সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

খোলা জানালার ইতিকথা!

 খোলা জানালায় একটা আস্ত আকাশ উঁকি মারে। সেই নীল আকাশ, যেখানে মুক্তির পাখা মেলে রাত্রি শেষের পাখিরা। কাঁচা মিঠে রোদ এসে পড়ে আঁধার ক্লিষ্ট ঘরের দুমড়ানো শতরঞ্জি পাতা ভাঙা মেঝের বুকে। খোলা জানালা জুড়ে তখন শুধুই আলোর কলকল ধ্বনি, জানালার শিক ভেঙে ঢুকে পড়ে, ছড়িয়ে দেয় টগর ফুলের মতন শিশির সিক্ত আলোর উজান রেখা। লেখা হয় নব পট বদলের অরূপ উপাখ্যান।

খোলা জানালা দিয়ে কখনো কখনো নেমে আসে জীর্ণ মতবাদের বাষ্পে ভারাক্রান্ত পান্ডুর মেঘের ধূসর ছায়া। তখন বৃষ্টি নামে, অঝোর ধারায়। পাতার ফাঁক গলে ঢলে পড়ে শুষ্ক মৃত্তিকার চোখে, সজল অশ্রু পাতের সাক্ষর রেখে যায় নব অঙ্কুরোদগমে; নব পত্রিকায়; আনন্দের অশ্রু সম্ভারে। খোলা জানালায় তখন শুধুই ঘেঁটু ফুলের আমোদ, সোঁদা গন্ধ মাখা। বড় উদাস লাগে তখন।
খোলা জানালাতেই কখনো হাওয়ার হিন্দোল বয়ে আনে বিপ্লবের চেতনা। শত বাধা, শত প্রতিরোধ - সব ভেঙে নিজেকে বিজয়ী যোদ্ধা ভাবতে ভালো লাগে তখন।
কখনো চাঁদ ওঠে খোলা জানালার দৃষ্টি পথে। কখনো সে চাঁদ, বড় নিঃসঙ্গ। কখনো সে অসংখ্য তারা পরিবেষ্টিত সুন্দরী রাজ স্বয়ম্বরা। কখনো সে চাঁদ ধর্মের কখনো ধর্মের নামে ধান্দার। কখনো উপহার সদৃশ রজত রেকাবি তো কখনো অন্ন শূণ্য ফাঁকা থালা। কখনো চুম্বনের উদাত্ত স্পৃহা আবার কখনো প্রেমের নামে পাতানো চক্রব্যুহ।
খোলা জানালার সৈকত ছুঁয়ে কখনো ওঠে সমুদ্রের ঢেউ। কখনো নদীর ছলছল জলে ভেসে যায় নৌকা। শেষ খেয়া চলে গেলে বেদনায় বড় কাতর হয় হৃদয়।
খোলা জানালাতেই কখনো খোলাছাদ আসে, কাপড় জামা রোদে মেলতে। রোমান যোশ ভরে দিয়ে যায় হৃদয়ের ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে। ছাদ বাগানের ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকারা খোলা জানালায় তাদের পাঁপড়ি মেলা সুবাস বয়ে নিয়ে আসে উজাড় করা বুকে।
খোলা জানালার পথ ধরে ভেসে যায় কত দৃশ্য, দৃশ্য প্রবাহ।
দুর্গা প্রতিমারা আসে প্যান্ডেলে আবার দশমীর দিনে ফিরে যায় বিসর্জনের ঘাটে। কখনো আসে বাউল বাতাস , কখনো দমবন্ধ করা রাজনৈতিক মিছিলের গড্ডালিকা প্রবাহ হেঁটে যায়। কখনো আসে নবপরিনয়ের শুভ শোভাযাত্রা। কখনো শেষ বিদায়ের অন্তিম কোলাহল ভেসে আসে সেই খোলা জানালায়।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...

জনগণমনঃ জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার ইতিহাস ও কিছু প্রশ্নের উত্তর!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ব্রহ্ম সঙ্গীত ‘ জনগণমন অধিনায়ক’ কে দেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে মান্যতা দেওয়ার সর্ব সম্মীলিত সিদ্ধান্ত হয় ১৯৫০ সালের ২৪ শে জানুয়ারি । কিন্তু কেন এত দেরী? দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও কেন তিন বছর সময় লেগেছিল জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন করতে? ‘ভারত বিধাতা’ শিরোনামে লেখা, স্বদেশ পর্যায় ভুক্ত (গীতবিতান অনুসারে) এই রবীন্দ্রগীতিটি কিভাবে -  দেশের জাতীয় সঙ্গীত হওয়ার পথে একটু একটু করে এগিয়ে গেল! ‘জনগনমন’র জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার নেপথ্য কাহিনীই আজ আমরা ফিরে দেখবো এই প্রবন্ধে।  ১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট - দীর্ঘ ২০০ বছর ধরে পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরে অবশেষে দেশবাসীর ভাগ্যাকাশে এসে উপস্থিত হোল বহু আকাঙ্খিত সেই দিনটি। উদিত হোল স্বাধীনতার নতুন সূর্যের।   স্বাধীন হোল দেশ। কিন্তু সদ্য ব্রিটিশ অধীনতা মুক্ত দুটি দেশ ভারত এবং পাকিস্থান তখনও পায় নি স্বতন্ত্র সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা। ১৯৪৭ এর ১৮ই জুলাই তারিখে লাগু হওয়া ভারতীয় স্বাধীনতা আইন অনুসারে নিজ নিজ সংবিধান প্রণয়নের আগে পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্থান এই দুটি ভূখণ্ড কমনওয়েলথ দেশের অধীনস্থ দুটি অধিরাজ্য হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে পারা...