সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

খরতাপে ছায়া যাপন!

অবাধ্য গরমে জীবন যখন ধূধূ, মরু-সমান তখন মরুদ্যানের সন্ধান তো থাকবেই। প্রচন্ড সূর্য স্বৈরাচারের দিকে তাকিয়ে ক্রমশ সরু হয়ে আসা আম মানুষের দুই চোখে তো ফুটে উঠবেই ছায়ার আকুল আকাঙ্খা। মরুদ্যান - তাও যে মরিচীকা। প্রখর মধ্যাহ্নে, ছায়ার ছ না থাকা পিচ ঢালা পথে যেমন সহৃদয় প্রকৃতি ছলনাই সই ছড়িয়ে দেয় ছলছল জলের জাদুবাস্তবতা এবং বারবার তার ব্যাকূল মায়ায় ফেলে মারীচ রূপী মায়া মৃগের মতো ধেয়ে চলে যায় দূরে আরও দূরে। অপূর্ণ থেকে যায় তাকে পরখ করে দেখার চির দুর্দমনীয় মনের অলীক ছায়া যাপনের নাছোড় কামনা।

গ্রীষ্মকাল হোল রবিকাল। আর রবিকালের রবি যে অপরাজেয় হয়ে থাকতে চাইবে, সেটাই স্বাভাবিক। ঘন কাঁঠাল পাতার কৃষ্ণকায় সবুজ ছায়ার মত মেঘের সামান্যতম উদয়াভাস ও যে তার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।
তাই তাপমাত্রা, দিনে দিনে মাত্রা ছাড়া। পূর্বের সকল রেকর্ড ডুবিয়ে আকাশের সূর্য যেন তার তাপ প্রবাহের অত্যচারী অগ্নি বলাকাকে উড়াবেই উষ্ণতার এভারেস্টে। কার কি করার আছে!
হয়তো বা আছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের পাঠ পড়ানো মাস্টার মশাইরা তাদের সিক্স প্যাক দেখিয়ে এবার তো বলবেনই দেখেছেন তো আগে থেকে সাবধান হতে বলেছিলাম। যথেচ্ছ বৃক্ষ নিধন বন্ধ করে যদি যথেচ্ছ বৃক্ষ রোপণ করার কথা ভাবা হত তাহলে আজ এই দশা হত না।
সত্যিই তো সেই সবুজ শ্যামল গাছের ছায়াই যে এক এবং একমাত্র অপাপবিদ্ধ স্থল এই রূঢ় রৌদ্রের সাম্রাজ্যে। তাপদগ্ধ মুলুকের একমাত্র আশ্রয়।
এই নিবন্ধের শিরোনাম কে স্মরণে রেখে কিছু কথা এবং তার সঙ্গে একান্তই কিছু ভালো লাগা ছায়া যাপনের ছবি তুলে ধরাই আমার মূল উদ্দেশ্য। আমি যদিও এগুলিকে রোদ পোহানোর ছবি বলতে চাই না। বরং রোদকে হারিয়ে দেওয়ার আনন্দে কিছু অমলিন বিজয় উল্লাসে ভরা উদ্যাপনের মুহূর্ত কে ধরতে পারা ছবির কোলাজ হিসেবে পেশ করতে চাই।
কোথাও রোদে রোদে ঘুরে কুলফি মালাই বেচা ছেলেটিকে মনে হয় ভয়ানক এই গরমাসুরকে দমন করার এক এবং একমাত্র মসিহা বলে, তো কোথাও জলকেলি করা শিশুর উল্লাস দেখে আশা জাগে এখনোও সব পুকুর বুজিয়ে ফেলা সম্ভব হয় নি বলে।
শুধু মানুষ নয় মনুষ্যেতর প্রাণী - কুকুর কি ভাবে অটো রিক্সার ছায়ায় শুয়ে বিন্দাস নিদ্রা দেয় তা দেখে মনে বেশ শান্তিই আসে যে কখনো কখনো ডাবের খোলায় ডেঙ্গু মশার লার্ভা যেমনি জন্মায় তেমনি শালিকের জল স্নান ও সম্পন্ন হয়।
দারুন এই উষ্ণ দিনে ছায়া যাপনের সুমধুর ভাবনা অমূলক নয় মোটেই। এখন প্রশ্ন, কিছু ছবি ও কিছু শব্দ দিয়ে আঁকা খরতাপে ছায়া যাপনের অভিলাষ কি পূর্ণ হোল?

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...

জনগণমনঃ জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার ইতিহাস ও কিছু প্রশ্নের উত্তর!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ব্রহ্ম সঙ্গীত ‘ জনগণমন অধিনায়ক’ কে দেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে মান্যতা দেওয়ার সর্ব সম্মীলিত সিদ্ধান্ত হয় ১৯৫০ সালের ২৪ শে জানুয়ারি । কিন্তু কেন এত দেরী? দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও কেন তিন বছর সময় লেগেছিল জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন করতে? ‘ভারত বিধাতা’ শিরোনামে লেখা, স্বদেশ পর্যায় ভুক্ত (গীতবিতান অনুসারে) এই রবীন্দ্রগীতিটি কিভাবে -  দেশের জাতীয় সঙ্গীত হওয়ার পথে একটু একটু করে এগিয়ে গেল! ‘জনগনমন’র জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার নেপথ্য কাহিনীই আজ আমরা ফিরে দেখবো এই প্রবন্ধে।  ১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট - দীর্ঘ ২০০ বছর ধরে পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরে অবশেষে দেশবাসীর ভাগ্যাকাশে এসে উপস্থিত হোল বহু আকাঙ্খিত সেই দিনটি। উদিত হোল স্বাধীনতার নতুন সূর্যের।   স্বাধীন হোল দেশ। কিন্তু সদ্য ব্রিটিশ অধীনতা মুক্ত দুটি দেশ ভারত এবং পাকিস্থান তখনও পায় নি স্বতন্ত্র সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা। ১৯৪৭ এর ১৮ই জুলাই তারিখে লাগু হওয়া ভারতীয় স্বাধীনতা আইন অনুসারে নিজ নিজ সংবিধান প্রণয়নের আগে পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্থান এই দুটি ভূখণ্ড কমনওয়েলথ দেশের অধীনস্থ দুটি অধিরাজ্য হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে পারা...