২০২৩ সালের কুভেম্পু পুরস্কার পাচ্ছেন, বিশিষ্ট সাহিত্যিক
শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। এই প্রথম কোনো বাঙালী সাহিত্যিক এই পুরস্কারে ভূষিত
হচ্ছেন।
কন্নড় ভাষার বিশিষ্ট কবি, নাট্যকার, ঔপন্যাসিক তথা গ্রন্থ সমালোচক কুভেম্পুর
নামাঙ্কিত এই পুরষ্কার, রাষ্ট্রীয় স্তরে বিভিন্ন সাহিত্যিকদের তাঁদের সাহিত্য
ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ দিয়ে আসা হচ্ছে গত দশ বছর ধরে। গতবছর,
২০২২ এ যেমন বিখ্যাত তামিল লেখক ইমায়াম পেয়েছেন এই পুরষ্কার।
কুভেম্পু আসলে লেখকের ছদ্মনাম। আসল নাম, কুপ্পালি ভেঙ্কটপ্পা পুট্টপ্পা (২৯ শে
ডিসেম্বর, ১৯০৪ – ১১ই নভেম্বর, ১৯৯৪)। প্রসঙ্গত, বাংলায় কুভেম্পু কথার অর্থ শীতল।
কুভেম্পু তাঁর দুই পর্বের মহাকাব্য ‘রামায়নম দর্শনম’ এর জন্যে ১৯৬৭ সালে জ্ঞানপীঠ
পুরষ্কারে ভূষিত হন। কন্নড় ভাষায় তিনিই ছিলেন প্রথম জ্ঞানপীঠ পুরষ্কার বিজেতা।
এছাড়াও, তিনি সাহিত্য অ্যাকাডেমি (১৯৫৫), পদ্মভূষণ (১৯৫৮), পদ্মবিভূষণ (১৯৮৮) এবং
কর্ণাটক রত্নের মত (১৯৯২) জাতীয় ও প্রাদেশিক স্তরের নানা পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন তাঁর দীর্ঘ লেখক জীবনের বিভিন্ন সময়ে। কর্ণাটক
সরকার, ১৯৬৪ তে কুভেম্পুকে ‘জাতীয় কবি’র উপাধি প্রদান করেন।
১৯১৩ সালে গঠিত ‘রাষ্ট্রকবি’ কুভেম্পু ট্রাস্টের বর্তমান প্রধান বি এল শঙ্কর, যিনি
একই সঙ্গে পুরষ্কার নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যানও, এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এবারের
পুরষ্কার প্রাপক হিসেবে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের নাম জানিয়েছেন। প্রসঙ্গত
নির্বাচন কমিটিতে অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে রয়েছেন নির্মল কান্তি ভট্টাচার্য নামের
এক বঙ্গ সন্তানও। কমিটির তরফ থেকে জানানো হয়েছে শীর্ষেন্দু তাঁর লেখায় এনেছেন এক অভিনব
সংবেদনশীলতা, যা আসলে সমৃদ্ধ করেছে ভারতীয় সাহিত্যকেই।
প্রসঙ্গত শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় তাঁর ‘মানবজমিন’ উপন্যাসের জন্যে সাহিত্য
অ্যাকাডেমি পুরষ্কার পেয়ে গিয়েছেন গত শতাব্দীর আটের দশকেই। ১৯৮৯ সালে। ১৯৮৫ সালে পেয়েছেন বিদ্যাসাগর পুরষ্কার। ১৯৭৩ এবং ১৯৯০, দু বার পেয়েছেন আনন্দ পুরষ্কার। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে বঙ্গবিভূষণ
পুরস্কারে সম্মানিত করে, ২০১২ সালে। আর এবারে পাচ্ছেন
কুভেম্পু পুরষ্কার। নিশ্চিত ভাবে এই পুরষ্কার শীর্ষেন্দুর মুকুটে,
যোগ করবে সম্মানের নতুন পালক।
ইতিমধ্যে ২০২১ সালে,
শীর্ষেন্দুকে ফেলো পদে নির্বাচিত করেছে দেশের সাহিত্য অ্যাকাডেমি।
প্রধানত ঔপন্যাসিক হিসেবে বিখ্যাত, শীর্ষেন্দু লিখেছেন ‘পার্থিব’,
‘যাও পাখি’র মত কালজয়ী উপন্যাস। লিখেছেন ছোট বড়, প্রচুর সফল
গল্পও। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মৃত্যুর পরে, বর্তমানে শীর্ষেন্দুই বাংলা সাহিত্যের
শেষ মহীরুহ। বাংলা শিশু সাহিত্য বিশেষ করে কিশোরদের জন্যে তাঁর লেখা ‘পাতাল ঘর’,
‘গোঁসাই বাগানের ভূত’, ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’ ইত্যাদি উপন্যাস গুলি তো চির অমর হয়ে
থাকবে। স্বভাবতই শীর্ষেন্দুর এই পুরষ্কার প্রাপ্তিতে খুশি বাংলার আপামর
সাহিত্যরসিক মানুষজন।
আগামী ২৯ শে ডিসেম্বর, কুভেম্পুর জন্ম বার্ষিকীতে শীর্ষেন্দুর হাতে তুলে দেওয়া হবে
পুরষ্কার বাবদ পাঁচ লক্ষ টাকা, রৌপ্য পদক এবং মানপত্র।
এমন গভীর জীবনীশক্তিতে ভরপুর শীর্ষেন্দু তাই অবলীলায় বলতে পারেন, পুরষ্কার পাওয়া নিশ্চিত ভাবে তাঁর কাছে আনন্দের, কিন্তু তিনি কোনোভাবে থেমে যাওয়ার আগে থেমে যেতে চান না।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন