সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মিশন মঙ্গলঃ কল্পবিজ্ঞানের ভরা বাজার!

 ১৬১০ সালেই গ্যালিলিও তাঁর দূরবীনে চোখ রেখে বৃহস্পতি গ্রহের চারটি উপগ্রহকে দেখতে পান। আর তার পরেই শুরু হয় চর্চা - বৃহস্পতির চারটে উপগ্রহ থাকলে মঙ্গলের উপগ্রহ সংখ্যা কটি? একটি না দুটি? কারণ পৃথিবীর একটি উপগ্রহ থাকার কথা তখন জানা হয়ে গেছে। এই নিয়ে জ্যোতির্বিজ্ঞান অথবা অনুমান নির্ভর (কল্পনা!) জ্যোতির্বিজ্ঞান যাই বলি না কেন, যাবতীয় লেখালেখি আবর্তিত হতে থাকে মঙ্গলের উপগ্রহ  সংখ্যাকে ঘিরেই এর মধ্যে ১৬৫৫ সালে শনি গ্রহের একটি উপগ্রহ – টাইটান আবিষ্কৃত হয় এবং এর ৩০ বছর পরে বাকি আরও চারটে উপগ্রহ ধরা পড়ে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের চোখে। কিন্তু মঙ্গল কে নিয়ে তখনও রহস্য থেকে যায় অধরাই।  ১৭২৬ এ জনাথন সুইফট ‘গুলিভার’স ট্রাভেল’ নামক একটি বই লেখেন যেখানে তিনি দাবী করেন লাপুটার অধিবাসীদের দ্বারা মঙ্গলের দুটি উপগ্রহ আবিষ্কৃত হওয়ার কথা। পরে  সত্যি সত্যিই  মঙ্গলের দুটি উপগ্রহ -  ফোবস এবং ডেইমোস এর কথা প্রমানিত হয় বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণে।  কিন্তু  ১৭৪৪ এ জার্মান জ্যোতির্বিদ ক্রিশ্চিয়ান কিন্দারম্যান মঙ্গলের দুটি উপগ্রহ থাকার কথা নস্যাৎ করে একটি বই লেখেন, সেখানে তিনি মঙ্গলের একটির বেশি উপগ্রহ থাকার কথা অস্বীকার করেন। এবং তার এই দাবীকে প্রামান্যতার দিক থেকে আরও শক্ত পোক্ত ভিতের উপর প্রতিষ্ঠিত করতে লেখেন একটি গল্প – ‘দা স্পিডি জার্নি’, রূপকথার আদলে লেখা এই গল্পটিই ছিল মঙ্গল কে নিয়ে লেখা প্রথম কল্পবিজ্ঞানের গল্প। রোমহর্ষক এই গল্পের কাহিনী আবর্তিত হতে থাকে পাঁচ বন্ধুর মঙ্গল অভিযান কে কেন্দ্র করে। সবথেকে আকর্ষণীয়, কিন্দারম্যান এই পাঁচ বন্ধুর নাম রাখেন মানুষের শরীরের পাঁচ ইন্দ্রিয়ের নামে।

১৭০০ সালের প্রথমার্ধের পরে আবার বিভিন্ন লেখায় মঙ্গল কে স্বর্গীয় আবাস স্থল হিসেবে তুলে ধরার চল শুরু হয়। যেমন ১৭৫৫ তে প্রকাশিত ‘A voyage to the World in the Centre of the Earth’ এ বলা হয় গ্রিক সম্রাট আলেকজান্ডার তাঁর মৃত্যু পরবর্তী জীবন কাটাচ্ছেন মঙ্গল গ্রহে। এর তিন বছর পরে অর্থাৎ ১৭৫৮ সালে প্রকাশিত এমানুয়েল সুইডেনবর্গ এর লেখা ‘Concerning the Earth in Our Solar System’ এ আরও এক ধাপ এগিয়ে মঙ্গল কে সৎ ও উচ্চ নৈতিক গুন সম্পন্ন লোকেদের বাসস্থান বলে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু মঙ্গলকে নিয়ে তখনও কল্পবিজ্ঞানের এতটা রমরমা ছিল না; যেটা শুরু হয় ১৮০০ সালের শেষের দিক থেকে। কারণটা আর কিছু নয় - পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদে যে কোনো জীবনের অস্তিত্ব নেই, সেটা প্রশ্নাতীত ভাবে প্রমানিত হয়ে যাওয়া। যার ফলে, রাতারাতি চাঁদের পরিবর্তে সমস্ত কল্পবিজ্ঞানের সুচীমুখ হয়ে যায় মঙ্গল গ্রহ। এবং যথারীতি মঙ্গল কে নিয়ে কল্পবিজ্ঞানের আসর এক লাফে ভাঙা হাটের শূন্যতা থেকে ভরা বাজারের ব্যস্ততায় ভরা মধ্যাহ্নের শহরে পরিনত হয়ে যায়যাকে পরিভাষায় ইউটোপিয়ান ফিকশন এর যুগ বলে চিহ্নিত করা হয়। এরই ফলশ্রুতি, ১৮৮০ সালে প্রকাশিত হয় প্রেসী গ্রেগের লেখা উপন্যাস ‘Across the Zodiac’, যে উপন্যাসকে এই ধারার সর্বপ্রথম কল্পবিজ্ঞানের কাহিনী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়  এই সময়ে পেরসিভ্যাল লোয়েলস, তাঁর লেখা কল্পকাহিনীতে সেই সময়কার একটি প্রচলিত বিশ্বাস কে মান্যতা দিয়ে মঙ্গলে একটি ক্যানেল বা খাল থাকার কথা শুধু লেখেন তাই নয়, সেই খাল খননের কৃতিত্ব দেন লাল গ্রহে একদা পত্তন হওয়া সেই সভ্যতার অধিবাসীদের।  এই পর্বে ইউটোপিয়ান কল্প কাহিনীর চরম উৎকর্ষ দেখা যায় ১৮৮৭ সালে প্রকাশিত উইলিয়াম জেমস রো এর ‘Bellona’s Husband A Romance’ উপন্যাসে। যেখানে মঙ্গলের বুকে একটি সভ্যতার কথা বলা হয় যার অধিবাসীদের বয়স বাড়ার পরিবর্তে কমে যায়।

১৮৯০ এ রবার্ট ক্রোমি তাঁর ‘A Plunge into Space’ উপন্যাসে আবার এমন মাঙ্গলিক সভ্যতার কথা বলেন যা সময়ের থেকে অনেকটাই এগিয়ে। এতটাই এগিয়ে যে সেখানকার অধিবাসিদের মধ্যে আর কোনো জীবনাকাঙ্ক্ষা পূরণ হতে বাকি থাকে না।  তাই পুরো সভ্যতাই হয়ে পড়ে বেজান।

কিন্তু কল্পবিজ্ঞানের বাজারে যিনি প্রকৃত অর্থেই বিস্ফোরণ ঘটালেন, তিনি প্রখ্যাত ব্রিটিশ লেখক এইচ জি ওয়েলস।  ১৮৯৭ সালে প্রকাশিত তাঁর লেখা ‘The War of the Worlds’  এর হাত ধরেই সর্বপ্রথম মঙ্গল থেকে আসা এলিয়েনদেরর সঙ্গে পরিচয় ঘটে পৃথিবীবাসীর। এবং এই ধরনের এলিয়েন নির্ভর কল্প বিজ্ঞানের কাহিনী তারপরে প্রচুর লেখা হতে থাকে যা কমবেশি ১৯০০ সালের প্রথমার্ধ অবধি চলে।  এই ধারায় কোনো না কোনো ভাবে তুলে ধরা হত মঙ্গলে থাকা জীবনের অস্তিত্বের কথা। উল্লেখযোগ্য ভাবে এই ধারায় ছাপ রেখে যাওয়া বেশির ভাগ লেখকই ছিলেন আমেরিকান।  যাদের মধ্যে, Edger Rice Burroughs (Barsoom) এবং  Stanley G. Weinbaum (A Martian Odyssey) অন্যতম  
এই ভাবে বিংশ শতাব্দীর প্রথম পাঁচটা দশক যদি দেখা যায়,  বেশির ভাগ কল্পবিজ্ঞানের কাহিনী গুলোই তখন লেখা হচ্ছিলো Life on Mars এই থিমের উপর ভিত্তি করে ।   পরের পাঁচ দশকে কিন্তু এই থিম সম্পূর্ণ রূপে অচল হয়ে যেতে দেখা যায়। কারণ ততদিনে, মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার তত্ত্ব বিজ্ঞান সম্পূর্ণ ভাবে খারিজ করে দিয়েছিল। যার ফলে পুরনো থিমের উপর ভরসা করে Ray Bradbury ‘র লেখা সাইন্স ফিকশন ‘The Martian Chronicles’  সাফল্যের মুখ দেখা থেকে বিরত থাকে।  এর পরে যদিও, আর কেউ এই ধরনের কাহিনী লেখার সাহস দেখাননি। শুরু হয় নতুন ধারার খোঁজ।। তবে থামানো যায় নি কল্প বিজ্ঞানের বিজয় রথ কে। অদম্য কল্পবিজ্ঞানের কাহিনীকাররা,  মঙ্গলে প্রাণ নেই এ কথা মেনে নিয়েই মঙ্গলের বুকে পৃথিবীর নয়া উপনিবেশ গড়ে তোলার গল্প লেখার দিকে ঝোঁকেন। প্রবর্তিত হয় নতুন ধারার। যে ধারায় মূল ফোকাস গিয়ে পড়ে পৃথিবীর বাসিন্দাদের মঙ্গল জয়ের অভিলাষ এবং সেই লক্ষে তাদের মঙ্গল গ্রহের উদ্দেশ্যে করা অভিযানের উপরে
এই ধারাই সর্বশেষ, যাকে পরিভাষায় Colonizing Mars বলা হয়।  এই ধারায় Kim Stanley Robinson এর লেখা ‘Mars Trilogy’ ভীষণ সফল একটি কল্পবিজ্ঞানের কাহিনী। এই পর্বের কাহিনীগুলিতে প্রায়শই মঙ্গল অভিযাত্রীদের নানারকম প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে দেখা যায় বিশেষ করে মঙ্গলের বিরূপ আবহাওয়ার কারণে। ১৯৫১ য় লেখা আর্থার সি ক্লার্ক এর ‘The Sands of Mars’ অথবা ১৯৬৬ তে ফিলিপ কে ডিকের গল্প ‘We Can Remember it for You Wholesale’ প্রত্যেকটিতেই দেখা যায় মঙ্গলে উপনিবেশ স্থাপন করতে গিয়ে অভিযাত্রীদের লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম এর সাহায্য নিতে হচ্ছে।  এডউইন চার্লস টাব, ১৯৫৫ য় লেখেন ‘এলিয়েন ডাস্ট’ নামক উপন্যাস যেখানে উপনিবেশকারীদের এক অভিনব সমস্যার মুখোমুখি হতে দেখা যায়। মঙ্গলের হাওয়ায় থাকা ধুলো হল সেই সমস্যার মূল কারণ। যে ধুলোর কারণে, মঙ্গলের মাটি ছেড়ে পৃথিবীতে ফিরে আসা অভিযাত্রীরা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছে না। আবার ১৯৫২ য়  আমেরিকান লেখক তথা জৈবরসায়ন বিদ্যার অধ্যাপক আইজ্যাক আসিমভ তাঁর ছোট গল্প ‘The Martian Way’ তে  অন্যরকম আশার কথা লেখেন।  গল্পে দেখা যায় মঙ্গলের মাটিতে উপনিবেশ বসাতে যাওয়া অভিযাত্রীরা শনি গ্রহের কক্ষপথ খুঁড়ে জল আনার ব্যবস্থা করছেন। যার ফলে পৃথিবী থেকে আর জল নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হচ্ছে না।
সবথেকে চিত্তাকর্ষক যে উপন্যাস টি জন ব্রুনার লেখেন ১৯৬৭ তে, তাতে দেখা যায় মঙ্গলের মাটিতে কারাগার বানানো হয়েছে পৃথিবী থেকে রাজনৈতিক বিদ্রোহী ও সামাজিক অপরাধীদের বন্দী করে রাখতে। মঙ্গলের মাটিতে জেলখানার উপনিবেশ গড়ার এই কাহিনী লেখা হয় ‘
Born under Mars’ উপন্যাসে।  আমেরিকান লেখক  গ্যারি ওয়েস্টফল এর মতে সারা পৃথিবীতে পাঁচ হাজারেরও বেশী সাইন্স ফিকশন লেখা হয়েছে মঙ্গলের ওপর। কল্পবিজ্ঞান লেখার দৌড়ে পিছিয়ে নেই ভারতীয়রাও। যাদের মধ্যে সমিত বসু (Chosen Spirit), বন্দনা সিং (The Woman Who Thought She Was A Planet) , গৌতম ভাটিয়া (The Wall) অন্যতম।
মঙ্গল অভিযান নিয়ে হলিউডে তৈরি হয়েছে একাধিক ছবি।  ২০১৯ শে মুক্তি পাওয়া বলিউডি ছবি ‘মিশন মঙ্গল’ ছিল ভারতের সফল মঙ্গল অভিযানের (২০১৪) ওপর আধারিত। সম্প্রতি পদ্মশ্রী পুরষ্কারে ভূষিত, প্রখ্যাত মহাকাশ বিজ্ঞানী ডক্টর এম আন্নাদুরাই মন্তব্য করেছেন ভারতের প্রথম মঙ্গল অভিযানের খরচ কোনো সাইন্স ফিকশন নির্ভর হলিউড মুভির থেকেও কম ছিল।
ডক্টর আন্নাদুরাইয়ের এই মন্তব্য ভীষণই তাৎপর্যপূর্ণ বিশেষ করে যখন ভারতবর্ষের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো, সম্প্রতি মঙ্গলের লাল মাটি ছোঁয়ার স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার কথা ঘোষণা করেছে। 

প্রথম পর্বঃ

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট, কোথায় ছিলেন গান্ধীজী?

১৫০/বি বেলেঘাটা মেন রোড। শিয়ালদহ স্টেশন ও ই-এম বাইপাস এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন কারী মূল রাস্তা - বেলেঘাটা মেন রোড তথা সুরেশ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় রোডের ওপর পড়া এই বিশেষ ঠিকানা টি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে এক গৌরবময় স্মৃতির সাক্ষ্য বহন করছে । বিশেষ করে, প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময় আসন্ন হলে, এই ঠিকানার কথা স্মরণ না করে থাকা যা য় না। কারণ ১৯৪৭ এ গোটা দেশ যখন স্বাধীনতার আনন্দ উদযাপনে ব্যস্ত, বিশেষ করে রাজধানী দিল্লিতে স্বাধীনতা লাভের (১৫ ই আগস্ট) দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখতে আয়োজিত হয়েছে অভূতপূর্ব রাজকীয় সমারোহের - যার শুভ সূচনা হয়েছে, ১৪ ই আগস্টের মধ্যরাতে; ১৫ তারিখ পদার্পণ করতেই দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর ঐতিহাসিক বক্তৃতা দিয়ে শুভারম্ভ হয়েছে স্বাধীনতা দিবস পালনের মহা নির্ঘণ্ট। এই উচ্ছ্বাস যদিও কাঙ্ক্ষিতই ছিল। কারণ দীর্ঘ ২০০ বছরের পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরেই দেশবাসীর কাছে এসে পৌঁছেছিল সে বিরল মাহেন্দ্রক্ষণ। সমাগত হয়েছিল সেই মহা মুহূর্ত যখন প্রায় শত বর্ষ ধরে চলা স্বাধীনতাকামী মহাযজ্ঞে মুক্তিলাভের সিদ্ধি স্পর্শ করছিল তার চূড়ান্ত শিখর দেশ। কিন্তু এই যজ...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...