সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

৯৫ বছর পরে সরস্বতী পূজা পড়লো ভ্যালেন্টাইনস ডে'র দিনে!

কিশোর বয়সে, সরস্বতী প্রতিমার সৌন্দর্যে এতটাই বিমুগ্ধ হয়েছিলেন, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় যে মাটির তৈরী সরস্বতীকেই জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়ে বসেছিলেন, অবাধ্য প্রেমিকের মতন।  সুনীল তাঁর আত্মজীবনী 'অর্ধেক জীবন'এ সে কথা লিখেওছেন অকপটে। সুনীল বলেছেন, সেটি ছিল তার জীবনের প্রথম চুমু। এরকম ঘটনা হয়তো সকলের জীবনে ঘটে না। কিন্তু আপামর বাঙালীর কাছে ফি বছর সরস্বতী পূজার দিনটি আসে দু -ভাবে।  বহিরঙ্গে থাকে ছোট শিশুদের হাতে খড়ি পড়ার শুভ আয়োজন; পাশাপাশি চলে বই খাতার ডাই কে সামনে রেখে বিদ্যার্থীদের প্রার্থনা- পুষ্পাঞ্জলির তুমুল উদ্দীপনা। কিন্তু অন্তরঙ্গে, এই দিনটির তাৎপর্য আসলে বহু আকাঙ্খিত প্রেম নিবেদনের শুভ দিন হিসেবেই অনুরণিত হয় বাঙালী তারুন্যের হৃদয়ে। এর একটা অন্যতম কারণ বোধহয়, প্রকৃতির এক বিশেষ সন্ধিক্ষণে পড়া সরস্বতী পূজার নির্ঘণ্ট। মাঘ মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথি, একদিকে যেমন শীতের শেষ; অন্যদিকে তেমনি বসন্তের আগমনকে সূচিত করে। হলুদ গাঁদার গন্ধে ও রঙে উজ্জীবিত সরস্বতী পূজার দিনটিতে তাই বিদ্যা ও সঙ্গীতের দেবী সরস্বতী কে সাক্ষী রেখে ছড়িয়ে পড়ে প্রেমের আবেশ। সরস্বতী পূজার দিন তাই, বাঙালীর ভ্যালেন্টাইনস ডে। 



বাঙালীর এই তথাকথিত ভ্যালেন্টাইনস ডে যদিও নির্ধারিত হয় তিথি ও নক্ষত্র অনুসারে। কখনো তা জানুয়ারীর শেষে, আবার কখনো ফেব্রুয়ারির শুরুতে বা ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝির দিকে পড়ে। কিন্তু আসল ভ্যালেন্টাইনস ডে পড়ে প্রতি বছর ফেব্রুয়ারী মাসের ১৪ তারিখেই। কারণ ওই দিন সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যূ দিন ছিল। 

ভ্যালেন্টাইন বলে একজন চিকিৎসক, পাদ্রী ছিলেন সে অনেক কাল আগে। তিনি ছিলেন বড় প্রেমিক। প্রেমের জন্যই তাকে প্রাণ দিতে হয়েছিল। সারা বিশ্ব তাই সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের স্মরণে ১৪ ফেব্রুয়ারী দিনটিকে প্রেম দিবস হিসেবে পালন করে।

কিন্তু কি আশ্চর্য, এবছর ২০২৪ এ সরস্বতী পূজা এবং ভ্যালেন্টাইনস ডে পড়েছে একই দিনে, ১৪ ই ফেব্রুয়ারী। প্রেমিক- প্রেমিকাদের কাছে যে এটি একটি বিরলদের মধ্যে বিরলতম যোগ, সে কথা বলাই বাহুল্য। 

কিন্তু ২০২৪ য়েই কি প্রথম এমন সমাপতন ঘটলো, না এর আগেও ঘটেছে? এই তথ্য কিন্তু বেশ রোমাঞ্চকর। আমি প্রায় বর্তমান সাল থেকে ১২৫ বছর পিছিয়ে এবং আগামী ৭৫ বছর পর্যন্ত অর্থাৎ প্রায় ২০০ বছরের সময়কাল ধরে তথ্য অনুসন্ধান করে যে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছি সেটাই এখানে তুলে ধরার চেষ্টা করছি।

শুনলে অবাক হবেন, ২০২৪ এর আগে সেই ১৯২৯ সালে এসেছিল এমন বিরল যোগ। অর্থাৎ প্রায় ৯৫ বছর পরে সরস্বতী পূজা আর ভ্যালেন্টাইনস ডে পড়লো একই দিনে। চলতি শতাব্দীর, প্রথম। যদিও ১৯২৯ এর পূর্বে ১৯১০ সালে ঘটেছিল এমন ঘটনা। তার আগে ঘটেছিল ১৮৯৯ সালে। 

এখন প্রশ্ন, ২০২৪ এর পরে আবার কবে আসবে এরকম মহার্ঘ অবসর! দেখলাম পরবর্তি সাল ২০৪৩ সাল, প্রায় ২০ বছর পরে। তারপরে আবার হবে ২০৬২ সালে এবং তারপরে এই শতাব্দীর শেষ সাল অর্থাৎ ২১০০ তে আবার দেখা যাবে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন আর মা সরস্বতীর মধুর মেলবন্ধন। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...

জনগণমনঃ জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার ইতিহাস ও কিছু প্রশ্নের উত্তর!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ব্রহ্ম সঙ্গীত ‘ জনগণমন অধিনায়ক’ কে দেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে মান্যতা দেওয়ার সর্ব সম্মীলিত সিদ্ধান্ত হয় ১৯৫০ সালের ২৪ শে জানুয়ারি । কিন্তু কেন এত দেরী? দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও কেন তিন বছর সময় লেগেছিল জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন করতে? ‘ভারত বিধাতা’ শিরোনামে লেখা, স্বদেশ পর্যায় ভুক্ত (গীতবিতান অনুসারে) এই রবীন্দ্রগীতিটি কিভাবে -  দেশের জাতীয় সঙ্গীত হওয়ার পথে একটু একটু করে এগিয়ে গেল! ‘জনগনমন’র জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার নেপথ্য কাহিনীই আজ আমরা ফিরে দেখবো এই প্রবন্ধে।  ১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট - দীর্ঘ ২০০ বছর ধরে পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরে অবশেষে দেশবাসীর ভাগ্যাকাশে এসে উপস্থিত হোল বহু আকাঙ্খিত সেই দিনটি। উদিত হোল স্বাধীনতার নতুন সূর্যের।   স্বাধীন হোল দেশ। কিন্তু সদ্য ব্রিটিশ অধীনতা মুক্ত দুটি দেশ ভারত এবং পাকিস্থান তখনও পায় নি স্বতন্ত্র সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা। ১৯৪৭ এর ১৮ই জুলাই তারিখে লাগু হওয়া ভারতীয় স্বাধীনতা আইন অনুসারে নিজ নিজ সংবিধান প্রণয়নের আগে পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্থান এই দুটি ভূখণ্ড কমনওয়েলথ দেশের অধীনস্থ দুটি অধিরাজ্য হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে পারা...