সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সময়ের দরজায়...!

সময়ের দরজায় সুযোগের ডেলিভারি বয় এসে টোকা মেরেছিল বটে, অনেকটা কাঠঠোকরার মতন - যে ক্রমাগত তার ধারালো, শক্ত চঞ্চু দিয়ে আপাত সংবেদনহীন কোনো ঋজু অর্জুন কিংবা কোনো বঙ্কিম আমের ধূসর গুঁড়িতে বিরামহীন ভাবে ঠুকরে গিয়েও অসার শ্বেতসার তুল্য অসাড় উপেক্ষা ছাড়া কিছুই পায় নি সময়ের কাছে। যদিও সময়ের দরজায় তার অমোঘ আগমনের বার্তা আফশোসের ইতিহাস হয়ে লটকে থাকে চেতনার বাকি আয়ুষ্কাল জুড়ে।

সময়ের দরজায় দূর্যোগের ভীষণ ঝড় কিন্তু আসে আচম্বিতে; অতর্কিতে বিষাক্ত সাপের লেজে পা দিলে যেমন চকিতে ল্যান্ডফল হয আক্রমনের, তেমনি।
সময়ের দরজায় মাধবীলতার আবেগমন্ডিত সুবাস ঠেলে ঢোকার চেষ্টা করেও অনেকসময় বিফল হয়ে ফিরে যায়। সময় তার গন্ধের কদর ভালো করে বোঝার আগেই তার অপাপবিদ্ধ কৌমার্য হারিয়ে যায় অচেনা নষ্টনীড়ে।
জ্যৈষ্ঠের প্রচন্ড দাহে উত্তাল বাতাস হয়ে অতৃপ্ত আত্মার মতো ঘোরে দুপুর নদীর জঙ্গলী পাড়ে। ভেতর থেকে খিল দেওয়া সময়ের দরজায় তখন শুধুই লোক দেখানো অহেতুক উন্নাসিকতার আদিখ্যেতা, বুক ফাটে তবু মুখ ফোটে না অবস্থা।
কখনো তারা গোনা ছাদের বুকে একলা, একা গোপন স্পর্শ সুখ এসে দাঁড়ায় সময়ের দরজায়। সময় গম্ভীর হয়ে ভেতরে ভেতরে সহ্য করে যায় সে অসাধারণ সুখকে হারানোর নিদারুণ যন্ত্রণা। তবু সময়ের দরজায় ঝুলতে থাকে'নো এন্ট্রি' বোর্ড।
তাই সময়ের দরজায় সাফল্য এসে দাঁড়ায় নেহাতই বিধ্বস্ত সৈনিকের মতন। কুড়িয়ে পাওয়া রত্ন ভান্ডারের চাবি নিয়ে কেউ দাঁড়িয়ে থাকলেও সময় তাকে তার সদর দরজা দিয়ে ঢুকতেই দেয় না। সময়েরও থাকে পেছনের দরজা। যে দরজা দিয়ে চোরা জ্যোৎস্না ছড়িয়ে দেয় জলসাঘরের ঝাড়বাতির ব্যঞ্জনা।
সময়ের দরজায় বৃষ্টি আসে বুক -ভার কান্নার মতো, ঝরে পড়ে সময়ের দু চোখে। আবার পৌষের হিমেল রাতে ধবধবে সাদা চন্দ্রালোকের অলংকারে সেজে ওঠে - সময়ের শয্যাসঙ্গিনী। কুয়াশার ওড়নার তলায় লুকিয়ে যেতে যেতে সে চাঁদ মুখ সময়কে আরো কাছে টেনে নিতে চায় তার কাছে। কিন্তু সে আলিঙ্গন সমুদ্রের মতন আলোড়ন তোলে। তার উত্তাল ঊর্মি মালায় দূরে ভেসে যাওয়ার ভয় সময়কে থমকে দাড় করিয়ে দেয় হাঁটুজল বালুচরে।
সময়ের দরজায় অপেক্ষারত যত আবেগ, না মেটা শত শত আবেদন, উপেক্ষা অবহেলার পাহাড়, ব্যর্থতা সাফল্যের পরিসংখ্যান সব অবচেতনের মেঘ রোদে চরে বেড়ায় বাতাসে ভেসে থাকা রাখালিয়া বাঁশির মতন।
সময় কখনো এ সবের হিসাব করে কখনো হিসেবে করতে গিয়ে হারিয়ে ফেলে সকল খেই।
সময়ের দরজা তবু থেকে যায় সময়ের ঢেউয়ের ছাপ ফেলা বালির সৈকতের মতন।
সময় শুধু তার দরজার ফাঁক দিয়ে দেখে সমগ্র পৃথিবীর যাবতীয় সৌন্দর্য অ -সৌন্দর্য কে। এর ফাঁকে কখন যে সময়ের দরজায় এসে হাজির হয় অন্তিম দিনের বার্তা বাহক, কে জানে! ঠক্ ঠক্ ঠক্!

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...

জনগণমনঃ জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার ইতিহাস ও কিছু প্রশ্নের উত্তর!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ব্রহ্ম সঙ্গীত ‘ জনগণমন অধিনায়ক’ কে দেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে মান্যতা দেওয়ার সর্ব সম্মীলিত সিদ্ধান্ত হয় ১৯৫০ সালের ২৪ শে জানুয়ারি । কিন্তু কেন এত দেরী? দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও কেন তিন বছর সময় লেগেছিল জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন করতে? ‘ভারত বিধাতা’ শিরোনামে লেখা, স্বদেশ পর্যায় ভুক্ত (গীতবিতান অনুসারে) এই রবীন্দ্রগীতিটি কিভাবে -  দেশের জাতীয় সঙ্গীত হওয়ার পথে একটু একটু করে এগিয়ে গেল! ‘জনগনমন’র জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার নেপথ্য কাহিনীই আজ আমরা ফিরে দেখবো এই প্রবন্ধে।  ১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট - দীর্ঘ ২০০ বছর ধরে পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরে অবশেষে দেশবাসীর ভাগ্যাকাশে এসে উপস্থিত হোল বহু আকাঙ্খিত সেই দিনটি। উদিত হোল স্বাধীনতার নতুন সূর্যের।   স্বাধীন হোল দেশ। কিন্তু সদ্য ব্রিটিশ অধীনতা মুক্ত দুটি দেশ ভারত এবং পাকিস্থান তখনও পায় নি স্বতন্ত্র সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা। ১৯৪৭ এর ১৮ই জুলাই তারিখে লাগু হওয়া ভারতীয় স্বাধীনতা আইন অনুসারে নিজ নিজ সংবিধান প্রণয়নের আগে পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্থান এই দুটি ভূখণ্ড কমনওয়েলথ দেশের অধীনস্থ দুটি অধিরাজ্য হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে পারা...