সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

একটু অন্যভাবে দেখা শহীদ মিনার কে!

১৫৭ ফুট উঁচু এই মিনারের সর্ব্বোচ শিখরে রয়েছে তুর্কী স্থাপত্য শৈলীর আদলে নির্মিত একটি গম্বুজ। গম্বুজের তলায় ওপর নীচে পরপর দুটি গোলাকার ব্যালকনি রয়েছে। ওপরের ব্যালকনি তে পৌঁছতে পেরোতে হবে ২২৩ খানা সিঁড়ি। ঋজু, নলাকার মিনারের গা বেয়ে উঠে গেছে সেই কালো পেঁচানো সিঁড়ি।

শহীদ মিনার
মিনার নির্মাণের ২০০ বছর পূর্তি হতে যাচ্ছে আগামী ২০২৮ সালে অর্থাৎ আর চার বছর পরে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিজয়ী মেজর জেনারেল ডেভিড ওকটারলোনীর স্মৃতি তে ১৮২৮ সালে নির্মিত হয় এই মনুমেন্ট। মূলত ১৮১৪ থেকে ১৮১৬, দীর্ঘ দুবছর ধরে চলা ইঙ্গ-নেপালযুদ্ধে গোর্খাদের হারিয়ে ইংরেজদের কথিত জয়ের পেছনে ওকটারলোনীর ভূমিকাকে স্মরনীয় করে রাখতেই এই সৌধের নির্মাণ। জে পি পার্কার ছিলেন এর মূল স্থপতি। উল্লেখযোগ্য ভাবে এর স্থাপত্য শৈলীতে কিন্তু মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলি যেমন সিরিয়া (সৌধের উপরিভাগ), মিশর (সৌধের স্তম্ভমূল) এবং তুর্কীর স্থাপত্য শৈলীর ছাপ স্পষ্ট।

স্বাধীনতার ২২ বছর পরে অর্থাৎ ১৯৬৯ সালের আগস্ট মাসে (৯ই আগস্ট) এই সৌধের নাম বদলে ওকটারলোনী মনুমেন্টের বদলে শহীদ মিনার রাখা হয় এবং সৌধটিকে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত বীর শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত করা হয়।

মিনার সংলগ্ন ফাঁকা স্থান যেটিকে শহীদ মিনার ময়দান বলে বলা হয় সেখানে সারাবছরই নানারকম রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সভা, ধর্ণা ইত্যাদি চলে, যার প্রথম সূচনা হয়েছিল কিন্তু ১৯৩১ সালে। হিজলী জেলে বন্দী থাকা তরুন স্বাধীনতা সংগ্রামীদের নারকীয় হত্যার বিরুদ্ধে সেই সভা আয়োজিত হয়েছিল। উল্লেখযোগ্য ভাবে সেই সভার সভাপতি ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

ও হ্যাঁ এই মিনারে শেষ সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠেছিলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধী। কারণ ১৯৯৭ সালে এক পর্যটক মিনারের ওপর থেকে ঝাঁপ দেওয়ার পর থেকে পুলিশের বিশেষ অনুমতি ছাড়া ওপরে ওঠা নিষিদ্ধ রয়েছে।

কোনো এক অখ্যাত ফুটপাতে দাঁড়িয়ে, একটু অন্য দৃষ্টিকোন থেকে - গাছ গাছালির ডালা পালার মধ্য দিয়ে শহিদ মিনার কে দেখার এবং দেখাবার চেষ্টা করলাম। 



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...

জনগণমনঃ জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার ইতিহাস ও কিছু প্রশ্নের উত্তর!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ব্রহ্ম সঙ্গীত ‘ জনগণমন অধিনায়ক’ কে দেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে মান্যতা দেওয়ার সর্ব সম্মীলিত সিদ্ধান্ত হয় ১৯৫০ সালের ২৪ শে জানুয়ারি । কিন্তু কেন এত দেরী? দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও কেন তিন বছর সময় লেগেছিল জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন করতে? ‘ভারত বিধাতা’ শিরোনামে লেখা, স্বদেশ পর্যায় ভুক্ত (গীতবিতান অনুসারে) এই রবীন্দ্রগীতিটি কিভাবে -  দেশের জাতীয় সঙ্গীত হওয়ার পথে একটু একটু করে এগিয়ে গেল! ‘জনগনমন’র জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার নেপথ্য কাহিনীই আজ আমরা ফিরে দেখবো এই প্রবন্ধে।  ১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট - দীর্ঘ ২০০ বছর ধরে পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরে অবশেষে দেশবাসীর ভাগ্যাকাশে এসে উপস্থিত হোল বহু আকাঙ্খিত সেই দিনটি। উদিত হোল স্বাধীনতার নতুন সূর্যের।   স্বাধীন হোল দেশ। কিন্তু সদ্য ব্রিটিশ অধীনতা মুক্ত দুটি দেশ ভারত এবং পাকিস্থান তখনও পায় নি স্বতন্ত্র সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা। ১৯৪৭ এর ১৮ই জুলাই তারিখে লাগু হওয়া ভারতীয় স্বাধীনতা আইন অনুসারে নিজ নিজ সংবিধান প্রণয়নের আগে পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্থান এই দুটি ভূখণ্ড কমনওয়েলথ দেশের অধীনস্থ দুটি অধিরাজ্য হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে পারা...