বিজন পথ। দু পাশে বিস্তীর্ণ ধূধূ মাঠ। ছায়া হীন দ্বিপ্রহর। তপনতাপে কম্পিত দিকচক্রবাল। মেঘ ছায়া অভিলাষে ত্রস্ত প্রাণ ভাবে, দীগন্তের ওপারে বুঝি জুড়াবে দগ্ধ পরান। দূরে কোথাও জলের সিক্ততা, পথের নিদারুন ছলনা বৈ কিছু নয়। একাকী পথিক তা জানে না এমন নয়। প্রকৃতি বিজ্ঞানে একেই বলে আলোকের অভ্যন্তরীন পূর্ণ প্রতিফলন। চলভাষের ক্যামেরায় ধরা থাকে পথের বুকে ক্রমশ অপস্রিয়মাণ সে মরীচিকার স্থিরচিত্র। ধরা থাকে না, ক্রমশ অপস্রিয়মাণ দীকবালিকা যে মায়াবী ছলনায় রৌদ্রবিলাসী এই পথ এবং তার পথিককে টেনে নিয়ে চলে ক্রমাগত অন্ত থেকে অন্তহীনতার পথে, সেই সোনার হরিণ শিকারের রূপকথা চিরকালই থেকে যায় অধরা।
তাকে ছুঁতে গিয়েও ছুঁতে না পারার মধ্যে না জানি কোন জেদ কাজ করে, ক্লান্ত হয়েও ক্লান্ত না হওয়ার ভাণ করে যেন শেষ দেখেই ছাড়বে এমন ভাব নিয়ে পথিক ছুটে যায় আকাশ ও মাটির মিলিত শয্যায় শুয়ে থাকা ছায়া ছায়া সবুজের বিকিনি পরা দিককন্যার পানে।
এমনি করে কখন যে দুপুর গড়িয়ে সূর্য, মধ্য গগন ছেড়ে পশ্চিমের অলস বৈকালিক-কোণ থেকে আলোকসম্পাত করা শুরু করে পূবের মাচায় ঘটমান দৃশ্যপটের উপর, স্পষ্ট হয় পূব পানে অগ্রসর পথিকের ছায়া যখন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘায়িত হয় এবং এগিয়ে চলে পথিকেরও আগে আগে। পশ্চিমি সূর্যের মায়ারুন আলোক প্রক্ষেপণে তখন পূবের দিকবালা আরও সবুজ আরও রোমান্টিক। তার বৃষ্টি ধোওয়া স্নিগ্ধতায় সোনালী রশ্মীর অপরূপ আপতনে জেগে ওঠা উচ্ছ্বসিত শোভা সত্যিই নয়নলোভা। উপরি পাওনা জোটে ভেজা হাওয়ার সাথে পথিকের চোখে মুখে এসে পড়া বৃষ্টিচ্ছাসের বিন্দু বিন্দু শীতল পরশ; রটে যায় ওই প্রান্তে এক্ষনি হয়ে যাওয়া এক পশলা বৃষ্টি পাতের স্নিগ্ধ সংবাদ।
স্ফটিক স্বচ্ছ বৃষ্টি বিন্দুর মধ্য দিয়ে আপতিত সূর্যালোকের প্রতিসরণের কারনে বিচ্ছুরিত আলোকের পিচকারী আচম্বিতে আকাশের পূব দীগন্তে সূচনা করে অকাল বসন্ত উৎসবের। উত্থিত হয়ে পড়ে সাত রঙের অর্ধগোলাকৃতি তোরণ! যেন পথিককে স্বাগত জানানোর জন্য তার দীর্ঘ আগ্রহে অপেক্ষমাণ থাকার কথা ঘোষণা করে সদর্পে। বেগুনী, নীল, আকাশী, সবুজ, হলুদ, কমলা এবং লাল, সপ্তবর্ণের কোলাজ-বেনিআসহকলা! ভিন্ন ভিন্ন সাত রঙা ফাগ ছড়িয়ে যেন আকাশের গায়ে ফুটে ওঠা ধনুকাকার বসন্ত বর্ণালী; বৃত্ত সম্পূর্ণ করার আগেই - বিহ্বল আবেগে দীগন্ত ছুঁয়ে , সেঁধিয়ে যায় ধরার বুকে। "কে যেন আবির - ছড়িয়ে দিল …"। এমনই হঠাৎ বসন্ত - বিজন পথে হেঁটে চলা পথিকের চোখে!
কিন্তু কে এই পথিক? যে যুগ থেকে যুগান্তরে, দেশ থেকে দেশান্তরে নিরীক্ষণ করে চলেছে প্রকৃতির এই অনির্বচনীয় শোভা বৃষ্টিধনুকে (RAINBOW)? কখনো পথিক তাকে দশরথ পুত্র রামচন্দ্রের ধনুকের (রামধনু) সঙ্গে তুলনা করেছে, কখনো দেবরাজ ইন্দ্রের (ইন্দ্রধনু)। আকাশে ওড়া পাখির চোখে কিন্তু তা ধনুকাকার নয় - সাত রঙের সাতটি তরঙ্গের সম্পূর্ণ করা এক বৃত্তের।
ছোটবেলায় এক গ্রাস জল মুখে পুরে ফুঁ মেরে আকাশের জ্বলন্ত সূর্যের দিকে ছুঁড়ে দিতাম আর সহস্র শুভ্র জলকুচি সূর্যালোকের সাথে টক্কর খেয়ে হয়ে যেত রামধনুর রঙে রঙিন।
বাংলাদেশে কিন্তু রামধনু কে বলা হয় রংধনু। রংধনু তে খালি চোখে তিনটে রঙকে ভালো করে চেনা যায়। লাল, সবুজ এবং হলুদ। সপ্তদশ শতকে বিশ্ববিশ্রুত বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটন যদি না আলো কে প্রিজমের মধ্য দিয়ে পাঠিয়ে দেখাতেন আসলে রংধনু তে তিন বা দুই নয় আছে সাত সাতটি রঙ, কেউই জানতে পারতো না বাকি রঙ গুলোর কথা।
তাহলে নিউটনও কি একদা হেঁটেছিলেন একা ইংল্যান্ডের কোনো পথ ধরে? বৃষ্টি ধোওয়া অপরাহ্ণে আকাশের বুকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন হঠাৎ বসন্তকে? এ প্রশ্ন তোলা থাক আগামীর কাছে।
বাংলাদেশে কিন্তু রামধনু কে বলা হয় রংধনু। রংধনু তে খালি চোখে তিনটে রঙকে ভালো করে চেনা যায়। লাল, সবুজ এবং হলুদ। সপ্তদশ শতকে বিশ্ববিশ্রুত বিজ্ঞানী আইজ্যাক নিউটন যদি না আলো কে প্রিজমের মধ্য দিয়ে পাঠিয়ে দেখাতেন আসলে রংধনু তে তিন বা দুই নয় আছে সাত সাতটি রঙ, কেউই জানতে পারতো না বাকি রঙ গুলোর কথা।
তাহলে নিউটনও কি একদা হেঁটেছিলেন একা ইংল্যান্ডের কোনো পথ ধরে? বৃষ্টি ধোওয়া অপরাহ্ণে আকাশের বুকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন হঠাৎ বসন্তকে? এ প্রশ্ন তোলা থাক আগামীর কাছে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন