সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

লিপ ইয়ারঃ ২৯ শে ফেব্রুয়ারী পালনের ভিন্ন নিয়ম!

আমরা সবাই জানি ২৯ শে ফেব্রুয়ারী তারিখটা চার বছরে একবার আসে। ওই জন্যই ২৯ ফেব্রুয়ারী দিনটিকে লিপ দিবস বা অধিদিবস বলা হয়। আর বছরটাকে বলা হয় লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষ। 

আমরা এও জানি লিপ ইয়ার কিনা জানতে সালকে ৪ দিয়ে ভাগ করতে হয় এবং চার দ্বারা বিভাজ্য হলে তবেই সেটা লিপ ইয়ার হয়, নয়তো নয়।  এর মধ্যে হয়তো কেউ কেউ  ভেবে নিয়েছেন, আমি কে সি নাগের অঙ্ক বই নিয়ে বসেছি কি না।  আসলে আমি একটু ভূমিকা করে নিলাম। আমার আজকের আলোচনার বিষয় কিন্তু অন্য। তা একান্ত ভাবেই কেন্দ্রীভূত লিপ বেবি অর্থাৎ ২৯ শে ফেব্রুয়ারীর দিনটিতে জন্ম গ্রহণ করা শিশুদের ওপর। 
প্রসঙ্গত আমাদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোরারজী দেশাইও ছিলেন একজন লিপ বেবি। তার জন্ম হয়েছিল  ১৮৯৬ সালের ২৯ শে ফেব্রুয়ারী।  ৯৯ টি বসন্ত পেরিয়ে মাননীয় মোরারজী দেশাই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন ১৯৯৫ এর ১০ই এপ্রিল।  মোরারজী দেশাই কিন্তু কালের বিধানে ৯৯ টি জন্মদিন পাননি। পেয়েছিলেন মাত্র ২৪ টা।  প্রসঙ্গত মোরারজী দেশাই ছিলেন ভারতবর্ষের প্রথম কোয়ালিশন সরকারের প্রধানমন্ত্রী।  তার প্রধানমন্ত্রীত্বের সময় কাল ছিল ১৯৭৭ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত।  লিপ বেবি হওয়ার কারনে, মোরারজী দেশাই প্রধানমন্ত্রী থাকা কালীন ও একবারের জন্যে তাঁর জন্মদিন পালন করার সুযোগ পান নি।
যদিও লিপ বেবিদের জন্মদিন পালনের জন্যে অন্য আর একটি নিয়ম চালু আছে বাজারে। সেটি হোল যে সমস্ত শিশুদের জন্ম-সময় ২৯ শে ফেব্রুয়ারী রাত ১২ টার আগে, তারা লিপ ইয়ার বাদে অন্য বছর গুলিতে আগের দিন অর্থাৎ ২৮ শে ফেব্রুয়ারী তাদের জন্মদিন পালন করবে। আর যে সব শিশুদের জন্মের সময় রাত ১২ টার পরে তারা তাদের জন্মদিন পালন করবে পরের দিন অর্থাৎ  ১লা মার্চ।  আমাদের দেশে লিপ বেবিদের, অন্য সাধারন বছরগুলিতে জন্মদিন পালনের কোনো সাধারন নিয়ম না থাকলেও চীনে কিন্তু ১৯২৯ সাল থেকে তাদের দেশের সিভিল কোড, ২৮ শে ফেব্রুয়ারী দিনটিকে লিপ বেবিদের জন্মদিন পালনের জন্যে নির্ধারিত করেছে। আবার হংকং এ, নির্ধারিত হয়েছে ১ লা মার্চ।  ১৯৯০ সাল থেকে সে দেশে চালু হয়েছে এই নিয়ম।  
ইংরেজি ক্যালেন্ডারে যেমন লিপ ইয়ার গুলিতে ফেব্রুয়ারী মাসের দিন সংখ্যা ২৮ থেকে ১ দিন বেড়ে ২৯ দিন হয়, বাংলা ক্যালেন্ডারে তেমনি সমসাময়িক ফাল্গুন মাসের দিন সংখ্যা ২৯ থেকে বেড়ে ৩০ দিন হয়।  যদিও সম্রাট আকবর প্রবর্তিত বাংলা বর্ষপঞ্জি তে এই লিপ ইয়ার বা অধিবর্ষের ধারনা প্রথমে ছিল না, পরবর্তী তে বাংলাদেশ বাংলা একাডেমী ফাল্গুন মাসের দিন সংখ্যা এক দিন বাড়িয়ে গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী কে মান্যতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। 
এখন প্রশ্ন ইংরেজি ক্যালেন্ডারে কবে থেকে লিপ ইয়ার চালু হয়েছে? খ্রিষ্ট পূর্ব ৪৫ সালে, রোমান শাসক জুলিয়াস সিজার চালু করেন এই প্রথা। যদিও জুলিয়াস সিজার প্রবর্তিত এই ক্যালেন্ডার কে বলা হয় জুলিয়ান ক্যালেন্ডার। 
একটা সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, লিপ বেবিদের সংখ্যা প্রতি ১৪৬১ জনে ১ জন। 
এ তো গেল জন্মদিনের কথা, মৃত্যু ও তো হতে পারে লিপ দিবসের দিনে অর্থাৎ ২৯ শে ফেব্রুয়ারীর দিন। সে ক্ষেত্রে কি মৃত্যু দিন পালনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে চার বছর? নাকি জন্মদিন পালনের মত মৃত্যু দিন পালন ও হবে ২৮ শে ফেব্রুয়ারী বা ১লা মার্চ?


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...

জনগণমনঃ জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার ইতিহাস ও কিছু প্রশ্নের উত্তর!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ব্রহ্ম সঙ্গীত ‘ জনগণমন অধিনায়ক’ কে দেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে মান্যতা দেওয়ার সর্ব সম্মীলিত সিদ্ধান্ত হয় ১৯৫০ সালের ২৪ শে জানুয়ারি । কিন্তু কেন এত দেরী? দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও কেন তিন বছর সময় লেগেছিল জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন করতে? ‘ভারত বিধাতা’ শিরোনামে লেখা, স্বদেশ পর্যায় ভুক্ত (গীতবিতান অনুসারে) এই রবীন্দ্রগীতিটি কিভাবে -  দেশের জাতীয় সঙ্গীত হওয়ার পথে একটু একটু করে এগিয়ে গেল! ‘জনগনমন’র জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার নেপথ্য কাহিনীই আজ আমরা ফিরে দেখবো এই প্রবন্ধে।  ১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট - দীর্ঘ ২০০ বছর ধরে পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরে অবশেষে দেশবাসীর ভাগ্যাকাশে এসে উপস্থিত হোল বহু আকাঙ্খিত সেই দিনটি। উদিত হোল স্বাধীনতার নতুন সূর্যের।   স্বাধীন হোল দেশ। কিন্তু সদ্য ব্রিটিশ অধীনতা মুক্ত দুটি দেশ ভারত এবং পাকিস্থান তখনও পায় নি স্বতন্ত্র সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা। ১৯৪৭ এর ১৮ই জুলাই তারিখে লাগু হওয়া ভারতীয় স্বাধীনতা আইন অনুসারে নিজ নিজ সংবিধান প্রণয়নের আগে পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্থান এই দুটি ভূখণ্ড কমনওয়েলথ দেশের অধীনস্থ দুটি অধিরাজ্য হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে পারা...