সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বিশ্ব ব্যাঘ্র দিবস, ২০২৩ ঃ কোলকাতার পথে ডোরা কাটা ট্যাক্সি!

 ২৯ শে জুলাই, বিশ্ব ব্যাঘ্র দিবস। এই উপলক্ষে আগের দিন অর্থাৎ ২৮ শে জুলাই সন্ধ্যায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলে অনুষ্ঠিত হল ‘Tiger Conservation – The Road Ahead” শীর্ষক এক বিশেষ আলোচনা চক্রের।

ওই দিনই বাঘ রক্ষায় এক অভিনব উদ্যোগ ধরা পড়ল মিডিয়ার ক্যামেরায়, যা ২০২৩ এর বিশ্ব ব্যাঘ্র দিবস কে অনেকদিন স্মরনীয় করে রাখবে। বাঘের মত ডোরা কাটা একটি ট্যাক্সিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল ভিক্টোরিয়া স্মৃতি সৌধের সামনে।  গায়ে ‘Save the Tigers’ পোস্টার লাগানো ambassador গাড়িটি যে মানুষের নজর কাড়বে এ কথা অনস্বীকার্য। খবরে প্রকাশ, ২৯ শে জুলাইয়ের দিন অর্থাৎ শনিবার সারাদিনই গাড়িটিকে ব্যাঘ্র দিবস পালনের অঙ্গ হিসেবে সাধারনের জন্য প্রদর্শিত রাখা হবে ভিক্টোরিয়ার সামনে। কোলকাতার নাগরিক এবং পথচারী মানুষজনের কাছে ব্যাঘ্র সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে আগামী এক সপ্তাহ ধরে গাড়িটিকে কোলকাতার রাজপথে চলতে দেখা যাবে বলেও সংশ্লিষ্ট মহল জানিয়ে দিয়েছে।
ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যাবে, আজ থেকে ১৩ বছর আগে জন্ম নিয়েছিল বিশ্ব ব্যাঘ্র দিবস পালনের ভাবনা।  সালটা - ২০১০,  তারিখ - জুলাই ২৯, রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ শহরে আয়োজিত প্রথম বিশ্ব ব্যাঘ্র শীর্ষ সম্মেলনে ১৩ টি ব্যাঘ্র অধ্যুষিত দেশ যাদের মধ্যে ভারত এবং প্রতিবেশী বাংলাদেশও আছে মিলিত ভাবে সিদ্ধান্ত নেয় ২৯ শে জুলাই দিনটিকে আন্তর্জাতিক ব্যাঘ্র দিবস হিসেবে পালন করার। ক্রমাগত বাঘের সংখ্যা কমে যাওয়া এবং তার ফলে স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্রে ঘনিয়ে আসা গভীর সংকটের মেঘকে সামনে রেখে সচেতনতা বাড়িয়ে তোলাই ছিল এই ভাবনার মূল উদ্দেশ্য। সম্মেলনে উপস্থিত সব কটি দেশই সর্বসম্মত ভাবে একটা লক্ষ স্থির করে, সেটা হল পরবর্তী শীর্ষ সম্মেলন (২০২২) অব্দি বাঘের সংখ্যাকে বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার। প্রসঙ্গত ভারতই একমাত্র দেশ যে এই লক্ষ পূরণে সফল হয়েছে। বর্তমানে ভারতে বাঘের সংখ্যা ৩,১৬৭ টি। এই সংখ্যার নিরিখে যদি দেখা যায়, সারা বিশ্বে মোট বাঘের ৭০% ই বাস করে ভারতের জঙ্গলে। অবশ্যই এটি ব্যাঘ্র সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ভারতের একটি গৌরবজনক কৃতিত্ব। ভারতীয় বাঘ বলতে মূলত Panthera Tigris Tigris প্রজাতির, যার পোশাকি নাম Royal Bengal Tiger; ভারত এবং বাংলাদেশের সুন্দরবন অঞ্চলে যাদের অবাধ বিচরন। জলে কুমির আর ডাঙ্গায় বাঘ বলতে আমাদের চোখে ভেসে ওঠে যে ডোরা কাটা বন্য বিড়ালের ছবিটি সেটিই কিন্তু ভারত এবং বাংলাদেশ উভয় দেশের জাতীয় পশু।
বাঙালীর কাছে এই বাঘ যেমন শৌর্য, বীর্য এবং রাজকীয় গাম্ভীর্যের প্রতীক, তেমনি রয়েছে অনেক দুর্বলতম জায়গাও। স্বজন হারানোর স্মৃতি, ভয় এবং ভয় জনিত শ্রদ্ধার সংমিশ্রণে সুন্দরবনের মানুষেরা আজও বাঘের নাম নিতে ভয় পায়। বলে ‘দক্ষিণ রায়’। বাঘ নিয়ে বাঙালীর আবেগকে তাই কোনো মতেই অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু বাংলার সেরা কাগজ আনন্দবাজার পত্রিকা, আজ ব্যাঘ্র দিবসের দিনে শুধু ভেতরের পাতায় একটা ছোট খবরেই সীমাবদ্ধ রেখেছে তাদের ভুমিকা।  এ ক্ষেত্রে Times of India কিন্তু অনেকটা এগিয়ে। ব্যাঘ্র দিবস উপলক্ষে TOI আজ তাদের প্রথম পাতায়, বিশেষ আমন্ত্রিত কলামে বেশ গুরুত্ব দিয়ে ছেপেছে ক্রিকেটার শচিন তেণ্ডুলকরের লেখা।

শচিন, Tadoba Andhari অভ্যারন্যে তাঁর নিজের তোলা একটি বাঘের ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, ক্রিকেটের মতই বাঘ সংরক্ষণও একটা টিম গেম। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য ভাবে TOI, ‘Saving Our Stripes’ নামে একটা প্রচার অভিযানও শুরু করেছে এই উপলক্ষে। এবং যার অঙ্গ হিসেবে আজকের দিনে তারা রিলিজ করছে Tiger নামে একটি Youtube movie। S. Nallamuthu পরিচালিত এই ছবিতে দেখা যাবে প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রাখতে বাঘের অসামান্য অবদানের কথা। ছবিটি দেখতে ক্লিক করতে হবে নীচের ঠিকানায় – www.youtube.com/@SavingourStripes
শুধু তাই নয়, ব্যাঘ্র দিবসের স্পিরিট কে বজায় রাখতে, TOI তাদের দৈনিক ক্রোড়পত্র সংস্করণ 'Calcutta Times' এর পাতাতেও সংরক্ষণ সংক্রান্ত স্টোরি প্রকাশ করেছে।  আকর্ষণীয় ভাবে, ক্রোড়পত্রের একেবারে প্রথম পাতাতেই ছাপা হয়েছে বলিউড অভিনেত্রী তথা বাঘ সংরক্ষণের জন্য গলা ফাটানো শার্দূল প্রেমী দিয়া মির্জার লেখা।

 দিয়া, সংরক্ষণের পক্ষে জোরদার সওয়াল করে বলেছেন বাঘ বিপন্ন হয়ে পড়লে অন্য অনেক প্রানী বিপন্ন হয়ে পড়বে। অত্যন্ত সংবেদনশীল এই নায়িকা নিজের ছেলের প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, “আমি চাই না আমার ছেলে শুধু ছবিতেই বাঘ দেখুক”। এই পর্বে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য, TOI এর আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস নামাঙ্কিত বিশেষ এক পৃষ্ঠার ক্রোড়পত্র প্রকাশ। যেখানে বিশিষ্ট বন আধিকারিকরা তাদের মূল্যবান লেখায় সমৃদ্ধ করেছেন আজকের পত্রিকার সকালের সংস্করণকে। বিশেষ করে Inspector General of Forest, Tiger Project MeEFCC, রমেশ পাণ্ডে তাঁর লেখায় বাঘকে তার চিরাচরিত হিংস্র, নরখাদক  রূপ থেকে মুক্তি দিতে তাকে ডোরা কাটা সন্ন্যাসীর সঙ্গে তুলনা করেছেন। যেটির উল্লেখ না করলেই নয়। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট, কোথায় ছিলেন গান্ধীজী?

১৫০/বি বেলেঘাটা মেন রোড। শিয়ালদহ স্টেশন ও ই-এম বাইপাস এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন কারী মূল রাস্তা - বেলেঘাটা মেন রোড তথা সুরেশ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় রোডের ওপর পড়া এই বিশেষ ঠিকানা টি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে এক গৌরবময় স্মৃতির সাক্ষ্য বহন করছে । বিশেষ করে, প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময় আসন্ন হলে, এই ঠিকানার কথা স্মরণ না করে থাকা যা য় না। কারণ ১৯৪৭ এ গোটা দেশ যখন স্বাধীনতার আনন্দ উদযাপনে ব্যস্ত, বিশেষ করে রাজধানী দিল্লিতে স্বাধীনতা লাভের (১৫ ই আগস্ট) দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখতে আয়োজিত হয়েছে অভূতপূর্ব রাজকীয় সমারোহের - যার শুভ সূচনা হয়েছে, ১৪ ই আগস্টের মধ্যরাতে; ১৫ তারিখ পদার্পণ করতেই দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর ঐতিহাসিক বক্তৃতা দিয়ে শুভারম্ভ হয়েছে স্বাধীনতা দিবস পালনের মহা নির্ঘণ্ট। এই উচ্ছ্বাস যদিও কাঙ্ক্ষিতই ছিল। কারণ দীর্ঘ ২০০ বছরের পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরেই দেশবাসীর কাছে এসে পৌঁছেছিল সে বিরল মাহেন্দ্রক্ষণ। সমাগত হয়েছিল সেই মহা মুহূর্ত যখন প্রায় শত বর্ষ ধরে চলা স্বাধীনতাকামী মহাযজ্ঞে মুক্তিলাভের সিদ্ধি স্পর্শ করছিল তার চূড়ান্ত শিখর দেশ। কিন্তু এই যজ...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...