ধরা যাক প্রেরণা নামের একটি মেয়ে সে সৃজন বলে একটি ছেলেকে ভালোবাসে। সৃজণের কাছে প্রেরণা যদি হয় তার যাবতীয় সৃষ্টির উদ্দীপনা তবে প্রেরণার কাছে সৃজণ ও তার উদ্দীপনার অহংকার। ব্যাপারটা আরো একটু খোলসা করে বললে সৃজণ আর প্রেরণার সঙ্গে যথাক্রমে ফুল আর তার শোভার সঙ্গে তুলনা করলে চলে। যে ফুলের সৌন্দর্য দেখে আমরা বিমোহিত হই, সেই শোভা আসলে গাছের অনুপ্রেরণা যা তাকে ফুল ফোটানোর প্রণোদনা দেয়।
সৃজণ যদি মূর্ত হয়, প্রেরণা তবে তার নেপথ্যে থাকা বিমূর্ত ভাবনা।
সৃজণ যদি সৌন্দর্য হয়, তবে প্রেরণা সেই সৌন্দর্যের চেতনা।
এই প্রেরণারা আবার এই পার্থিব জগতের ই যত ভালোলাগা - খারাপ লাগা, সুখ- দুঃখ, প্রেম - ঘৃনা, প্রাপ্তি - বঞ্চনা, আশা - হতাশা, প্রশংসা - নিন্দার হাত ধরে সৃজণের সামনে এসে উপস্থিত হয়। গভীর ঈশারায় কখনো তাকে আকৃষ্ট করে চাঁদের পানে উছলে ওঠা জোয়ারের মতো, কখনো বা গভীর খোঁচায় করে আহত, গোপন গোপনে ঝরায় রক্ত। সৃজণই বা চুপ করে থাকে কি করে। সে তার সমস্ত শক্তি দিয়ে এর জবাব দেয়। তাই কখনো সে তুলে নেয় কলম, কখনো রং বা তুলি। প্রেরণার পরাগ নিয়ে কখনো সে ফোটায় ফুল, কখনো প্রেরণার কালি নিয়ে রচনা করে অপূর্ব এক আঁধার ব্যুহ।
কিন্ত একদিন এক ভোরবেলায় সৃজণ ঘুম ভেঙে আবিষ্কার করে, তার মনের রান্না ঘরে এক অদ্ভুত ইমিউনিটি তৈরি হয়েছে। সেটা সে টের ও পায়নি আগে। হতবাক হয়ে সে দেখে -অনুভূতির পাঁচফোড়ন গুলো আর তার প্রেরণার লাল গালে টোল ফেলতে পারছে না বা অন্যায় ভাবে করা অপমান গুলো যেগুলোকে সে এতদিন পোষা বিড়ালের মতো দুধ মাছ খাইয়ে জাগিয়ে রাখতে চেয়েছে তারাও তাকে যথার্থ ভাবে তাতিয়ে তুলতে পারছে না।
একেই বুঝি সৃজণের অবসাদ বলে।
আজ সারা পৃথিবী বুঝি এক ধরণের সৃজণের অবসাদে, আড়ষ্ট! অর্থহীন মৌনব্রত নিয়ে এগিয়ে চলেছে কপট উদাসীনতার ভেক ধরে। যা হচ্ছে সবই কীর্তনের দুয়ো না হয় মিছিলের শ্লোগান কপচানো। সৃজণের প্রেরণারা আজ নির্বাসিত কোন ঠাকুরের ঘরে না বন্দনার বৃন্দ গানে কে জানে
কাটুক সৃজণের এই অবসাদ, সে প্রেরণার ফুলের ঘায়ে হোক কি প্রেরণার কশাঘাতে।।
প্রেরণারা আবারো তার লাস্যে, লাবন্যে কিংবা অভিঘাতে ভরিয়ে তুলুক সৃজণের আসর। বড় দরকার, এই সময়ে।
অপেক্ষায় আছি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন