বৃষ্টি ভীষণ মেয়েলি,
নামেই
রয়েছে কেমন ফেমিনিস্ট গন্ধ। সন্ধ্যায় তাই যখন বৃষ্টি আসে - ফিসফিস করে, কথা বলে; যেন কত গোপনীয়তা কন্ঠস্বরে।
জানালা খুলে দিলে,
মিষ্টি করে ছুঁয়ে দিয়ে যায় আদর ক’রে।
খোলা ছাদে, একা আসতে বলে। হাওয়ায় বৃষ্টির আঁচল, সর্বদাই ভেজা থাকে; তাই দিয়ে রোদে পোড়া মুখে, চোখে কত না আহ্লাদ তার!
যখন মন - নুপুরের তিন তাল শুনতে চায়, তখন বৃষ্টি নর্তকীর মতো টাপুর টুপুর ধ্বনি
তুলে নেচে দেয় শাল বৃক্ষের দীর্ঘ পত্রফলক পরে।
বিকেলে তেলেভাজা খেতে খেতে, বৃষ্টি পড়ে ঝিমঝিম করে; যেন নেশায় জড়িয়ে আসা যুবতীর চোখের পাতা।
ফোনে কখনো কখনো মিথ্যা বলতে গিয়ে আমাদের এখানে গপগপে বৃষ্টি হচ্ছে বলে বৃষ্টিকে দস্যু রানী সাজাতে হয়। বেরোলেই খুন হয়ে যেতে হবে, তাই যাওয়া যাবে না।কখনো হাওয়ায় বৃষ্টি ওড়ে, পাকা শিরিষ পাতার মতন; গায়ে লাগে না। শুধু ভেসে বেড়ায় চপলা তরুনীর মতন। যখন মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকি কারুর দিকে, তখন বৃষ্টি হঠাৎ রিমঝিম স্বরে ঝরতে শুরু করে।
আষাঢ়ে গল্প বলায় খুব দড় ছিলেন আমাদের পাড়াতুতো এক দাদু, তিনি বৃষ্টি ঝরাতেন ঝুপ ঝুপ করে। তারপরেই তাঁর গল্পের নিশি পোকা হঠাৎ চুপ মেরে যেতো, আর তখনই ঘটতো যত অঘটন। হয় বিড়াল বাঘ হয়ে যেতো নয় ইঁদুর হয়ে যেতো হাতি।
সেই দাদুর চোখে বৃষ্টি ছিল কোনো জাদু কন্যার মতো; যাবতীয় বিরল কাহিনী শোনানোর নেপথ্যে থাকা রহস্যময়ী নারী।
গোলাম আলীর গজল শুনতে শুনতে যদি বৃষ্টি নামে তবে তা ঝিরঝির করে ঝরে; যেন কোনো সুন্দরী রমণী, তানপুরায় সঙ্গত করে চলেছেন মুগ্ধ- মিহি সুরে ।
কবিতা পাঠের আসরে আবার বৃষ্টি নামে, গলগল করে; অনর্গল! যেন কোনো প্রগলভ রূপবতী তার উচ্চারিত শব্দ রসে বন্দী করে ফেলতে চান শ্রোতাদের। জানালার শার্সি বেয়ে বয়ে যাওয়া বৃষ্টি ধারার মতন ঠোঁটে ঠোঁট দিয়ে, চুম্বন করে যায় - অনবরত।
যখন কান্না পায়, একা বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখার ইচ্ছে হয় বৃষ্টিকে - তখন বৃষ্টি ঝরে ঝরঝর করে।
যখন রঙীন পানীয় ভরা পেয়ালায়, একান্তই বরফের কুচি হাত গলে পড়ে, ডুব দেয় অতল স্পর্শের গরিমায় - তখন বৃষ্টি ঝরে ঝিপ ঝিপ করে ।
আর বৃষ্টি যখন কবিতা হয়, তখন শুধুই সে শব্দস্পর্শ - শিহরণ তোলে; যে পরশ, কোনো লাবণ্যময়ীর পেলব স্পর্শসুখের চেয়ে কম তৃপ্তিদায়ক নয়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন