শ্রীজাত কবি। কবিতা তাঁর নিজের ভালোলাগার জগত। কবিতা তিনি লেখেন তাঁর ভেতরের
প্রণোদনা থেকে। এই প্রণোদনা আসে অন্ধকার
রুদ্ধ দশা থেকে মুক্তির আলোকরেখা হয়ে। তখন তাঁকে কলম ধরতেই হয়।
শ্রীজাত আবার গীতিকার ও। ভারতবর্ষে কবি থেকে গীতিকার হয়েছেন অনেকেই। জাভেদ আখতার থেকে গুলজার; ছায়াছবির সফল গীতিকার হিসেবে বাংলার শ্রীজাত এই সংখ্যার নবতম সংযোজন। বাংলা ছবি ‘মিশরের রহস্য’ এ গান লিখে তিনি সেরা গীতিকার হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরষ্কারে ভূষিতও হয়েছেন ২০১৪ তে। বলা যায়, শ্রীজাত এসময়ের একজন সফল গীতিকার।
শ্রীজাত আবার গীতিকার ও। ভারতবর্ষে কবি থেকে গীতিকার হয়েছেন অনেকেই। জাভেদ আখতার থেকে গুলজার; ছায়াছবির সফল গীতিকার হিসেবে বাংলার শ্রীজাত এই সংখ্যার নবতম সংযোজন। বাংলা ছবি ‘মিশরের রহস্য’ এ গান লিখে তিনি সেরা গীতিকার হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরষ্কারে ভূষিতও হয়েছেন ২০১৪ তে। বলা যায়, শ্রীজাত এসময়ের একজন সফল গীতিকার।
কিন্তু শ্রীজাত তাঁর গীতিকার
সত্তার থেকে কবি সত্তাকেই বেশী এগিয়ে রাখতে চান।
কারণ কবিতা তিনি লেখেন নিজের শর্তে।
যেখানে গান তাঁকে লিখতে হয় অন্য কারুর কথা মেনে। শ্রীজাত, এ কথা বলেছেন কোলকাতা লিটারেরি ফেস্টিভ্যাল এর এক
আলোচনাচক্রে। গান লেখার আগে গানের সুর, চিত্রনাট্য এমনকি কোন
অভিনেতা বা অভিনেত্রীর উপর সেই গানের দৃশ্যায়ন হবে এই সব ছোট ছোট বিষয়গুলোকেও তাঁকে
মাথায় রাখতে হয়। কিন্তু কবিতা তাঁর একান্ত নিজস্ব।
কবিতার পাতায় তাই তিনি অনায়াসে লিখতে পারেন – এতই যদি ক্লান্ত তবে লাভ কি? / ছুট থামিয়ে বোসো কিছুক্ষণ।/ সেই সুযোগে নতুন করে ছুট দিক/ আমার থেকে তোমার দিকে মন। (কবিতা – ছুট) কবিতায় অকপটে ব্যক্ত করতে পারেন মনের গভীরে থাকা গোপন ইচ্ছার কথা – ভাত কাপড় জোটাতে হবে। তাই তো / ফেরার পথে বিক্রি করি আত্মা / যারা সেদিন বন্ধু হতে চাইতো, / তাদেরও আজ স্বভাবদোষ। হাতটান। (কবিতা – যাকে নিয়ে পালাতে চেয়েছিলাম)
কবিতার পাতায় তাই তিনি অনায়াসে লিখতে পারেন – এতই যদি ক্লান্ত তবে লাভ কি? / ছুট থামিয়ে বোসো কিছুক্ষণ।/ সেই সুযোগে নতুন করে ছুট দিক/ আমার থেকে তোমার দিকে মন। (কবিতা – ছুট) কবিতায় অকপটে ব্যক্ত করতে পারেন মনের গভীরে থাকা গোপন ইচ্ছার কথা – ভাত কাপড় জোটাতে হবে। তাই তো / ফেরার পথে বিক্রি করি আত্মা / যারা সেদিন বন্ধু হতে চাইতো, / তাদেরও আজ স্বভাবদোষ। হাতটান। (কবিতা – যাকে নিয়ে পালাতে চেয়েছিলাম)
হয়তো, কবি শ্রীজাত শুধু তাঁর কবি সত্তাকে নিয়েই বাঁচতে চেয়েছিলেন; চেয়েছিলেন তাকে 'নিয়ে পালাতে'। তাই কি তাঁকে গান
লিখতে হয়েছে কেবল ‘ভাত কাপড় জোটাতে হবে’ এই বাধ্যবাধকতায়! এই প্রশ্ন থেকেই যায়। যদিও
শ্রীজাত পরিষ্কার বলে দেন যতই গান তাঁকে অপরের নির্দেশ মত লিখতে হোক না কেন তিনি
আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যান তাঁর সৃজনশীল মনন কে সবসময় উজাগর করে রাখতে। তাই ‘অটোগ্রাফ’ ছবিতে শ্রীজাতের লেখা গানের কথাগুলি অনায়াসে পৌঁছে যায় কাব্যিকতার চরম
উৎকর্ষে। শ্রেয়া ঘোষালের কণ্ঠে গাওয়া সেই বিখ্যাত গান ‘চল রাস্তায় সাজি ট্রাম লাইন’
এর প্রতিটা লাইন থেকে চুঁইয়ে পড়ে মনন ঋদ্ধ কাব্য রস ধারা। প্রিয় বন্ধুর পাড়া
নিঝুম / চেনা চাঁদ চলে যায় রিকশায়, / মুখে
যা খুশি বলুক রাত্তির/ শুধূ চোখ থেকে চোখে দিক সায়।
প্রাথমিক ভাবে শ্রীজাত কবি। কবি হিসেবে ২০০৪ সালে তাঁর 'উড়ন্ত সব জোকার' কাব্য গ্রন্থের জন্য তিনি পেয়েছেন, আনন্দ পুরষ্কার। গীতিকার হিসেবে অবশ্য তাঁকে প্রথম দেখা যায় ২০১০ সালে; '০৩৩' নামক একটি বাংলা ছবির গান লিখে তাঁর লিরিক্স রাইটার এর যাত্রা শুরু হয়। বাংলায় রবীন্দ্রনাথ এবং নজরুলও কবিতা লেখার পাশাপাশি অজস্র গান লিখেছেন। সেই পথেরই পথিক, শ্রীজাত।
কিন্তু গল্প এখানেই থেমে থাকে না। কারণ ২০১৬ য়
মুক্তি পাওয়া ছায়াছবি ‘জুলফিকার’ এ আবার নতুন একটি অবতারে আবির্ভূত হতে দেখা যায় শ্রীজাত কে। কবি, গীতিকার শ্রীজাত এবার আত্মপ্রকাশ করেন অভিনেতা হয়ে। প্রথমত শ্রীজাত চান নি। তাঁর কথা অনুসারে বন্ধু, পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায় এর উপরোধে ঢেঁকি গিলেই তাঁকে
মাখতে হয় অভিনয়ের রং। শ্রীজাত কে এই ছবিতে দেখা গেছে ত্রিভুবন গুপ্তের চরিত্রে অভিনয় করতে।
চরিত্র টি শেক্সপিয়ারের বিখ্যাত নাটক ‘জুলিয়াস
সিজার’ এর অন্যতম চরিত্র সেনা কমান্ডার ট্রেবোনিয়াস এর আদলে তৈরি। যদিও শ্রীজাত অভিনয়ের ব্যাপারে তাঁর প্রবল অনীহার কথা
জানিয়েছেন অকপটে। অভিনেতা হিসেবে তাঁর এই নতুন অবতার যে একেবারেই না-পসন্দ তা খোলাখুলি ভাবে জানিয়েছেনও। ‘জুলফিকার’ এর পরে তাই শ্রীজাত কে আর দেখা যায় নি রূপোলী পর্দায়।
তাহলে কি কবি শ্রীজাত অভিনেতা হতে চান না? এই প্রশ্নের উত্তরে শ্রীজাত যদিও তাঁর ভবিষ্যতে আবার কখনো অভিনয় করা নিয়ে পুরোপুরি নিরাশ করেননি। বলেছেন মনের মত চরিত্র পেলে পুনরায় অভিনয় করতে
পিছপা হবেন না তিনি। শিল্পের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতার কারণেই যে তিনি আবার অভিনয় করবেন সেটা অবশ্য বলতে ভোলেন নি।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন