সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নিয়তিতাড়িত মানিক!

বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত বন্দ্যোপাধ্যায় ত্রয়ীর অন্যতম - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যে প্রবেশ ঘটে ১৯২৮ সালে। ২০ বছর বয়সী মানিকের সাহিত্য ক্ষেত্রে যখন এই পদার্পণ সূচিত হচ্ছে তখন এই ত্রয়ীর প্রথম জন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবির্ভাব ঘটে গেছে তারও সাত বছর পূর্বে। ১৯২১ সালে ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘উপেক্ষিতা’ গল্পের মাধ্যমে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে  প্রথম পরিচয় হয় বাংলা পাঠক সমাজের। এর চার বছর পরে অর্থাৎ ১৯২৫ সালে ভাগলপুরে থাকাকালীন বিভূতিভূষণ তাঁর জীবনের প্রথম উপন্যাস ‘পথের পাঁচালী’ লেখা শুরু করেন। লেখা শেষ করতে লেগে যায় তিন বছর। উল্লেখযোগ্য ভাবে ১৯২৮ এ যখন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবির্ভাব ঘটছে, একই বছরে বিভূতিভূষণের লেখা আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস ‘পথের পাঁচালী’র ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হওয়া শুরু হচ্ছে ‘বিচিত্রা’র পাতায়। বিভূতিভূষণ এবং মানিকের পরে তৃতীয় বন্দ্যোপাধ্যায় - তারাশঙ্করের আবির্ভাব হচ্ছে আরও চার বছর পরে১৯৩২ সালে ‘চৈতালী ঘূর্ণি’ নামক উপন্যাস দিয়ে বাংলা সাহিত্যের উঠোনে প্রথম পা রাখেন তারাশঙ্কর


তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

বহু তারকা খচিত বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল আকাশে পরপর দুই বন্দ্যোপাধ্যায় বিভূতিভূষণ এবং  মানিক এর আবির্ভাবের পরে যে অভূতপূর্ব স্বর্ণালী ত্রিভুজ গড়ে ওঠার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল তা সম্পূর্ণ হয় তারাশঙ্করের আগমনের পরে। তখনো রবীন্দ্রনাথ জীবিত। যে বছর তারাশঙ্করের প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হচ্ছে, সে বছরেই শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ হয় তারাশঙ্করেরকিন্তু সে অন্য প্রসঙ্গ। আমাদের আজকের আলোচনার ফোকাস মূলত মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাহিত্যের আঙ্গনে পা রাখার নেপথ্যে যে নাটকীয় প্রণোদনা লুকিয়ে ছিল তার উপরেই নিবদ্ধ থাকবে। যদিও বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অধরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় (ঠিকুজির নাম) ওরফে প্রবোধকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় (বাবার দেওয়া নাম) ওরফে (কালো) মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (ডাক নাম) – এই চির অমর নামটির আগমন প্রায় পূর্ব নির্ধারিতই ছিল।  সে তাঁর আগমন লগ্নে যত আকস্মিকতাই থাকুক না কেন তা যে নিয়তি নির্দেশিত পথেই হয়েছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যে কথাটি বলবো বলেই আজ এই নিবন্ধের অবতারনা।

বাংলার ঘরে ঘরে জন্ম নেওয়া হাজার হাজার কবি লেখকদের বেশিরভাগেরই জীবনের প্রথম লেখা সাধারণত কোনো লিটল ম্যাগাজিনের পাতাতেই ছেপে বেরোয়।  তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ভবিষ্যতের নামী লেখকও হয়ে যান। তবে লিটল ম্যাগের পাতায় প্রথম প্রকাশের স্মৃতি, বড় ছোট নির্বিশেষে সকল লেখক মনকেই ভীষণ আর্দ্র করে তোলে।  যদিও এর বাইরে অনেক ব্যতিক্রমও রয়েছে। যেখানে সরাসরি বড় পত্রিকায় লেখকের প্রথম আত্মপ্রকাশ হতে দেখা যায়। যেমন বিভূতিভূষণেরই প্রথম আত্মপ্রকাশ ঘটে সে সময়ের শ্রেষ্ঠ সাহিত্য পত্রিকা ‘প্রবাসী’ তে।


বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

যদিও বিভূতিভূষণের ‘পথের পাঁচালী’ ‘প্রবাসী’ থেকে ফেরত এসেছিল। এই নিয়ে কম বিড়ম্বনা সহ্য করতে হয়নি ‘আরন্যক’, ‘চাঁদের পাহাড়’ এর লেখককে।


'পথের পাঁচালী' সিনেমায় অপু ও দুর্গা।
(এই সম্পর্কে আমি  বিস্তারিত লিখেছি ‘পথের পাঁচালী’ এবং তার তিন বছরের প্রকাশ যন্ত্রণা!' শীর্ষক লেখায়। লেখা পড়ার জন্য শিরোনামের উপরে ক্লিক করুন।)

শেষ পর্যন্ত যদিও ভাগলপুর নিবাসী সাহিত্যিক উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘বিচিত্রা’র পাতায় ঠাই হয় ‘পথের পাঁচালী’ র।  এই প্রসঙ্গে বলে রাখি রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘প্রবাসী’র যাত্রা শুরু হয় ১৯০১ সালে। তার প্রায় ২৬ বছর পরে অর্থাৎ ১৯২৭ এ বাংলা সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশনার গৌরবময় পথে তার পা রাখে 'বিচিত্রা'। এর মধ্যে ‘কল্লোল’ পত্রিকা তার প্রকাশনা চালিয়ে যাচ্ছিল 'বিচিত্রা'র ও চার বছর আগে, ১৯২৩ থেকে। এবং বলাই বাহুল্য বেশ রমরমিয়ে চলছিল তখন। তা সত্ত্বেও শুরু থেকেই ‘বিচিত্রা’ র নাম ‘প্রবাসী’ র সঙ্গে প্রায় একই সারিতে উচ্চারিত হতে থাকে। আর হবে নাই বা কেন? স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ করেছিলেন পত্রিকার নামকরণ। শুধু তাই নয়, শুরু থেকেই নিয়মিত লেখা দিয়ে পাঠক সমাজে পত্রিকার কদর বাড়িয়ে তুলেছিলেন কয়েকগুণ। এছাড়াও পত্রিকায় নিয়মিত দেখা যেত শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো লেখকের লেখা। প্রসঙ্গত শরৎচন্দ্র ছিলেন সম্পাদক উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভাগ্নে।
উঠতি লেখক লেখিকা মাত্রেই তখন ‘বিচিত্রা’র পাতায় তাঁদের লেখা ছাপানোর জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকতেন।  অল্প সময়ের মধ্যে জাতে ওঠা ‘বিচিত্রা’র পাতায় লেখা প্রকাশ হওয়া মানে তাদের স্বপ্ন পূরণ হওয়া।  বর্তমানে যেমন লেখালেখি করে প্রতিষ্ঠিত হতে চাওয়া যে কোনো লিখিয়েই চান একবার অন্তত তার লেখা ছেপে বেরোক ‘দেশ’ এর পাতায়, তেমনি। কিন্তু সবাই যে সফল হয় তা তো নয়। বিফলতার নজির এই জমানাতে যেমন আছে সেই জমানাতেও খুব কম ছিল না। এরকমই এক অসফলতার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের যোগ্যতাকে প্রমান করার তাগিদ থেকেই কিন্তু মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদার্পণ ঘটে বাংলা সাহিত্যের আঙ্গিনায়। এবার দেখে নেব ঠিক কি ঘটেছিল।  
সদ্য টিনেজ উত্তীর্ণ মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় তখন সবে কলেজের গণ্ডীতে পা রেখেছেন। মেরে কেটে ২০ বছর বয়স হবে। ভর্তি হয়েছেন প্রেসিডেন্সী কলেজে।  অঙ্কে অনার্স নিয়ে। বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও, সাহিত্যে তাঁর গভীর অনুরাগ। ফাঁক ফোঁকর খুঁজে একধার থেকে পড়ে চলেছেন বাংলা ভাষার যত ধ্রুপদী সাহিত্য। কলেজে, ক্যান্টিনে বন্ধুদের সঙ্গে তুমুল আলোচনা চলে সাহিত্য নিয়ে। সাহিত্য রসিক মানিকের সঙ্গে অনেক সময় কারোর কারোর তর্কও বেঁধে যায় সাহিত্যের আঙ্গিকগত টুকিটাকি নিয়ে। এরকমই একদিন গোল বাঁধল, তবে অন্য আর একটা কারণে। এক বন্ধু অনুযোগের সুরে বলল, নামী পত্রিকাগুলিতে প্রতিষ্ঠিত লেখক ছাড়া লেখা ছাপায় না। বন্ধুটির পাঠানো একটি গল্প, পত্রিকা দপ্তর সম্প্রতি ফেরত পাঠিয়েছে সেটাই তার রাগের মূল কারণ। মানতে চান নি, মানিক। বন্ধুর এ হেন অভিযোগের সারবত্তা হীনতা নিয়ে মানিকের মনে কোনো সংশয় ছিল না সেদিন। ফুঁৎকারে উড়িয়ে দিয়েছিলেন তার কথা। সপাট বন্ধুর মুখের সামনে বলে দিয়েছিলেন, “আসলে তোমার লেখা ভালো হয়নি,  তাই ছাপায়নি।" তাতেই চটে ব্যোম হয়ে যায় বন্ধুটি।  বলে, “প্রমান করে দেখাতে হবে।" মানিক একবাক্যে মেনে নেন বন্ধুর প্রস্তাব। শুধু তাই নয়, প্রায় বাজি ধরার মতো করে বন্ধুকে বলে দেন আগামী তিন মাসের মধ্যে কোনো নামী পত্রিকায় তাঁর লেখা গল্প ছেপে বের করে দেখিয়ে দেবেন তাঁর কথাই ঠিক। যেমন কথা তেমন কাজ।  তিন দিনের মধ্যে লিখে ফেললেন গল্প।  একটু রোমান্টিক, মানিকের নিজের মতে ‘অবাস্তব রোমান্টিক’। তাই গল্পকারের নাম দিতে গিয়ে কৌশলগত কারণে স্কুল কলেজের পোশাকি নাম প্রবোধ কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় না দিয়ে ঘরের ডাক নামেই পরিচিত হওয়া শ্রেয় মনে করলেন। এইভাবে বাংলা সাহিত্যের আকাশে লেখা হল নতুন তারকার নাম  – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়।  গল্পের নাম ‘অতসী মামী’। লেখা সম্পূর্ণ হলে দেরী না করে সরাসরি ‘বিচিত্রা’র দপ্তরে গিয়ে সাহিত্যিক অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের হাতে দিয়ে এলেন গল্পটি। পত্রিকার পরবর্তী সংখ্যাতেই ছাপা হলো গল্প। শুধু তাই নয়, নবাগত গল্পকার কে আরও গল্প দেওয়ার জন্য রীতিমতো বাড়ি বয়ে অনুরোধ জানিয়ে এলেন স্বয়ং পত্রিকার সম্পাদক উপেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়। সাম্মানিক পেলেন কুড়ি টাকা।
 পুরো ব্যাপারটা এখানেই থেমে থাকলে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন গল্প হয়তো অন্য খাতে বইতে পারতো। কিন্তু নিয়তি যে মাণিকের কপালে অন্য কিছু লিখেছিল। তাই যত দিন যায় লেখালেখিতেই তিনি বেশী বেশী করে নিয়োজিত করে ফেললেন নিজেকে।
পড়াশুনাতে হারিয়ে গেল মন। ফলশ্রুতি, পরপর দুবার অনুত্তীর্ণ হলেন স্নাতকে।  দাদা খরচ পাঠানো বন্ধ করে দিয়ে বললেন সাহিত্য করার জন্য টাকা পাঠানো সম্ভব নয় আর। উত্তরে মানিক বললেন একদিন তাঁর নাম রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্রের পর্যায়ে এক সাথে উচ্চারিত হবে। সত্যিই তাই হল। কিন্তু চরম দারিদ্র্যের বিনিময়ে। বাজি ধরে সাহিত্যের আঙিনায় প্রবেশ করা মানিক জীবনের বাজিতেই হেরে ভূত হয়ে গেলেন। নিয়তিতাড়িত মানিক তাই জীবনের শেষ দিনগুলোতে এসে চরম খেদের সঙ্গে বলতে বাধ্য হলেন, “বাংলাদেশে ডাল ভাতের ব্যবস্থা না করে কেউ যেন সাহিত্য করতে না আসে।"  'পুতুল নাচের ইতিকথা' র লেখক  নিজেই  যেন পুতুল হয়ে গেলেন নিয়তির হাতে।    

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...

জনগণমনঃ জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার ইতিহাস ও কিছু প্রশ্নের উত্তর!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ব্রহ্ম সঙ্গীত ‘ জনগণমন অধিনায়ক’ কে দেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে মান্যতা দেওয়ার সর্ব সম্মীলিত সিদ্ধান্ত হয় ১৯৫০ সালের ২৪ শে জানুয়ারি । কিন্তু কেন এত দেরী? দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও কেন তিন বছর সময় লেগেছিল জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন করতে? ‘ভারত বিধাতা’ শিরোনামে লেখা, স্বদেশ পর্যায় ভুক্ত (গীতবিতান অনুসারে) এই রবীন্দ্রগীতিটি কিভাবে -  দেশের জাতীয় সঙ্গীত হওয়ার পথে একটু একটু করে এগিয়ে গেল! ‘জনগনমন’র জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার নেপথ্য কাহিনীই আজ আমরা ফিরে দেখবো এই প্রবন্ধে।  ১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট - দীর্ঘ ২০০ বছর ধরে পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরে অবশেষে দেশবাসীর ভাগ্যাকাশে এসে উপস্থিত হোল বহু আকাঙ্খিত সেই দিনটি। উদিত হোল স্বাধীনতার নতুন সূর্যের।   স্বাধীন হোল দেশ। কিন্তু সদ্য ব্রিটিশ অধীনতা মুক্ত দুটি দেশ ভারত এবং পাকিস্থান তখনও পায় নি স্বতন্ত্র সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা। ১৯৪৭ এর ১৮ই জুলাই তারিখে লাগু হওয়া ভারতীয় স্বাধীনতা আইন অনুসারে নিজ নিজ সংবিধান প্রণয়নের আগে পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্থান এই দুটি ভূখণ্ড কমনওয়েলথ দেশের অধীনস্থ দুটি অধিরাজ্য হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে পারা...