সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সমরেশ বসু: এক শ্রম নিষ্ঠ কলমজীবী!

বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের শেষ লগ্নে, তাঁর আবির্ভাব। পরের তিন দশকে, মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি ছিলেন বাংলা সাহিত্যহের আঙিনায় নায়কের ন্যায় বিচরন করা এক দুরতিলঙ্ঘ্য জ্যোতিষ্কজেলে (১৯৪৯ -৫০) বসে লেখেন জীবনের প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস – ‘উত্তরঙ্গ’। তাঁর কথিত কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য হওয়া থেকে শুরু করে পার্টির সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সংস্রবই তাঁর জেল যাত্রার প্রধান কারণ ছিল। কারণ ১৯৪৯ এ, দেশে কমিউনিস্ট পার্টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় কিন্তু জেলমুক্তি হলেও ভাত কাপড়ের লড়াই থেকে মুক্তি পান না সহজে।  যদিও সে লড়াইয়ের বৃত্তকে কঠিন থেকে কঠিনতর করে তোলার পেছনে তাঁর নিজের দায় কিছু কম ছিল নাকারণ ততদিনে বন্ধু দেবশঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের বিবাহ বিচ্ছিন্না দিদি গৌরী দেবীকে ভালোবেসে বিয়ে করেছেন। অথচ হাতে কোনো কাজ নেই। কারণ জেল থেকে ফিরে আসার পরে একমাত্র সম্বল ইচ্ছাপুর অস্ত্র কারখানার চাকরিটাও চলে যায় তাঁরতবে আর চাকরি করা নয়। এবারে একজন পূর্ণ সময়ের লেখক হিসেবেই জীবিকা নির্বাহ করবেন বলে স্থির করলেন তিনি  
ছোটবেলায় পড়াশুনায় ভীষণ পরিশ্রমী ছিলেন বলে তেমন সুনাম নেইবরং উল্টোটাই সত্যি। পড়ায় ফাঁকি দিতেন বলে বাবা ছেলেকে ভিটে ছাড়া করেছিলেন। ১৪ বছর বয়সেই (১৯৩৮) জন্মস্থল ঢাকার অদূরে মুন্সিগঞ্জের রাজনগর থেকে তাঁকে চলে আসতে হয়েছিল নৈহাটিতে, দাদার কাছে। কিন্তু তাতেও পলায়নপর জীবনের ছবিটার কিছুমাত্র বদল হয়নি। ফিরে গেছেন ঢাকায়, বাবা ঢাকেশ্বরী কটন মিলে কাজে ঢুকিয়ে দিয়েছেন, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে কাজ ছেড়ে আবারও ফিরে এসেছেন নৈহাটিতে। 
একমাত্র বিবাহ পরবর্তী সময়েই, তাঁর জীবনে আসে সেই মহাবোধিসম পরিবর্তন। জগদ্দলের কাছে আতপুরের বস্তিতে ছোট্ট এক ছামরার ভাড়ার ঘরে নববিবাহিত স্ত্রীকে নিয়ে যখন থেকে থাকতে শুরু করলেন, বুঝতে পারলেন জীবনের দায়ের কাছে তিনি কতটা অসহায়। একমাত্র কঠিন শ্রমই পারে বেঁচে থাকার প্রথম শর্ত দুবেলার দু মুঠো ভাত জোগাড় করে দিতে। আর সেই শর্তেই কখনো বাজারে কাঁচা সব্জী নিয়ে বসেছেন তো কখনো বড়লোকদের পাড়ায়, মাথায় ঝাঁকা বয়ে  ডিম ফেরী করে বেড়িয়েছেন। কিন্তু তাতেও সপ্তাহের তিন চার দিন স্ত্রী গৌরী দেবী এবং তাঁকে অভুক্ত থাকতে হয়েছে।
রূঢ় বাস্তবের এই কঠিন জমিতে দাঁড়িয়েই শ্রমের প্রতি এক গভীর মমত্ব বোধের স্ফুরণ হতে দেখা যায় তাঁর মধ্যে। আর মূল্যবোধের এই বদলই আগামীদিনের এক শ্রম নিষ্ঠ তারকা কলমজীবীকে জন্ম দেয় বাংলা সাহিত্যের নক্ষত্র খচিত আকাশে, তিনি সমরেশ বসু।  

সাহিত্যিক সমরেশ বসুর শ্রম নিষ্ঠ হওয়ার অবশ্য আরও একটা কারণ ছিল সেটা কমিউনিস্ট পার্টির সক্রিয় সদস্য হওয়ার কারনে তিনি চটকল অঞ্চলের শ্রমজীবী মানুষের ক্লেশ খুব কাছ থেকে দেখেছেন শুধু নয় তাঁদের প্রতি তাঁর মনে এক দুর্লঙ্ঘ্য আবেগ মিশ্রিত অনুরাগ বোধের জাগরণ হতে দেখি আমরা পরবর্তীকালে যার প্রতিফলন পাওয়া যায় তাঁর লেখা বিভিন্ন উপন্যাস ও গল্পের মধ্যে লেখক জীবনের প্রথম আত্মপ্রকাশ (১৯৪৬, পরিচয় পত্রিকার শারদ সংখ্যা)  যে গল্পের হাত ধরে সেই ‘আদাব’ এর মধ্যেই আমরা দেখি গল্পের প্রধান দুই চরিত্র – একজন নৌকার মাঝি এবং অন্যজন সূতা কলের মজদুর দুজনই শ্রমজীবী প্রান্তিক মানুষ কিন্তু সে জন্য লেখক তাঁদের জীবন চিত্রের ওপর কোনোরকম গ্লানির ছাপ লাগতে দেন নাবরং তৎকালীন দাঙ্গা জর্জর সমাজ বাস্তবতার প্রেক্ষিতে দুজন দু ধর্মের মানুষ হওয়া সত্ত্বেও যেভাবে মনুষ্যত্বের টানে একে অপরের কাছাকাছি এসেছেন তাতে তাঁদের চরিত্রকেই মহিমান্বিত করে তুলেছেন লেখক।   পরবর্তী কালে ‘বি টি রোডের ধারে’ লিখেছেন। সেখানে বি টি রোডের ধারে বেড়ে ওঠা বস্তি ও তাতে বসবাস করা চটকল শ্রমিকদের সুখ দুঃখ কে উপজীব্য করেই কাহিনীর অগ্রগতি হতে দেখা গেছে। একই ভাবে ‘জগদ্দল’ উপন্যাসেও শ্রমজীবী মানুষের জীবন যাত্রার ছবি চিত্রিত করেছেন নিজের জীবনের সঙ্গে জুড়ে, হৃদয় দিয়ে অনুভব করা একাত্ম দৃষ্টিতে।।  সমরেশ নিজে ‘জগদ্দল’ উপন্যাস সম্পর্কে যে কথা বলেছেন তা একান্ত ভাবেই প্রণিধানযোগ্য এখানে। “চটকল কে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা পরিবর্তনের ধারায়, নানান পরিবর্তন অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সবশেষে মানুষেরই দিক চিহ্ন চেনার চেষ্টা”। এছাড়াও ‘শেকল ছেঁড়া হাতের খোঁজে’ উপন্যাসে সমরেশ লোহা কাটা মজুর নাওয়াল আগারিয়া কেই প্রধান চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছেন। একের পর এক গল্পে উপন্যাসে,  যত দিন গেছে, সমরেশ বসু শ্রমজীবী ও প্রান্তিক মানুষের জীবন আলেখ্য ফুটিয়ে তোলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ রুপকার হিসেবে প্রতিভাত হয়ে উঠেছেন। এর পেছনে তাঁর বহুকথিত কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে গড়ে ওঠা সুসম্পর্কের কথাই বলা হয়ে থাকে যার মধ্যে তাঁর তৎকালীন ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়া ছিল অন্যতম কারণ। আর এই সম্পর্কের সূত্রধর ছিলেন যিনি সেই সত্যসাধন দাশগুপ্তকেই সমরেশ তাঁর ‘বি টি রোডের ধারে’ উপন্যাস উৎসর্গ করেন।  

শুধু যে শ্রমজীবী মানুষের কথাই লিখলেন লেখক হৃদয়ের অন্তহীন করুনা দিয়ে তাই নয় সেই সব চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে নিজেও যেন এক অক্লান্ত শ্রমিকের মতই দিবারাত্র পরিশ্রম করে চললেন। এত শ্রম নিষ্ঠ লেখক বোধহয় সাহিত্য জগতে খুব কমই দেখা গেছে জীবনের শেষ অসমাপ্ত জীবনোপন্যাস ‘দেখি নাই ফিরে’ তেও সেই একই পরম্পরার পুনরাবৃত্তি হতে দেখা গেল। দশ বছর ধরে নিরলস পরিশ্রমের এক নজির গড়ে তুললেন ধ্রুপদী এই উপন্যাসের প্রয়োজনীয় রসদ জোগাড় করতে গিয়েপ্রখ্যাত চিত্র শিল্পী তথা ভাস্কর রামকিঙ্কর বেজের জীবন কাহিনী নির্ভর এই উপন্যাসের উপাদান সংগ্রহে সমরেশ বসু ছিলেন এককথায় অবিশ্রান্ত এবং আপোষহীন।  এই উদ্দেশ্যে তিনি রামকিঙ্করের বাল্য ও তৎ পরবর্তী জীবনের দুই লীলাভূমি বাঁকুড়া ও শান্তিনিকেতন ছুটে গেছেন অসংখ্য বার। বাঁকুড়ার যোগী পাড়ায় যেখানে রামকিঙ্করের জন্মভিটে, সেখান থেকে নিষিদ্ধ পল্লীর মধ্যে দিয়ে তার পাঠশালায় যাওয়ার শর্ট কাট রাস্তা, দ্বারকেশ্বর নদীর পাড়, এমনকি ১৯ বছর বয়সে যেদিন তরুন রামকিঙ্কর শান্তিনিকেতন যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে রওনা দিলেন - কোন রাস্তা দিয়ে গেছিলেন তিনি এবং কি পোশাক পরেছিলেন সব পুঙ্খানুপুঙ্খ জানতে হবে তাঁকে। এই ব্যাপারে সমরেশ যেন ক্লান্তিহীন এবং অকুণ্ঠ । কাহিনীর পুনঃনির্মাণে কোনোরকম খামতি তাঁর বরদাস্ত নয়।  ‘দেশ’ পত্রিকার তৎকালীন সম্পাদক সাগরময় ঘোষ, যার  সম্পাদনায় ‘দেখি নাই ফিরে’ প্রথম ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হয় ‘দেশ’ এর পাতায়, খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন সমরেশ বসুর সেই ক্ষান্তিহীন নিবিড় প্রয়াসের দূরভিসংবদ্ধ সময়কেসমরেশ বসুর মৃত্যুর চার বছর পরে, ১৯৯২ সালে প্রথম গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ‘দেখি নাই ফিরে’। সাগরময় ঘোষ সেই বই এর ভূমিকায় সমরেশের নিষ্ঠার কথা উল্লেখ করেছেন সবিস্তারে। “কোথাও কোনো ফাঁকি নেই সমরেশের কাজের”। “রামকিঙ্করের মুখের ভাষা নির্ভুল করতে বাঁকুড়ার আঞ্চলিক ভাষা, কথ্য ঝোঁক সব রপ্ত করছেন দিবারাত্র মহড়া দিয়ে। ঘরে-বাইরে, আড্ডা–আসরেও অনর্গল বলছেন বাঁকুড়ার কথা।  ঘরের দেওয়ালে টাঙিয়ে রাখেন সেখানকার শব্দমালা, টেবিলে ছড়ানো বাঁকুড়ার মানচিত্র। সব নির্ভুল মেলাতে চাইছেন। ফলে লেখা শুরু করতে দেরি হয়ে যাচ্ছিল ওঁর”, ভূমিকায় লিখেছেন সাগরময় ঘোষ।
তথ্যের অপ্রতুলতা কাটিয়ে নিখুত ভাবে ফুটিয়ে তোলার নেশায় সমরেশের শরীর দিনে দিনে ভেঙ্গে পড়ছিল কিন্তু তাঁর সেদিকে খেয়াল ছিল না এমনকি বার কয়েক সম্পাদক সাগরময় ঘোষের কাছে চিঠি লিখে তাঁর সময়মত লেখা শেষ না করতে পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ পর্যন্ত করেছেন কিন্তু তথ্য সংগ্রহে কোনোরকম আপোষ করতে তিনি নারাজ লেখাটা কিছু over due হয়ে যাচ্ছে” বলে খেদ প্রকাশ করেছেন আবার একই সঙ্গে তিনি যে এক্ষেত্রে ‘একেবারেই নিরুপায়’ সে কথাও সম্পাদককে মনে করিয়ে দিয়েছেন চিঠিতে
ভূমিকায় সাগরময় ঘোষ লিখছেন, “আমার উদ্বেগ হচ্ছিল ওঁর শরীর নিয়ে। অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। চষে ফেলছেন বাঁকুড়া, শান্তিনিকেতন”। শুধু কি বাঁকুড়া, শান্তিনিকেতন! তথ্য সংগ্রহে ছুটে গেছেন দিল্লি গোয়ালিয়র, আগরতলায়।  কারণ তিনি যার জীবন নিয়ে লিখছেন তিনি একজন শিল্পী, তাই তাঁর শিল্প শৈলী বোঝা ভীষণ জরুরি। রামকিঙ্করের হঠাৎ মৃত্যু হওয়াতে, সমরেশকে যেন আরও বেশি পরিশ্রম করতে হচ্ছিল। দিল্লি গিয়েছেন রামকিঙ্করের ছাত্র সমরেন্দ্রের সঙ্গে দেখা করতে। কারণ দিল্লিতে যক্ষ – যক্ষীর মূর্তি তৈরি করতে গিয়ে মূর্তি নির্মাণের উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত কুলু উপত্যকার পাথর কে কি ভাবে রামকিঙ্কর ছেনি বাঁটুলী দিয়ে কেটে তার শিল্পিত রূপ ফুটিয়ে তুলেছিলেন সেটা সমরেন্দ্রের কাজ দেখে বুঝে নিতে চাইছিলেন তিনি গোয়ালিয়র গিয়ে দেখা করেছেন ধীরেন দেব বর্মার ছেলে প্রণব দেব বর্মার সঙ্গে। সমকালীন এক শিল্পী যিনি সদ্য প্রয়াত হয়েছেন তাঁর সম্পর্কে তথ্যের অপ্রতুলতা কাটিয়ে ওঠা সমরেশের কাছে একটা বড় চ্যালেঞ্জ ছিল।  এই উদ্দেশ্যে তিনি শুধু ছাত্রদের মধ্যেই তাঁর সাক্ষাৎ পর্ব সীমাবদ্ধ না রেখে দেখা করেছেন রামকিঙ্করের একদা সতীর্থদের সঙ্গে ওদিল্লিতে গিয়ে কথা বলেছেন বিনোদ বিহারী মুখোপাধ্যায়, শঙ্খ চৌধুরী ও বনবিহারী ঘোষেদের সঙ্গে। 
আগরতলায় গিয়ে কথা বলেছেন শিল্পী বিপুলকান্তি সাহার সঙ্গে। দেখা করেছেন রামকিঙ্করের দ্বিতীয় স্ত্রী রাধারানীর সঙ্গে। এর মধ্যে মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। উদ্বিগ্ন সাগরময় ঘোষ বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সমরেশকে। কিন্তু তিনি “অবিশ্রান্ত এবং একই সঙ্গে অতৃপ্ত ও”! লিখেছেন সাগরময় ঘোষ।  এত পরিশ্রমের পরেও সাগরময় ঘোষ কে চিঠি লিখে সমরেশ জানাচ্ছেন, “রামকিঙ্কর – যে ভাবে এগিয়ে যেতে পারা উচিত, পারছি না। কেবলই মনে একটা দ্বন্দ কাজ করছে – আমি সব খুঁটিনাটি বিষয় এখনও আয়ত্ত করতে পারি নি”। প্রকৃতই এক শ্রম নিষ্ঠ কলমজীবীর আত্মছলনাহীন বয়ান শুনতে পাই এই কথার মধ্যে। 




তথ্য সূত্র ঃ  
কালকূট ও বাংলা সাহিত্য, শ্রীতম মজুমদার।
ইতিহাস এষণা, সৌমিত্র শ্রীমানী
‘দেখি নাই ফিরে’ ১৯৯২, প্রথম সংস্করণ। (আনন্দ পাবলিশার্স)


সমরেশ বসুর সম্পর্কে আরও লেখা পড়ুনঃ 
বিজ্ঞাপন লেখকের সংশয় সত্যি হোল সমরেশের জীবনে! 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট, কোথায় ছিলেন গান্ধীজী?

১৫০/বি বেলেঘাটা মেন রোড। শিয়ালদহ স্টেশন ও ই-এম বাইপাস এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন কারী মূল রাস্তা - বেলেঘাটা মেন রোড তথা সুরেশ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় রোডের ওপর পড়া এই বিশেষ ঠিকানা টি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে এক গৌরবময় স্মৃতির সাক্ষ্য বহন করছে । বিশেষ করে, প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময় আসন্ন হলে, এই ঠিকানার কথা স্মরণ না করে থাকা যা য় না। কারণ ১৯৪৭ এ গোটা দেশ যখন স্বাধীনতার আনন্দ উদযাপনে ব্যস্ত, বিশেষ করে রাজধানী দিল্লিতে স্বাধীনতা লাভের (১৫ ই আগস্ট) দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখতে আয়োজিত হয়েছে অভূতপূর্ব রাজকীয় সমারোহের - যার শুভ সূচনা হয়েছে, ১৪ ই আগস্টের মধ্যরাতে; ১৫ তারিখ পদার্পণ করতেই দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর ঐতিহাসিক বক্তৃতা দিয়ে শুভারম্ভ হয়েছে স্বাধীনতা দিবস পালনের মহা নির্ঘণ্ট। এই উচ্ছ্বাস যদিও কাঙ্ক্ষিতই ছিল। কারণ দীর্ঘ ২০০ বছরের পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরেই দেশবাসীর কাছে এসে পৌঁছেছিল সে বিরল মাহেন্দ্রক্ষণ। সমাগত হয়েছিল সেই মহা মুহূর্ত যখন প্রায় শত বর্ষ ধরে চলা স্বাধীনতাকামী মহাযজ্ঞে মুক্তিলাভের সিদ্ধি স্পর্শ করছিল তার চূড়ান্ত শিখর দেশ। কিন্তু এই যজ...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...