সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

প্লাস্টিক বিউটি!

স্বপ্নের পেলবতা মনে হয় ছুঁয়ে দেখি ভাবি লজ্জা পাবে হয়তো, যেমন পায় লজ্জাবতী
এখন তো সময় বদলেছে। রোবটেরাও নাকি আজকাল প্রেম করছে। যন্ত্রের মস্তিস্কে 'সখি ভালোবাসা কারে কয়' এই কূট প্রশ্নটাকে একবার সেট করতে পারলেই, কেল্লাফতে।
ভগবান তো অনেক আগেই প্রস্তরীভুত হয়েছিলেন, এবার আরো ছিমছাম আরোও হ্যান্ডি, সবচাইতে লেটেস্ট- ভগবানের প্লাস্টিক অবতারে পরিনত হওয়া। অবিনশ্বর, অপরূপ কোনো অবস্থাতেই টাল না খাওয়া পরম শক্তিধর, অবতার শ্রেষ্ঠ পুরুষোত্তম। 'ভক্তের ভগবান' কথাটা চালু আছে বটে তবে ঈশ্বর সময়ের সঙ্গে সঙ্গে 'শর্তাবলী প্রযোজ্য' বলে একটা ট্যাগলাইন ছোট্ট করে হলেও জুড়ে নিয়েছেন নিজের ইমেজের সঙ্গে। তা সে ভক্তের হৃদয়ে ভগবান বাস করে বলে যতই বাজার গরম করার চেষ্টা হোক না কেন ভগবান কিন্তু অবিচল। একদা ভৃগু মুনি ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে সটান ভগবান বিষ্ণুর বুকেই পদাঘাত করে বসেছিলেন। ভগবান কিচ্ছুটি মনে করেননি। বরং যত দিন গেছে ভগবান তাঁর সহ্য শক্তি বাড়িয়েছেন। যার ফল তাঁর এই প্লাস্টিকত্ব প্রাপ্তি।

এদিকে ভক্তদের চোখের জলে প্রায় গোটা পৃথিবী ভেসে যাওয়ার জোগাড়। একে উষ্ণায়নের জলে কি হয় কি হয় অবস্থা তার উপরে আবার এইসব মেকি ভক্তদের দিনরাত ঠোঁট ফোলানো নাকি কান্না। পৃথিবী তো রসাতলে যাবেই
রামের চায়ের দোকানে বসে, মন্টু দা। এক হাতে তাঁর জ্বলন্ত সিগারেট আর অন্য হাতে চা ভর্তি ছোট্ট একটা প্লাস্টিকের কাপ। সব শুনে, মন্টু দা' ঠোঁটে প্রায় বিশ্বকাপ জয়ের হাঁসি। উঁহু, ভগবান সব জানেন। অন্তর্যামী তিনি তো আর এমনি এমনি হন নি।
এই ধরাধাম যদি সত্যি সত্যিই আগামী দিনে জলে ভেসে যায় তখন কে বাঁচাবে শুনি?
আগেভাগেই তাই দেবলোকের বুদ্ধিমান দেবতারা প্রযুক্তিবিদ বিশ্বকর্মা কে দিয়ে প্লাস্টিক বানিয়ে রেখেছেন। জাহাজেও তো লাইফ বোট রাখতে হয় নাকি। টাইটানিকেও ছিল।
সে প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করার কথা বলে যতই চিৎকার কর আর শোরগোল পাকাও না কেন লাভ কিছুই হবে না। কিছু উদগ্র আঁতেল সবসময় থাকে। আগেও ছিল, এখনোও আছে, আগামীতেও থাকবে।
কত কোটি পান্ডুলিপি ওদের ওই অতি বিপ্লবী আঁতেলমির জন্য নষ্ট হয়ে গেছে, কত শিল্প কর্ম, ভাস্কর্য ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে তার হিসেব ওরা রাখে? বললেই হলো?
যদি ওগুলো সব প্লাস্টিক হতো ভাবুন তো একবার এই প্রত্নতাত্ত্বিক পন্ডিতদের খামোখা এত পয়সা মাসে মাসে গুণতে হতো কি!
আরে বোকা এই মর্ত্যলোকে যদি অমরত্ব পেতে চাও তবে প্লাস্টিক হও। প্লাস্টিক ভগবানের কাছে তাই প্লাস্টিক মানুষ হওয়ার কাতর প্রার্থনা জানাও।
পৃথিবীর আদি ক্লাসিক বেদ, উপনিষদ কেমন প্লাস্টিকের প্রলেপ দেওয়া কভারপেজের তলায় সেঁধিয়ে গেছে। দেখেও কি শিক্ষা হয় না!
দেবী সরস্বতীর বরে ভবিষ্যতে সাহিত্য সাধনাও প্লাস্টিক হয়ে যাবে। অর্থাৎ অর্ডার দিয়ে আপনি অমর প্লাস্টিক সাহিত্য বানাতে পারবেন।
আর কি!
উদ্বাহু হয়ে নাচতে থাকুন। অন্তত নাচা প্র্যাকটিস করুন।
যে কথা বলছিলাম, প্লাস্টিক বিউটি। একমাত্র বিউটি যেটি বিমূর্ত নয়। দেখা যায়, ছোঁয়া যায়, জড়িয়ে আদর করা যায়। কোনো আপত্তি করে না। দেখায় না কোনো রাগ কিংবা বিরক্তি। অভিমান থাকে সুদূর স্পর্শ। বলে না কোনো ভালোলাগা কিংবা মন্দলাগার কথাও
প্লাস্টিক সুন্দর কিংবা প্লাস্টিক সুন্দরীদের জয় হোক

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...

জনগণমনঃ জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার ইতিহাস ও কিছু প্রশ্নের উত্তর!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ব্রহ্ম সঙ্গীত ‘ জনগণমন অধিনায়ক’ কে দেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে মান্যতা দেওয়ার সর্ব সম্মীলিত সিদ্ধান্ত হয় ১৯৫০ সালের ২৪ শে জানুয়ারি । কিন্তু কেন এত দেরী? দেশ স্বাধীন হওয়ার পরেও কেন তিন বছর সময় লেগেছিল জাতীয় সঙ্গীত নির্বাচন করতে? ‘ভারত বিধাতা’ শিরোনামে লেখা, স্বদেশ পর্যায় ভুক্ত (গীতবিতান অনুসারে) এই রবীন্দ্রগীতিটি কিভাবে -  দেশের জাতীয় সঙ্গীত হওয়ার পথে একটু একটু করে এগিয়ে গেল! ‘জনগনমন’র জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠার নেপথ্য কাহিনীই আজ আমরা ফিরে দেখবো এই প্রবন্ধে।  ১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট - দীর্ঘ ২০০ বছর ধরে পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরে অবশেষে দেশবাসীর ভাগ্যাকাশে এসে উপস্থিত হোল বহু আকাঙ্খিত সেই দিনটি। উদিত হোল স্বাধীনতার নতুন সূর্যের।   স্বাধীন হোল দেশ। কিন্তু সদ্য ব্রিটিশ অধীনতা মুক্ত দুটি দেশ ভারত এবং পাকিস্থান তখনও পায় নি স্বতন্ত্র সার্বভৌম রাষ্ট্রের মর্যাদা। ১৯৪৭ এর ১৮ই জুলাই তারিখে লাগু হওয়া ভারতীয় স্বাধীনতা আইন অনুসারে নিজ নিজ সংবিধান প্রণয়নের আগে পর্যন্ত ভারত ও পাকিস্থান এই দুটি ভূখণ্ড কমনওয়েলথ দেশের অধীনস্থ দুটি অধিরাজ্য হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে পারা...