সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সুনীলের প্রথম চুম্বন কোনো রক্ত মাংসের শরীরকে নয়!

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর জীবনের প্রথম চুম্বন কাকে করেছিলেন, এই প্রশ্নের উত্তর শিরোনামের ইঙ্গিতে যেটুকু পরিষ্কার হয়েছে তাতে বোঝা যাচ্ছে তাঁর প্রথম চুম্বনটা কোনো মানব বা মানবীর শরীরকে জড়িয়ে ছিল না। তবে সে চুম্বন হাওয়ায় ওড়ানো কোনো ফ্লাইং কিশও ছিল না। ছিল না কোনো মনুষ্যেতর প্রাণীকে আদর করেও। অথবা কোনো উদ্ভিদ বা ফুল-পাতা বা সোনা দানাকেও ভালোবেসে জীবনের প্রথম চুমুটা দিয়েছিলেন বলেও কিন্তু চালিয়ে দেওয়া যাবে না। তাহলে প্রশ্ন, কাকে? 
এ ক্ষেত্রে রহস্যটা আরো একটু জিইয়ে রেখে যেটা যোগ করতে চাই সেটা হল, সুনীলের এই প্রথম চুমু কিন্তু মোটেই প্লেটোনিক ছিল না। বরং যৌনতার আবেদনে ভরা বেশ রগরগেই ছিল বলা যায়। পাঠক মনে করতে পারেন, এত ভণিতা না করে বলে দিলেই তো হয়। কিন্তু কে না জানে, সবুরের ফল সর্বদা মিষ্টিই হয়।  
তাই কৌতূহল নিরসনের পূর্বে আমাদের রোমান কবি ওভিডের বিখ্যাত কাব্য-রচনা ‘মেটামরফোসেস’ এর গল্প নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা সেরে নেওয়া জরুরী। কাহিনীর মূল চরিত্র একজন ভাস্কর, যার নাম ছিল পিগম্যালিয়ন। পিগম্যালিয়ন হাতির দাঁত দিয়ে একটি সুন্দর দেখতে নারীর মূর্তি তৈরি করেন এবং আশ্চর্যের বিষয় ক্রমশ তার প্রেমে পড়ে যান। যতদিন যায় সে প্রেম,  তত গভীর হতে থাকে। এমনকি সেই ভাস্কর নিষ্প্রাণ মূর্তির জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপহার কিনে নিয়ে আসেন এবং তার শোয়ার জন্যে চমৎকার একটা বিছানা পর্যন্ত তৈরি করেন। ইতিমধ্যে গ্রীক রূপকথায় বর্ণিত যৌন লালসার দেবী অ্যাফ্রোডাইটের উৎসব তিথি এসে উপস্থিত হয়। পিগম্যালিয়ন, অ্যাফ্রোডাইটের আরাধনা করে তার কাছে একটা বর চান। তার কাতর আকুতি ছিল সেই হাতির দাঁতের তৈরি নারী মূর্তিতে যেন প্রাণ প্রতিষ্ঠিত হয়। অ্যাফ্রোডাইট, পিগম্যালিয়নকে নিরাশ করেন না। সত্যি সত্যিই পিগম্যালিয়ন, এর পর সেই মূর্তিকে যখন চুম্বন করতে যান  অনুভব করেন তার ঠোঁটের নরম উষ্ণতা। দেবী-কৃপায়, হস্তিদন্তের কঠোরতা যেন কোথায় উধাও হয়ে গেছিল।
সুনীলের প্রথম চুমু আর পিগম্যালিয়নের গল্প, দুটোর মধ্যে একটা যোগ আছে। সে কথা সুনীল তাঁর আত্মজীবনী ‘অর্ধেক জীবন’এ উল্লেখ করেছেন, অকপটে। কোনো রাখ ঢাক না রেখেই।
সুনীল তাঁর আত্মজীবনীতে লিখছেন, ‘আত্মজীবনী বা স্মৃতিকথা আসলে একধরনের স্বীকারোক্তি।‘
রুশোর উদাহরণ টেনে বলেছেন, এই জন্যেই রুশো তাঁর আত্মজীবনীর নাম রেখেছিলেন ‘কনফেশন’।
সুনীলের জীবনে এই প্রথম চুমু খাওয়ার ঘটনা অবশ্যই কিশোরবেলাকার। সরস্বতী পূজার আগের দিন রাত্রে, যখন মণ্ডপে সুনীল ছাড়া আর কেউ ছিল না। প্রসঙ্গত সেই সরস্বতী পুজোর আয়োজন কোনো তথাকথিত ক্লাবের দ্বারা পরিচালিত ছিল না। তখন আনন্দবাজার পত্রিকার আনন্দমেলা বিভাগের সম্পাদক ছিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক বিমল চন্দ্র ঘোষ, যার ছদ্মনাম ছিল মৌমাছি। মৌমাছির নেতৃত্বে ‘মনিমেলা’ নামের একটা সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার সংগঠন গড়ে উঠেছিল, যার সদস্য ছিল শহর-মফস্বলের কিশোর কিশোরীরা। সুনীল, তাঁর পাড়ারই ক্লাব ‘সবুজ সংঘ’, যারা সরস্বতী পুজো করতো সেসময়, কিন্তু সেখানে খুব একটা পাত্তা না পেয়ে ‘মনিমেলা’র ব্যানারে একটি শাখা সংগঠন খুলে ফেলেন। যার নাম দেন ‘শুভকামী মনিমেলা’।  সেবারে শুভকামী মনিমেলা, প্রথমবার আয়োজন করেছিল সরস্বতী পূজার। সুনীল তাঁর আত্মজীবনী ‘অর্ধেক জীবন’ এ লিখছেন তখনো তাঁর উপনয়ন সম্পন্ন হয় নি। এবং সেই প্রথম তিনি বাড়ির বাইরে রাত কাটাবার অনুমতি পেয়েছেন। সরস্বতী পুজোর আগের দিন এমনিতেই খুব ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে কাটে।
কুমোরটুলি থেকে ঠাকুর আনা, তারপরে ঠাকুরকে বেদীতে বসানো, মণ্ডপ সাজানো, শেষে রঙ্গিন কাগজের শিকলি বানাতে বানাতে প্রায় মধ্য রাত। সুনীল লিখছেন, “প্রায় মাঝরাত্তিরে অন্য বন্ধুদের খেয়াল হল, স্বার্থপরের মত আমি আগেই খেয়ে এসেছি, তারা কিছুই খায় নি।“ তারপরেই লিখছেন, “তাদের খিদে পেয়েছে তো বটেই, তা ছাড়া বাড়ির লোক রাগ করবে। তাই তারা খেতে চলে গেল আমাকে প্রহরায় বসিয়ে।"
সুনীলের ভাষায়, “নিঃশব্দ, নিবিড় রাত্রি।“ আর তিনি অনেক ক্ষণ একা বসেছিলেন; সামনে একটি মাটির মূর্তি ছাড়া কিছু ছিল না। সময় যেন কিছুতেই কাটতে চাইছিল না। সারাক্ষণ প্রতিমার দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া তাঁর আর কোনো উপায় ছিল না। এইভাবে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তাঁর সারা শরীরে জুড়ে যে অভূতপূর্ব শিহরন হওয়ার কথা সুনীল লিখেছেন, যাকে প্রথমত কিছুটা অলৌকিক মনে হলেও হতে পারে। কিন্তু পরক্ষণেই ভুল ভেঙ্গে যায়, যখন তিনি মূর্তির বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখেন, “কি অপূর্ব সুন্দর মুখ, এই শ্বেতবসনা রমনীর। আয়ত চোখ, স্ফুরিত ওষ্ঠ, ভরাট, বর্তুল দুটি স্তন। সরু কোমর, প্রশস্ত উরুদ্বয়।“  বর্ণনার কোথাও প্রতিভাত হয় না, তাঁর শরীরের কাঁপন কোনো ঐশ্বরিক অলৌকিকতার কারণে হয়েছিল। বরং কিশোরবেলার অবদমিত যৌন কল্পনা দিয়ে মূর্তির সব শরীরী সৌন্দর্যকে চেটে নেওয়ার আকুলতাই প্রকাশ পেয়েছিল তাতে। এর পরে কি হয়েছিল, সেই রোমাঞ্চকর ঘটনার কথা সুনীলের ভাষাতেই শোনা যাক। “এর অভিঘাতে তছনছ হয়ে যেতে লাগল আমার কৈশোর, জেগে উঠল পুরুষার্থ, অল্প অল্প শীতেও উষ্ণ হয়ে উঠল শরীর।“ এখানেই সুনীল পরিষ্কার করে দেন তাঁর এই অনুভূতির সঙ্গে পিগম্যালিয়নের কি তফাৎ। তাঁর মতে এটা কোনো অলৌকিক অনুভূতি ছিল না।  আবার পিগম্যালিয়নের মত সেই মাটির মূর্তিকে জীবন্ত ও মনে হয়নি তাঁর। মনে হয়েছিল, ‘মাটিরই প্রতিমা, একটি নারী, পরিপূর্ণ নারী’র মতন। তারপরেই এসেছিল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। “চোরের মতন সতর্ক ভাবে একবার এদিক ওদিক তাকিয়ে আমি হাত রাখলাম, দেবী মূর্তির বুকে। ‘জয় জয় দেবী চরাচর সারে, কুচ যুগে শোভিত মুক্ত হারে...’ সেই কুচযুগে আমার আঙুল, আমার শরীর আরো রোমাঞ্চিত হল। কান দুটিতে আগুনের আঁচ। আমি প্রতিমার ওষ্ঠ চুম্বন করলাম।“ ‘অর্ধেক জীবন’ এ সুনীল লিখছেন, “এই চুম্বন আমার জীবনের প্রথম চুম্বন!”
যদিও এর জন্যে সুনীলের কোনো অপরাধবোধ ছিল না। তবে লোক লজ্জার ভয় ছিল। তাই তিনি বন্ধুরা যে কোনো সময়ে এসে পড়তে পারে এই ভয়ে দ্রুত সরে এসেছিলেন মূর্তির পাশ থেকে।
 তবে দু এক বছর পরে, ওইরকম এক সরস্বতী পুজোর আবহেই আবার চুমু খাওয়ার শুভ মহরৎ এসেছিল সুনীলের জীবনে। সেবারে অবশ্য রক্ত মাংসের এক কিশোরীকে পেয়েছিলেন চুমু খাওয়ার জন্যে। সুনীলের মতে, দ্বিতীয় বারের চুমুটার থেকেও প্রথমবারেরটা ছিল বেশি উত্তেজনাময়। এবং তাঁর এই চুমুতে সরস্বতী মূর্তি নাকি যারপরনাই ঈর্ষান্বিতও হয়েছিলেন। যার ফলে প্রথমবার কোনোরকম বিঘ্ন না ঘটলেও, দ্বিতীয় বারের ঘটনায় সরস্বতী কুপিত হয়ে তাঁর পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ করে দেন। তিনি বাংলায় নম্বর কম পান, সে বছর। যাই হোক সেটা অবশ্য অন্য প্রসঙ্গ। 

সুনীলের সম্পর্কে আরো লেখা পড়তে ক্লিক করুন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট, কোথায় ছিলেন গান্ধীজী?

১৫০/বি বেলেঘাটা মেন রোড। শিয়ালদহ স্টেশন ও ই-এম বাইপাস এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন কারী মূল রাস্তা - বেলেঘাটা মেন রোড তথা সুরেশ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় রোডের ওপর পড়া এই বিশেষ ঠিকানা টি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে এক গৌরবময় স্মৃতির সাক্ষ্য বহন করছে । বিশেষ করে, প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময় আসন্ন হলে, এই ঠিকানার কথা স্মরণ না করে থাকা যা য় না। কারণ ১৯৪৭ এ গোটা দেশ যখন স্বাধীনতার আনন্দ উদযাপনে ব্যস্ত, বিশেষ করে রাজধানী দিল্লিতে স্বাধীনতা লাভের (১৫ ই আগস্ট) দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখতে আয়োজিত হয়েছে অভূতপূর্ব রাজকীয় সমারোহের - যার শুভ সূচনা হয়েছে, ১৪ ই আগস্টের মধ্যরাতে; ১৫ তারিখ পদার্পণ করতেই দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর ঐতিহাসিক বক্তৃতা দিয়ে শুভারম্ভ হয়েছে স্বাধীনতা দিবস পালনের মহা নির্ঘণ্ট। এই উচ্ছ্বাস যদিও কাঙ্ক্ষিতই ছিল। কারণ দীর্ঘ ২০০ বছরের পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরেই দেশবাসীর কাছে এসে পৌঁছেছিল সে বিরল মাহেন্দ্রক্ষণ। সমাগত হয়েছিল সেই মহা মুহূর্ত যখন প্রায় শত বর্ষ ধরে চলা স্বাধীনতাকামী মহাযজ্ঞে মুক্তিলাভের সিদ্ধি স্পর্শ করছিল তার চূড়ান্ত শিখর দেশ। কিন্তু এই যজ...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...