সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সোনালী স্মৃতির পথ ধরেঃ হলিউডকে “না”, ২ নং ঢাকুরিয়া কালী বাড়ি লেনের মালকিনের!

ঢাকুরিয়ার বিখ্যাত কালী বাড়ির ঠিক মুখে - পেল্লাই তিনতলা বাড়িটার সম্পর্কে যখন থেকে জেনেছি, তখন থেকে যাতায়াতের পথে আটপৌরে ওই বাড়িটার দিকে তাকিয়ে বিভূতিভূষণের শঙ্করের মত কবে যে এই 'চাঁদের পাহাড়' অভিযানের স্বপ্ন আমার সফল হবে এই ভাবনায় একেবারে কাতর হয়ে পড়েছি। কালী মন্দিরের সামনে জুতো খুলে মায়ের কাছে প্রনাম সারতে গিয়ে অনেক সময় এই প্রার্থনাও করেছি মা যেন একবার আমাকে বাড়িটাতে ঢোকার সুযোগ করে দেন। শেষমেশ, যাই হোক আমার ইচ্ছা পূরণ হয়। এক রবিবারের দুপুরে বাড়িটির নীচে দাঁড়িয়ে আমি যাকে ফোন করি – তিনি এই বাড়ির বর্তমান মালিক দেবব্রত দাস। ফোন ধরে তিনি আমাকে তিন তলায় উঠে আসতে বলেন। ঢোকার মুখে- মাথায় ওভারসিজ ব্যাঙ্কের সাইনবোর্ড লাগানোমনে হতে পারে ব্যাঙ্কের অফিসে যাচ্ছি, যাই হোক রবিবার বলে সে ভয় নেই। ঢুকেই ডানদিকে উপরে যাওয়ার সিঁড়ি, ভর দুপুরেও তাতে বেশ আলোর অভাব, বিশেষ করে রোদ থেকে এলে একটু অন্ধকারই লাগে। যাই হোক দোতলায় ব্যঙ্কের অফিস ফেলে তিনতলায় পৌঁছতে দেবব্রত বাবু সাদরে আমাকে তাঁর ডাইনিং এর চেয়ারে বসান। আমি বেশ রোমাঞ্চিত! মাথার উপর একখানা পুরনো দিনের পেল্লাই ব্লেডের পাখা বেশ মজলিশি ঢঙ্গে ঘুরে ঘুরে হাওয়া দিচ্ছিল। গরম কাটলেও রোমাঞ্চ  কাটছিল না। বরং রান্নাঘর থেকে রোমাঞ্চের পারদ বাড়িয়ে,  দেবব্রত বাবুর স্ত্রী যখন বললেন এই চেয়ারেই একদিন এসে বসেছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়িকা সুচিত্রা সেন, তখন নিজেকে ধরে রাখাই মুশকিল হয়ে যাচ্ছিল আমার। মনে হচ্ছিল বসে নেই আমি, উড়ছি। কিন্তু, এখানেই শেষ নয়। চমকের অনেক বাকি। এবং সেটা ক্রমশ প্রকাশ্য। তাই এখনই আর কোন কোন সেলিব্রিটি এসেছিলেন এই বাড়িতে, সেই চমকপ্রদ তালিকা প্রকাশ করার আগে বরং একটু পেছন ফিরে বাড়িটার ইতিহাস দেখে নেই চলুনবাড়িটি আসলে দেবব্রত বাবুর পিসির। ১৯৭৫ সালে পাম অ্যাভিনিউ-র ঠিকানা ছেড়ে পিসি ডাকব্যাক এর মালিক মোহিত বোসের এর কাছ থেকে তার নং ঢাকুরিয়া কালী বাড়ি লেনের এই বাড়িটি কিনে পাকাপাকি ভাবে উঠে আসেন এখানেবাড়িটি ছিল তখন একতলাসেই থেকে বাংলা চলচ্চিত্রের একদা প্রবাদ প্রতিম অভিনেত্রী, মানে দেবব্রত বাবুর পিসির আমৃত্যু (৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১১) ঠিকানা এই বাড়িটিই
সুচিত্রা সেন যখন এ বাড়িতে পা রেখেছিলেন, তখন তাঁর গুলজার পরিচালিত সুপার হিট হিন্দি ছবি ‘আঁধি’ মুক্তি পেয়ে গেছে।  সর্বভারতীয় স্তরে তাঁর অভিনয় চারিদিকে সাড়া ফেলে দিয়েছেতাই জনপ্রিয়তার সঙ্গে বেড়েছে তাঁর ব্যস্ততাও। তার মধ্য থেকেও সময় বের করে সুচিত্রা সেন যার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন এই বাড়িতে, তার জীবন আলেখ্যও কম চিত্তাকর্ষক নয়।
যাই হোক ততক্ষণে আমি চেয়ারে একটু থিতু হয়ে বসে দেবব্রত বাবুর কাছ থেকে, যিনি তাঁর বিখ্যাত পিসির প্রায় সর্বক্ষণের ছায়াসঙ্গী হয়ে ঘুরতেন ঘরে বাইরে সব জায়গায়, শুনে নিচ্ছিলাম আরও কোন কোন বিখ্যাত মানুষের শুভ আগমনে পুষ্ট হয়েছে বাড়িটির গরিমাময় ইতিহাস
কে নেই এই তালিকায় , অতীতের স্বনামধন্য অভিনেত্রী যমুনা দেবী, চন্দ্রা দেবী, সন্ধ্যা রানী থেকে শুরু করে আট- নয় দশকের নায়িকা সুমিত্রা মুখোপাধ্যায় থেকে অপর্ণা সেন। এসেছেন এ সময়ের পরিচালক-অভিনেতা রাজ চক্রবর্তী পর্যন্ত।
এর মধ্যে আমার সামনে চা রেখে গেছেন, দেবব্রত জায়া। চায়ে চুমুক দিতে দিতে উপলব্ধি করার চেষ্টা করি সেই কিংবদন্তী মানুষটিকে, যার স্পর্শ এই বাড়ির আনাচে কানাচে লেগে রয়েছে। সামনেই হাসিমুখে তাঁর একটি রঙিন বাঁধানো ছবি - তাকিয়ে থাকে আমার দিকে। গায়ে কাঁটা দেয়। মনের মধ্যেই গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি –১৯২২ সালের ২৩ শে অক্টোবর, কোলকাতার ৫০/এ, এম জি রোডের বাড়িতে যে কন্যা সন্তানের জন্ম হল মা পদ্মাবতী দেবীর কোল আলো করে, পিতা প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হরেন্দ্র কৃষ্ণ দাসের সস্নেহ প্রশ্রয়ে বেড়ে ওঠা সেই আদরের মেয়ে - মহামায়া কিভাবে দিনে দিনে বাংলার সবাক চলচ্চিত্র জগতে প্রথম সুপার হিট জুটির সফল নায়িকা হয়ে উঠলেন। এ কাহিনী যে একটা বিশাল জীবন সংগ্রামের শুধু তাই নয় রূপকথার গল্পের মত পরতে পরতে নানান চমৎকারিত্বে পরিপূর্ণ। ধীরে ধীরে, 
আমি চিনে নেওয়ার চেষ্টা করি এই হয়ে ওঠার পেছনের অনিবার্য অনুঘটকগুলিকে।
সময়ের রেওয়াজ মেনে, মহামায়ার মাত্র ১৩ বছর বয়সে বিয়ে হয়ে যায়। বেনারসে শ্বশুর বাড়িতে স্বামীর সোহাগ ভালো করে বোঝার আগেই মহামায়া বুঝে যান শ্বশুর বাড়ির অত্যাচার তাঁর গলার কেমন ফাঁস হয়ে উছে।  ফিরে আসেন কোলকাতায় বাবার কাছে। বাবা তাঁর আদরের মেয়েকে বেনারসে ফেরত দিতে শুধু নারাজ হন তাই নয়, মেয়ের বিবাহ বিচ্ছেদের জন্যও এক প্রকার মনস্থির করে ফেলেন। কিন্তু সেই সময় হিন্দু আইনে বিবাহ বিচ্ছেদের কোন সংস্থান ছিল না। তাতে কি, হরেন্দ্র কৃষ্ণ বাবু এতটাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন তাঁর সিদ্ধান্তে যে উকিলের পরামর্শে মেয়েকে কিছুদিনের জন্য মুসলিম ধর্মে ধর্মান্তরিতও করেন। তাই মহামায়া হয়ে যান সেলিমা বিবি। বিচ্ছেদ সম্পন্ন হওয়ার ছয় মাস পর স্বধর্মে ফিরে সেলিনা পুনরায় মহামায়া হন। এই এত বছর পরেও মহামায়ার জীবনে আসা সেদিনকার সেই অবিশ্বাস্য মোচড় সম্ভবত কোনো বলিউডি সিনেমার গল্পতে সুলভ নয়। 
আমি প্রেক্ষাপট বোঝার চেষ্টা করি। সেই সময় যখন মেয়েদের নাটক- থিয়েটারে অভিনয় করাটা ভদ্র সমাজের কাছে একরকম চরিত্রের অধঃনমন হিসেবেই ধরে নেওয়া হত, কি করে এই রকম রক্ষণশীল সমাজের মধ্যে থেকে বড় হওয়া মহামায়া শেষ পর্যন্ত সেলুলয়েডের পর্দায় অবতীর্ণ হতে পারলেন। মা পদ্মাবতী দেবী যেখানে আবার ছিলেন এর ভয়ানক বিরুদ্ধে! তাহলে কি ছিল এর নেপথ্যে! দেবব্রত বাবুর স্ত্রী যিনি অনেকটা সময় ধরে বার্ধক্যে উপনীত অভিনেত্রীর একমাত্র সহায় হয়ে তাঁকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন, এবং অভিনেত্রীর নিজের মুখ থেকে শুনেছেন অনেক না জানা কথা, তাঁর মতে মহামায়ার সেই সময় এ ছাড়া কোনো উপায়ও ছিল না। ব্যবসায় মন্দার কারণে, হরেন্দ্র কৃষ্ণ বাবুর সংসারে সে সময় অনিবার্য ভাবে দেখা দিয়েছিল আর্থিক কষ্টের। তাই লোকে কি বলবে, এই ভেবে বসে না থেকে, একদিন পারিবারিক বন্ধু ব্যায়ামবীর বিষ্ণুচরণ ঘোষের সাথে ২১ বছরের বিবাহ বিচ্ছিন্না যুবতি মহামায়া - সটান হাজির হন তখনকার বিখ্যাত মুভি প্রোডাকশন হাউস নিউ থিয়েটারের অফিসে। সালটা ১৯৩৯ সাল। অফিসে তখন উপস্থিত প্রখ্যাত গায়ক-নায়ক কে এল সায়গল। গান গেয়ে শোনাতে হয় মহামায়াকে। কিন্তু গানের শেষে যা ঘটল, তা এককথায় সারা জীবন মহামায়ার কাছে স্মরনীয় হয়ে থাকবে। উঠে এলেন সায়গল, মহামায়ার মাথায় আঙুল বুলিয়ে বললেন, তুই তো আমার গান আমাকেই শুনিয়ে দিলি। খুব ভালো হয়েছে
মহামায়া যোগ দিলেন নিউ থিয়েটার- এ, মাসিক ১০০ টাকা বেতনে । একটা শর্ত - বাইরের প্রোডাকশনে বছরে তিনটের বেশি ছবি করতে পারবেন না। দুই বছর পর অর্থাৎ ১৯৪১ এ মুক্তি পেল তাঁর প্রথম ছায়াছবি ‘ডাক্তার’,  ফণী মজুমদারের পরিচালনায় নায়ক জ্যোতিপ্রকাশ ভট্টাচার্যের বিপরীতে নায়িকার চরিত্রে দেখা গেল মহামায়া কে। থুড়ি ভারতী দেবী কে। হ্যাঁ আর মহামায়া নয়, এই ছবি থেকে মহামায়ার নতুন জন্ম হল ভারতী দেবী নামে। যে নামে তিনি আগামীতে বিখ্যাত হয়ে উঠবেন ভারতবর্ষের সিনেমা মোদী লক্ষ লক্ষ মানুষের কাছে।
একের পর এক তাঁর ছবি মুক্তি পেল নিউ থিয়েটারের ব্যানারে। সব গুলোই বাংলা এবং হিন্দি দ্বিভাষিক ছবি তার মধ্যে ‘কাশীনাথ’ (‘বাপস’  হিন্দিতে), ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ ('ওয়াসিয়াত নামা'), 'প্রতিশ্রুতি' উল্লেখযোগ্য।
বাংলা তাঁর মাতৃভাষা। কিন্তু হিন্দি নয়। তাই হিন্দি সংলাপ বলার ক্ষেত্রে সাবলীলতা আনতে ভারতী দেবীর চেষ্টার কোনো অন্ত ছিল না। অনেকেই জানেন না, সেই সময় ভারতী দেবী এমন কি উর্দু শিক্ষকের কাছে গিয়ে উর্দু শিখেছেন।  বিখ্যাত উর্দু শিক্ষক আমানুল হক (মুন্সীজী), যার কাছে পরবর্তীতে মহানায়ক উত্তম কুমার গেছিলেন উর্দু শেখার জন্য, ছিলেন ভারতী দেবীর উর্দু শিক্ষক। ভাইপো দেবব্রত বাবু আমাকে তাঁর পিসির উর্দু লেখা খাতা দেখিয়ে রীতিমত তাঁর দাবীর যথার্থতা প্রমান করে ছেড়েছেন যে, ভারতী দেবী শুধু মাত্র যে উর্দু বলতে বা বুঝতে পারতেন তাই নয় তিনি তা পড়তে, লিখতেও পারতেন।
এই সূত্রে বলে রাখি, আমি এই লেখা লিখতে গিয়ে প্রথম থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম যে চেনা ভারতী দেবীকে নয় বরং অচেনা ভারতী দেবীকেই তুলে ধরবো পাঠকের সামনে।অনেক লেখা, অনেক পত্র পত্রিকায় বেরিয়েছে। ভারতী দেবীর জীবন নিয়ে তৈরি হয়েছে দু দুটো তথ্যচিত্রও।  প্রথমটি শুভাশিস মিত্রের- ‘ভারতী দেবী স্মৃতি মন্তাজ’, দ্বিতীয়টি শর্মিলা মাইতি পরিচালিত “The Beautiful Heart” দুটো তথ্যচিত্রই  প্রদর্শিত হয়েছে দেশের বেশ কয়েকটা জাতীয় চলচ্চিত্র উৎসবে কিন্তু -জন  জানে রুপোলী পর্দার এই নায়িকা নিজের পরিচয় আড়ালে রেখে রীতিমত ছদ্মনামে লিখে গেছেন কত না গল্প! সুশ্বেতা ছদ্মনামে, প্রধানত গল্পই লিখেছেন তিনি । এবং সেগুলি বেশিরভাগই প্রকাশ পেয়েছেবাতায়ননামের এক পত্রিকার পাতায়
ভাইপো দেবব্রত বাবুর দাবী, মাটি দিয়ে বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি বানানোটাও নাকি ভারতী দেবীর একটা অন্যতম প্যাশন ছিল। প্রমাণ স্বরূপ তিনি তাঁর ঠাকুর ঘরে নিয়ে যান এবং আমাকে একটা শিবের মূর্তি দেখিয়ে বলেন এটা তাঁর পিসিমার নিজের হাতে গড়া।
একটা মানুষ যে যে কারণে বিখ্যাত হন, তার বাইরেও যে অনেক কিছু অনাবিষ্কৃত থেকে যায়, সেই ঢাকা পড়ে থাকা রঙ গুলিও যে কম চমকপ্রদ নয়, সেগুলিও যে নিজের মত করে তুলতে পারে আলোড়ন, তার উজ্জ্বল উদাহরণ ভারতী দেবী এবং তাঁর জীবন।
অভিনয় জীবনের শুরুতেই, “আমি বনফুল গো” – কানন দেবীর গাওয়া সেই বিখ্যাত গানে লিপ দেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল তাঁর ‘ডাক্তার’ ছবির নায়িকা হিসেবে। প্রথম ছবিতেই সহ- অভিনেতা হিসেবে পেয়েছেন পঙ্কজ মল্লিক কে। অশোক কুমার থেকে উত্তম কুমার, প্রায় দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে নায়িকা হিসেবে ভারতী দেবী সমানে শাসন করে গেছেন সিনেমা জগতকে। ‘চন্দ্রশেখর’ ছবিতে যেমন তাঁর নায়ক অশোক কুমার, ‘মনের ময়ূর’ ছবিতে, যেটি তাঁর নায়িকা হিসেবে কাজ করা শেষ ছবি, নায়ক আবার উত্তম কুমার। সে অর্থে উত্তম কুমারই ভারতী দেবীর শেষ নায়ক। উত্তম কুমার তখন উত্তম কুমার হন নি। ভারতী দেবী প্রায়শই বাড়িতে একান্ত আলাপচারীতায় উত্তম কুমার ওরফে অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়ের সেই সময়কার লাজুক স্বভাবের কথা বলে মজা পেতেন। ‘মনের ময়ূর’ ছবির শুটিং ফ্লোরে উত্তম কুমার কি ভাবে মুখ না তুলে তাঁর নায়িকার সঙ্গে কথা বলতেন, ভারতী দেবী আজীবন সেই সুখস্মৃতিকে তাঁর মনের অন্দরে লালন করে গেছেন প্রায় যক্ষের ধনের মত।
নায়িকা ভারতী দেবী যেন একটা যুগ। যার পর উত্তম কুমারের বিপরীতে দেখা গেল এক ঝাঁক নতূন নায়িকাদের। সুপ্রিয়া, সাবিত্রী থেকে সুচিত্রা। এদের মধ্যে পর্দার রসায়নে উত্তমের সঙ্গে সুচিত্রার জুটিই যে দর্শকের কাছে এখনো পর্যন্ত সব থেকে বেশি গ্রহণযোগ্য হয়েছিল সে কথা অনস্বীকার্য। কিন্তু সেরা হলেও প্রথম নয়। বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে উত্তম-সুচিত্রারও পূর্বে যে সফল জুটি চলচ্চিত্র মোদী মানুষের মনে দাগ কেটেছিল সেই জুটি ছিল ভারতী দেবীর সঙ্গে নায়ক অসিতবরণের।
ভারতী দেবীর আর একটি ভূমিকার কথা অনেকেই জানে না, সেটি হল প্রযোজকের ভূমিকা। ষাট-সত্তর বছর আগে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা ঢেলেছিলেন স্বামী বীবেকানন্দের জীবনের উপর ছবি বানাতে গিয়ে। অবশ্য এর পরে তিনি আর কোনো দিন ছবি প্রযোজনা করেননি। ছবিটির নাম ছিল ‘স্বামীজী’। অমর মল্লিক ছিলেন এই ছবির পরিচালক।ভারতী দেবী অভিনয় করেছিলেন নিবেদিতার চরিত্রে।
ইতিমধ্যে, দেবব্রত বাবু আমার সামনে উল্টাতে শুরু করেছেন দুর্লভ ছবি সম্বলিত প্রায় হলুদ হয়ে যাওয়া পুরনো একটি অ্যালবামের পাতা। একটায় দেখলাম, ভারতী দেবীর রাষ্ট্রপতির হাত থেকে জাতীয় পুরষ্কার নেওয়ার ছবি, পাশে বসে আছেন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু। ছবি টি ১৯৫৮ সালের। দেবকী বসু পরিচালিত ‘সাগর সঙ্গমে’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ভারতী দেবীর পাওয়া স্বর্ণ পদক দেবব্রত বাবু আমাকে দেখালেনও দেরাজ থেকে বার করে। এ হেন জাতীয় পদককে কাছ থেকে দেখা শুধু নয় তাকে ছোঁয়ার সুযোগ পেয়ে আমি যে আমার ভাগ্যের কাছে যারপরনাই কৃতজ্ঞ হয়ে রইলাম সে কথা বলাই বাহুল্য। 
যাই হোক কিছুক্ষণ পর, দেবব্রত বাবু আবার আমার পাশের চেয়ারে এসে বসলেন এবং পুনরায় শুরু করলেন অ্যালবামের পাতা উল্টে উল্টে আমার চোখের সামনে বিস্ময়ের নতুন নতুন ঝাঁপি খুলে দেওয়ার। সত্যি বলতে কি কিছুক্ষণের জন্য যেন আমি স্মৃতির পথ ধরে যেন ফিরে গেলাম বাংলা সিনেমার সেই স্বর্ণ যুগে।
এক জায়গায় দেখলাম, তপন সিনহা পরিচালিত ‘নির্জন সৈকতে’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ছবিরই অন্য চারজন অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর, রুমা গুহ ঠাকুরতা, ছায়া দেবী এবং রেনুকা রায়ের সঙ্গে ভারতের তৃতীয় জাতীয় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, ১৯৬৫ - এ নির্বাচিত সেরা পাঁচ অভিনেত্রীর একজন হিসেবে ভারতী দেবীর রজত-ময়ূর গ্রহনের সেই দুর্লভ মুহূর্তের ছবি। পেয়েছেন লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট সম্মান-  দশম ভারত নির্মাণ পুরষ্কার। অভিনেত্রী হিসেবে যেটি ভারতী দেবীর সার্বজনীন স্বীকৃতির নিদর্শন হয়ে টিকে থাকে জীর্ণ অ্যালবামের পাতায়। দেখলাম, গৌতম ঘোষের বহুচর্চিত ছবি ‘যাত্রা’ র সেটে একসাথে রেখা, দীপ্তি নাভাল এবং নানা পাটেকরের সাথে ভারতী দেবীকে। একিই ফ্রেমে, দেবব্রত বাবু, নানা পাটেকরের পাশে তার ছবি টিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে কিছুটা আত্মপ্রসাদ যে লাভ করলেন তা অসঙ্গত নয়।
নীচের রাস্তা দিয়ে তখন “লেপ বালিশ বানাবেন” বলে নেতানো গলায় একজন হেঁকে  যাচ্ছিল। সঙ্গে করাং করাং আওয়াজ। দেখা না গেলেও বুঝতে পারছিলাম  তুলো ভেনা যন্ত্রের ধাতব তারটিকে টেনে টেনে লোকটি এই রকম শব্দ ছড়িয়ে দিচ্ছিল রবিবারের অলস দুপুরের রাস্তায় এবং রাস্তার পাশে বাড়ি গুলিতে।
বেঁচে থাকতে, প্রবাদ প্রতিম এই অভিনেত্রীর কানেও কি ভেসে আসতো এইরকম  আরও কত শত হকারের বিচিত্র সব আহ্বান? নিশ্চয়ই আসতো। কিন্তু তাঁর মনের গহনে কিরকম প্রতিক্রিয়া হত সেটা জানার কোনো সুযোগ আর নেই।
খানিকটা ভাববিহ্বল হয়ে পড়েছিলাম। খেই ধরিয়ে দিলেন দেবব্রত বাবু। বললেন, “আপনি জানলে অবাক হবেন, কি সব পরিচালকদের সঙ্গে পিসিমা কাজ করেছেন।“ নাগাড়ে বলে চললেন। “তরুন মজুমদার (‘আলো’, ‘খেলার পুতুল’, ‘পলাতক’) থেকে ঋতুপর্ণ ঘোষ (‘চোখের বালি’ এবং অসমাপ্ত ছবি ‘সানগ্লাস’) কে নয়!”
“তপন সিনহার ‘নির্জন সৈকতে’, যেটার কথা আগেও বলেছি। এ ছাড়াও তপন বাবুর বিখ্যাত ছবি ‘গল্প হলেও সত্যি’ তে ভারতী দেবী স্ক্রিন শেয়ার করেছেন রবি ঘোষের সঙ্গে। তিনি ছিলেন ছবিতে মেজবউ এর ভূমিকায়"। আমি দেবব্রত বাবুকে থামাবার চেষ্টা করেও বিফল হলাম। “পরিচালক রাজা সেনের ‘পল্লি সমাজ’ থেকে রাজ চক্রবর্তীর ‘দাদি’। বিখ্যাত পরিচালক বাসু চট্টোপাধ্যায়ের টেলি ফিল্ম ‘যদি এমন হত’  থেকে মীনাক্ষী গোস্বামীর ‘কোলকাতার কাছে’। প্রায় দেড় বছর ধরে চলা ছোট পর্দার মেগা সিরিয়াল ‘একদিন প্রতিদিন’ এও অভিনয় করে গেছেন পিসিমা।“ “সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনয় করেছেন ‘জ্যোতিষী’ ছবিতে"। আর সত্যজিৎ রায়? ভারতী দেবী সত্যজিৎ রায়ের দুটি ছবিতে অভিনয় করেছেন। ১৯৬৬ তে মুক্তি পাওয়া ‘নায়ক’, যেখানে  উত্তম কুমার এবং শর্মিলা ঠাকুর মূল দুটি চরিত্রে অভিনয় করলেও, ভারতী দেবী ছিলেন এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায়। এছাড়াও সত্যজিৎ রায়ের ‘পরশ পাথর’ এ দেখা গেছে ভারতী দেবী কে।
ভারতী দেবীর সঙ্গে মধ্যপ্রদেশের খানডোয়ার বিখ্যাত প্রবাসী পরিবার গাঙ্গুলীদের সম্পর্ক ছিল বেশ চমকপ্রদ। সেই নিউ থিয়েটার এর সময় থেকে আলাপ বড় গাঙ্গুলী- দাদামনি অশোক কুমারের সঙ্গে। পর্দার হিরো – হিরোইন সম্পর্কের বাইরেও তাদের সম্পর্ক ছিল বেশ নিবিড় এবং আন্তরিক। ভারতী দেবী বোম্বে গেলেই উঠতেন অশোক কুমারের বাড়িতে। এক বার এরকম গিয়ে ভারতী দেবী  বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গেছিলেন। দেখেন কি একটা দামড়া যুবক, তিনি তখন বসে, হঠাৎ তাঁর সামনে এসে মেঝেতে ডিগবাজি খেতে শুরু করল। সেদিনকার সেই যুবক আর কেউ নন, তিনি অশোক কুমারের ছোট ভাই কিশোর কুমার। সেই সময় দাদামনির বাড়িতেই থাকতেন কিশোর। তো ভারতী দেবী এরকম পাগলামি দেখে হাঁসবেন না কি করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না, এমন সময় অশোক কুমার এসে ভাইকে ধমক দিয়ে বললেন,” এটা কি হচ্ছে কিশোর, ভারতীর সামনে?” জবাবে, কিশোর বলল, “ও তো ঘরের লোক, দাদামনি!”
ভারতী দেবী, শ্যাম চক্রবর্তী পরিচালিত ‘দুষ্টু প্রজাপতি’ ছবিতে দক্ষিণে ঝিয়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। চরিত্রটির একটা দারুন কমিক দিক ছিল। তো শুটিঙের সময় সেটে ভারতী দেবীর শরীরীভাষা, এবং সংলাপ বলার কায়দা দেখে কিশোর কুমার প্রায় হেঁসে গড়াগড়ি খেতেন। ওই ছবিতে কিশোর কুমার এবং তনুজা ছিলেন নায়ক-নায়িকার ভূমিকায়।
এদিকে কথায় কথায় বলাই হয়নি ভারতী দেবীর জীবনের ঘটে যাওয়া সেরা দুটি, প্রায় সোনার ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখার মত, স্মৃতি সম্পদের কথা।
সামনের মন্দির থেকে তখন ভোগারতির ঘণ্টা ধ্বনি তিন তলায় বসা আমাদের কানে বার বার আঘাত করে ফিরে যাচ্ছিল। নিবেদনের এই আস্ফালনে খানিক চুপ করে থাকা ছাড়া উপায় ছিল না।
আমি লেখাটা শুরু করতে গিয়ে শিরোনাম কি করবো ঠিক করতে বেশ খানিকটা সময় ব্যয় করেছি। একবার প্রায় সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিলাম, হেডিং - এ প্রাক্তন ‘LUX – কন্যা’ কথাটাকে রাখবোই। কারণ আমরা জানি, হিন্দুস্থান লিভারের একটা অন্যতম  প্রসাধনী উৎপাদন LUX সাবানের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর সাধারনত কারা হন। এখন যেমন দীপিকা পাদুকন, তাঁর আগে করিনা কাপুর, তাঁরও আগে প্রীতি জিনটা, শ্রীদেবী। অর্থাৎ সমসময়ের সেরা বলিউড নায়িকাদেরই দেখা যায় LUX এর অ্যাড করতে। শিউরে উঠবেন শুনে যে এই চির দ্যুতিময় সুন্দরীদের তালিকায় স্বর্ণ গাছায় যুক্ত হয়ে আছে সেই সময়ের অন্যতম সেরা অভিনেত্রী ভারতী দেবীর নাম। দেশে-বিদেশের কোটি কোটি ক্রেতার কাছে ভারতী দেবী সেদিন বাড়িয়েছিলেন LUX এর ব্র্যান্ড ভ্যালু। আরও শিহরিত হবেন শুনে, এই বিজ্ঞাপন এর জন্য একটি ফাটা কড়িও নেননি ভারতী দেবী। বলেছিলেন, সাবান হাতে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে হাঁসি মুখে একটা ছবির জন্য আবার পারিশ্রমিক কিসের! পরিবর্তে হিন্দুস্থান লিভার কিন্তু কুড়ি বছর ধরে প্রতি বছর ভারতী দেবীর জন্মদিনে সারা বছরের সাবান সহ নানারকম প্রসাধনী সামগ্রী তাঁকে উপহার স্বরূপ তাঁর বাড়িতে পাঠিয়ে দিত। এও কম আশ্চর্যের নয়। কিন্তু আশ্চর্যের নিরিখে ভারতী দেবীর হলিউডে ডাক পাওয়াটা বোধহয় আরও এগিয়ে। কারণ 
আমন্ত্রনটি এসেছিল হলিউডের যে সে প্রোডাকশন হাউস থেকে নয়,  একেবারে 'Broken City', 'The Heat' খ্যাত 2০th Century Fox থেকে।  এ যুগের ঐশ্বর্য রাই বা প্রিয়াঙ্কা চোপড়াদের হলিউডি ছবিতে অভিনয় করা নিয়ে যে প্রচারের হাইপ তৈরি হয়, ভাবলে গায়ে কাঁটা দেয় ভারতী দেবী সেই সময় হলিউডের আমন্ত্রন পেয়েও হেলায় প্রত্যাখ্যান করেছেন শুধুমাত্র পরিবারের টানে। এ নিয়ে ভারতী দেবীর কোনো খেদ ছিল না। বরং মহাকাশের সুমহান তারকা হয়েও দিনের শেষে ঢাকুরিয়ার এই বাড়িতে দিনের পর দিন যাপন করে গেছেন আটপৌরে জীবনচর্যার সুখদুঃখ, ভালোমন্দ, গ্লানি-গরিমার জীবনকে, এবং একেবারে নিজের স্টাইলে। 
চেয়ার ছেড়ে এবার  দেবব্রত বাবুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমি নেমে আসি নীচে, রাস্তায়। রোমাঞ্চের ছায়াপথ থেকে বাস্তবের ফুটপাথে। 



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট, কোথায় ছিলেন গান্ধীজী?

১৫০/বি বেলেঘাটা মেন রোড। শিয়ালদহ স্টেশন ও ই-এম বাইপাস এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন কারী মূল রাস্তা - বেলেঘাটা মেন রোড তথা সুরেশ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় রোডের ওপর পড়া এই বিশেষ ঠিকানা টি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে এক গৌরবময় স্মৃতির সাক্ষ্য বহন করছে । বিশেষ করে, প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময় আসন্ন হলে, এই ঠিকানার কথা স্মরণ না করে থাকা যা য় না। কারণ ১৯৪৭ এ গোটা দেশ যখন স্বাধীনতার আনন্দ উদযাপনে ব্যস্ত, বিশেষ করে রাজধানী দিল্লিতে স্বাধীনতা লাভের (১৫ ই আগস্ট) দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখতে আয়োজিত হয়েছে অভূতপূর্ব রাজকীয় সমারোহের - যার শুভ সূচনা হয়েছে, ১৪ ই আগস্টের মধ্যরাতে; ১৫ তারিখ পদার্পণ করতেই দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর ঐতিহাসিক বক্তৃতা দিয়ে শুভারম্ভ হয়েছে স্বাধীনতা দিবস পালনের মহা নির্ঘণ্ট। এই উচ্ছ্বাস যদিও কাঙ্ক্ষিতই ছিল। কারণ দীর্ঘ ২০০ বছরের পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরেই দেশবাসীর কাছে এসে পৌঁছেছিল সে বিরল মাহেন্দ্রক্ষণ। সমাগত হয়েছিল সেই মহা মুহূর্ত যখন প্রায় শত বর্ষ ধরে চলা স্বাধীনতাকামী মহাযজ্ঞে মুক্তিলাভের সিদ্ধি স্পর্শ করছিল তার চূড়ান্ত শিখর দেশ। কিন্তু এই যজ...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...