সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

এক বিরল প্লেন হাইজ্যাকার, প্রয়াত!

কোলকাতা থেকে লখনউ হয়ে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দিল ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স এর IC 410 নং বিমান। ১৩২ জন যাত্রী নিয়ে প্লেনটি যখন লখনউ বিমান বন্দর ছাড়লো তখন বিকাল ৫ টা ৪৫. যাত্রীদের মধ্যে রয়েছেন দুজন মন্ত্রী। একজন এ কে সেন, আর একজন ধরম বীর সিনহা। কিছুক্ষণের মধ্যে ইন্টারকমে ভেসে এল বার্তা - দিল্লি ওর জাদা দূর নেহি হ্যায়। মাত্র ১৫ মিনিট বাকি পৌঁছতে।
কিন্তু হঠাৎই ১৫ নং রো থেকে দুজন সিট ছেড়ে উঠে প্লেনের ককপিটের মধ্যে ঢুকে পড়লে, গোল বাধে। কারণ তাদের হাতে ছিল বন্দুক। সবাই হকচকিয়ে যান ঘটনার আচম্বিতে। এর মধ্যে ফ্লাইট ক্যাপ্টেন এম এন ভাটিওয়ালা কে একপ্রকার জোর করে প্লেন হাইজ্যাক হয়ে গেছে বলে ঘোষণা করতে বাধ্য করান তাঁরা। ভাটিওয়ালা তাঁদের নির্দেশ মত কম্পিত গলায় প্যাসেঞ্জারদের উদ্দেশ্যে বলেন- প্লেন এখন দিল্লির পরিবর্তে পাটনা চলে যাচ্ছে। আচমকা ঘটে যাওয়া ঘটনা পরম্পরায় প্যাসেঞ্জাররা সবাই তখন - বাকরুদ্ধ।
এই বার ককপিট থেকে হাইজ্যাকাররা যাত্রীদের উদ্দেশ্য অভয় বার্তা দিয়ে ঘোষণা করলেন, ভয় নেই। তাঁরা যুব কংগ্রেসের সদস্য। তাঁরা যাত্রীদের কোনো রূপ ক্ষতি করবেন না। কারণ তাঁরা অহিংসায় বিশ্বাস করেন। যাত্রীদের মধ্যে গুঞ্জন উঠলো। তবে কিসের জন্য এই অলীক কু- নাটক!
প্রয়াত ভোলানাথ পাণ্ডে
প্রসঙ্গত বলে রাখি এই ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৭৮ সালের ২০ শে ডিসেম্বর তারিখে। ১৯৭৫ এর ইমারজেন্সির পরে ইন্দিরা গান্ধী তখন তিহার জেলে অন্তরীণ। উল্লেখ্য এই দুই যুব কংগ্রেসে সদস্য তাঁদের মধ্যে যিনি প্রধান ভোলানাথ পান্ডে ও তাঁর সঙ্গী দেবেন্দ্র পান্ডে যারা সেদিন প্লেন হাইজ্যাক করেছিলেন তাঁদের মূল দাবী ছিল ইন্দিরা গান্ধী কে জেল থেকে মুক্তি দিতে হবে। এবং ইন্দিরা পুত্র সঞ্জয় গান্ধীর বিরূদ্ধে সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। বারবার তাঁরা 'ইন্দিরা গান্ধী জিন্দাবাদ' এবং 'সঞ্জয় গান্ধী জিন্দাবাদ' বলে নারা ও দিচ্ছিলেন প্লেনের মধ্যে। ততক্ষণে অবশ্য যাত্রীরা ও একটু আশ্বস্ত হয়েছেন।
এরমধ্যে চাপ বাড়াতে ভোলানাথ পান্ডে প্লেন কে প্রথম নেপালের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য পাইলট কে নির্দেশ দেন। পাইলট রাজি না হলে বাংলাদেশে নিয়ে যেতে বলেন। পাইলট তাতেও রাজি না হলে শেষমেশ প্লেনটি বারানসী তে ল্যান্ড করে। সমাধান সূত্র খুঁজতে তখনকার উত্তর প্রদেশ মুখ্যমন্ত্রী রাম নরেশ যাদবের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা চলে। প্রসঙ্গত রাম নরেশ যাদব ছিলেন জনতা দল পরিচালিত সরকারের মুখ্যমন্ত্রী এবং কেন্দ্রেও তখন একই দলের হাতে শাসনভার, যার নেতৃত্বে ছিলেন মোরারজী দেশাই। যাই হোক বেশ কয়েক ঘণ্টা আলোচনার পরে ইন্দিরা গান্ধী কে শেষ পর্যন্ত মুক্তি দেওয়া হবে এই শর্তেই বিমান টিকে রেহাই দেন ভোলানাথ পান্ডে। সবথেকে মজার ব্যাপার হলো ভোলানাথ পান্ডে - এরকম প্লেন হাইজ্যাক এর মতো একটা হাই প্রোফাইল অপরাধ সংঘটিত করেছিলেন শধুমাত্র একটা বন্দুক নিয়েই। এবং শুনলে অবাক হবেন বন্দুক টি ছিল একটি খেলনা বন্দুক।
হঠাৎ এই গল্পটি করলাম কারণ সেই ভোলানাথ পান্ডে যিনি পরে ইন্দিরা গান্ধী ১৯৮০ তে প্রধানমন্ত্রী হয়ে ফিরে এলে উত্তর প্রদেশ বিধান সভার ভোটে কংগ্রেস দলের পক্ষ থেকে টিকিট পান শুধু নয় নির্বাচিত হয়ে বিধায়ক ও হন, গত ২৩ শে আগস্ট শুক্রবার, লখনউ তে তিনি প্রয়াত হয়েছেন। মৃত্যু কালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭১.
খবরটি গত শুক্রবারে ভোলানাথ পান্ডের মৃত্যুর পরে প্রিন্ট মিডিয়ায় ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে । সম্ভবত এর সঙ্গে পৃথিবীর ইতিহাসে বিরলতম নজির - বাচ্চাদের খেলনা বন্দুক নিয়ে প্লেন হাইজ্যাক এর মতো ঘটনা জড়িয়ে আছে বলেই হয়তো।
যদিও আমাদের বলিউডি ছবিতে এর উদাহরণ খুব একটা দুর্লভ নয়। কয়েকবছর আগে 'ধামাল' নামের একটি কমেডি মুভিতে এরকমই একটি মজার সিন ছিল। যদিও এটি এয়ারবাস নয়, বাস হাইজ্যাকের ঘটনা ছিল। এবং এখানে একরকম চোরের ওপর বাটপারি টাইপের ব্যাপার রয়েছে। ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত ক্লিপিং টি শেয়ার করে নিলাম এই পরিসরে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...

জনগণমনঃ জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার ইতিহাস ও কিছু প্রশ্নের উত্তর!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ব্রহ্ম সঙ্গীত ‘ জনগণমন অধিনায়ক’ কে দেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে মান্যতা দেওয়ার সর্ব সম্মীলিত সিদ্ধান্ত হয় ১৯৫০ সালের ২৪ শে জানুয়ারি । কিন্তু কেন এত দেরী? দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও কেন তিন বছর সময় লেগেছিল জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন করতে? ‘ভারত বিধাতা’ শিরোনামে লেখা, স্বদেশ পর্যায় ভুক্ত (গীতবিতান অনুসারে) এই রবীন্দ্রগীতিটি কিভাবে -  দেশের জাতীয় সঙ্গীত হওয়ার পথে একটু একটু করে এগিয়ে গেল! ‘জনগনমন’র জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার নেপথ্য কাহিনীই আজ আমরা ফিরে দেখবো এই প্রবন্ধে।  ১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট - দীর্ঘ ২০০ বছর ধরে পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরে অবশেষে দেশবাসীর ভাগ্যাকাশে এসে উপস্থিত হোল বহু আকাঙ্খিত সেই দিনটি। উদিত হোল স্বাধীনতার নতুন সূর্যের।   স্বাধীন হোল দেশ। কিন্তু সদ্য ব্রিটিশ অধীনতা মুক্ত দুটি দেশ ভারত এবং পাকিস্থান তখনও পায় নি স্বতন্ত্র সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা। ১৯৪৭ এর ১৮ই জুলাই তারিখে লাগু হওয়া ভারতীয় স্বাধীনতা আইন অনুসারে নিজ নিজ সংবিধান প্রণয়নের আগে পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্থান এই দুটি ভূখণ্ড কমনওয়েলথ দেশের অধীনস্থ দুটি অধিরাজ্য হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে পারা...