কিশোর বয়সে, সরস্বতী প্রতিমার সৌন্দর্যে এতটাই বিমুগ্ধ হয়েছিলেন, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় যে মাটির তৈরী সরস্বতীকেই জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে বসেছিলেন, অবাধ্য প্রেমিকের মতন। সুনীল তাঁর আত্মজীবনী 'অর্ধেক জীবন'এ সে কথা লিখেওছেন অকপটে। সুনীল বলেছেন, সেটি ছিল তার জীবনের প্রথম চুমু। এরকম ঘটনা হয়তো সকলের জীবনে ঘটে না। কিন্তু আপামর বাঙালীর কাছে ফি বছর সরস্বতী পূজার দিনটি আসে দু -ভাবে। বহিরঙ্গে থাকে ছোট শিশুদের হাতে খড়ি পড়ার শুভ আয়োজন; পাশাপাশি চলে বই খাতার ডাই কে সামনে রেখে বিদ্যার্থীদের প্রার্থনা- পুষ্পাঞ্জলির তুমুল উদ্দীপনা। কিন্তু অন্তরঙ্গে, এই দিনটির তাৎপর্য আসলে বহু আকাঙ্খিত প্রেম নিবেদনের শুভ দিন হিসেবেই অনুরণিত হয় বাঙালী তারুন্যের হৃদয়ে। এর একটা অন্যতম কারণ বোধহয়, প্রকৃতির এক বিশেষ সন্ধিক্ষণে পড়া সরস্বতী পূজার নির্ঘণ্ট। মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথি, একদিকে যেমন শীতের শেষ; অন্যদিকে তেমনি বসন্তের আগমনকে সূচিত করে। হলুদ গাঁদার গন্ধে ও রঙে উজ্জীবিত সরস্বতী পূজার দিনটিতে তাই বিদ্যা ও সঙ্গীতের দেবী সরস্বতী কে সাক্ষী রেখে ছড়িয়ে পড়ে প্রেমের আবেশ। সরস্বতী পূজার দিন তাই, বাঙালীর ভ্যালেন্টাইনস ডে।
বাঙালীর এই তথাকথিত ভ্যালেন্টাইনস ডে যদিও নির্ধারিত হয় তিথি ও নক্ষত্র অনুসারে। কখনো তা জানুয়ারীর শেষে, আবার কখনো ফেব্রুয়ারির শুরুতে বা ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝির দিকে পড়ে। কিন্তু আসল ভ্যালেন্টাইনস ডে পড়ে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারী মাসের ১৪ তারিখেই। কারণ ওই দিন সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যূ দিন ছিল।
ভ্যালেন্টাইন বলে একজন চিকিৎসক, পাদ্রী ছিলেন সে অনেক কাল আগে। তিনি ছিলেন বড় প্রেমিক। প্রেমের জন্যই তাকে প্রাণ দিতে হয়েছিল। সারা বিশ্ব তাই সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের স্মরণে ১৪ ফেব্রুয়ারী দিনটিকে প্রেম দিবস হিসেবে পালন করে।
কিন্তু কি আশ্চর্য, এবছর ২০২৪ এ সরস্বতী পূজা এবং ভ্যালেন্টাইনস ডে পড়েছে একই দিনে, ১৪ ই ফেব্রুয়ারী। প্রেমিক- প্রেমিকাদের কাছে যে এটি একটি বিরলদের মধ্যে বিরলতম যোগ, সে কথা বলাই বাহুল্য।
কিন্তু ২০২৪ য়েই কি প্রথম এমন সমাপতন ঘটলো, না এর আগেও ঘটেছে? এই তথ্য কিন্তু বেশ রোমাঞ্চকর। আমি প্রায় বর্তমান সাল থেকে ১২৫ বছর পিছিয়ে এবং আগামী ৭৫ বছর পর্যন্ত অর্থাৎ প্রায় ২০০ বছরের সময়কাল ধরে তথ্য অনুসন্ধান করে যে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছি সেটাই এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।
শুনলে অবাক হবেন, ২০২৪ এর আগে সেই ১৯২৯ সালে এসেছিল এমন বিরল যোগ। অর্থাৎ প্রায় ৯৫ বছর পরে সরস্বতী পূজা আর ভ্যালেন্টাইনস ডে পড়লো একই দিনে। চলতি শতাব্দীর, প্রথম। যদিও ১৯২৯ এর পূর্বে ১৯১০ সালে ঘটেছিল এমন ঘটনা। তার আগে ঘটেছিল ১৮৯৯ সালে।
এখন প্রশ্ন, ২০২৪ এর পরে আবার কবে আসবে এরকম মহার্ঘ অবসর! দেখলাম পরবর্তি সাল ২০৪৩ সাল, প্রায় ২০ বছর পরে। তারপরে আবার হবে ২০৬২ সালে এবং তারপরে এই শতাব্দীর শেষ সাল অর্থাৎ ২১০০ তে আবার দেখা যাবে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন আর মা সরস্বতীর মধুর মেলবন্ধন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন