত এই পার্কটি।
কথায় আছে ঐতিহাসিক ইমারতগুলির প্রাকারে, সময় তার দিকচিহ্ন ঠিকই ছেড়ে যায়।  ১৯৫৮ সালে সেরকমই একটা ছাপ এসে লাগলো এই ঐতিহাসিক সৌধটির গায়। কারণ সেবছরই, সত্যজিৎ রায় তাঁর ‘পরশ পাথর’ ছবির শুটিং করতে গিয়ে এই পানিওতির সৌধটিকে বেছে নিলেন ছবির  অন্যতম একটি দৃশ্যের পটভূমি হিসেবে। দৃশ্যটিতে দেখা যায় ছবির অন্যতম মূল চরিত্র পরেশ বাবু, যাকে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছিলেন কিংবদন্তী অভিনেতা তুলসী চক্রবর্তী বৃষ্টি থেকে বাঁচতে আশ্রয় নিচ্ছেন এই সৌধটির মধ্যে। তারপরে নয় নয় করে পেরিয়ে গেছে, অনেকগুলো বছর, কার্জন পার্কের ইতিহাসে তেমন কোনো পট বদল আসে নি। যখন এল তখন অবশ্য কার্জন দেশছাড়া হয়েছেন অনেকদিন এমনকি ১৯২৫ এ তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত হয়ে গেছে অনেকবছর; তা সত্ত্বেও কোনো এক অলৌকিক কারণে বাংলা ভাষার সঙ্গে তাঁর মিঠে কড়া সম্পর্কটা যেন রয়েই যায়।  এর প্রেক্ষাপট অবশ্য তৈরি হয়েছিল সেই গেল শতাব্দীর ষাটের দশকে। বাংলা ভাষা রক্ষার লড়াইয়ে তখন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে আসামের বরাক উপত্যকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল।  যার পরিনামে, ১৯৬০ এর ১৯ শে মে, আসামের শিলচরে,ঝরে যায়  ১১ টি তাজা প্রাণ।  যদিও এর প্রায় ১০ বছর  আগে, বাংলাদেশের ঢাকায় দেখা গেছে বাংলা ভাষা রক্ষার আর এক মহা সংগ্রাম।  ১৯৫১’র ২১ শে ফেব্রুয়ারীর দিন সে লড়াই পৌঁছায় তুঙ্গ সীমায়। বীর শহীদের বুকের রক্তে ভেসে যায় ঢাকার রাজপথ।  মৃত্যু বরন করেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বারেরা।  যে আন্দোলনের রেশ ধরে ১৯৭১ এ জন্ম হয় স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের; সর্বোপরি সেই প্রথম কোনো সার্বভৌম দেশের  রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা পায় বাংলা।  এর প্রায় দুই দশক পরে, বাংলার লেখক সাহিত্যিক বুদ্ধিজীবী মহলে আওয়াজ ওঠে বাংলা ভাষার গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতি রোমন্থনের জন্যে চাই একটি স্থায়ী পরিসর। চাই ভাষা উদযাপনের একটা যথার্থ জায়গা।  দাবী ওঠে ভাষা উদ্যান নির্মাণের। কিন্তু তার জন্যে কোথায় পাওয়া যাবে পর্যাপ্ত পরিসর, এই প্রশ্নে  শেষ পর্যন্ত সেই  লর্ড কার্জনই যেন এগিয়ে এলেন সমাধান সূত্র নিয়ে। যদিও সশরীরে নয়।  ১৯০৫ এ বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব দিয়ে, বাংলা ও বাঙালীর যে ক্ষতিটি করার প্রয়াস করেছিলেন তিনি তারই যেন পাপ স্খালন হতে দেখা গেল ভাষা উদ্যানের জায়গা নির্বাচনের ক্ষেত্রে।  কারণ ধর্মতলায়, পানিওতির সৌধের পাশে গড়ে ওঠা তাঁর নামাঙ্কিত পার্ককেই সেদিন বেছে নেওয়া হয়েছিল কথিত ভাষা উদ্যান নির্মাণের উপযুক্ত ক্ষেত্র হিসেবে। শেষমেশ  ১৯৯৩ এ এসে ভাষা উদ্যান উন্মুক্ত হয় সর্বসাধারণের জন্য। সুশোভিত গাছপালার মধ্যে তৈরি করা হয় ভাষা ও সাহিত্য চর্চার চারদিক খোলা মুক্তমঞ্চ  –লালন ফকিরের নামে যার নাম রাখা হয় - লালন মঞ্চ, স্থান পেয়েছিল বাংলা হরফের সুদৃশ্য একটি অক্ষর বৃত্ত, যা উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন  তৎকালীন ভারতীয় যাদুঘরের মহানির্দেশক শ্যামলকান্তি চট্টোপাধ্যায়। সর্বোপরি ভাষা শহিদদের স্মৃতিতে নির্মিত হয়েছিল একটি সুবিশাল, আয়তাকৃতি মর্মর শহীদ বেদী। উল্লেখ্য এই শহীদ বেদীটি নির্মিত হয়েছিল উদ্যানের দক্ষিণ পূর্ব কোনে থাকা জোড়া পলাশ গাছের নীচে। 

কার্জন পার্কের পলাশ গাছ!
উদ্বোধনের দিন উপস্থিত ছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শঙ্খ ঘোষ, মৃণাল সেন,  সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির অগ্রগণ্যেরা। এর ঠিক পাঁচ বছর পরে অর্থাৎ ১৯৯৮ এ ঘটলো আর এক ঐতিহাসিক সমাপতন। বদলে ফেলা হোল, পানিওতি সৌধটির নাম। নতুন নাম রাখা হোল ‘পরশ পাথার অঙ্গন’। বসলো, ‘পরশ পাথর’ ছবির বিশ্ববরেণ্য চিত্র পরিচালক সত্যজিৎ রায় এবং ‘পরশ পাথর’ এর লেখক রাজশেখর (পরশুরাম) বসুর নামে স্মৃতি ফলক। প্রসঙ্গত এই নাম বদলের ঘটনাটি ইতিহাসের পাতায় একটি উৎকৃষ্ট  ঐতিহাসিক পরিহাসের নজির হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। কারণ, ১৮৯৮ সালে যে পানিওতির নামে এই সৌধটি নির্মিত হয়েছিল তার ১০০ বছর পূর্তির বছরেই ঘটলো তার নাম পাল্টানোর ঘটনাটি।

পলাশ গাছের নীচে ভাষা শহীদ বেদী!

যাই হোক সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির অভাবে ভাষা উদ্যানে ক্রমশই জায়গা করে নিচ্ছিল ঘাস ও আগাছার দৃষ্টিকটু জঙ্গল। ইতিমধ্যে ১৯৯৯ সালে, ইউনেস্কো বাংলা ভাষা আন্দোলনের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিয়ে ২১ শে ফেব্রুয়ারী দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। তাই সম্বৎসরে অন্তত ২১ তারিখ এলে জঙ্গল কেটে সাফ সুতরো হয়ে উঠত ভাষা উদ্যানের অঙ্গন। ২০১৯ সালেও  পশ্চিম্বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ২১ শে ফেব্রুয়ারী পালনে এসেছেন কার্জন পার্ক ভাষা উদ্যানে।  কিন্তু সময়ের অগ্রগতিতে ধর্মতলা চত্বরে শুরু হয়েছে মেট্রো সম্প্রসারনের কাজ, ইষ্ট ওয়েস্ট মেট্রোর কাজ করতে গিয়ে কার্জন পার্ক ভাষা উদ্যান প্রায় ধ্বংস ভূমি তে পরিণত হয়েছে। তাই এখন আর খুঁজে পাওয়া যাবে না লালন মঞ্চ বা সে সংক্রান্ত কোনো ফলককে; ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে মূর্তি, সরানো হয়েছে  অক্ষর বৃত্ত কে । চারিদিকে ঘাস আর আগাছায় আবৃত হয়ে শুধু শহীদ বেদীটাই পড়ে আছে তার স্বস্থানে। মাথার ওপরে থাকা জোড়া পলাশ গাছের একটি ইতিমধ্যে কেটে ফেলা হয়েছে। এখন টিকে আছে মাত্র একটি। সেই কার্জন পার্ক আবারো এক ভোল বদলের পথে। ১৯৯৮ এ লর্ড কার্জন পার্কের  নাম বদলে সুরেন্দ্রনাথ পার্ক রাখা হয়েছে। কিন্তু সাধারন মানুষের কাছে এখনও কার্জন পার্ক ভাষা উদ্যান হিসেবেই পরিচিত জায়গাটি। কার্জনের নামের সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়া অতীতে বাংলা ভাষা এবং অধুনা বাংলা ভাষা উদ্যানের ক্ষতির স্মৃতি কি কখনোই বিচ্ছিন্ন করা যাবে না?   


 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...

জনগণমনঃ জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার ইতিহাস ও কিছু প্রশ্নের উত্তর!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ব্রহ্ম সঙ্গীত ‘ জনগণমন অধিনায়ক’ কে দেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে মান্যতা দেওয়ার সর্ব সম্মীলিত সিদ্ধান্ত হয় ১৯৫০ সালের ২৪ শে জানুয়ারি । কিন্তু কেন এত দেরী? দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও কেন তিন বছর সময় লেগেছিল জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন করতে? ‘ভারত বিধাতা’ শিরোনামে লেখা, স্বদেশ পর্যায় ভুক্ত (গীতবিতান অনুসারে) এই রবীন্দ্রগীতিটি কিভাবে -  দেশের জাতীয় সঙ্গীত হওয়ার পথে একটু একটু করে এগিয়ে গেল! ‘জনগনমন’র জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার নেপথ্য কাহিনীই আজ আমরা ফিরে দেখবো এই প্রবন্ধে।  ১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট - দীর্ঘ ২০০ বছর ধরে পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরে অবশেষে দেশবাসীর ভাগ্যাকাশে এসে উপস্থিত হোল বহু আকাঙ্খিত সেই দিনটি। উদিত হোল স্বাধীনতার নতুন সূর্যের।   স্বাধীন হোল দেশ। কিন্তু সদ্য ব্রিটিশ অধীনতা মুক্ত দুটি দেশ ভারত এবং পাকিস্থান তখনও পায় নি স্বতন্ত্র সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা। ১৯৪৭ এর ১৮ই জুলাই তারিখে লাগু হওয়া ভারতীয় স্বাধীনতা আইন অনুসারে নিজ নিজ সংবিধান প্রণয়নের আগে পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্থান এই দুটি ভূখণ্ড কমনওয়েলথ দেশের অধীনস্থ দুটি অধিরাজ্য হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে পারা...