নব ধান্যধরা ধরিত্রী আজ ছিন্ন শিকড়; শুধুই রিক্ততার কুয়াশা ঘিরে থাকে শোকের বাড়ির শেষ সান্ত্বনার মতো। যারা এখনোও রয়ে গেছে, শেকড়ের গভীর গ্রন্থনায় অচল, উদ্ভিন্ন; এখনোও ডালা পালায় সঞ্চারিত হয়ে যায় যাদের সঞ্জীবনী রস পুঞ্জ ধারা, তারা শোক বিহ্বল। এই তো কয়েক মাসের জীবন! আষাঢ়ের বারি ধারায় যখন উপচে উঠেছিল প্রসূতির কর্দমাক্ত আঙন, নব সবুজের কচি আন্দোলনে ভরে উঠেছিলো সরু মেঠোপথের দুই দিক। শ্রাবণের অবিশ্রান্ত ধারায় নেচে উঠেছিলো উদ্বাহু শৈশবের গাঢ় সবুজ আস্ফালন, কল কল তানে সে হরিৎ মুখরতা যেন অনিঃশেষ প্রাণোচ্ছলতায় হাওয়ার নুপূর পায়ে ছুটে গিয়েছিল, আকাশকে ছুঁয়ে, উধাও হয়ে যেতে দিগন্তের ওপারে। ছন্দপতন ঘটিয়ে, আশ্বিনের নরম আলো এসে উপস্থিত হতেই, ভরা যৌবনের লজ্জা যেন ছড়িয়ে পড়েছিল চারিদিকে, বক্ষ ভারে অবনত শরীরের উচ্ছলতা - কাতর চিত্তে অপেক্ষা করেছিল মৌমাছির গুনগুন স্বরে সাধা আকূল আহ্লাদ পেতে। কখন যেন কার্তিকের শিশির ঝরে পড়েছিল সবুজ সম্ভোগ পাত্রে, টুপ টুপ টুপ টুপ....! অগ্রহায়ণ আসে।
ধান্য মঞ্জরী, ধীরে ধীরে নব জীবনের প্রতিভাস গড়ে নেয় সুপ্ত গর্ভাধানে।
জনে জনে রটে যায় সে খবর; নবজাতকের নব সম্ভাবনার কথা। পিঠে, পুলি, পায়েস নবান্নের স্বপ্নে বিভোর হয়ে ওঠে ধরিত্রী। গোবর নিকানো উঠোন জুড়ে শুরু হয় ছিন্ন ফসল সাজিয়ে রাখার জোর প্রস্তুতি।
কেন জানি না প্রত্যেক বলিদানের আগে অথবা পরে কোনো না কোনো পুজোর আয়োজন হয়। সতীদাহের সময়, ঢাক ঢোল কাড়া নাকাড়া বাজানোর মতোই শুরু হয় ইতু পুজোর জোরদার জোগাড।
ফসলের লাশ গুলো মেঠোপথ ধরে পাচার হয়ে যায় খামারে খামারে। লুটের বাসন কোসন ভর্তি বস্তার মতোই কাঁধে কাঁধে চলে যায় ঝমাঝম শব্দে।
মাঠের রিক্ততার শর্তে গোলা ভর্তি হয় কারোর খামার।
কারো বা আসে পৌষ মাস আর কারোর কপালে ভাসে শূণ্য ফসলের সর্বনাশ।
এক অদ্ভুত নিঃস্বতার অবসন্নতা ছড়িয়ে থাকে মাঠের আনাচে কানাচে।
এখনো কিছু কাটা ফসল স্তুপাকারে পড়ে থাকে প্রাণহীন দেহের মতো এখানে ওখানে।
শুধু দূরে কিছু শোক সন্তপ্ত বৃক্ষ দঙ্গল বিমর্ষতার কৃষ্ণ ছায়ে চুপ করে দেখে সে জীবনের উত্থান পতনের ইতিকথা।
তবু পৌষের প্রভাতে সোনা রোদ আসে সে মাঠে...!
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন