খোলা জানালায় একটা আস্ত আকাশ উঁকি মারে। সেই নীল আকাশ, যেখানে মুক্তির পাখা মেলে রাত্রি শেষের পাখিরা। কাঁচা মিঠে রোদ এসে পড়ে আঁধার ক্লিষ্ট ঘরের দুমড়ানো শতরঞ্জি পাতা ভাঙা মেঝের বুকে। খোলা জানালা জুড়ে তখন শুধুই আলোর কলকল ধ্বনি, জানালার শিক ভেঙে ঢুকে পড়ে, ছড়িয়ে দেয় টগর ফুলের মতন শিশির সিক্ত আলোর উজান রেখা। লেখা হয় নব পট বদলের অরূপ উপাখ্যান।
খোলা জানালা দিয়ে কখনো কখনো নেমে আসে জীর্ণ মতবাদের বাষ্পে ভারাক্রান্ত পান্ডুর মেঘের ধূসর ছায়া। তখন বৃষ্টি নামে, অঝোর ধারায়। পাতার ফাঁক গলে ঢলে পড়ে শুষ্ক মৃত্তিকার চোখে, সজল অশ্রু পাতের সাক্ষর রেখে যায় নব অঙ্কুরোদগমে; নব পত্রিকায়; আনন্দের অশ্রু সম্ভারে। খোলা জানালায় তখন শুধুই ঘেঁটু ফুলের আমোদ, সোঁদা গন্ধ মাখা। বড় উদাস লাগে তখন।
খোলা জানালাতেই কখনো হাওয়ার হিন্দোল বয়ে আনে বিপ্লবের চেতনা। শত বাধা, শত প্রতিরোধ - সব ভেঙে নিজেকে বিজয়ী যোদ্ধা ভাবতে ভালো লাগে তখন।
কখনো চাঁদ ওঠে খোলা জানালার দৃষ্টি পথে। কখনো সে চাঁদ, বড় নিঃসঙ্গ। কখনো সে অসংখ্য তারা পরিবেষ্টিত সুন্দরী রাজ স্বয়ম্বরা। কখনো সে চাঁদ ধর্মের কখনো ধর্মের নামে ধান্দার। কখনো উপহার সদৃশ রজত রেকাবি তো কখনো অন্ন শূণ্য ফাঁকা থালা। কখনো চুম্বনের উদাত্ত স্পৃহা আবার কখনো প্রেমের নামে পাতানো চক্রব্যুহ।
খোলা জানালার সৈকত ছুঁয়ে কখনো ওঠে সমুদ্রের ঢেউ। কখনো নদীর ছলছল জলে ভেসে যায় নৌকা। শেষ খেয়া চলে গেলে বেদনায় বড় কাতর হয় হৃদয়।
খোলা জানালাতেই কখনো খোলাছাদ আসে, কাপড় জামা রোদে মেলতে। রোমান যোশ ভরে দিয়ে যায় হৃদয়ের ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে। ছাদ বাগানের ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকারা খোলা জানালায় তাদের পাঁপড়ি মেলা সুবাস বয়ে নিয়ে আসে উজাড় করা বুকে।
খোলা জানালার পথ ধরে ভেসে যায় কত দৃশ্য, দৃশ্য প্রবাহ।
দুর্গা প্রতিমারা আসে প্যান্ডেলে আবার দশমীর দিনে ফিরে যায় বিসর্জনের ঘাটে। কখনো আসে বাউল বাতাস , কখনো দমবন্ধ করা রাজনৈতিক মিছিলের গড্ডালিকা প্রবাহ হেঁটে যায়। কখনো আসে নবপরিনয়ের শুভ শোভাযাত্রা। কখনো শেষ বিদায়ের অন্তিম কোলাহল ভেসে আসে সেই খোলা জানালায়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন