সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রবীন্দ্রনাথের চোখে স্বামীজী! সম্পর্কের ওয়ানয়ে!

সুন্দরবনের মৌচাক থেকে আহৃত মধু কোলকাতার বাজার ঘুরে তবে ঝড়খালির হাটে এসে পৌঁছায় মধুগ্রাহীদের সামনে তার রূপ ও রসের উৎকর্ষতা তুলে ধরতে। জোড়াসাঁকোর রবীন্দ্রনাথের কাছে সিমলা স্ট্রীটের নরেন্দ্রনাথ দত্ত ও ছিলেন তেমনই মৌচাক ভাঙা মধু, রসাস্বাদনে অনুপযুক্ত। যতদিন পর্যন্ত না পাশের পাড়ার দুরন্ত ছেলেটি সন্ন্যাসীর বেশ ধরে স্বামীজী হচ্ছেন ততদিন অবধি রবীন্দ্রনাথের কাছে তিনি ‘মেঘে ঢাকা তারা’র মতই অনুন্মোচিত প্রতিভা।  নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে শিকাগো ফেরত বিবেকানন্দই সর্বপ্রথম রবীন্দ্রনাথের চোখে এক বিশেষ অনুপেক্ষণীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিভাত হতে সক্ষম হন। সে হিসেবে বিবেকানন্দের ১৮৯৩ সালের শিকাগো ধর্মসভায় রাখা সেই বিখ্যাত বক্তৃতাদান এবং তৎপরবর্তী সময়ে আমেরিকা এবং ইউরোপীয় দেশগুলিতে বিবেকানন্দকে নিয়ে তুমুল উৎসাহ এবং উদ্দীপনার পরিবেশ তৈরি হওয়া ছিল ১৯১৩ য় রবীন্দ্রনাথের নোবেল প্রাপ্তির প্রায় দুই দশক আগের ঘটনা। বিশ্বজয়ের চার বছর পরে, ১৮৯৭ য়ে স্বামীজী কোলকাতায় ফিরলে তাঁকে ঘিরে যে উৎসবের বাতাবরন তৈরি হয় তা ছিল অভূতপূর্ব। বয়সে বিবেকানন্দের চেয়ে দুবছরের বড় হলেও রবীন্দ্রনাথ তখন নেহাতই এক অখ্যাত কবি। কোলকাতার বুধমণ্ডলের মধ্যেই তাঁর পরিচিতির ব্যাপ্তি সীমাবদ্ধ। তাই দেখা যাচ্ছে, স্বামীজীর বিশ্ববন্দিত হয়ে ফিরে আসার ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় (২৮ শে ফেব্রুয়ারী, ১৮৯৭) শোভাবাজার রাজবাড়িতে আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় ঠাকুর বাড়ির সদস্য হিসেবে জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর বা গগনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপস্থিতির কথা জানা গেলেও রবীন্দ্রনাথের হাজিরা নিয়ে কেউই ভাবিত হন না। কারণ রবীন্দ্রনাথ তখনও পাদপ্রদীপের আলোয় সেভাবে আসেননি। ১৯১৩ য় নোবেল জয়ের পরেই, বিবেকানন্দের সম্পর্কে তাঁর মুল্যায়ন কি সেটা জানতে সবাই আগ্রহী হয়ে ওঠেন।

ইতিমধ্যে ১৯০২ এর ৪ ঠা জুলাই স্বামীজীর অকাল প্রয়ান হলে রবীন্দ্রনাথ ভবানীপুরের সাউথ সুবার্বন স্কুলে আয়োজিত  শোকসভায় সভাপতিত্ব করেন বটে তবে সভাপতির ভাষণের কোনো প্রামানিক রেকর্ড রাখার কথা সেসময় কেউই সেভাবে বিবেচনা করেন নি। প্রসঙ্গত এই সভায় রবীন্দ্রনাথকে সভাপতি মনোনীত করার পেছনেও ভগিনী নিবেদিতার প্রধান ভূমিকা ছিল বলে মনে করা হয়। কোলকাতায় আসার পর, ভগিনী নিবেদিতার সঙ্গে যতজন গুণী মানুষের সখ্যতা গড়ে ওঠে তাঁদের মধ্যে বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু এবং সাহিত্য জগতের রবীন্দ্রনাথের নাম অন্যতম। আগামী দিনে রবীন্দ্রনাথ যে বাংলার সাহিত্য সৃষ্টির জগতে প্রতিনিধিত্ব করার মত জায়গায় থাকবেন এই ব্যাপারে মোটের ওপরে নিশ্চিতই ছিলেন নিবেদিতা। এবং এই সূত্রে, বিবেকানন্দ এবং রবীন্দ্রনাথের মধ্যে যোগসাধনের প্রয়োজনীয়তার কথা অন্তর থেকে উপলব্ধি করতেন নিবেদিতা। তবে এই বিষয়ে আলোকপাত করা আজকের প্রবন্ধের উদ্দেশ্য নয়।
মূলত রবীন্দ্রনাথ স্বামীজী কে কি চোখে দেখতেন সেই নিয়েই আমার এ পর্যায়ের খোঁজ সীমাবদ্ধ থাকবে। ভালো করে দেখলে, রবীন্দ্রনাথ এবং বিবেকানন্দ এই দুই সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ মানুষের মধ্যে সম্পর্কের স্রোত কখনোই দ্বিমুখী ছিল না। কারণ মাত্র ৩৯ বছর বয়সে  গত হয়ে যাওয়ার পরে বিবেকানন্দের দিক থেকে রবীন্দ্রনাথকে বিচারের সুযোগ একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়। যদিও রবীন্দ্রনাথের লেখা গানের
ভীষণ বড় ভক্ত ছিলেন বিবেকানন্দ কারণ ১৮৮৭’র আগস্ট মাসে তখনও নরেন্দ্রনাথ দত্ত স্বামীজী হননি, বৈষ্ণবচরণ বসাকের সঙ্গে যৌথ সম্পাদনায় ‘সঙ্গীতকল্পতরু’ নামে একটি গানের বই সম্পাদনা করেন, রবীন্দ্রনাথের লেখা ১০ টি গান সেই সংকলনে স্থান পায়। যে গানগুলি ঠাকুর রামকৃষ্ণকে প্রায়ই গেয়ে শোনাতেন বিবেকানন্দ।  যেমন – ‘গগনের থালে রবি-চন্দ্র-দীপক জ্বলে’, ‘তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা’, কিংবা মহাসিংহাসনে বসি শুনিছ হে বিশ্বপিত প্রমুখ।    
এছাড়া বিবেকানন্দ তাঁর জীবদ্দশায় রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে প্রায় নিশ্চুপই ছিলেন। এই দুই মহারথীর মধ্যে একবারই সম্পর্কের দ্বিমুখ খুলে যায়। সেটা বিবেকানন্দের মৃত্যুর কিছু সময়ের আগে। বিংশ শতব্দীর শুরুর দিক তখন, বাংলার শিল্প সংস্কৃতিতে নবজাগরণের নতুন ঢেউ এসে পড়ার মুখে। সেই রকম এক সন্ধিক্ষণে, ভারতকে জানার উদ্দেশ্য নিয়ে কোলকাতায় এলেন ওকাকুরা কাকুজোও নামের এক জাপানী শিল্প সমালোচক। তখন কলকাতাই ভারতের প্রশাসনিক রাজধানী। ১০ মাসের তাঁর কোলকাতা স্থিতি কালে তিনি প্রথমেই দেখা করেন স্বামীজীর সঙ্গে, উল্লেখ্য স্বামীজী সেই প্রথম রবীন্দ্রনাথের সম্পর্কে তাঁর কথিত নীরবতা ভেঙে তাঁকে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে দেখা করার কথা বলেছিলেন। কি বলেছিলেন স্বামীজী তাঁকে? “
এখানে আমার সঙ্গে আপনার কিছুই করণীয় নেই। এখানে তো সর্বস্ব ত্যাগ। আপনি রবীন্দ্রনাথের কাছে যান। তিনি এখনও জীবনের মধ্যে আছেন”।
স্বামীজীর কথা মতো ওকাকুরা দেখা করেন রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে। রবীন্দ্রনাথ তারপরে বিবেকানন্দের সম্পর্কে কি বলেছিলেন তা বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য এ ক্ষেত্রে।  
“If you want to know India, study Vivekananda. There is in him everything positive, nothing negative”.
সেই শুরু। তারপরে বিভিন্ন সময়ে রবীন্দ্রনাথকে দেখা গেছে বিবেকানন্দ সম্পর্কে মুখর হতে। কখনো প্রবন্ধে, কখনো বক্তৃতায় কখনো বা নিকটজনকে লেখা পত্রে  তিনি বারবার বিবেকানন্দ প্রসঙ্গে সরব হয়েছেন।


রবীন্দ্রনাথের লেখা পাণ্ডুলিপি! 
এ ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে উল্লেখ্যনীয় রবীন্দ্রনাথের লেখা প্রবন্ধ ‘পূর্ব ও পশ্চিম’, যেটি তিনি ব্রাহ্মসমাজ মন্দিরে, সর্বপ্রথম পাঠ করেন ছাত্রদের সামনে। পরে এই প্রবন্ধটি ‘প্রবাসী’ ও ‘ভারতী’ পত্রিকায় একযোগে প্রকাশিত হয় ১৩১৫’র ভাদ্র সংখ্যায়। এই প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ বিবেকানন্দকে পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে যোগ্য সেতুবন্ধনকারী রূপে অভিহিত করেন। “অল্পদিন পূর্বে বাংলাদেশে যে মহাত্মার মৃত্যু হইয়াছে, সেই বিবেকানন্দও পূর্ব ও পশ্চিমকে দক্ষিণ ও বামে রাখিয়া মাঝখানে দাঁড়াইতে পারিয়াছিলেন। ভারতবর্ষের ইতিহাসের মধ্যে পাশ্চাত্যকে অস্বীকার করিয়া ভারতবর্ষকে সংকীর্ণ সংস্কারের মধ্যে চিরকালের জন্য সংকুচিত করা তাঁহার জীবনের উপদেশ নহে। গ্রহণ করিবার, মিলন করিবার, সৃজন করিবার প্রতিভাই তাঁহার ছিল। তিনি ভারতবর্ষের সাধনাকে পশ্চিমে এবং পশ্চিমের সাধনাকে ভারতবর্ষে দিবার ও লইবার পথ রচনার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করিয়াছেন”।

‘প্রাচ্য ও প্রতীচ্য’ (বঙ্গদর্শন, ১৩১৫ ভাদ্র সংখ্যা) নামের আর একটি প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ বিবেকানন্দকে ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ মনীষীদের মধ্যে একজন বলে উল্লেখ করতে পিছপা হন না। রবীন্দ্রনাথ এই প্রবন্ধে বিবেকানন্দকে চিন্তাবিদ ও সমাজ সংস্কারক রামমোহন রায়ের সঙ্গে তুলনা করেন।
কখনো সরলাবালা সরকারকে লেখা পত্রে (১৯২৮, ৯ই এপ্রিল) বিবেকানন্দের ভারতীয় তরুন সমাজের মধ্যে বিপুল ইতিবাচক প্রভাবের কথা স্মরন করে আপ্লুত শব্দ বর্ষণ করেন তো কখনো ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা দেবীকে (১৯৩০, ১৫ই জানুয়ারি) লেখা চিঠিতে বিবেকানন্দ প্রতিষ্ঠিত বেলুড়মঠের কথা তুলে শ্রদ্ধাপ্লুত হয়ে পড়েন। 
বেলুড়মঠে শুনেছি, বিবেকানন্দের ছবির সামনে রোজ অম্বুরি তামাকের ভোগ দেওয়া হয়।
কলম ধরেছেন স্বামীজী প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের মুখপত্র ‘উদ্বোধন’ পত্রিকাতেও। স্বামী অশোকানন্দকে লেখা চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ বিবেকানন্দের বানী সম্পর্কে ভূয়সী প্রশংসা করে লেখেন – বিবেকানন্দের বানী সম্পূর্ণ মানুষের উদ্বোধন বলেই কর্মের ও ত্যাগের মধ্য দিয়ে মুক্তির বিচিত্র পথ দেখায়।
কিন্তু এসবের পরেও বিবেকানন্দ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে অস্বচ্ছতা কাটে না। হয়তো বিবেকানন্দের আয়ু আরও একটু দীর্ঘায়িত হলে এই দুই মহান মনীষী একে অপরকে সরজমিনে পরখ করে দেখার নিরিখে এই দুর্বোধ্য ধোঁয়াশা কেটে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা তৈরি হতে পারতো।  

তথ্য সূত্র -

প্রবন্ধ পঞ্চাশৎ প্রসঙ্গ রবীন্দ্রনাথ: অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য 

বীন্দ্র পত্র সমগ্র: কালানুক্রমিক, বিজন ঘোষাল। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট, কোথায় ছিলেন গান্ধীজী?

১৫০/বি বেলেঘাটা মেন রোড। শিয়ালদহ স্টেশন ও ই-এম বাইপাস এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন কারী মূল রাস্তা - বেলেঘাটা মেন রোড তথা সুরেশ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় রোডের ওপর পড়া এই বিশেষ ঠিকানা টি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে এক গৌরবময় স্মৃতির সাক্ষ্য বহন করছে । বিশেষ করে, প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময় আসন্ন হলে, এই ঠিকানার কথা স্মরণ না করে থাকা যা য় না। কারণ ১৯৪৭ এ গোটা দেশ যখন স্বাধীনতার আনন্দ উদযাপনে ব্যস্ত, বিশেষ করে রাজধানী দিল্লিতে স্বাধীনতা লাভের (১৫ ই আগস্ট) দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখতে আয়োজিত হয়েছে অভূতপূর্ব রাজকীয় সমারোহের - যার শুভ সূচনা হয়েছে, ১৪ ই আগস্টের মধ্যরাতে; ১৫ তারিখ পদার্পণ করতেই দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর ঐতিহাসিক বক্তৃতা দিয়ে শুভারম্ভ হয়েছে স্বাধীনতা দিবস পালনের মহা নির্ঘণ্ট। এই উচ্ছ্বাস যদিও কাঙ্ক্ষিতই ছিল। কারণ দীর্ঘ ২০০ বছরের পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরেই দেশবাসীর কাছে এসে পৌঁছেছিল সে বিরল মাহেন্দ্রক্ষণ। সমাগত হয়েছিল সেই মহা মুহূর্ত যখন প্রায় শত বর্ষ ধরে চলা স্বাধীনতাকামী মহাযজ্ঞে মুক্তিলাভের সিদ্ধি স্পর্শ করছিল তার চূড়ান্ত শিখর দেশ। কিন্তু এই যজ...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...