২০২৩ শেষ হয়ে ২০২৪ শুরু হতে আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। ২০২৪ এর শুরুতেই রামজন্মভুমি, অযোধ্যায় নব নির্মিত রাম মন্দিরে রাম লালার মূর্তি স্থাপিত হওয়ার কথা। ২০২৪ এর ২২ শে জানুয়ারির পুণ্য তিথিতে নতুন রাম মূর্তির প্রাণ প্রতিষ্ঠা হওয়ার দিন ক্ষণ পূর্ব নির্ধারিত। উক্ত অনুষ্ঠানে সারা দেশ থেকে সাধু সন্তদের পাশাপাশি উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীও।
রাম মন্দিরের পুণ্য বেদীতে পরম পুরুষ শ্রী রামের মূর্তি প্রতিষ্ঠার এই অনুষ্ঠানের তাৎপর্য এক একজনের কাছে এক একরকম। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা যেমন এই অনুষ্ঠানের ফসল আসন্ন লোক সভা নির্বাচনের প্রাক্কালে কোন দল কতটা তুলতে পারবে তার চুল চেরা বিশ্লেষণ নিয়ে ব্যস্ত। সমাজতাত্ত্বিকরা তেমনি দুই প্রধান সম্প্রদায় হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সামাজিক বন্ধনের প্রশ্নে এর কি প্রভাব পড়তে পারে তার ভাবনা ভাবতে পরিশ্রম করে চলেছেন দিন রাত।কিন্তু এই অনুষ্ঠানের সকল আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু যিনি, সেই ভগবান রামের ইচ্ছা কি সেটার বিচার বোধহয় কেউ করছেন না। সনাতন ধর্মানুসারে, ভগবান তাঁর নিজের মূর্তি নিজেই গড়ে নেন। তিনি কি রূপে ভক্তদের সামনে হাজির হতে চান, সেটা তাঁর একান্তই নিজস্ব ইচ্ছাধীন। কথায় বলে, ভগবান তাঁর মূর্তি গড়ার কারিগরকে নির্বাচন করেন স্বয়ং নিজে। এ ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হল না।ভগবান রাম, তাঁর মূর্তি গড়ালেন দুই মুসলিম কারিগরকে দিয়ে। মনে রাখতে হবে ভগবান রাম কিন্তু একজন ন্যায়পরায়ণ ও প্রজাবৎসল রাজা ছিলেন। আর সেই রাম রাজ্যের রাজা হিসেবে সকল প্রজার প্রতি শ্রী রামের সমদৃষ্টি ও সমভাবের কথা তর্কাতীত ভাবে সত্য। কোথাও তিনি হয়তো বেশী করুনাঘন ধর্মের বিচারে অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপরে।
তাই বোধহয় শেষ পর্যন্ত রাম মূর্তি গড়ার অর্ডার পান দুই মুসলিম কারিগর। প্রসঙ্গত এই দুই মুসলিম কারিগরের বাড়ি, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার দত্তপুকুর এলাকায়, ফালদি গ্রামে। সম্পর্কে এরা দুজন বাবা ও ছেলে। বাবার নাম, মোহম্মদ জামালুদ্দিন। ছেলে, বিটু। অনলাইনে এদের কাজ দেখে রাম মন্দির ট্রাস্টের কর্ম কর্তারা এই অর্ডার দিয়েছিলেন জামালুদ্দিনকে। অন্য একটা সূত্র অনুসারে, উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় থাকে জামালুদ্দিনের বন্ধু এই অর্ডার পাওয়ার পেছনে সাহায্য করেছেন। কিন্তু যাই হোক সবই যে রামের ইচ্ছায় হয়েছে, সে কথা কে অস্বীকার করতে পারে?
জামালুদ্দিন যদিও এই কাজে রয়েছেন অনেক বছর। হায়দ্রাবাদের রামজী ফিল্ম স্টুডিও থেকে মূর্তি গড়ার প্রশিক্ষণও নিয়েছেন এক সময়ে। প্রশিক্ষণ নিয়ে গ্রামে ফেরার পর ফাইবারের মূর্তি গড়ার স্টুডিও প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। সেখান থেকেই সম্প্রতি দুটি ১৬ এবং ১৭ ফুট দীর্ঘ ফাইবারের রাম মূর্তি গড়েছেন জামালুদ্দিন। মূর্তি দুটোর দাম যথাক্রমে, ২ লাখ ৫০ হাজার এবং ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
মূর্তি দুটি ইতিমধ্যে অযোধ্যা নিয়ে গেছে ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ।
জামালুদ্দিন সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন তাঁর খুশির কথা। “আমর গর্বিত ভগবান রামের মূর্তি গড়তে পেরে।" "ধর্মীয় বিশ্বাস যার যার নিজের, মূর্তি গড়ার ক্ষেত্রে সেটা কখনো অন্তরায় হতে পারে না।"
এটাই বোধহয় ভারত আত্মার স্বরূপ। যা ভগবান রাম তাঁর দৈবিক শক্তি দিয়ে আবার একবার প্রমান করে ছাড়লেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন