গ্রীষ্মের পথে জলের পীপাসা না মিটলেও, রঙের পীপাসা মিটবেই।
সূর্য যখন তার
অনুপম কর শৃঙ্গারে আগুন ধরায় ধরিত্রীর হোমকুণ্ডে, সুরের দেবতার অগ্নিবীণা থেকে ফুটন্ত
খেজুর রসের রেশমী ধারার মত হাওয়ায় ওড়ে অগ্নিশুদ্ধ মরু মূর্ছনা; রাবাবের তপ্ত তারে
ছড় টেনে টেনে আগুনের হলুদ মাখা দীপক রাগে দগ্ধ সুর ওঠে পঞ্চমে, সেই দহন বেলায়
স্বর্গ থেকে ঝরে পড়ে আশীর্বাদী ফুল। ফুটে ওঠে – কৃষ্ণচূড়া ফুরুস কিংবা সোঁদাল হয়ে।
প্রকৃতি বিজ্ঞানের নিয়মে - লাল রঙের তরঙ্গদৈর্ঘ্য, অন্য যে কোনো রঙের থেকে বেশী; তাই গ্রীষ্মের
দিনে, সে দুরের মাঠে হোক অথবা ট্রেন লাইনের ধারে বা নয়নজুলির পাড়ে কিংবা কোনো কলেজের ক্যাম্পাসে
বা পার্কের পাঁচিল ধরে অথবা কোনো চলন্ত বাসের জানালা থেকে হঠাৎ দেখতে পাওয়া পিচ রাস্তার
ধারে ফুটে থাকা কৃষ্ণচূড়া ফুলকে তাই নজর এড়িয়ে যাওয়া সম্ভম নয় কোনো ভাবে। গ্রীষ্মের
ঠা ঠা রোদ্দুরে দাঁড়িয়ে থাকা বিশাল বিশাল পাহাড়ের মত কৃষ্ণচূড়ার মাথায় ফুটে থাকা এই রক্ত
আলেখ্যর নেপথ্যে কি সত্যি সত্যি লুকিয়ে আছে কোনো করুণ ইতিহাসের স্মৃতি! কেরালার মালাবার অঞ্চলে বসবাসকারী সেন্ট থমাস গোষ্ঠীর খ্রিস্টানরা (ভারতের সিরিয়ান খ্রিস্টান সম্প্রদায়) কিন্তু সেরকমই মনে করেন। তাদের বিশ্বাস, জেরুজালেম শহরের উপকণ্ঠে - যে পাহাড়ে যীশুকে ক্রুশ বিদ্ধ করা হয়েছিল, তার পাশেই ছিল এক কৃষ্ণচূড়ার গাছ। ক্রুশ বিদ্ধের সময়, যীশু খ্রিস্টের শরীর থেকে নির্গত টাটকা রক্ত ঝরে পড়েছিল পাশের কৃষ্ণচূড়া গাছ এবং ফুটে থাকা ফুলের উপর, আর সেই থেকে কৃষ্ণচূড়ার এমন রক্ত রঙ। কেরালায় কৃষ্ণচূড়াকে এই জন্যে “The Flower of Calvary” বা ক্রুশারোপিত যীশুর খোদাই করা বিগ্রহ - ক্যাল্ভারীর ফুল বলে অভিহিত করা হয়। সব মিলিয়ে বেশ রোমাঞ্চিত করার মতন কৃষ্ণচূড়ার এই 'কেরালা স্টোরি'।
আসলে প্রবল দাবদাহে ক্লিষ্ট মানুষ, কৃষ্ণচূড়ার রক্ত ক্ষরণের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে চায় তাদের অন্তরের মধ্যেকার রক্তপাতের ছবিকে; রোদে পুড়ে যাওয়া দীগন্তের গায়ে ফুটে ওঠা কৃষ্ণচূড়ার রঙে - হন্যে হয়ে খোঁজে রূপকথার রং রিলিফকে।
গ্রীষ্মের পথে তাই দূর থেকে দেখা কৃষ্ণচূড়ার এই লাল-হল্লাকে বড় অলৌকিক লাগে। ঝিম ধরা নেশায় যেন সারা চরাচরকে সে টেনে নিতে চায় তার দিকে; রঙের চুম্বকে, নির্মাণ করতে চায় অনুপেক্ষণীয় সম্মোহনী মায়াজাল চারিদিকে!
তারপরেও জ্যৈষ্ঠের মাঠ ঘাট ভাসাতে, বাঁধভাঙা এই রঙের বন্যায় - একা কৃষ্ণচূড়ায় রক্ষে নেই; সঙ্গে স্বর্ণচূড়ার (Peltophorum Pterocarpum) আগুন দোসর!
গ্রীষ্মের পথে তাই দূর থেকে দেখা কৃষ্ণচূড়ার এই লাল-হল্লাকে বড় অলৌকিক লাগে। ঝিম ধরা নেশায় যেন সারা চরাচরকে সে টেনে নিতে চায় তার দিকে; রঙের চুম্বকে, নির্মাণ করতে চায় অনুপেক্ষণীয় সম্মোহনী মায়াজাল চারিদিকে!
তারপরেও জ্যৈষ্ঠের মাঠ ঘাট ভাসাতে, বাঁধভাঙা এই রঙের বন্যায় - একা কৃষ্ণচূড়ায় রক্ষে নেই; সঙ্গে স্বর্ণচূড়ার (Peltophorum Pterocarpum) আগুন দোসর!
দূর জঙ্গলে মাথা তুলে দাঁড়ানো কৃষ্ণচূড়ার লাল নিশান, পাশে কনকচূড়ার অগ্নিপক্ষের উড়ান তাই ইচ্ছাপূরণের বিজ্ঞাপন হয়ে সেঁটে থাকে গ্রীষ্মের মহাকাব্যিক ক্যানভাসে।
বড় করুন লাগে, যখন পুকুরের নিস্তরঙ্গ জলে পড়া কনকচূড়ার ছবি থেকে স্খলিত হয় হলুদ অগ্নি স্ফুলিঙ্গ; বদলে যাওয়া সময়ে, সেই কনকচূড়াই যখন ভোরের সবুজ ঘাসে ছড়িয়ে দেয় তার হলুদ ফুলের গুলাল, মনে হয় হলুদ শুধু আগুনের রঙ নয়, বৈরাগ্যেরও।
এই কনকচূড়া বা স্বর্ণচুড়াকে (Yellow Flame Tree) কিন্তু অনেকে রাধাচূড়া বলে
ভুল করে। রাধাচূড়া আসলে কৃষ্ণচূড়া প্রজাতিরই একটি ফুল যাদের
হিন্দিতে গুলমোহর বলা হয়। এদের মধ্যে একটা বড় প্রভেদ হল, কৃষ্ণচূড়া বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ
আর রাধাচূড়া গুল্ম।
রঙের জলসায়, গ্রীষ্মের কোনো প্রান্তর যদি ফুলে ফুলে ঢাকা হয় আর গ্রীষ্মবেলার ওই ফুলেল প্রান্তরকে যদি নানান রঙে সাজানো সুদৃশ্য একটা রেকাবি ধরা হয়, তবে অপূর্ব এই রংসাজির যে রঙে - দীগন্তে ছড়িয়ে পড়ে অতিজাগতিক নীল রোমাঞ্চের ঢেউ; রৌদ্র রঙে ঝলসে যাওয়া চোখে, যে রঙের পরশে ফুটে ওঠে নীলচে-বেগুনী ছায়ামাখা সুললিত অঞ্জন ধারা, সে রঙ - ব্রহ্মদেবের প্রিয় ফুল, জারুলের (Lagerstroemia Speciosa)! মহারাষ্ট্রের রাজ্য ফুল - জারুলের এই অভিজাত নীল রং কেবল যুব রানীর চোখের নীলাঞ্জনের সঙ্গেই তুলনীয়। গ্রীষ্মের পথে - যার আকর্ষণ কোনো রাজকুমারীর হাতে ধরা প্রেমপুষ্পের (Queen's Flower) চেয়ে কম কিছু নয়।
রঙের উৎসবে, অমলতাসের সোনালী ধারার (Golden Shower Flower) অনর্গলতা আবার গ্রীষ্ম-বালার কবরী সজ্জায় যোগ করে অন্য ব্যাঞ্জনা। বাংলায় সোঁদাল (Cassia Fistula) নামে পরিচিত, এটি আবার থাইল্যান্ডের জাতীয় ফুল এবং কেরালার রাজ্য ফুল।
রঙের জলসায়, গ্রীষ্মের কোনো প্রান্তর যদি ফুলে ফুলে ঢাকা হয় আর গ্রীষ্মবেলার ওই ফুলেল প্রান্তরকে যদি নানান রঙে সাজানো সুদৃশ্য একটা রেকাবি ধরা হয়, তবে অপূর্ব এই রংসাজির যে রঙে - দীগন্তে ছড়িয়ে পড়ে অতিজাগতিক নীল রোমাঞ্চের ঢেউ; রৌদ্র রঙে ঝলসে যাওয়া চোখে, যে রঙের পরশে ফুটে ওঠে নীলচে-বেগুনী ছায়ামাখা সুললিত অঞ্জন ধারা, সে রঙ - ব্রহ্মদেবের প্রিয় ফুল, জারুলের (Lagerstroemia Speciosa)! মহারাষ্ট্রের রাজ্য ফুল - জারুলের এই অভিজাত নীল রং কেবল যুব রানীর চোখের নীলাঞ্জনের সঙ্গেই তুলনীয়। গ্রীষ্মের পথে - যার আকর্ষণ কোনো রাজকুমারীর হাতে ধরা প্রেমপুষ্পের (Queen's Flower) চেয়ে কম কিছু নয়।
রঙের উৎসবে, অমলতাসের সোনালী ধারার (Golden Shower Flower) অনর্গলতা আবার গ্রীষ্ম-বালার কবরী সজ্জায় যোগ করে অন্য ব্যাঞ্জনা। বাংলায় সোঁদাল (Cassia Fistula) নামে পরিচিত, এটি আবার থাইল্যান্ডের জাতীয় ফুল এবং কেরালার রাজ্য ফুল।
একটা প্রবাদ আছে - যে খায়
চিনি, তাকে যোগায় চিন্তামণি - এটা যে সত্যি তার প্রমান হয় কিছুদিন আগে যখন গড়িয়া ষ্টেশন রোডের উপরে ফুলে ফুলে
ভর্তি এক সোঁদালকে দেখি; আমার তো একেবারে আর্কিমিডিসের মতন ইউরেকা বলে চেঁচিয়ে উঠতে ইচ্ছা
করছিল। দক্ষিণ ভারতীয় মহিলাদের কেশসজ্জার মত পত্র শূন্য ডালা পালা থেকে ঝুলছিল অসংখ্য ফুলের থোকা যেন খোঁপায় বাঁধা হলুদ ফুলের গজরা। এমনই সৌন্দর্যের মায়াজাল এই সোঁদালের। পরিশেষে বলবো ফুরুসের কথা, গ্রীষ্মের সময় যা ফুটে ওঠে বেগুনী, কমলা সহ নানান মনোরম রঙে।
এরপরেও আছে - গাছে গাছে ঝুলে থাকা পান্না সবুজ আম, কমলাবর্ণ খেজুর কিংবা পিঙ্গলবর্ণ তাল বা ভ্রমরকৃষ্ণ জামকুল, এরাও গ্রীষ্মের পথে রংবাজি কিছু কম দেখায় না! আহা! রংবাজির কি মহিমা সত্যি!
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন