পৃথিবীতে যে কটি জায়গা রয়েছে যেখানে প্রতিটি মুহূর্তই ছবি হয়ে উঠতে পারে, কোলকাতার ধর্মতলা অবশ্যই তাদের মধ্যে একটি। অনেকটা আলিবাবা চল্লিশ চোর গল্পের সেই খাজানা ভর্তি গুহার মতন, কোনটা ছেড়ে কোনটা নেব অবস্থা হয় এখানে এলে। সিগন্যালের লাল সবুজ, এখানে যে ধরনের নাটকীয়তা আনে যানবাহনের গতি মুখরতায় তা এককথায় স্বর্গীয় অথবা নারকীয় ছাড়া আর কিছু হতে পারে না।
মানুষজনের তুমুল ব্যস্ততা দেখে মনে হয় কুম্ভমেলার মাহেন্দ্রক্ষণ বুঝি এই বেরিয়ে গেল হাত থেকে। বিশেষ করে দূরপাল্লার বাস স্ট্যান্ড গুলোর দিকে, বোঁচকা বুঁচকি, লটবহর সমেত মানুষের ছুটে যাওয়ার দৃশ্য ধর্মতলার একটি অতি পরিচিত ছবি। এখানে সবাই ছুটে চলেছে নিশ্চিত অথবা অনিশ্চিত গন্তব্যের পথে। নিত্য যাতায়াতের তোড়ে, ধর্মতলা যেন কোনো সুনাব্য নদীখাত, শত শত মলিন অমলিন, সুখে দুঃখে থাকা মুখচ্ছবি গুলো নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে ভেসে চলে কাতারে কাতারে যানবাহনের চলমান জানালার ধারাস্রোত ধরে।
কিন্তু এত ব্যস্ততার মাঝেও দু একটা পাগল রয়েছে যারা কে সি দাশের মিষ্টি দোকানের সামনে দাঁড়িয়েও, অবলীলায় সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে টিপু সুলতান মসজিদের দিকে অপলকে তাকিয়ে থাকতে পারে। কতজন যে মেট্রো হলের সামনে, সান্ধ্য ভ্রমণের ঢঙে ফুটপাতের এ দোকান থেকে ও দোকানে ঘুরে বেড়ায়; তার মধ্যে কতজন কেনাকাটা করে আর কতজন শুধু দাম দস্তুর করতে করতেই সময় কাটিয়ে দেয় তার কোনো ইয়াত্তা নেই। ধর্মতলার প্রকৃত অর্থেই কসমোপলিটন সংস্কৃতি। এখানে যে কোনো ধর্মের যে কোনো বর্ণের এবং যে কোনো ভাষা ভাষী মানুষই চলাফেরা করেন অনায়াস স্বাচ্ছন্দ্যে। । ধর্মতলা ধর্মেও আছে আবার জিরাফেও। মাঝে মাঝে বিপ্লবের আগুনেও হাওয়া দেয় এই ধর্মতলা। বহু আন্দোলন এবং মতবাদ তৈরীর আঁতুড়ঘর এই ধর্মতলা। কোলকাতার অন্যতম ল্যান্ডমার্ক গ্র্যান্ড হোটেল থেকে শহিদ মিনার; ফুটপাতের তিরিশ টাকার আলুচোখা ডাল ভাতের হোটেল থেকে ডেকারস লেনে টুঁ মারা ধর্মতলা দিয়েই হয়। রাজস্থানী শরবতের রাজকীয় গ্লাসে অনায়াসে দুটি স্ট্র চুবিয়ে, প্রেমিক প্রেমিকা দুজনকে দেখা যায় এখানে ফলের রসের আস্বাদন নিতে। ধর্মতলায় তাই আর পাঁচটা ঋতুর মতন বসন্ত ও আসে তার পসরা সাজিয়ে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন