সময়ের দরজায় সুযোগের ডেলিভারি বয় এসে টোকা মেরেছিল বটে, অনেকটা কাঠঠোকরার মতন - যে ক্রমাগত তার ধারালো, শক্ত চঞ্চু দিয়ে আপাত সংবেদনহীন কোনো ঋজু অর্জুন কিংবা কোনো বঙ্কিম আমের ধূসর গুঁড়িতে বিরামহীন ভাবে ঠুকরে গিয়েও অসার শ্বেতসার তুল্য অসাড় উপেক্ষা ছাড়া কিছুই পায় নি সময়ের কাছে। যদিও সময়ের দরজায় তার অমোঘ আগমনের বার্তা আফশোসের ইতিহাস হয়ে লটকে থাকে চেতনার বাকি আয়ুষ্কাল জুড়ে।
সময়ের দরজায় দূর্যোগের ভীষণ ঝড় কিন্তু আসে আচম্বিতে; অতর্কিতে বিষাক্ত সাপের লেজে পা দিলে যেমন চকিতে ল্যান্ডফল হয আক্রমনের, তেমনি।
সময়ের দরজায় মাধবীলতার আবেগমন্ডিত সুবাস ঠেলে ঢোকার চেষ্টা করেও অনেকসময় বিফল হয়ে ফিরে যায়। সময় তার গন্ধের কদর ভালো করে বোঝার আগেই তার অপাপবিদ্ধ কৌমার্য হারিয়ে যায় অচেনা নষ্টনীড়ে।
জ্যৈষ্ঠের প্রচন্ড দাহে উত্তাল বাতাস হয়ে অতৃপ্ত আত্মার মতো ঘোরে দুপুর নদীর জঙ্গলী পাড়ে। ভেতর থেকে খিল দেওয়া সময়ের দরজায় তখন শুধুই লোক দেখানো অহেতুক উন্নাসিকতার আদিখ্যেতা, বুক ফাটে তবু মুখ ফোটে না অবস্থা।
কখনো তারা গোনা ছাদের বুকে একলা, একা গোপন স্পর্শ সুখ এসে দাঁড়ায় সময়ের দরজায়। সময় গম্ভীর হয়ে ভেতরে ভেতরে সহ্য করে যায় সে অসাধারণ সুখকে হারানোর নিদারুণ যন্ত্রণা। তবু সময়ের দরজায় ঝুলতে থাকে'নো এন্ট্রি' বোর্ড।
তাই সময়ের দরজায় সাফল্য এসে দাঁড়ায় নেহাতই বিধ্বস্ত সৈনিকের মতন। কুড়িয়ে পাওয়া রত্ন ভান্ডারের চাবি নিয়ে কেউ দাঁড়িয়ে থাকলেও সময় তাকে তার সদর দরজা দিয়ে ঢুকতেই দেয় না। সময়েরও থাকে পেছনের দরজা। যে দরজা দিয়ে চোরা জ্যোৎস্না ছড়িয়ে দেয় জলসাঘরের ঝাড়বাতির ব্যঞ্জনা।
সময়ের দরজায় বৃষ্টি আসে বুক -ভার কান্নার মতো, ঝরে পড়ে সময়ের দু চোখে। আবার পৌষের হিমেল রাতে ধবধবে সাদা চন্দ্রালোকের অলংকারে সেজে ওঠে - সময়ের শয্যাসঙ্গিনী। কুয়াশার ওড়নার তলায় লুকিয়ে যেতে যেতে সে চাঁদ মুখ সময়কে আরো কাছে টেনে নিতে চায় তার কাছে। কিন্তু সে আলিঙ্গন সমুদ্রের মতন আলোড়ন তোলে। তার উত্তাল ঊর্মি মালায় দূরে ভেসে যাওয়ার ভয় সময়কে থমকে দাড় করিয়ে দেয় হাঁটুজল বালুচরে।
সময়ের দরজায় অপেক্ষারত যত আবেগ, না মেটা শত শত আবেদন, উপেক্ষা অবহেলার পাহাড়, ব্যর্থতা সাফল্যের পরিসংখ্যান সব অবচেতনের মেঘ রোদে চরে বেড়ায় বাতাসে ভেসে থাকা রাখালিয়া বাঁশির মতন।
সময় কখনো এ সবের হিসাব করে কখনো হিসেবে করতে গিয়ে হারিয়ে ফেলে সকল খেই।
সময়ের দরজা তবু থেকে যায় সময়ের ঢেউয়ের ছাপ ফেলা বালির সৈকতের মতন।
সময় শুধু তার দরজার ফাঁক দিয়ে দেখে সমগ্র পৃথিবীর যাবতীয় সৌন্দর্য অ -সৌন্দর্য কে। এর ফাঁকে কখন যে সময়ের দরজায় এসে হাজির হয় অন্তিম দিনের বার্তা বাহক, কে জানে! ঠক্ ঠক্ ঠক্!
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন