সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রবীন্দ্রনাথের দাড়ি বিড়ম্বনা!

রবীন্দ্রনাথ যে সুদর্শন ও সুঠাম শরীরের অধিকারী ছিলেন সে কথা বোধহয় ঘুরিয়ে বলার দরকার নেই।  বিদেশীদের কাছে তিনি ছিলেন সাক্ষাৎ প্রভু যীশুর মুখ। দেশীয়দের মধ্যেও কেউ কেউ তাই মনে করতেন। যেমন কবি নবীনচন্দ্র সেন, যিনি বলেছিলেন - কবির মুখাবয়ব দেখলে চিত্রিত খ্রিস্টের মুখ মনে পড়ে, যা বিশেষ ভাবে প্রণিধানযোগ্য এ ক্ষেত্রে। কিন্তু ওরকম সজনে ফুলের মত সাদা শশ্রুগুম্ফ মণ্ডিত মুখাবয়ব কেবল আমাদের পুরানের সময়কার মুনি ঋষিদের মুখের সঙ্গেই তুলনীয় শুধু একটা বৈপরীত্য ছাড়া। রবীন্দ্রনাথের চুল ছিল মাথার মাঝখানের সিঁথি দিয়ে দুদিকে কানের ওপর আঁচড়ে টেনে নিয়ে আসা কোঁকড়ানো, বাবরী চুল। সেখানে মুনি ঋষিদের জটাজুট থাকতো, মাথার তালুর ওপরে খোঁপার মত, কুণ্ডলীকৃতআধ্যাত্মিক চেতনায় সমৃদ্ধ মহাত্মা গান্ধী, সেই জন্যই বুঝি প্রথম দর্শনে রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব বলে সম্বোধন করেছিলেন। অত্যন্ত স্টাইল সচেতন রবীন্দ্রনাথ যিনি ব্যক্তির স্টাইলকে তাঁর মুখশ্রীর সঙ্গে তুলনা করছিলেন ‘শেষের কবিতা’ উপন্যাসে, তিনি নিজে তাঁর ওই পুরানীয় মুনিঋষি মার্কা মুখশ্রীর ব্যাপারে কতটা সচেতন ছিলেন? এর উত্তর হোল, ছিলেন; বলা যায় – খানিক বেশিই ছিলেন।  এই প্রসঙ্গে যে কথাটি মনে করিয়ে দেওয়া দরকার সেটা হোল রবীন্দ্রনাথের মুখশ্রীর অন্যতম সম্পদ তাঁর দাড়ি ও গোঁফ যেমন তাঁকে অনেকের কাছে প্রিয়দর্শন করে তুলেছিল তেমনি কখনো কখনো যে তা ভয়ানক বিড়ম্বনারও কারণ হয়ে উঠেছিল সেই কথাই বলার চেষ্টা করবো আজকের নিবন্ধে। 


রবীন্দ্রনাথ, আমেরিকায়!
রবীন্দ্রনাথের তখন ৫৭ বছর বয়স। চার বছর আগে, নোবেল পেয়েছেন। ব্যস্ততা বেড়েছে কয়েক গুন। তবু তার মধ্যে দেশ বিদেশ থেকে আসা অসংখ্য চিঠির উত্তর দেওয়াটা ছিল রবীন্দ্রনাথের নিত্য করণীয় কাজ। এমনই এক ভাদ্র মাসে, জোড়াসাঁকোর বাড়িতে বসেছিলেন চিঠি লিখতে, ১১ বছরের এক বালিকার উদ্দেশ্যে। এটি ছিল মেয়েটিকে লেখা তাঁর দ্বিতীয় চিঠি।  বারানসী থেকে মেয়েটি চিঠি লিখে বারবার করে রবীন্দ্রনাথকে তার বাড়িতে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল। ইতিমধ্যে রবীন্দ্রনাথ বেশ আগ্রহীও হয়ে উঠেছেন মেয়েটির সম্পর্কে।  কারণ মাত্র ১১ বছর বয়সেই মেয়েটি তাঁর লেখা গল্প গুচ্ছ পড়ে ফেলেছে। প্রথম চিঠিতে তো, রীতিমতো তাঁর লেখা একটি গল্পের পরিণতি পর্যন্ত পাল্টে ফেলার পরামর্শ দিয়েছে সে।  সর্বোপরি, মেয়েটি তাঁর লেখা গুটিকয় প্রবন্ধও পড়া শেষ করে ফেলেছে এর মধ্যে।  মেয়েটির নাম প্রীতি অধিকারী। প্রসঙ্গত এই মেয়েটিই পরবর্তী কালে শিল্প সংস্কৃতির ক্ষেত্রে লেডি রানু মুখোপাধ্যায় নামে সারা জগতের কাছে বিখ্যাত হয়ে উঠবেন। সর্বোপরি প্রায় ৪৭ বছরের ব্যবধান থাকা এই রানু মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেই রবীন্দ্রনাথের কথিত সম্পর্ক নিয়ে ছড়িয়ে পড়বে অভূতপূর্ব কৌতূহল, সম্পর্কগত রসায়নের নানা বিচিত্র তত্ত্ব। কিন্তু সে প্রসঙ্গ আজকের প্রবন্ধের উপজীব্য নয়।


রবীন্দ্রনাথ ও রানু মুখোপাধ্যায় 
রবীন্দ্রনাথ, কিশোরী রানুর উদ্দেশ্যে লেখা তাঁর দ্বিতীয় চিঠিতে রানুর বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন বটে তবে তাঁকে সতর্ক করে দিয়েছেন এই বলে যে তাঁকে দেখতে কিন্তু মোটেই আর দশটা সাধারণ মানুষের মতো নয়।উল্লেখ্য, রবীন্দ্রনাথ সেই চিঠিতে নিজেকে পুরানের যুগের অন্যতম চরিত্র নারদমুনির মত দেখতে বলে উল্লেখ করেছিলেন। পাশাপাশি তাকে দেখে যাতে ভয় না পেতে হয় সেই জন্যে “ভয় ক’রো না” বলে আশ্বাস বার্তাও দিয়ে রেখেছিলেন।  ১৩২৪ এর ২১ শে ভাদ্রয় লেখা সেই চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ রানুকে লিখছেন, “তোমাদের সহরে যাবো। তুমি লিখেচো আমাকে গাড়িতে করে নিয়ে যাবে। কিন্তু আগে থাকতে বলে রাখি, আমাকে কিন্তু দেখতে নারদমুনির মত – মস্ত বড় পাকা দাড়ি”।  এইখানে একটু ধন্দ তৈরি হয়। কারণ রবীন্দ্রনাথ নারদমুনির সঙ্গে তাঁর চেহারার সাযুজ্য খুঁজেছেন তাঁর মুখের ‘মস্ত বড় পাকা দাড়ি’র কথা বলে। কিন্তু পারতপক্ষে নারদমুনির দাড়ি থাকতে কখনো কেউ দেখেনি। রবীন্দ্রনাথ কি তাহলে সৃষ্টি কর্তা ব্রহ্মার কথা বলতে গিয়ে ভুল করে নারদমুনির কথা বলেছেন! আমার নিজেরও মনে হয় রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে ব্রহ্মদেবেরই মুখের বেশি মিল রয়েছে। তবে চূড়া ছাড়া। কারণ সৃষ্টি কর্তার মাথায় সদা সুশোভিত একটি রত্ন উজ্জ্বল উষ্ণীষ শোভা পায়।  প্রসঙ্গত নারদমুনি, সম্পর্কে ব্রহ্মদেবের সন্তান। তবে চিঠিতে পর ক্ষণেই রবীন্দ্রনাথ নারদমুনির সঙ্গে তাঁর মিল থাকার আরও প্রমান দিতে নারদমুনির ঝগড়াটে স্বভাবের কথার উল্লেখ করেন এবং বলেন, “আমি তাঁর মতোই ঝগড়াটেও বটে”। এতে ধন্দ আরও বেড়ে যায়। তবে কি রবীন্দ্রনাথ যথেষ্ট ভাবনা চিন্তা করেই নারদমুনির সঙ্গে তাঁর তুলনা টেনেছিলেন?  উদার চিত্ত কবি এখানে নারদমুনির দুটি নেতিবাচক দিককে নিজের মধ্যে থাকার কথা বলে আসলে ছোট্ট রানুর কাছে নিজেকে আরও সহজলভ্য করে তুলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এমন একটা সময় আসে যখন বিদেশের মাটিতে তাঁকে কেউ বুড়ো নিগ্রো ভেবে তাঁর হাতে খুচরো পয়সা ভিক্ষা হিসেবে দিয়ে যান তখন আত্ম বিদ্রুপে সিদ্ধ কবিও নিজেকে আর ঠিক রাখতে পারেন না ।
ঘটনাটি ঘটেছিলে নিউ ইয়র্কে।  কবি সেবার তৃতীয় বারের জন্য আমেরিকা সফরে গিয়েছেন। উদ্দেশ্য, বিশ্বভারতীর জন্যে অর্থ সংগ্রহ করা। সদ্য সমাপ্ত হয়েছে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।  সালটা ছিল, ১৯২০। এক বছর আগে পাঞ্জাবের জালিয়নাবাগে (১৯১৯, ১৩ ই এপ্রিল) ঘটে গেছে নৃশংস নর সংহারের ঘটনা। ব্রিটিশ পুলিস জেনারেল ও ডায়ারের নেতৃত্বে হত্যা করা হয়েছে অসংখ্য নিরস্ত্র মানুষকে।  চুপ থাকতে পারেননি রবীন্দ্রনাথ। প্রতিবাদে ফেরান ব্রিটিশের দেওয়া নাইটহুড উপাধি। ফলে আন্তর্জাতিক ভাবে চরম অপদস্থ হতে হয় ব্রিটিশ সরকারকে। স্বভাবতই ইংল্যান্ডের মিত্র দেশ হিসেবে আমেরিকাতেও পড়েছিলে এর বিরুপ প্রভাব। এ ক্ষেত্রে ব্রিটিশ গোয়েন্দাদেরও ভূমিকা কম ছিল না। গোপনে গোপনে তারা প্রচার চালিয়েছিল কবির বিরুদ্ধে।  ফলে অনাদর এবং অনাগ্রহের নিরুত্তাপেই কাটে কবির সেবারকার আমেরিকা সফর। এবং পুরোপুরি না হলেও অনেকাংশেই ব্যর্থ হয়ে যায় কবির বিভিন্ন সভা সমিতিতে বক্তৃতা দানের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা। প্রায় অনাহুত থেকে যাওয়া কবি শেষে, দেশে ফিরে আসার ব্যাপারে প্রায় মনস্থির করে ফেলেন। এমন সময়ে এক পূর্ব পরিচিতের মাধ্যমে টেক্সাস শহরে গোটা পনেরো সভায় বক্তৃতা দানের ব্যবস্থা হয়। ইতিমধ্যে টেক্সাসের উদ্দেশ্য রওনা দেওয়ার ঠিক পূর্বে উত্তর নিউ ইয়র্কের ক্যাটস্কিল মাউন্তেস নামের এক অভিজাত বাড়ির থেকে আমন্ত্রন এসে পৌছায় কবির কাছে ।  আর ঘটনাটি ঘটে সেখানেই। নির্দিষ্ট দিনে আমন্ত্রিত বাড়িতে উপস্থিত হলে, দুজন রাশিয়ান চিত্র শিল্পী কবিকে দেখতে পেয়ে দাঁড় করান। বলাই বাহুল্য তাঁরা তাঁর ছবি আঁকতে চান । কবি সম্মতি দিলে, বাড়ির বাইরেই চলতে থাকে ছবি আঁকার কাজ। যথারীতি কবি দাঁড়িয়ে থাকেন এবং শিল্পীরা রঙ ও রেখায় তাঁকে ফুটিয়ে তুলতে থাকেন কাগজে।
এমন সময়ে জে ডি রকফেলার নামের এক আমেরিকান শিল্পপতি, তিনিও সেদিন আমন্ত্রিত হয়ে এসেছিলেন ওই বাড়িতে, বাড়ির বাইরে রবীন্দ্রনাথকে ওইভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কি মনে হোল পকেট থেকে পড়ে যাওয়া একটা ১০ পয়সার কয়েনকে রবীন্দ্রনাথের হাতে গুঁজে দিয়ে চলে যান। ঘটনার আচম্বিতে রবীন্দ্রনাথ হকচকিয়ে যান। বলাই বাহুল্য বিড়ম্বিত কবি  কিছুতেই ব্যাপারটাকে মেনে নিতে পারেন না। প্রসঙ্গত রকফেলারকে কবি আগে কোনোদিন দেখেননি। দৃশ্যতই ব্যথিত কবি আশেপাশে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজনকে বলতে থাকেন, কি ব্যাপার আমাকে কি ভবঘুরে লাগে! এক বয়স্ক লোক এভাবে আমার হাতে পয়সা ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল!
কথাটা চাউর হতে গৃহস্বামী ও জানতে পারলেন এবং যথারীতি সকল আমন্ত্রিতদের সঙ্গে আলাদা আলাদা ভাবে যোগাযোগ করে জানার চেষ্টা করলেন কে এই কাজটি করেছেন। শেষমেশ রকফেলারকে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলেন এই কাজটি তারই করা। কিন্তু কি ভেবে, রকফেলার এমন করলেন? রকফেলারের জবাব ছিল বেশ চমকপ্রদ। মাথা চুলকে সেই ধনকুবের সেদিন বলেছিলেন – ও হ্যাঁ, ওই তো এক বুড়ো নিগ্রো দাঁড়িয়েছিল বাড়ির বাইরে, তাঁকে আমি এক ডাইম আমি ভিক্ষা দিয়েছি। বুঝুন, কোথায় যীশু থেকে বুড়ো নিগ্রো। রবীন্দ্রনাথ নিজেকে অবশ্য নারদমুনির সঙ্গেই তুলনা করতে পছন্দ করতেন।  সেটা অবশ্য রানুর কাছে।


উত্তর আমেরিকায়, রবীন্দ্রনাথ


তথ্য সূত্রঃ রানু ও ভানু, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

               ভানু সিংহের পত্রাবলী 





মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট, কোথায় ছিলেন গান্ধীজী?

১৫০/বি বেলেঘাটা মেন রোড। শিয়ালদহ স্টেশন ও ই-এম বাইপাস এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন কারী মূল রাস্তা - বেলেঘাটা মেন রোড তথা সুরেশ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় রোডের ওপর পড়া এই বিশেষ ঠিকানা টি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে এক গৌরবময় স্মৃতির সাক্ষ্য বহন করছে । বিশেষ করে, প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময় আসন্ন হলে, এই ঠিকানার কথা স্মরণ না করে থাকা যা য় না। কারণ ১৯৪৭ এ গোটা দেশ যখন স্বাধীনতার আনন্দ উদযাপনে ব্যস্ত, বিশেষ করে রাজধানী দিল্লিতে স্বাধীনতা লাভের (১৫ ই আগস্ট) দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখতে আয়োজিত হয়েছে অভূতপূর্ব রাজকীয় সমারোহের - যার শুভ সূচনা হয়েছে, ১৪ ই আগস্টের মধ্যরাতে; ১৫ তারিখ পদার্পণ করতেই দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর ঐতিহাসিক বক্তৃতা দিয়ে শুভারম্ভ হয়েছে স্বাধীনতা দিবস পালনের মহা নির্ঘণ্ট। এই উচ্ছ্বাস যদিও কাঙ্ক্ষিতই ছিল। কারণ দীর্ঘ ২০০ বছরের পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরেই দেশবাসীর কাছে এসে পৌঁছেছিল সে বিরল মাহেন্দ্রক্ষণ। সমাগত হয়েছিল সেই মহা মুহূর্ত যখন প্রায় শত বর্ষ ধরে চলা স্বাধীনতাকামী মহাযজ্ঞে মুক্তিলাভের সিদ্ধি স্পর্শ করছিল তার চূড়ান্ত শিখর দেশ। কিন্তু এই যজ...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...