সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মদ্যপ শক্তি কথা!

 স্তন্যপায়ী বলে প্রানীদের একটি শ্রেনীবিভাগ আছে। কবিদের মধ্যে সেরকম কোনো শ্রেণীকরণের নাম কেউ কখনো শুনেছে বলে মনে করা শক্ত। কিন্তু কল্পনা শক্তির আর একটু বিস্তার ঘটিয়ে যদি ভাবা যায় তাহলে মদ্যপায়ী বলে একটা শ্রেনীর সন্ধান পাওয়া গেলেও পাওয়া যেতে পারে। যদিও বিরল সেই শ্রেনীর সূচনা হয় যে ব্যক্তিকে দিয়ে, অবলুপ্তিও ঘটে যায় ওই ব্যক্তিরই জীবনাবসানের সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিটি আর কেউ নন, তিনি হলেন এক এবং একমাত্র, কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়। তবে মধ্যপায়ী। যিনি মদ্যপান করেন কোনো উপলক্ষ ছাড়াই, শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়ার মত। হয়তো একটু ছোট মুখে বড় কথা বলা হয়ে গেল। আসলে শক্তির মদ্যপানের কথা আর শুধু কথা নেই, রূপকথায় পরিণত হয়ে গেছে। শক্তির মদ্যপানের মিথ বোধহয় আর কোনো কৃতি কবির পক্ষে, অতীতে তো হয়ইনি ভবিষ্যতেও কোনোভাবে ভাঙা সম্ভব বলে মনে হয় নাহয়তো সেই কারণেই আজও কোনো তরুন কবি মদের গেলাস হাতে শক্তির মতই বোহেমিয়ান হওয়ার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু কবি সুবোধ সরকারের কথায় ফুটে ওঠে অন্য কথা - স্বপ্ন যে কেউ দেখতে পারে, কিন্তু শক্তি একজনই হন, “মদ অনেকেই খায়, কিন্তু এমন কবিতা কে লিখতে পারে!”  
সত্যিই তো কে এমন আছে, টেবিলের উপর দাঁড়িয়ে মদ্যপ অবস্থায় ‘অবনী বাড়ি আছো’ বলে চেঁচিয়ে কলেজ স্ট্রীটের কফি হাউসকে একেবারে মাথায় করে ফেলতে পারে?

আসলে, শক্তির মদ্যাসক্তির সঙ্গে যে জিনিসটা প্রায় সোনার সঙ্গে সোহাগার মত জুটে গিয়েছিলে, সেটা হোল তাঁর চরিত্রের আদি ও অকৃত্রিম বোহেমিয়ান স্বভাব। কিন্তু এত মধ্যপান আর এমন উড়ো খইয়ের মত বোহেমিয়ান হয়েও শক্তি লিখে গেছেন কাব্য সাহিত্যের অমূল্য সব রত্নলেখা। সেটা কি করে সম্ভব হোল, নাকি এই দুই বিশৃঙ্খল চরিত্র গুণ কে বাঁধার জন্য শক্তির লুকানো থাকতো অলৌকিক কোনো অনুশাসনের রজ্জু, যা তাঁকে খাদের কিনারে থেকেও লিখিয়ে নিয়েছে ‘হে প্রেম, হে নৈশব্দ’ এর মত অমর কাব্যগ্রন্থ! এইরকমই মনে করেন আজীবন শক্তি সুহৃৎ, সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রীও। সুনীল জায়া স্বাতী খুব কাছ থেকে দেখেছেন শক্তিকে। এমনকি শক্তির জীবনের শেষ দিনটিতেও, শান্তিনিকেতনের বাড়িতে শক্তিকে দেখেছেন বন্ধু সুনীলের সঙ্গে ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকার ভবিষ্যৎ নিয়ে গম্ভীর আলোচনা করতে। অবশ্যই আলোচনা শেষে, সব দিনের মত মদের গেলাস হাতে মদ্য পান করতেও দেখেছেন তাঁকে। আনন্দবাজার অনলাইনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে, সাংবাদিক ঋজু বসুকে তাই অকপটে বলতে পেরেছিলেন স্বাতী, “শক্তির কোথাও একটা ইনার ডিসিপ্লিন ছিল। নইলে এত ভাল লিখবে কী করে?
এই কারণেই হয়তো, মদ্যপানের পর যখন অন্যরা বন্ধুর বউয়ের সঙ্গে
ফ্লার্ট করার মজা নিত, শক্তি থাকতো তার থেকে অনেক দূরে, কোনো এক অলিখিত সংযমের সুপ্তিতে।
স্বাতীর স্মৃতিচারণে উঠে এসেছে সে কথা। “মদ খেয়ে সুনীল
, বুদ্ধদেব গুহ, মতি নন্দী অনেককেই মেয়েদের সঙ্গে একটু-আধটু ফ্লার্ট করতে দেখেছি। আর শ্যামল (গঙ্গোপাধ্যায়) তো ইচ্ছে করে দুষ্টুমি করতেন, ‘স্বাতী তুমি কি আমায় একবারটি চুমু খেতে দেবে?’” যদিও স্বাতী, বন্ধুর বউয়ের সঙ্গে এইরকমের মজা করার মধ্যে কোনো দোষ দেখেন না। কিন্তু শক্তি গলা পর্যন্ত মদ খেয়েও এই ব্যাপারটা থেকে থেকেছেন অনেক দূরে। “শক্তির কিন্তু মেয়েদের নিয়ে এই ব্যাপারটা কখনও দেখিনি,” স্বাতীর কথার মধ্যে পাওয়া যায় তারই সাক্ষর।
বরং ভরপেট মদ খাওয়ার পর বন্ধু স্ত্রী স্বাতীকে সম্বোধন করতেন, ‘মা’ বলে। এ যেন কোনো তন্ত্র সাধকের মাতৃ সাধনার ভাব জাগ্রত হচ্ছে মদ্যপানের মধ্য দিয়ে, বেহদ নেশার ঘোরে। আসলে বৈপরীত্যের অলীক আলোয় নিজেকে মুড়ে রাখতে ভালোবাসতেন বোধহয় শক্তি। তাই বিরোধাভাসে তাঁর এত তৃপ্তি। নাকি শক্তি কোনো 'ঘরে ও বাহিরে একা' থাকা মানুষ যিনি 'ভিতরে, ভিতরে একা' থাকার গৌরবকে উদযাপন করেন এ ভাবে!
কিন্তু এর উলটো গল্পটাও যে কম রোমাঞ্চকর নয়। যেখানে শক্তি মদ খেয়ে হৈ চৈ করছেন, কখনো করছেন অশ্রাব্য গালাগাল। সুনীল বারন করলে ধমক দিয়ে বলছেন, ‘আমি শক্তি চট্টোপাধ্যায়, কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়’। উছলে বেরিয়ে আসা বেপরোয়া মেজাজটাই তখন আসল কবি, দুর্লঙ্ঘ্য বোহেমিয়ান স্বভাবের আলোয় উদ্ভাসিত শক্তির এখানে অন্য এক ছবি উঠে আসে যেন।
কখন আবার বন্ধু মতি নন্দীর সঙ্গে (সাহিত্যিক) মদের আসরে বসে বচসা থেকে মদের বোতল ভাঙাভাঙি পর্যন্ত, কিছুই বাকি থাকে না।
কখনো অবিরাম বকবক করে যাওয়া বিখ্যাত খেলোয়াড় পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘এয়, চুপ’ বলে থামিয়ে দিচ্ছেন।
রাতের কোলকাতায় মদ্যপ শক্তির দুর্দম ঘুরে বেড়ানো বন্ধু শরত মুখোপাধ্যায় সহ সুনীল, তারাপদদের সঙ্গে এবং টুকটাক ঝামেলা কোনো ট্যাক্সি ড্রাইভারের সঙ্গে অথবা নিজেদের মধ্যে কথা কাটাকাটি যা সুনীলের ভাষায় ‘রাতের কোলকাতাকে শাসন করার’ এই ছিল তাদের নিত্যকার রুটিন যাকে শক্তি উপভোগ করেছন একেবারে বোতলের তলা পর্যন্ত।  
টুকরো টুকরো এই ছবি গুলো জুড়ে যে মালা গড়ে ওঠে মদ্যপ শক্তিকে নিয়ে, তাতে একটু ভিন্ন ছবিও দেখা যায়, যখন শক্তি ভূপাল যান কবি বন্ধু অশোক বাজপেয়ীর আমন্ত্রনে। সেবার তাঁর সঙ্গে ছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ও। দুজনেই যাচ্ছিলেন সস্ত্রীক। শক্তি বোধহয় স্ত্রী মীনাক্ষীকে একটু সমীহই করতেন। তাই সেই যাত্রায় শক্তির মদ্যপানে বিরাম না পড়লেও মীনাক্ষীর উপস্থিতিতে মদ্যপানের সময়ে বা পরে তাঁর বরাবরের স্বভাব মত কোনোরকম উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায় নি তাঁকে। স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণে উঠে আসে সে কথা, “
শক্তিকে ওই কটা দিন খুব লক্ষ্মী ছেলে হয়ে থাকতে দেখেছি।“ ভূপাল  গিয়ে ‘লক্ষ্মী ছেলে’ শক্তির কিন্তু বোতল প্রেমে ভাটা পড়ে নি।
“গাড়িতে বসে টুকটাক হাতবদল চলছে বোতলের। অত শাসনের মধ্যেও শক্তি-সুনীলের স্টক রেডি থাকত। বোতলে জল মেশানো। গাড়িতে বসেই সামনের সিট-পিছনের সিটের মধ্যে বোতলটা ঘুরছে,“ স্বাতীর স্মৃতি চারণে শক্তিকে নিয়ে ঝরে পড়ে অপার মুগ্ধতা।
শক্তির মদ্যপানের যে কি অনবদ্য মাধুরি, জানতে হলে কবি সুবোধ সরকারের স্মৃতি ধার করতেই হবে।  সুবোধ বলছেন, একবার শক্তি চট্টোপাধ্যায় তাঁকে স্টেটসম্যান হাউসের সামনে পেয়ে বললেন, ‘চল, ঘুরে আসি’। তারপরে অনেক গুলো গলি, তস্য গলি পেরিয়ে যে দোকানের সামনে এসে শেষ পর্যন্ত দাঁড়ালেন, সেটি একটি দেশি মদের দোকান। পৌঁছেই, গলা হেঁকে ‘দে তারক দুটো দে’ বলতেই সুবোধ প্রমাদ গোনা শুরু করেছেন যেহেতু তখনো তিনি নিতান্তই এক অমদবিদ্ধ জুনিয়র কবি। কিন্তু তার সামনে যেটা ঘটল, তাতে তো তাঁর  চোখ ছানা বড়ার থেকেও বড় হয়ে গেল । দুটো দেশি মদের পাইট (৩০০ এম এল) কে একটার পর একটা, জল ছাড়াই মুখের কাছে ধরছেন আর ঢক ঢক করে গিলে নিচ্ছেন। শেষ হলে হাতের চেটো দিয়ে ঠোঁটের কোনায় গড়িয়ে পড়া মদ্যাবশেষকে মুছে নিচ্ছেন কি পরম আর্দ্রতায়, না দেখলে বিশ্বাস করা শক্ত। খাওয়া শেষ করে, ‘খাতায় লিখে নে’ বলে উঠে এলেন অবলীলায়। এবং  হাঁটতে শুরু করলেন গলায় রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুর ভাঁজতে ভাঁজতে। তাও সরল স্বাচ্ছন্দ্যে এবং অটল-অবিচল চরণে।
মদ্যপ শক্তির করা নানা লীলা কর্মের পাশাপাশি, শক্তির ড্রাগ খাওয়ার গল্পটাই বা বাদ থাকে কেন।
একবার আমেরিকায়, কবি  
অ্যালেন গিন্‌সবার্গ শক্তি, সুনীল এবং তারাপদ রায়, এই তিনজনের প্রত্যেককে দুটি করে এল এস ডি বড়ি দিয়েছিলেন খেতে। কিন্তু বাঙালি কবিরা বোধহয় অন্য কিছুর গন্ধ পেয়ে একটু বেশি রক্ষণাত্মক হয়ে পড়েছিলেন সেদিন, তাই দুটো করে নয় একটা করে বড়ি খেয়েছিলেন। তাও তারাপদ রায় কে এল এস ডি না দিয়ে রেখেছিলেন রিজার্ভে, তাদের সামলাবার জন্য। সুনীল পত্নী স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়ের স্মৃতি চারণে উঠে এসেছে সে কথা। “ওই খেয়ে সুনীল সম্ভবত ছোটবেলায় চলে গিয়েছিল, আর শক্তির কিছু একটা দেখে খুব কষ্ট হয়েছিল।"

খালাসিটোলা পানশালা

শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মদ্যপানের এই যে অপার মহিমা তার এপিক সেন্টার বোধহয় ছিল খালাসিটোলা, যার কথা বাদ দিলে আবার শক্তির মদ্যপানের মহিমা কীর্তন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
ওয়েলিংটনের বিখ্যাত দিশি মদের দোকান, খালাসিটোলায় গিয়ে গলা ভেজাননি এমন কোনো সাহিত্য শিল্পের কুশিলবকে খুঁজে পাওয়া ভার। অন্তত গত শতাব্দীর ছয়ের বা সাতের দশকের বছরগুলিতে। এখানে কমল কুমার মজুমদারকে খুঁজে আসতেন স্বয়ং সত্যজিত রায়।  ১৯৬১ সালে শুরু হওয়া হাংরি মুভমেন্ট এর প্রত্যক্ষ সাক্ষী থেকেছে এই খালাসিটোলা। ১৯৬৮ তে কবি জীবনানন্দের জন্মদিনও পালিত হয়েছে এই খালাসিটোলাতেই।
 এইরকম একটা ঠেকে স্বাভাবিক ভাবেই শক্তির যাতায়াত অনভিপ্রেত নয়। প্রায়শই শক্তির গলা ছেড়ে গাওয়া গানে, গম গম করে উঠত খালাসিটোলার পান শালা। শোনা যায় শক্তির ‘হে প্রেম, হে নৈশব্দ’ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলি এখানেই প্রথম পঠিত হয়েছিল।
পরিশেষে সমীর সেনগুপ্তের লেখায় উঠে আসা সেই কাহিনীর কথা যেখানে শক্তি, দারুন আতিথেয়তায় ভরা একটি রাত কাটাচ্ছেন শিল্পী রামকিঙ্কর বেজের ঘরে, বোধহয় বিরলদের মধ্যে বিরলতম।
তখন সদ্য দোল শেষ হয়েছে। একদিন শক্তি, বন্ধু সমীর সেনগুপ্তকে কে এসে বললেন, "চল, শান্তিনিকেতনে যাই। খোয়াই এখন পলাশের আগুনে লাল! দারুন হবে" তখন শক্তির বিয়ে হয়নি, বয়স ৩০ এর মত। "অনেকদিন কিঙ্করদার সঙ্গে দেখা হয় নি। ওর বাড়িতে এক রাত কাটিয়ে পরের দিন আমরা সিউরি চলে যাব।" সমীর সেনগুপ্ত রামকিঙ্করকে আগে দেখেননি, তাই শক্তির কথায় রাজি হয়ে যান। 
ওখানে পৌঁছাতে পৌঁছাতে ওদের দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায়। রাস্তায় সিনেমাটোলার সামনে পড়ে একটি দেশি মদের দোকান, নাম -আকর্ষণী। শক্তি রিক্সা থামিয়ে বেশ কয়েকটি দেশি বোতল নিয়ে নেন। তারপরে সোজা রামকিঙ্করের বাড়ি। বাড়ির সামনে পৌঁছেই, শক্তি চিৎকার করে করে ডাকতে শুরু করে দেন, "কিঙ্করদা ও কিঙ্করদা!" ডাক শুনে রামকিঙ্কর তখন বোধহয় লুঙ্গি পরা অবস্থায় ছিলেন, ওইভাবেই বেরিয়ে আসেন খালি পায়ে। "আরে কবি, তুই এয়েছিস, কিছু নিয়ে এয়েছিস তো আমার জন্যে।" 
শক্তি রিক্সা থেকে বোতলগুলো নামাতে নামাতে এক গাল হেঁসে বলেন, "আমি একেবারে নিয়েই ঢুকছি।" 
তারপরে মেঝেতে মাদুর পেতে বসে পড়া দেশি মদ নিয়ে, সঙ্গে শূকরের মাংস। গেলাসের পর গেলাসে উড়ে যায় মদের স্টক। পরে রিকশাওয়ালাকে কে দিয়ে আনানো হয় আরও দুটি বড় বোতল। তাও শেষ হয়ে যায় একসময়। সঙ্গে চলতে থাকে বিড়ির পর বিড়ি, প্রচুর বাতেলা, আর চলতে থাকে ভাঙা গলায় একের পর এক রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুর ভাঁজা। 
এইভাবে রাত্তির প্রায় দশটা হয়ে যায়, সমীর সেনগুপ্ত তারপরে আর কিছু মনে করতে পারেন না। অনেক রাতে যখন তার ঘুম ভাঙে, দেখেন শক্তি শুয়ে আছেন অবিন্যস্ত ভাবে, আর রামকিঙ্কর ভেতরের দাওয়ায় একটা নির্মীয়মাণ নারী মূর্তির দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে কি যেন ভাবছেন মগ্ন হয়ে, পুরো উলঙ্গ হয়ে, গায়ে একটি সুতো পর্যন্ত নেই। 
শক্তির মৃত্যুর দিনেও তাঁর মদ্যপ সত্তার কথা ভোলা যায় না কিছুতেই। তাই তো তাঁর শেষ যাত্রায় সঙ্গী হতে দেখা যায় সাধারন ট্যাক্সি ড্রাইভার থেকে শুরু করে তথাকথিত সব নিম্ন বর্গিয় মানুষ, যাদের সকাল হতেই মুখ থেকে নির্গত হয় কান্ট্রি লিকারের বিদঘুটে গন্ধ, শক্তির মতোই।  
শক্তি চলে যান, তাঁর চলে যাওয়া পথ ধরে - হিরণ্ময় কবিতার সেই লাইন গুলো যেন কোনো এক অলীক জাদুবলে বলে ওঠে, 'যাবো। কিন্তু, এখনি যাবো না। তোমাদেরও সঙ্গে নিয়ে যাবো। একাকী যাবো না, অসময়ে।'  


তথ্য সুত্রঃ স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়ের শক্তি স্মরণ, আনন্দবাজার অনলাইনে। (অনুলিখনে ঋজু বসু)
সমীর সেনগুপ্তের লেখা, 'আমার বন্ধু শক্তি' 


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট, কোথায় ছিলেন গান্ধীজী?

১৫০/বি বেলেঘাটা মেন রোড। শিয়ালদহ স্টেশন ও ই-এম বাইপাস এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন কারী মূল রাস্তা - বেলেঘাটা মেন রোড তথা সুরেশ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় রোডের ওপর পড়া এই বিশেষ ঠিকানা টি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে এক গৌরবময় স্মৃতির সাক্ষ্য বহন করছে । বিশেষ করে, প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময় আসন্ন হলে, এই ঠিকানার কথা স্মরণ না করে থাকা যা য় না। কারণ ১৯৪৭ এ গোটা দেশ যখন স্বাধীনতার আনন্দ উদযাপনে ব্যস্ত, বিশেষ করে রাজধানী দিল্লিতে স্বাধীনতা লাভের (১৫ ই আগস্ট) দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখতে আয়োজিত হয়েছে অভূতপূর্ব রাজকীয় সমারোহের - যার শুভ সূচনা হয়েছে, ১৪ ই আগস্টের মধ্যরাতে; ১৫ তারিখ পদার্পণ করতেই দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর ঐতিহাসিক বক্তৃতা দিয়ে শুভারম্ভ হয়েছে স্বাধীনতা দিবস পালনের মহা নির্ঘণ্ট। এই উচ্ছ্বাস যদিও কাঙ্ক্ষিতই ছিল। কারণ দীর্ঘ ২০০ বছরের পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরেই দেশবাসীর কাছে এসে পৌঁছেছিল সে বিরল মাহেন্দ্রক্ষণ। সমাগত হয়েছিল সেই মহা মুহূর্ত যখন প্রায় শত বর্ষ ধরে চলা স্বাধীনতাকামী মহাযজ্ঞে মুক্তিলাভের সিদ্ধি স্পর্শ করছিল তার চূড়ান্ত শিখর দেশ। কিন্তু এই যজ...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...