সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

স্মৃতির হাটের কথকতা!

স্মৃতি কি একটি শক্তি নাকি তা কোনো পছন্দের সুগন্ধি যাকে বারবার স্মৃতির সুরাগ দিয়ে স্বর্গের পারিজাত করে হৃদয় বাগিচায় ফুটিয়ে রাখতে চায় মানুষ! নাকি তা - কখনো মর্মোদ্ধার করতে না চাওয়া কোনো দুর্বোধ্য শিলালিপি, যাকে ভুতুড়ে বাড়ির মতো সবসময় পাশ কাটিয়ে যাওয়ার ফিকির খোঁজে মন! প্রসঙ্গত আমার ছয় পিসির মধ্যে জ্যেষ্ঠতমা, যিনি আজ কয়েকবছর হোল প্রয়াত হয়েছেন, আমার ঠাকুরদা আদর করে তাঁর নাম রেখেছিলেন স্মৃতিরেখা। সত্যি সত্যিই স্মৃতি একটি রেখার মতন।  কখনো তা মনের আকাশে উজ্জ্বল হয়ে জ্বলে থাকা ধ্রুবতারা থেকে নির্গত ঋজু আলোক রেখার মতন স্পষ্ট, আবার কখনো তা ধুসর হয়ে যাওয়া সেই রশ্মী যা লক্ষ মন্থনেও প্রতিভাত হতে পারে না। 
আমাদের মস্তিস্কে  রয়েছে প্রায় ১০০০০ মিলিয়ন বা এক হাজার কোটি স্মৃতি কোষ। শৈশব থেকে সেই সব স্মৃতি প্রকোষ্ঠ গুলিতে সঞ্চিত হতে থাকে হাজারো স্মৃতি লেখা।  বিজ্ঞানের মতে একজন শত বর্ষ বয়সী মানুষ তার সারা জীবনের স্মৃতি-সঞ্চয় দিয়েও মস্তিস্কের সকল স্মৃতি কোষ পূর্ণ করে উঠতে পারেন না। অর্ধেকের বেশিই ফাঁকা পড়ে থাকে।  তবু কেন মানুষ ভুলে যায়। তিল তিল করে গড়ে ওঠা স্মৃতির লাইব্রেরী তে যখন অঢেল জায়গা ফাঁকাই পড়ে থাকে, সেখানে স্থান সংকুলান হচ্ছে না বলে অজুহাত দেওয়ার কোনো সারবত্তা ধোপে টেঁকে কি। তাহলে কি লাইব্রিরী তে প্রতিনিয়ত ঝাড় পোঁছ চলে -মানে  ভালো স্মৃতি গুলো কে ভালো জায়গায় তুলে রাখা আর খারপ গুলোকে অবাঞ্ছিতের মতন বাড়ির বাইরের আবর্জনা স্তুপে বা রিসাইকেল বিনে ফেলে দেওয়া। তা নাহলে যে শিশুটি পড়া মুখস্থ করতে গিয়ে প্রায় গলদঘর্ম হয়ে গিয়েও সময়ে সেটিকে মনে করতে পারে না বলে বকুনি খায়, সেই একই শিশু কি করে কার্টুন ছবির সমস্ত সংলাপ হুবহু মনে রাখে শুধু নয় - সময়ে অসময়ে তা আউড়েও যায় বেশ কেতাদুরস্ত ভাবে। তার মানে আমরা আমাদের পছন্দের বিষয়গুলোকে কখনোই ভুলি না। আসলে যাকে মনে রাখতে চাই, তাকে বাদ দিয়ে বাকি গুলোকে ফেলে দিই স্মৃতির আস্তাকুড়েতে।  আর দোহাই দেই দুর্বল স্মৃতি শক্তির। স্মৃতি বর্ধক ব্রাহ্মী রস খেয়েও তখন কোনো কাজ হয় না। 
 সাহিত্যে আবার মন্দ স্মৃতির খুব চাহিদা।  বেদনা খুচিয়ে ঘা না করতে পারলে সৃজনের সম্ভাবনা যেন অধরাই থেকে যায়।  সেখানে তিমির বিনাশের প্রয়াসের চেয়ে তিমির বিলাসের আকাঙ্খাই বেশী। শোক ছাড়া যে শ্লোক হয় না। এ কথা একবার ব্যক্তিগত আলাপচারিতায়  আমাকে বলেছিলেন, আমার অনেক সিনিয়র এবং  প্রথিতযশা সাংবাদিক তথা কবি, শ্রদ্ধেয় পরিতোষ মণ্ডল।  লেখা লেখি করতে গিয়ে এই তত্ত্বের প্রমান পেয়েছি বারবার।  তাই শোকের চাষ করতে গিয়ে প্রায়শই যে কবি মন দুঃখ জাগানিয়া স্মৃতি মন্থনে আকুল হয়ে ওঠে সে কথা বলাই বাহুল্য। শুধু কবিরা নন, অবসাদ গ্রস্ত মানুষেরাও যন্ত্রণার স্মৃতি গুলোকে সহজে ভুলতে পারে না।  তাদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো কবিতা লিখে অবসাদ মুক্তির রসদ পায়, কেউ হয়তো অবসাদের আঁধারেই তলিয়ে শেষ হয়ে যায়। অবসাদ গ্রস্থ দের সঙ্গে কবিদের একটি মূলগত ফারাক রয়েছে। কবিরা অবসাদের আঁধার কে উপভোগ করতে পারেন আর অবসাদে ভোগা মানুষ এর থেকে মুক্তির দিশা খুঁজে অস্থির হয়ে ওঠে। 
প্রথমেই বলেছি মনে রাখার জন্য মস্তিস্কে জায়গা প্রচুর। কাউকেই স্মৃতির স্টোর রুম থেকে বাদ যেতে হয় না। ঝাড় পোঁছ এর যে তত্ত্ব তা আসলে পছন্দ অপছন্দের উপর ভিত্তি করে।  মনের মধ্যে থাকলেও তাকে মনে করতে পারি না কারণ তাকে আদতে মনে করতে চাই না কোনোভাবে। 
এই প্রসঙ্গে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তার আত্মজীবনী 'অর্ধেক জীবন' এ একটা সুন্দর কথা বলেছেন। "সব কিছুই আমাদের মনে থাকে। কিন্তু সবসময় মনে পড়ে না।" সুনীল সেখানে লিখছেন, " ব্রিটিশ চিন্তাবিদ ব্রাট্রেণ্ড রাসেল তার স্মৃতিকথায় এমনকি তার আড়াই বছরের স্মৃতির কথাও লিখেছেন।"  স্মৃতির  অনেকগুলি স্তরের মধ্যে সবচেয়ে বেশিদিন যে স্তর স্মৃতিকে সংরক্ষণ করে রাখতে পারে তা হল মনের অবচেতন স্তর। এই  স্তরে লিপিবদ্ধ  থাকা স্মৃতি দীর্ঘ দিন বাদেও হুবহু মনে পড়ে যেতে পারে।  
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এই মনে করার উদাহরণ দিতে গিয়ে এক আশ্চর্য গল্প শুনিয়েছেন 'অর্ধেক জীবন' এ। গল্পই বলবো কারণ সুনীলকে এই কথাটি বলেছিলেন বিখ্যাত ঔপন্যাসিক জ্যাক কেরুয়াক, যিনি নাকি এক বিশেষ প্রক্রিয়ায় তাঁর মাতৃগর্ভে থাকাকালীন স্মৃতিও ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন।  যার সত্যতা নিয়ে সুনীল অবশ্য কোনো দাবী করেননি।  
এই মনে পড়ে যাওয়ার বা স্মৃতি ফেরানোর অনেক চালু গল্পই কিন্তু আমরা সিনেমা বা সিরিয়ালে চাক্ষুষ করেছি।  হঠাৎ দুর্ঘটনায় স্মৃতি হারিয়ে গেল, তারপরে অনেক বছর পরে সেই দুর্ঘটনা স্থলে গিয়ে আবার তার সব স্মৃতি মনের পর্দায় ভেসে উঠল এই ঘটনা আমরা অনেক দেখেছি।
 
কিন্তু এইরকমই এক স্মৃতি ফিরে আসার গল্প রয়েছে প্রখ্যাত সাহিত্যিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবনেও।  মানিকের যখন চার বছর বয়স, তখন তিনি তার বাবার সঙ্গে থাকতেন মেদিনীপুরের তমলুকে। সেইসময় ছোট্ট মানিক একদিন একান্তভাবেই বালখিল্যতার হুজুগে লাল কাঁকড়া ধরতে নেমেছিলেন হলদী নদীতে। কিন্তু তারপরেই ঘটে বিপত্তি।  জলের নীচে থাকা পাঁকের মধ্যে ক্রমাগত তার শরীর ঢুকে যেতে থাকলে তিনি প্রায় সম্বিৎ হারিয়ে ফেলেন। পরবর্তী কালে, অনেক বছর পেরিয়ে মানিকের যখন সেই ছোট বেলাকার কথা মনে পড়তো তখন প্রায়শই তাকে একটি প্রশ্ন কুরে কুরে খেত।  বাড়ির পুরনো লোকজন অনেককে জিজ্ঞাসা করেও কোনো উত্তর পান নি যে সেদিনের সেই ঘটনায় কে সেই ব্যক্তি যে তাকে উদ্ধার করেছিল নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে। 
উত্তর পেতে মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় একদিন সত্যি সত্যিই এসে উপস্থিত হয়েছিলেন সেই হলদী নদীর পাড়ে।  কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও কিছুই মনে করতে পারছিলেন না।  নদীর পাড়ে আনমনে পায়চারী, উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে নদীর বুকে হাওয়ার সাঁতার দেখা - এর মধ্যে সন্ধ্যার ছায়া নেমে আসলে, মানিক পাড়ে নোঙর করা একটা ডিঙ্গি নৌকার ছইয়ের নীচে গিয়ে বসেন।  ভাবের ঘোরে কখন যে তিনি আবার নৌকা থেকে নেমে গিয়ে নদীর জলে নেমে যাচ্ছিলেন কোনো খেয়ালই ছিল না তাঁর। এদিকে দিগ্বিদিক চাঁদের আলোয় এক অদ্ভুত আচ্ছন্নতা তৈরি হয়েছিল নদীর চরে।  এমত অবস্থায়, পাড়ের ওপরে দর্মার ঘরের দাওয়ায় বসে হুকো টানছিলেন এক বুড়ো। গ্রামের দিকে ঘুম না আসলে রাতের বেলায় বুড়ো, মরদদের ঘরের উঠোনে বসে নেশা করার চল বহুল প্রচলিত। বুড়োর চোখে পড়ে যাওয়াতে সেদিন বেঁচে গেছিলেন বাংলা সাহিত্যের অমর এই  কথাশিল্পী।  "ওহ, আমি না থাকলে যে আপনার কি হত!" বুড়োর এই কথায় মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘাড় সেদিন কৃতজ্ঞতায় ঝুঁকে গিয়েছিল।  কিন্তু পর ক্ষণেই তাঁর বিস্ময় প্রায় আকাশ ছুয়ে ফেলেছিল;  নিজের কানকে যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না তিনি।  আসলে বুড়োর কথাতে লুকিয়ে ছিল তাঁর বহু দিন ধরে খুঁজে বেড়ানো সেই প্রশ্নের উত্তর। আশ্চর্য সমাপতন ঘটেছিল সেদিন।  কিন্তু কি বলেছিলেন সেই বুড়ো, শুনে নেওয়া যাক সেই কথা। জলে ভেজা মানিকের সামনে,  বুড়ো বলেছিলেন - ‘‘জানেন বাবু, আজ থেকে অনেক বছর আগে, ঠিক আপনার মতো করেই একটি বাচ্চা ছেলে ওই পাঁকে ডুবে যাচ্ছিল। তাকেও এইভাবে বাঁচিয়েছিলাম। কাদের ছেলে জানি না।’’ বলাই বাহুল্য সেইদিনকার সেই ছেলেই ছিলেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। 
এই হঠাৎ মনে পড়ে যাওয়াটা একটা অদ্ভুত ফিরে পাওয়ার আনন্দ বয়ে নিয়ে আসে মনে। অনেক দিন পরে কোনো বন্ধুর সঙ্গে দেখা হয়ে গেলে যেমন হয় তেমনি।  প্রচণ্ড উষ্ণ দিনে এক ঝলক ঠাণ্ডা বাতাসের মতন। স্মৃতির আবার দৃষ্টি শক্তির মতন নিকটবর্তী এবং দূরবর্তী - দুই দিক রয়েছে। কারুর দূরবর্তী স্মৃতি হয়তো অসাধারন, কিন্তু নিকটবর্তী স্মৃতি একেবারেই নড়বড়ে।   কথা বলতে বলতে প্রায়ই খেই হারিয়ে ফেলেন তিনি, কারণ এখুনি কি বললেন পর ক্ষণেই তিনি তা ভুলে যাচ্ছেন। কিন্তু স্মৃতি অনেক সময় ফিরে আসে না;  চিরকালের মতন পাড়ি দেয় নিরুদ্দেশে।  সে ক্ষেত্রে স্মৃতি কোষ গুলো ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে যেতে থাকে আর মস্তিস্ক চিরকালের মত হয়ে পড়ে স্মৃতি শূন্য।
কবি নজরুল ইসলাম এমনই এক বিরল স্মৃতিজনিত ক্ষয় রোগের কবলে পড়ে জীবনের শেষ এক দশক ছিলেন সম্পূর্ণ স্মৃতি হীন। উলটোদিকে ১০২ বছর বেচে থাকা লেখক নীরদ সি চৌধুরী জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ছিলেন অমিত স্মৃতি শক্তির অধিকারী।  যার স্মৃতি শক্তির কথা প্রায় কিংবদন্তী হয়ে গেছে।  জীবনের শেষ অঙ্কে এসেও গড়গড় করে গীতা বা উপনিষদ থেকে উদ্ধৃতি দিতে পারতেন নীরদ সী।
স্মৃতির হাটের কথকতায় স্বামী বিবেকানন্দের কথা না বললে সম্পূর্ণ হবে না নিবন্ধের পরিধি। স্বামীজী তাঁর প্রবল এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে চমকপ্রদ স্মৃতি শক্তি দিয়ে অবাক করেছেন অনেককেই।  সে মিরাটের লাইব্রেরিয়ান হন কিংবা খেত্রীর রাজা অজিত সিং কিংবা শিষ্য শরৎচন্দ্র চক্রবর্তী। একবার শরৎচন্দ্র চক্রবর্তী বাকরুদ্ধ হয়ে গেছিলেন স্বামীজীর কথায়।  এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকার ১২ খণ্ডের একটা সেট যা শরৎচন্দ্র চক্রবর্তীর মতে ইহজীবনে কারোর পক্ষেই তা পড়ে শেষ করা সম্ভব নয়, স্বামীজী কিন্তু তাকে যারপরনাই চমকে দিয়ে শুনিয়েছিলেন ইতিমধ্যে তাঁর দশটি খণ্ড পড়ে নেওয়ার কথা। শুধু তাই নয় শিষ্য কে হলফ করে এও বলেছিলেন তিনি, "এই দশটি খণ্ডের মধ্যে যা খুশি আপনার জিজ্ঞাসা করুন। আমি উত্তর দেব।" হয়তো দিব্য শক্তিধর কোনো মানুষই কেবল এই ধরনের অবাক করা স্মৃতি শক্তির অধিকারী হন। স্মৃতির হাটের কথকতায় দিব্য শক্তির ও প্রভাব তাই অনস্বীকার্য।    

 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট, কোথায় ছিলেন গান্ধীজী?

১৫০/বি বেলেঘাটা মেন রোড। শিয়ালদহ স্টেশন ও ই-এম বাইপাস এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন কারী মূল রাস্তা - বেলেঘাটা মেন রোড তথা সুরেশ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় রোডের ওপর পড়া এই বিশেষ ঠিকানা টি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে এক গৌরবময় স্মৃতির সাক্ষ্য বহন করছে । বিশেষ করে, প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময় আসন্ন হলে, এই ঠিকানার কথা স্মরণ না করে থাকা যা য় না। কারণ ১৯৪৭ এ গোটা দেশ যখন স্বাধীনতার আনন্দ উদযাপনে ব্যস্ত, বিশেষ করে রাজধানী দিল্লিতে স্বাধীনতা লাভের (১৫ ই আগস্ট) দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখতে আয়োজিত হয়েছে অভূতপূর্ব রাজকীয় সমারোহের - যার শুভ সূচনা হয়েছে, ১৪ ই আগস্টের মধ্যরাতে; ১৫ তারিখ পদার্পণ করতেই দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর ঐতিহাসিক বক্তৃতা দিয়ে শুভারম্ভ হয়েছে স্বাধীনতা দিবস পালনের মহা নির্ঘণ্ট। এই উচ্ছ্বাস যদিও কাঙ্ক্ষিতই ছিল। কারণ দীর্ঘ ২০০ বছরের পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরেই দেশবাসীর কাছে এসে পৌঁছেছিল সে বিরল মাহেন্দ্রক্ষণ। সমাগত হয়েছিল সেই মহা মুহূর্ত যখন প্রায় শত বর্ষ ধরে চলা স্বাধীনতাকামী মহাযজ্ঞে মুক্তিলাভের সিদ্ধি স্পর্শ করছিল তার চূড়ান্ত শিখর দেশ। কিন্তু এই যজ...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...