সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সৃজনের অবসাদ নিয়ে দুচার কথা!

 ধরা যাক প্রেরণা নামের একটি মেয়ে সে সৃজন বলে একটি ছেলেকে ভালোবাসে। সৃজণের কাছে প্রেরণা যদি হয় তার যাবতীয় সৃষ্টির উদ্দীপনা তবে প্রেরণার কাছে সৃজণ ও তার উদ্দীপনার অহংকার। ব্যাপারটা আরো একটু খোলসা করে বললে সৃজণ আর প্রেরণার সঙ্গে যথাক্রমে ফুল আর তার শোভার সঙ্গে তুলনা করলে চলে। যে ফুলের সৌন্দর্য দেখে আমরা বিমোহিত হই, সেই শোভা আসলে গাছের অনুপ্রেরণা যা তাকে ফুল ফোটানোর প্রণোদনা দেয়।

সৃজণ যদি মূর্ত হয়, প্রেরণা তবে তার নেপথ্যে থাকা বিমূর্ত ভাবনা।
সৃজণ যদি সৌন্দর্য হয়, তবে প্রেরণা সেই সৌন্দর্যের চেতনা।

এই প্রেরণারা আবার এই পার্থিব জগতের ই যত ভালোলাগা - খারাপ লাগা, সুখ- দুঃখ, প্রেম - ঘৃনা, প্রাপ্তি - বঞ্চনা, আশা - হতাশা, প্রশংসা - নিন্দার হাত ধরে সৃজণের সামনে এসে উপস্থিত হয়‌। গভীর ঈশারায় কখনো তাকে আকৃষ্ট করে চাঁদের পানে উছলে ওঠা জোয়ারের মতো, কখনো বা গভীর খোঁচায় করে আহত, গোপন গোপনে ঝরায় রক্ত। সৃজণই বা চুপ করে থাকে কি করে। সে তার সমস্ত শক্তি দিয়ে এর জবাব দেয়। তাই কখনো সে তুলে নেয় কলম, কখনো রং বা তুলি। প্রেরণার পরাগ নিয়ে কখনো সে ফোটায় ফুল, কখনো প্রেরণার কালি নিয়ে রচনা করে অপূর্ব এক আঁধার ব্যুহ।
কিন্ত একদিন এক ভোরবেলায় সৃজণ ঘুম ভেঙে আবিষ্কার করে, তার মনের রান্না ঘরে এক অদ্ভুত ইমিউনিটি তৈরি হয়েছে। সেটা সে টের ও পায়নি আগে। হতবাক হয়ে সে দেখে -অনুভূতির পাঁচফোড়ন গুলো আর তার প্রেরণার লাল গালে টোল ফেলতে পারছে না বা অন্যায় ভাবে করা অপমান গুলো যেগুলোকে সে এতদিন পোষা বিড়ালের মতো দুধ মাছ খাইয়ে জাগিয়ে রাখতে চেয়েছে তারাও তাকে যথার্থ ভাবে তাতিয়ে তুলতে পারছে না‌।
একেই বুঝি সৃজণের অবসাদ বলে।
আজ সারা পৃথিবী বুঝি এক ধরণের সৃজণের অবসাদে, আড়ষ্ট! অর্থহীন মৌনব্রত নিয়ে এগিয়ে চলেছে কপট উদাসীনতার ভেক ধরে। যা হচ্ছে সবই কীর্তনের দুয়ো না হয় মিছিলের শ্লোগান কপচানো। সৃজণের প্রেরণারা আজ নির্বাসিত কোন ঠাকুরের ঘরে না বন্দনার বৃন্দ গানে কে জানে ‌
কাটুক সৃজণের এই অবসাদ, সে প্রেরণার ফুলের ঘায়ে হোক কি প্রেরণার কশাঘাতে।।
প্রেরণারা আবারো তার লাস্যে, লাবন্যে কিংবা অভিঘাতে ভরিয়ে তুলুক সৃজণের আসর। বড় দরকার, এই সময়ে।
অপেক্ষায় আছি।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...

জনগণমনঃ জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার ইতিহাস ও কিছু প্রশ্নের উত্তর!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ব্রহ্ম সঙ্গীত ‘ জনগণমন অধিনায়ক’ কে দেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে মান্যতা দেওয়ার সর্ব সম্মীলিত সিদ্ধান্ত হয় ১৯৫০ সালের ২৪ শে জানুয়ারি । কিন্তু কেন এত দেরী? দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও কেন তিন বছর সময় লেগেছিল জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন করতে? ‘ভারত বিধাতা’ শিরোনামে লেখা, স্বদেশ পর্যায় ভুক্ত (গীতবিতান অনুসারে) এই রবীন্দ্রগীতিটি কিভাবে -  দেশের জাতীয় সঙ্গীত হওয়ার পথে একটু একটু করে এগিয়ে গেল! ‘জনগনমন’র জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার নেপথ্য কাহিনীই আজ আমরা ফিরে দেখবো এই প্রবন্ধে।  ১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট - দীর্ঘ ২০০ বছর ধরে পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরে অবশেষে দেশবাসীর ভাগ্যাকাশে এসে উপস্থিত হোল বহু আকাঙ্খিত সেই দিনটি। উদিত হোল স্বাধীনতার নতুন সূর্যের।   স্বাধীন হোল দেশ। কিন্তু সদ্য ব্রিটিশ অধীনতা মুক্ত দুটি দেশ ভারত এবং পাকিস্থান তখনও পায় নি স্বতন্ত্র সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা। ১৯৪৭ এর ১৮ই জুলাই তারিখে লাগু হওয়া ভারতীয় স্বাধীনতা আইন অনুসারে নিজ নিজ সংবিধান প্রণয়নের আগে পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্থান এই দুটি ভূখণ্ড কমনওয়েলথ দেশের অধীনস্থ দুটি অধিরাজ্য হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে পারা...