সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রবীন্দ্রনাথের টিনেজ লাভ!

সাত থেকে সতেরো, বৌঠান কাদম্বরীর প্রতি তাঁর অসংজ্ঞায়িত আকর্ষণ মাধবীলতার সুবাসের মতো তাঁর অপরিপক্ক হৃদয় ভ্রমরকে প্রায়শই উদ্বেলিত করে যেত। কল্পনার বৈঠা বেয়ে আপন কৌমার্যের ভেলা কে অপরিনত কৈশোরের বেলাভূমির বিপ্রতীপে থাকা যৌবনের উথাল পাথাল সাগরে ভাসাতে চেয়ে থেকে থেকেই তাঁর বুক কেপে উঠত আমলকি পাতার মতন।  

কিন্তু প্রশ্ন হোল রবীন্দ্রনাথের টিনেজ লাভ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সতেরোর গণ্ডি টানা কেন! সাধারণত টিনেজ বলতে বারো থেকে উনিশের মধ্যে বয়সসীমাকে ধরা হয়। তাহলে কি রবীন্দ্রনাথের জীবনে টিনেজ লাভ বলতে যা বোঝায় তা এসেছিলো সতেরোর পরে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের আর একটু অপেক্ষা করতে হবে। তার আগে দেখে নেওয়া যাক বৌঠান কাদম্বরীর সঙ্গে তাঁর বহুল কথিত সম্পর্কের রসায়ন কিভাবে তাঁকে তাঁর বয়সন্ধির উত্তাল এবং আবেগ উৎক্ষিপ্ত সময়ের জন্য একটু একটু করে প্রস্তুত করে তুলেছিলো।
যদিও তাঁদের সম্পর্কের শুরু হয়েছিল কৈশোরের অনেক আগেই। রবীন্দ্রনাথের যখন সাত বছর বয়স তখন তাঁর থেকে দু বছরের বড় কাদম্বরীর পদার্পণ ঘটে রবীন্দ্রনাথের জীবনে। যে কথার উল্লেখ শুরুতেই করেছি।  তাই সতেরো-উত্তর ঘটনা পর্বে যাওয়ার আগে এ ক্ষেত্রে প্রাক সতেরোর প্রেক্ষাপটটাকে ভালো করে বুঝে নেওয়া প্রয়োজন।  


জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ি    
ঠাকুরবাড়ির তিনতলার ছাদবাগানে একাকী কাদম্বরীর পেলব সাহচর্যে লালিত রবীন্দ্রনাথের টিনেজ অভিমানের তীব্র অস্মিতা বোধ বারেবারে প্রতিষ্ঠা পেতে চেয়ে একাগ্র হয়েছে নিজের সমস্ত শক্তিকে নিংড়ে দিয়ে। তাই স্কুলে গিয়েও তাঁর মন টেকে না। বারবার স্কুল ছুট হতে চেয়েছে তাঁর মন আসলে বয়সটাই যে ওইরকম। যখন সমাজের সকল আগল ভেঙে সম্পর্কের গোলাপি ফিতার বাঁধনে বাঁধা পড়তে চেয়ে যে কারুরই মন হয়ে পড়ে উচাটন। আর এখানে তো কবির কল্পনা প্রবণ মন।আবার সেই মনের মালিক যদি হন সদ্য গোঁফ ওঠা, ভ্রু পল্লবে গভীর প্রেমের ইশারা জাগানো যৌবনের নয়া সওদাগর -জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির আদরের ছেলে রবি তাহলে তো সোনায় সোহাগা। 

কিশোর রবীন্দ্রনাথ

বারো বছর বয়সে উপবীত ধারন করে, তিনি তখন দ্বিজ হয়ে গেছেন পুরোমাত্রায় তাঁর দুবছর পরে মা সারদা দেবীর মৃত্যু তাঁকে অস্থির করে তুলেছিল; আদরের আবেশ মাখা অলীক বাহুডোরের সে দুরন্ত আকর্ষণ যেন এক দণ্ডও তাঁকে স্থির থাকতে দিচ্ছিল না। সদ্য মাতৃহারা টিনেজ রবীন্দ্রনাথ তখন যেন পদ্ম পাতার উপর টলটল করা অস্থির জল বিন্দু। হাওয়ার দোলাচলে সদা পতনোন্মুখ। একদিকে বৌঠান কাদম্বরী দেবীর প্রতি তাঁর অগাধ, অবদমিত আকর্ষণ অন্যদিকে কবিতার প্রতি ক্রম বর্দ্ধমান অনাবিল অবাধ্য প্রেম, দুইয়ের মাঝে পনেরো বছর বয়সী টিনেজ রবীন্দ্রনাথ যেন কোনো উত্তাল সাগরের ঘূর্ণাবর্তে আটকে পড়া, উদ্ভ্রান্ত যাত্রী। মাত্র একবছর আগে ভর্তি হয়েছিলেন সেন্ট জেভিয়ারস স্কুলে। তার মধ্যেই উৎসাহ হারিয়ে ফেলে পনেরো বছর বয়সেই দাঁড়ি টেনে দেন প্রথাগত পড়াশুনোয় ছেড়ে দেন স্কুল
যদি রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে কাদম্বরীর সম্পর্কের গ্রাফ দেখা যায় তাহলে তার সর্বোচ্চ বিন্দু কিন্তু পৌঁছেছিল রবীন্দ্রনাথের টিনেজ বয়সেই
যদিও রবীন্দ্রনাথের থেকে দু বছরের বড় কাদম্বরী ছিলেন রবীন্দ্রনাথের মেজ দাদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথের বিবাহিত স্ত্রী। তাই রবীন্দ্রনাথের কিশোর বয়সের নিটোল কৌমার্যে ভরা প্রেমের গল্প নিয়ে কৌতূহলের মেঘ থেকেই যায়। ধোঁয়াশা থেকে যায় রবীন্দ্রনাথের টিনেজ বয়সে সে অর্থে কোনো অবিবাহিত ললনার পদার্পণ ঘটেছিলো কি না এই প্রশ্নে।
ধোঁয়াশা কাটতে সময় লেগে যায় দীর্ঘ সতেরো বছর। যখন স্কুল ছুট রবীন্দ্রনাথকে উচ্চ শিক্ষার জন্য বিলেত যাত্রার প্রস্তুতি নিতে হয়। পারতপক্ষে, তিনি বাধ্য হন বিলেত যাওয়ার জন্য। কারণ তখনো রবীন্দ্রনাথ তাঁর দাদা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর কিংবা বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের ইচ্ছার বিপরীতে যাওয়ার সাহস বা অধিকার কোনোটাই অর্জন করতে পারেন নি। আর তখন বংশের মর্যাদা রক্ষার্থে রবীন্দ্রনাথের আরও পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া উচিৎ বলেই মনে করতেন সত্যেন্দ্রনাথ এবং দেবেন্দ্রনাথ দুজনে। তাই তিন বছর পরে অর্থাৎ ১৮৭৮ সালে তাঁকে বিলেত পাড়ি দিতে হয় উচ্চ শিক্ষার জন্য। তখন তাঁর বয়স ১৭ বছর। যদিও পড়াশুনা সম্পূর্ণ না করেই দেশে ফিরে এসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।  কিন্তু সে কথা আলাদা। 
বিলেত যাত্রার পূর্বে, রবীন্দ্রনাথের দাদা, দেশের সর্বপ্রথম আই সি এস সত্যেন্দ্রনাথ চেয়েছিলেন স্কুল ছুট ভাইকে ইংরেজি ভাষায় দড় করে তুলতে, যাতে তাঁর অনর্গল ইংরেজি কথোপকথণে কোনো রকম অসুবিধা না হয়। এই ব্যাপারে তিনি মুম্বাই (তখন বোম্বে) স্থিত প্রসিদ্ধ চিকিৎসক আত্মারাম তুরখাড় এর বাড়িতে রবীন্দ্রনাথকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন।  স্বনামধন্য সমাজ সংস্কারক আত্মারাম ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথের পূর্ব পরিচিত।  আত্মারাম ছিলেন প্রার্থনা সমাজ নামক সমাজ সেবী সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতাও
  কিন্তু ইংরেজি শিখতে আত্মারামের বাড়িতে কেন? কারণ আত্মারামের একমাত্র মেয়ে অন্নপূর্ণা তুরখাড় তখন সদ্য বিলেত থেকে দেশে ফিরেছেন।  ইংরেজিতে, ভীষণ সড়গড়। 

অন্নপূর্ণা, রবীন্দ্রনাথের নলিনী

অন্নপূর্ণার ওপর দায়িত্ব বর্তাল রবীন্দ্রনাথকে ইংরেজিতে স্বচ্ছন্দ করে তোলার।  আর এখানেই শুরু হয় রবীন্দ্রনাথের টিনেজ লাভের গল্প।  রবীন্দ্রনাথের থেকে তিন বছরের বড় অন্নপূর্ণার প্রতি তাঁর আকর্ষণ কোনো টিনেজ আবেগের বাতুলতা বলে চালিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। মাত্র দু মাস ছিলেন তিনি অন্নপূর্ণার বাড়িতে।  এর মধ্যেই প্রেমভাব বিকশিত হতে শুরু করেছিল দুজনের মধ্যে।  এতটাই যে রবীন্দ্রনাথ আদর করে অন্নপূর্ণাকে ডাকতে শুরু করেছিলেন নলিনী নামে  নলিনীকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথের আবেগ ফুটে উঠছিল সেই সময়কার রচিত তাঁর কবিতায়। 

নলিনী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

লীলাময়ী নলিনী
চপলিনী নলিনী
শুধালে আদর করে
ভালো সে কি বাসে মোরে
কচি দুটি হাত দিয়ে
ধরে গলা জড়াইয়ে,
হেসে হেসে একেবারে
ঢলে পড়ে পাগলিনী!
ভালো বাসে কি না, তবু
বলিতে চাহে না কভু
নিরদয়া নলিনী!
যবে হৃদি তার কাছে
প্রেমের নিশ্বাস যাচে
চায় সে এমন করে
বিপাকে ফেলিতে মোরে
হাসে কত, কথা তবু কয় না!
এমন নির্দোষ ধূর্ত
চতুর সরল,
ঘোমটা তুলিয়া চায়
চাহনি চপল
উজ্জ্বল অসিত-তারা নয়ন!
অমনি চকিত এক হাসির ছটায়
ললিত কপোলে তার গোলাপ ফুটায়,

তখনি পালায় আর রয় না!
 
----____------_------__----___--____----_____-

কিন্তু সবই কি ছিল একতরফা?  না!  নাহলে অন্নপূর্ণা ওরফে নিলিনীই বা কেন রবীন্দ্রনাথকে তাঁর দাঁড়ি গোঁফ রাখতে মানা করবেন?  একদিন রবীন্দ্রনাথ কে একান্তে পেয়ে নলিনী তাঁর  চিবুক স্পর্শ করে বলেছিলেন, অযথা দাঁড়ি গোঁফ রেখো না তুমি রবি; তাতে তোমার মুখের ধার আড়াল হয়ে যাবেএই কথা রবীন্দ্রনাথ নিজ মুখে স্বীকার করেনযদিও অনেক পরে, একান্তই জীবন সায়াহ্নে এসে রবীন্দ্রনাথের মুখে শোনা যায় সে কথা; অনেকটা আক্ষেপের সুরেই। তখন অবশ্য অন্নপূর্ণা নেই পৃথিবীতেএ কথা ঠিক জীবনের উপান্তে এসেও রবীন্দ্রনাথ ভুলে যাননি নলিনী কে। ৮০ বছর বয়সে, বলাই বাহুল্য রবীন্দ্রনাথ তখন জীবনের একেবারে শেষ অধ্যায়ে; একান্ত ভাবেই তাঁর মুখমণ্ডল তখন শ্বেত, শুভ্র এবং ঘন শশ্রুগুম্ফ মণ্ডিত; আক্ষেপ করে বলেছিলেন তাঁর টিনেজ বয়সের অবসেশন - নলিনীর কথাপ্রকাশ করেছিলেন নলিনীর কথা রাখতে না পারার, মনোবেদনা। 
কৃষ্ণ কৃপালিনী প্রণীত ‘
Tagore – A Life’ বইয়ে রবীন্দ্রনাথ এবং অন্নপূর্ণার  কথিত সম্পর্ক নিয়ে অনেক অনালোকিত দিক কে উন্মোচিত হতে দেখা যায়। ওই বই অনুসারে,  রবীন্দ্রনাথ মুম্বাই থেকেই বিলেতের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন।  ফিরে আসেন পরের বছর অর্থাৎ ১৮৭৯ সালে।  কিন্তু অন্নপূর্ণা বোধহয় রবীন্দ্রনাথ কে নিয়ে তাঁর জীবনের অনেক বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটাই অগ্রসর হয়ে গিয়েছিলেন মনে মনে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ কি নলিনীর এই ভাবনা নিয়ে সম্পূর্ণ বেখবর ছিলেন।  মনে হয় না।  মনে মনে রবীন্দ্রনাথ  ও চেয়েছিলেন তাঁর কৈশোর-উত্তর প্রেমের যথার্থ মর্যাদা দিতে। কিন্তু বাধ সেধেছিল বিধি।  যদিও মেয়ের ইচ্ছার কথা জেনে অন্নপূর্ণার বাবা চিকিৎসক আত্মারাম তুরখাড় পরের বছরেই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে হাজির হয়েছিলেন জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে।  কিন্তু রবীন্দ্রনাথের বাবা, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর আত্মারামের প্রস্তাবে রাজি হন নিকারণ, রবীন্দ্রনাথের বয়স।  দেবেন্দ্রনাথ, কোনোমতেই তিন বছরের বড় মেয়ের সঙ্গে ছেলেকে বিয়ে দিতে সম্মত ছিলেন না। বিফল মনোরথ হয়ে তাই নলিনী এবং তাঁর বাবা ফিরে গেছিলেন মুম্বাই।  দুই বছর পরে অন্নপূর্ণার বিয়ে হয়ে যায় 
Harold Littledale  নামের এক এক স্কটিশ শিক্ষকের সঙ্গে। বিয়ের পরে অন্নপূর্ণা, ইংল্যান্ডের এডিনবারায় গিয়ে থাকেন স্বামীর সঙ্গে।  কিন্তু বেশিদিন বেঁচে থাকেননি তিনি। বিয়ের এগারো বছরের মাথায়, মাত্র তেত্রিশ বছর বয়সে মারা যান অন্নপূর্ণা। অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথেরও বিয়ে হয়ে যায় মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে। মৃণালিনী দেবীরও মৃত্যু হয় অসময়ে।  কিন্তু তখন রবীন্দ্রনাথের ওল্ড ফ্লেম নলিনী বেঁচে ছিলেন না। 
সম্প্রতি বলিউড অভিনেত্রী প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার প্রোডাকশন হাউস Purple Pebbles রবীন্দ্রনাথ এবং অন্নপূর্ণার সম্পর্ক নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছে।  ছবির নাম ‘নলিনী’। উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় পরিচালনা করবেন ছবিটি। অভিনেতা সাহেব ভট্টাচার্যের রবীন্দ্রনাথের ভূমিকায় অভিনয় করার কথা শোনা যাচ্ছে। যদিও নলিনীর চরিত্রে এখনও কারুর নাম চূড়ান্ত হয় নি। এই প্রসঙ্গে বলি এই নিবন্ধের শিরোনাম প্রথমে খানিকটা এইরকম ভেবেছিলাম  – এক বাঙালী ছেলে এবং এক মারাঠি মেয়ের প্রেম কাহিনী। পরে বদল করি।  পূর্বের শিরোনামটাই কি বেশী ভালো হত? এই ব্যাপারে আপনাদের মত জানাবেন।
   


রবীন্দ্রনাথ এবং কাদম্বরীর কথিত সম্পর্ক নিয়ে পড়ুন নিবন্ধ -

রবীন্দ্রনাথ এবং কাদম্বরীর সম্পর্ক ও কিছু অচেনা প্রশ্ন!     

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট, কোথায় ছিলেন গান্ধীজী?

১৫০/বি বেলেঘাটা মেন রোড। শিয়ালদহ স্টেশন ও ই-এম বাইপাস এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন কারী মূল রাস্তা - বেলেঘাটা মেন রোড তথা সুরেশ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় রোডের ওপর পড়া এই বিশেষ ঠিকানা টি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে এক গৌরবময় স্মৃতির সাক্ষ্য বহন করছে । বিশেষ করে, প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময় আসন্ন হলে, এই ঠিকানার কথা স্মরণ না করে থাকা যা য় না। কারণ ১৯৪৭ এ গোটা দেশ যখন স্বাধীনতার আনন্দ উদযাপনে ব্যস্ত, বিশেষ করে রাজধানী দিল্লিতে স্বাধীনতা লাভের (১৫ ই আগস্ট) দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখতে আয়োজিত হয়েছে অভূতপূর্ব রাজকীয় সমারোহের - যার শুভ সূচনা হয়েছে, ১৪ ই আগস্টের মধ্যরাতে; ১৫ তারিখ পদার্পণ করতেই দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর ঐতিহাসিক বক্তৃতা দিয়ে শুভারম্ভ হয়েছে স্বাধীনতা দিবস পালনের মহা নির্ঘণ্ট। এই উচ্ছ্বাস যদিও কাঙ্ক্ষিতই ছিল। কারণ দীর্ঘ ২০০ বছরের পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরেই দেশবাসীর কাছে এসে পৌঁছেছিল সে বিরল মাহেন্দ্রক্ষণ। সমাগত হয়েছিল সেই মহা মুহূর্ত যখন প্রায় শত বর্ষ ধরে চলা স্বাধীনতাকামী মহাযজ্ঞে মুক্তিলাভের সিদ্ধি স্পর্শ করছিল তার চূড়ান্ত শিখর দেশ। কিন্তু এই যজ...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...