সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রূপালি পর্দায় রবীন্দ্রনাথকে ফুটিয়ে তোলার পথে অনুপম খের! অস্বস্তি স্বস্তিকার টুইটে!

 রূপালি পর্দায় এবার অনুপম খের কে দেখা যাবে  বিশ্ববরেণ্য বাঙালী কবি রবীন্দ্রনাথের ভূমিকায়। সম্প্রতি এক instagram পোস্টে,  বলিউডের এই বিশিষ্ট অভিনেতা নিজেই জানিয়েছেন সে কথা।  
ইতিমধ্যে ৫৩৭ টি ছবিতে অভিনয় করে ফেলা অনুপম যে কিংবদন্তী এই কবির চরিত্রে অভিনয় করার কথা ভেবে যথেষ্ট আপ্লুত তা তিনি উল্লেখ ও করেছেন তাঁর এই পোস্টে। যদিও ছবির নাম বা ছবির পরিচালক কে হবেন অথবা অন্যান্য অভিনেতাদের সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত কিছুই জানাননি, ধোঁয়াশা রেখে শুধু বলেছেন, সঠিক সময়ে সব জানিয়ে দেওয়া হবে। তবে পর্দায় তাঁকে রবীন্দ্রনাথ হিসেবে কেমন দেখাবে তার  একটা first look ফটো, যেটা অনুপম শেয়ার করেছেন এই পোস্টে সেটা নিয়ে রীতিমত শোরগোল পড়ে গেছে রবীন্দ্র ভক্ত ও অনুরাগীদের মধ্যে।

 অনেকেই হুবহু রবীন্দ্রনাথের মত লেগেছে বলে দারুন প্রশংসা যেমন করেছেন, তেমনি উলটো দিকে বাংলা ছবির লাস্যময়ী অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায় আবার গোটা ব্যাপারটার বিরোধিতা করে তাঁর স্বভাবসিদ্ধ তির্যকতায় একটা টুইট করে বলেছেন “কারোরই রবীন্দ্রনাথের চরিত্রে অভিনয় করা উচিৎ নয়। বরং মানুষটাকে একটু একা ছেড়ে দেওয়াই সঠিক হবে এক্ষেত্রে।”  স্বস্তিকার এই মন্তব্যে অনেকেই সায় জানিয়েছেন, তবে স্বস্তিকা বা স্বস্তিকার মতাবলম্বিদের এইরকম মনে হওয়ার পেছনে কি অনুপম খের যেহেতু বাঙালী নন তাই রবীন্দ্রনাথ কে নিয়ে বাঙালী ভাবাবেগ কোথাও গিয়ে ধাক্কা খেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কারণ অনুপমই তো প্রথম নন। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন অভিনেতাকেই রূপালি পর্দায় দেখা গেছে রবীন্দ্রনাথ সাজতে।

যেমন ২০১৮ সালে নির্মিত ইন্দো- আর্জেন্টিনিয়ান ছবি, যা রবীন্দ্রনাথ এবং আর্জেন্টিনার লেখিকা ভিক্টোরিয়া ওকেম্পর বহুল কথিত সম্পর্কের উপরে আধারিত ছিল, সেখানে যশস্বী অভিনেতা ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় কে দেখা গেছিল রবীন্দ্রনাথের ভূমিকায়। আর্জেন্টিনিয়ান পরিচালক পাবলো সিজারের এই ছবি ‘Thinking of Him’ এ ভিক্টরের অভিনয় সমালোচকদের যথেষ্ট প্রশংসাও কুড়িয়েছিল সে সময়।

২০১৫ সালে মুক্তি পাওয়া সুমন ঘোষ পরিচালিত ‘কাদম্বরি’ তে আবার বাংলা সমান্তরাল ছবির বিশিষ্ট নায়ক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় কে দেখা গেছিল রবীন্দ্রনাথের চরিত্রে অভিনয় করতে। ছবিটিতে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে তাঁর আদরের বৌঠান কাদম্বরি দেবীর সম্পর্কের উপর আলোকপাত করা হয়েছিল। আরো আগে, ২০১৩ সালে, প্রয়াত পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ বানিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের জীবন কাহিনীর উপর পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছায়াছবি ‘জীবন স্মৃতি’। 

এই ছবিতে অভিনেতা সঞ্জয় নাগ হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ।  সঞ্জয়, জীবন সায়াহ্নে এসে পৌঁছানো কবিকে ফুটিয়ে তুলেছিলেন পর্দায়। ওই একই ছবিতে আবার সমদর্শী দত্ত করেছিলেন যুবক রবীন্দ্রনাথের পাঠ। কিছুদিন আগে দূরদর্শনের পর্দায় রবীন্দ্রনাথকে দেখা গেছে মেগা সিরিয়াল ‘মাহাপীঠ তারাপীঠ’ এ। যেখানে গৌরব চট্টোপাধ্যায় কে রবীন্দ্রনাথের ভূমিকায় দেখা গেছিল।
১৯৬১ এ সত্যজিত রায় রবীন্দ্রনাথের জীবন ও কর্ম নিয়ে একটি তথ্যচিত্র পরিচালনা করেছিলেন ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ নামে। যদিও সেখানে কাউকে রবীন্দ্রনাথ সেজে অভিনয় করতে হয়নি। রবীন্দ্রনাথের পুরনো ছবি দিয়েই কাজ চলেছে।
আসলে সংরক্ষণশীল বাঙালী মনন যেন আরো সংরক্ষণশীল হয়ে পড়ে, বিশেষ করে যখন বাংলার একমাত্র নোবেল পুরষ্কার পাওয়া কবি রবীন্দ্রনাথের ব্যাপারে কোনো কথা ওঠে, সেখানে বাঙালী প্রায় আপোষহীন।  

তাই কি পদ্মবিভূষণ পুরস্কারে পুরস্কৃত অনুপম খের কেও বাঙালী মানতে পারছে না, রবীন্দ্রনাথের চরিত্রে। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কোনোরকম তার একক উত্তারাধিকার ছাড়তে নারাজ বাঙালী যে ভাবে এই অনুপম পর্বে সাঙ্ঘাতিক একটা সাংস্কৃতিক সংকটের সিঁদুরে মেঘ দেখা শুরু করেছে, এর পরে বলিউড নায়িকা প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার প্রযোজনায় যে বায়পিক হওয়ার কথা চলছে রবীন্দ্রনাথের জীবনের অনালোকিত একটা পর্ব নিয়ে, বাঙালীর তো তখন রবীন্দ্র সম্পদ হারানোর দুঃস্বপ্নে রাত কাবার করে ফেলার জোগাড় হবে।
এই ছবিতে উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় কে দেখা যাবে পরিচালক হিসেবে।  তবে ছবির সবথেকে স্পর্শকাতর বিষয় অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথের চরিত্রে কাকে দেখা যাবে তা এখনো ঠিক হয় নি। যদিও অভিনেতা সাহেব ভট্টাচার্যের নাম রবীন্দ্রনাথের ভূমিকায় বিবেচিত হতে পারে বলে একটা গুঞ্জন রয়েছে।  প্রযোজক হিসেবে প্রিয়ঙ্কা চোপড়া নিশ্চয়ই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় অনুপম কাণ্ডের কথা স্মরণে রাখবেন। যতদূর জানা যাচ্ছে, এই ছবির নাম ঠিক হয়েছে ছবিটির মূল চরিত্র এক মারাঠি মেয়ে ‘নলিনী’র নামেই। নলিনীর রবীন্দ্র প্রেমে পড়ার গল্পই এ ছবিতে বলা হবে। সব ঠিক ঠাক চললে প্রিয়ঙ্কাকে দেখা যেতে পারে নলিনীর ভূমিকায়। কিন্তু রবীন্দ্রনাথের চরিত্রে কে? এটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। 


তথ্য সুত্রঃ- Times of India - Calcutta Times.

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...

জনগণমনঃ জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার ইতিহাস ও কিছু প্রশ্নের উত্তর!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ব্রহ্ম সঙ্গীত ‘ জনগণমন অধিনায়ক’ কে দেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে মান্যতা দেওয়ার সর্ব সম্মীলিত সিদ্ধান্ত হয় ১৯৫০ সালের ২৪ শে জানুয়ারি । কিন্তু কেন এত দেরী? দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও কেন তিন বছর সময় লেগেছিল জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন করতে? ‘ভারত বিধাতা’ শিরোনামে লেখা, স্বদেশ পর্যায় ভুক্ত (গীতবিতান অনুসারে) এই রবীন্দ্রগীতিটি কিভাবে -  দেশের জাতীয় সঙ্গীত হওয়ার পথে একটু একটু করে এগিয়ে গেল! ‘জনগনমন’র জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার নেপথ্য কাহিনীই আজ আমরা ফিরে দেখবো এই প্রবন্ধে।  ১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট - দীর্ঘ ২০০ বছর ধরে পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরে অবশেষে দেশবাসীর ভাগ্যাকাশে এসে উপস্থিত হোল বহু আকাঙ্খিত সেই দিনটি। উদিত হোল স্বাধীনতার নতুন সূর্যের।   স্বাধীন হোল দেশ। কিন্তু সদ্য ব্রিটিশ অধীনতা মুক্ত দুটি দেশ ভারত এবং পাকিস্থান তখনও পায় নি স্বতন্ত্র সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা। ১৯৪৭ এর ১৮ই জুলাই তারিখে লাগু হওয়া ভারতীয় স্বাধীনতা আইন অনুসারে নিজ নিজ সংবিধান প্রণয়নের আগে পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্থান এই দুটি ভূখণ্ড কমনওয়েলথ দেশের অধীনস্থ দুটি অধিরাজ্য হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে পারা...