সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মিশন মঙ্গলঃ সূচনা লগ্নে প্লেগের দেবতা!

লক্ষ, মঙ্গল। আর এই লক্ষে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ, বিভিন্ন সময়ে পাড়ি জমিয়েছে মঙ্গলের পথে। কিন্তু ভারতবর্ষই একমাত্র দেশ যে কিনা সাফল্যের মুখ দেখেছে তার প্রথম প্রয়াসেই। বাকি দেশ গুলি যাদের মধ্যে পূর্বতন সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে শুরু করে জাপান, চিন মায় আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত সকলেই কিন্তু সাফল্য পেয়েছে বেশ কয়েক বার চেষ্টা করার পরে। কিন্তু সে সাফল্য - ব্যর্থতার কথায় একটু পরে আসছি। তার আগে জেনে নেওয়া যাক ভারতবর্ষের লাল গ্রহ অভিযানের শুভ সূচনা হয় কবে।

তারিখটা ছিল ৫ই নভেম্বর, ২০১৩ সাল। লক্ষ ছিল মঙ্গলের কক্ষ পথে অবতরণ করা।  কিন্তু তার জন্য সময় লাগে প্রায় এক বছর। ২০১৪ সালের ২৪ শে সেপ্টেম্বর ছিল সেই দিন, যে দিন মার্স অরবিটে সফল ভাবে অবতরণ করে ভারতীয় মঙ্গলযান Polar Satellite Launch Vehicle – XL, সংক্ষেপে PSLV – XL.  ২০২২ সালের ২৭ শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, PSLV –XL এর সঙ্গে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো’র যোগাযোগ ছিল অটুট।
সম্প্রতি চাঁদের বুকে সফল অবতরণ করেছে ভারতীয় চন্দ্র যান – ৩. ২০২৩ এর ২৩ শে আগস্ট, চাঁদের মাটি ছোঁয় ল্যান্ডার বিক্রম এবং তার অব্যবহিত পরে রোভার প্রজ্ঞান। ইতিমধ্যে ২০২১ - এর এপ্রিল মাসে, মঙ্গলের বুকে প্রথম উড়ান পাঠিয়ে চমক লাগিয়ে দিয়েছে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা, নাসা। মঙ্গলের মাটি ছোঁয়ার প্রথম কৃতিত্বও যদিও নাসার দখলেই রয়েছে। সেটা সেই ১৯৭৬ সালের কথা। তারিখটা ছিল ২০ শে জুলাই, যেদিন নাসার পাঠানো মঙ্গল যান
Titan IIIE থেকে সফল ভাবে মঙ্গলের মাটিতে পা রাখে আমেরিকান ল্যান্ডার Viking - 1। তৈরি হয় ইতিহাস। নাসার পরে, মঙ্গলের মাটি ছোঁয়ার গৌরবোজ্জ্বল কৃতিত্ব স্থাপন করেছে একে একে জাপান এবং তারপরে চিন। কিন্তু আজও সে তালিকায় ভারতের নাম নেই। সম্প্রতি চন্দ্রাভিযানে অভাবিত সাফল্যের পরে ইসরো ঘোষণা করেছে তাদের পরবর্তী মঙ্গল মিশনের কথা। সংবাদ সূত্রে প্রকাশ, মঙ্গল গ্রহের লাল মাটি ছুঁতে শীঘ্রই ইসরো সেখানে পাঠাতে চায় অত্যাধুনিক রোভার এবং ড্রোন। বিশেষ করে ড্রোন পাঠানোর ক্ষেত্রে ভারতই হবে বিশ্বের সর্বপ্রথম দেশ। 
কিন্তু যে মঙ্গল অভিযানের জন্য এত উদ্যোগ সারা বিশ্ব জুড়ে; এত জিঘাংসা সাধারন মানুষ থেকে বিজ্ঞানীদের মনে এবং যার উত্তর খুঁজতে, উদয়াস্ত এত পরিশ্রম করে চলেছেন সারা পৃথিবীর তাবড় তাবড় জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা, এর শুরুটা ঠিক কবে থেকে হয়েছিলো? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজবো আমরা দুটো পর্বে।

প্রথম পর্ব
মিশন মঙ্গল ঃ সূচনা লগ্নে প্লেগের দেবতা!

চুনী পাথরের মত লাল ঝলমলে নক্ষত্র বিন্দু কে আকাশের গায়ে অবলোকন করে ইতালীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলেই, যারপরনাই অবাক হয়ে গিয়েছিলেন খালি চোখে দেখার মুগ্ধতা তাঁকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল আরও কাছ থেকে নক্ষত্র বিন্দুটিকে দেখার জন্য।। তখনই তাঁর মনের মধ্যে একটা গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল, এটাই কি সেই নক্ষত্র যাকে প্রাচীন সুমেরীয়রা যুদ্ধ ও প্লেগের দেবতা - নিরগাল বলে মানে? প্রবল অনুসন্ধিৎসা গ্যালিলিওকে ক্রমশই অস্থির করে তুলেছিল। তিনি বেশ বুঝতে পারছিলেন এমন কিছু তাঁকে তৈরি করতে হবে যেটা তাঁর কৌতূহল মেটাতে পারে।  সে ১৬০৯ সালের কথা। হঠাৎ একদিন এক চশমা বিক্রেতার কাছে, চশমায় ব্যবহৃত লেন্সের মাধ্যমে দূরের জিনিসকে বিবর্ধিত বা বড় করে দেখা যেতে পারার ধারনা পেয়ে সত্যিই তিনি ইউরেকা বলে চেঁচিয়ে উঠেছিলেন কিনা তার কোনো প্রমান আজ আর নেই ঠিকই, কিন্তু সেই ধারনা থেকেই যে তিনি আস্ত একটা দূরবীক্ষণ যন্ত্র বানিয়ে ফেলেছিলেন, এ কথা বিলক্ষণ সত্যযদিও, তার একবছর আগে অর্থাৎ ১৬০৮ সালেই প্রথম দূরবীক্ষণ যন্ত্রটি তৈরি করে ফেলেছিলেন হ্যান্স লিপারসে নামে আর এক জন। গ্যালিলিও অবশ্য দুরবীন টি বানিয়েছিলেন তাঁর মতন করে। সেই শুরু আকাশের গায়ে জ্বলজ্বল করা লাল তারকাটিকে জ্যোতির্বিজ্ঞানীর দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করার। সেই পর্যবেক্ষণের ফলশ্রুতি হিসেবেই একদিন তার লাল চকচকে গা থেকে খুলে পড়ে দৈব মহিমার লেবেল। পরবর্তী কালে, খুলে পড়ে তার তারকা সত্তাও। থেকে যায় শুধু একটা পরিচয়। গ্রহ। লাল গ্রহ। সৌরজগতের চতুর্থ গ্রহ হিসেবে, যার অবস্থিতি সূর্য থেকে বুধ, শুক্র ও পৃথিবীর পরেই। পৃথিবীর অর্ধেক ব্যাসার্ধ বিশিষ্ট এই গ্রহটির নামকরণে যদিও থেকে যায় রোমানদের যুদ্ধের দেবতা, মার্স এর নাম। ভারতীয় উপমহাদেশে যাকে মঙ্গল বলে অভিহিত করা হয়। ভারতীয় জ্যোতিষশাস্ত্রে মঙ্গল গ্রহকে যোদ্ধা গ্রহ হিসেবেই মানা হয়। আর কে না জানে, যুদ্ধের সঙ্গে অবশ্যম্ভাবী ভাবে মিশে থাকে হানাহানি এবং তার থেকে রক্ত পাতের সম্ভাবনা। সেই কারনেই কি এই গ্রহের ভূপৃষ্ঠে ছড়িয়ে থাকে চাপ চাপ লাল রং? সত্যিই রং নিয়ে যেন পুরান আর বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের মধ্যে কোনো বিরোধ থাকে নাএক সুতোয় এসে মিশে যায় বিপরীত দুটি ধারা যদিও রক্তকেই এর লাল রঙের কারণ বলতে নারাজ বিজ্ঞান। তাদের মতে এই গ্রহের লাল রঙের কারণ রক্ত নয়, এক ধরনের আগ্নেয়গিরিজাত শিলা যাকে ব্যাসল্ট শিলা বলা হয়। আগ্নেয়গিরি থেকে ক্ষরিত লাভা যার মধ্যে ম্যাগনেসিয়াম এবং লোহা থাকে প্রচুর পরিমানে, ক্রমশ তাপ বিকিরনের মাধ্যমে শীতল হতে হতে তার অর্ধ-শক্ত ভৌত অবস্থা রূপান্তরিত হয় কঠিন শিলায়, যাকে ভূতাত্ত্বিকদের ভাষায় ব্যাসল্ট শিলা বলা হয়। আর এই ব্যাসল্ট শিলায় ঢাকা মাঙ্গলিক ভূপৃষ্ঠের উপরে ছড়িয়ে থাকে ফেরিক অক্সাইডের পুরু ধুলোর স্তর। যে ফেরিক অক্সাইডের কারণে লোহার গায়ে মরিচা পড়তে দেখা যায়। আর সেই একই কারণে পৃথিবী থেকে মঙ্গল গ্রহ কে দেখা যায় লাল বর্ণের।


০০৫ সালে নাসা প্রেরিত রোভার স্পিরিটের তোলা সূর্যাস্তের ছবি, মঙ্গল পৃষ্ঠ থেকে। 

মঙ্গল কি তার এই লাল রঙের কারণেই পৃথিবী বাসীর কাছে বারবার আগ্রহের কেন্দ্রে চলে এসেছে? নাকি মঙ্গল পৃথিবীর প্রতিবেশী গ্রহ হওয়ার কারণেই এই আগ্রহের আতিশয্য। বারবার দেখা গেছে কল্পবিজ্ঞানের গল্পকার থেকে বিজ্ঞানী সবাই পৌঁছতে চান মঙ্গলের মাটিতে। সেখানে প্রানের অস্তিত্ব নিয়ে তৈরি হয় নানা রূপকথা। কিন্তু প্রাণ থাকতে গেলে তো জল চাই! আর কে না জানে মঙ্গলের পাথুরে চরিত্রের কথা? আর এটাই তো স্বাভাবিক, সূর্য থেকে অপেক্ষাকৃত দূরের অবস্থানে থাকার কারণে সেখানকার ভূপৃষ্ঠে জলের অস্তিত্ব থাকাটা প্রায় অসম্ভব। যদিও ২০১৫ সালে আমেরিকান মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা, তাদের ওয়েবসাইটে মঙ্গল গ্রহে জল-প্রবাহ থাকার কথা বেশ জোরের সঙ্গে ঘোষণা করে দেয় তবে কি আমাদের প্রতিবেশী গ্রহে রয়েছে প্রাণের স্পন্দন? এই জিজ্ঞাসার উত্তর খোঁজার বৈজ্ঞানিক প্রয়াস প্রথম নেওয়া হয় সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষ থেকে। ১৯৬০ সালের ১০ ই অক্টোবর শুরু হয় সেই অভিযান। কিন্তু শুরুর দিনেই মুখ থুবড়ে পড়ে সোভিয়েতের প্রথম মঙ্গলাভিযানের প্রয়াস। তাতে অবশ্য তারা হতদ্যোম হয় না। ১৯৬০ সালেই দ্বিতীয় বারের জন্য আবার চেষ্টা করে এবং ব্যর্থ হয়। কিন্তু হাল না ছেড়ে ১৯৬২ সালে আবার চেষ্টা করে, সোভিয়েত ইউনিয়ন। এবং একবার নয়, পর পর তিন বার। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে প্রতিবারেই বিফল হয়। প্রথম সাফল্য অবশ্য আসে নাসার হাত ধরে। যদিও নাসার প্রথম প্রচেষ্টা সফল হয় নি। দ্বিতীয় প্রচেষ্টা, নাসার পক্ষ থেকে নেওয়া হয় ১৯৬৪ সালের ২৮ শে নভেম্বর। প্রায় আট মাস পরে ১৯৬৫ র ১৫ ই জুলাই তারিখে, নাসার ফ্লাইবাই অপারেশন সফলতার মুখ দেখে। ১৫ ই জুলাই তারিখটি তাই পৃথিবীর মঙ্গল অভিযানের ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল দিন হয়ে থাকবে, এ কথা বলাই বাহুল্য।  
কিন্তু আমরা জানি, বাস্তবের জেট গতিকেও যদি কেউ হারিয়ে দিতে পারে, তবে সে মানুষের কল্পনা।  তাহলে কি গত শতাব্দীর ষাটের দশকে শুরু হওয়া মঙ্গল অভিযানের সুদীর্ঘ ইতিহাস আসলে কল্পবিজ্ঞানের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই। এই প্রশ্নের উত্তর খুজতে গিয়ে দেখি মঙ্গল গ্রহ নিয়ে লেখালেখির সুত্রপাত হয় কমবেশি ১৬১০ সালের পর থেকে। 


দ্বিতীয় পর্ব – মিশন মঙ্গলঃ কল্পবিজ্ঞানের ভরা বাজার!  



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট, কোথায় ছিলেন গান্ধীজী?

১৫০/বি বেলেঘাটা মেন রোড। শিয়ালদহ স্টেশন ও ই-এম বাইপাস এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন কারী মূল রাস্তা - বেলেঘাটা মেন রোড তথা সুরেশ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় রোডের ওপর পড়া এই বিশেষ ঠিকানা টি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে এক গৌরবময় স্মৃতির সাক্ষ্য বহন করছে । বিশেষ করে, প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময় আসন্ন হলে, এই ঠিকানার কথা স্মরণ না করে থাকা যা য় না। কারণ ১৯৪৭ এ গোটা দেশ যখন স্বাধীনতার আনন্দ উদযাপনে ব্যস্ত, বিশেষ করে রাজধানী দিল্লিতে স্বাধীনতা লাভের (১৫ ই আগস্ট) দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখতে আয়োজিত হয়েছে অভূতপূর্ব রাজকীয় সমারোহের - যার শুভ সূচনা হয়েছে, ১৪ ই আগস্টের মধ্যরাতে; ১৫ তারিখ পদার্পণ করতেই দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর ঐতিহাসিক বক্তৃতা দিয়ে শুভারম্ভ হয়েছে স্বাধীনতা দিবস পালনের মহা নির্ঘণ্ট। এই উচ্ছ্বাস যদিও কাঙ্ক্ষিতই ছিল। কারণ দীর্ঘ ২০০ বছরের পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরেই দেশবাসীর কাছে এসে পৌঁছেছিল সে বিরল মাহেন্দ্রক্ষণ। সমাগত হয়েছিল সেই মহা মুহূর্ত যখন প্রায় শত বর্ষ ধরে চলা স্বাধীনতাকামী মহাযজ্ঞে মুক্তিলাভের সিদ্ধি স্পর্শ করছিল তার চূড়ান্ত শিখর দেশ। কিন্তু এই যজ...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...