সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নববর্ষঃ শুধু সময়ের অপেক্ষা!

সময় আসলে কখনো শেষ না হওয়া, সৃষ্টির আদিমতম ক্লাসিক। চেতনার প্রথম এবং শেষ প্রায় জোঁকের মত লেগে থাকা এক এবং একমাত্র সাথী। সময়ের পাঠ - ত্রিকালদর্শণ করায়। সময় যেন সেই ধারাবাহিক ধ্রুব উপন্যাস যা জীবনের যে কোনো সময়েই খুলে পড়ে নেওয়া যায় কিন্তু শেষ হওয়ার নামই নেয় না। আসলে জাগ্রত চেতনার কাছে সময় কখনো রোমান্টিক তো কখনো ট্র্যাজিক কখনো আবার অবক্ষয়ের নোনো ধরা ইঁটের মতন নষ্টত্ব প্রাপ্ত। সময় কখনো রাজা রামের কখনো বা লঙ্কাধিপতি রাবণের। কখনো মা কাকিমার কখনো নিজের। সময় আসলে কারোর নয়। সময়ের পাতায় কখনো কোনো অধ্যায়ের সূচনা হয় তো কখনো শেষ।
নিরবিচ্ছিন্ন সময়ের অন্তহীন কাহিনী বিস্তারে কখনো পুরানের কথকতা রোমাঞ্চ ছড়ায় কখনো বা ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হয়। সময় চলতেই থাকে, শুধু ক্ষ্যাপা সন্ন্যাসীর মতন তার মহিমার সাক্ষর ফেলে যায় উপন্যাসের এক একটি পর্বের আকারে।
খোলস ছাড়া সাপের মতো বেয়ে যায় ইঁদুরের পিছে পিছে। বাকল ঝরিয়ে উঠে যায় নব কিশলয়ের নব আনন্দে মেতে যেতে।  
সময় আসলে সুখ দুঃখ শোক ভোগ আনন্দ পরিহাসের কখনো বন্ধ না হওয়া নাগরদোলার মতন। 'জন্মিলে মরিতে হবে' ন্যায় সকলকেই জন্মিলেই চড়িতে হইবে সময়ের এই জোয়ার ভাটায়। সেখানে সময় শুধু চক্রাকারে ছুঁয়ে যায় সুখ দুঃখের স্টেশন গুলোকে। তাই সময় যেমন সুখের তেমনি দুখেরও। শুধু সময়ের অপেক্ষা। জীবনের সকল অনুভূতির প্রতিই তার সমান এবং অকুতোভয় দৃষ্টি।

এক্ষেত্রে সময়ের একটা দোষের কথা বলতেই হবে সেটা হলো সময়ের বিস্মৃতি। সময় থেকে শিক্ষা নিতে না চাওয়ার জন্যে শুধু মানুষকেই দোষী ঠাওরানো খানিক আত্মপ্রবঞ্চনা ছাড়া কিছু নয়।
সময় যে তার জাদু লেখনী দিয়ে পুরো সত্তাকে সম্মোহিত করে রাখে সে কথাই বা ভুলে গেলে চলবে কি করে। সুখের সময়ে তাই দুঃখ নেহাতই ঘরের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা ভিখিরির মতন ভিক্ষা না পেয়ে ফিরে ফিরে যায়। দুঃখের দরিয়ায় আবার সুখের খড়কুটোটির খোঁজ পাওয়া যায় না। সময় তার রচনা থামায় না। সৃষ্টির আদি কবি এই সময় তার ধারাবাহিকতা রক্ষায় প্রায় অজাতশত্রু। কথা ঠিক কেউ কেউ সময় কে শবক শেখাতে চায় তাকে বাগে আনতে চায়; আসলে সময়ের মরিচিকা সেই অপরাজেয় দিগন্তের মতন। তাকে দেখা যায় ছোঁয়া যায় না, হারানোর ভাবনা বাতুলতা ছাড়া কিছুই নয়। শুধু সময়ের পিঠে সওয়ার হতে গেলেই লাগে বাঘের পিঠে চড়ে বসতে পারার অনমনীয় দম। কখন সময় তার নিজস্ব কায়দায় যতি চিহ্ন ফেলে দেয় কে জানে!
আবহমান সময়ের এই স্বঘোষিত বিরাম চিহ্ন গুলোই ফিরে ফিরে আসে পুরনো সময়ের হিসেব নিকেষ করতে। সময় তার নতুন বাক্য লিখতে চলেছে আগামীকাল।
তবু সময়ের সাথে চিরন্তন থেকে যায় জীবনের সৌন্দর্য বোধ। সপ্তাহ, মাস বা বছরের গন্ডী তাকে অমলিন করতে পারে না।  



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...

জনগণমনঃ জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার ইতিহাস ও কিছু প্রশ্নের উত্তর!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ব্রহ্ম সঙ্গীত ‘ জনগণমন অধিনায়ক’ কে দেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে মান্যতা দেওয়ার সর্ব সম্মীলিত সিদ্ধান্ত হয় ১৯৫০ সালের ২৪ শে জানুয়ারি । কিন্তু কেন এত দেরী? দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও কেন তিন বছর সময় লেগেছিল জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন করতে? ‘ভারত বিধাতা’ শিরোনামে লেখা, স্বদেশ পর্যায় ভুক্ত (গীতবিতান অনুসারে) এই রবীন্দ্রগীতিটি কিভাবে -  দেশের জাতীয় সঙ্গীত হওয়ার পথে একটু একটু করে এগিয়ে গেল! ‘জনগনমন’র জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার নেপথ্য কাহিনীই আজ আমরা ফিরে দেখবো এই প্রবন্ধে।  ১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট - দীর্ঘ ২০০ বছর ধরে পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরে অবশেষে দেশবাসীর ভাগ্যাকাশে এসে উপস্থিত হোল বহু আকাঙ্খিত সেই দিনটি। উদিত হোল স্বাধীনতার নতুন সূর্যের।   স্বাধীন হোল দেশ। কিন্তু সদ্য ব্রিটিশ অধীনতা মুক্ত দুটি দেশ ভারত এবং পাকিস্থান তখনও পায় নি স্বতন্ত্র সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা। ১৯৪৭ এর ১৮ই জুলাই তারিখে লাগু হওয়া ভারতীয় স্বাধীনতা আইন অনুসারে নিজ নিজ সংবিধান প্রণয়নের আগে পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্থান এই দুটি ভূখণ্ড কমনওয়েলথ দেশের অধীনস্থ দুটি অধিরাজ্য হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে পারা...