সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সুভাষের মহানিষ্ক্রমণ ও সংবাদ পত্রে প্রকাশিত খবর!!


সুভাষের মহানিষ্ক্রমণের (১৬ই জানুয়ারী, ১৯৪১)  খবর সর্ব সমক্ষে আসে ১০ দিন বাদে, ২৬ শে জানুয়ারীর দিন, রবিবার। যদিও  ২৬ তারিখের অনেক আগেই সুভাষের এই মহানিষ্ক্রমণের খবরটি সর্বসমক্ষে চলে আসার একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। দিনটি ছিল ২০ শে জানুয়ারী, সোমবার। সুভাষের মহানিষ্ক্রমণের তিন দিন পরে। সেদিন আলিপুর কোর্টে সুভাষের মামলা ওঠার কথা ছিল এবং সে কারনে সুভাষকে কোর্টে হাজিরা দিতে হত।  আগেই বলেছি, সুভাষ তাঁর ভাইপো শিশির কুমার বসুর কাছে, খুব বেশী হলে তিন থেকে চার দিনের মধ্যে ‘পগার পার হয়ে’ যাবেন বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন। যদিও একই সঙ্গে তাঁর আদালতে হাজির হওয়ার দিনটিকে, যে করে হোক সপ্তাহ খানিক পিছিয়ে দেওয়ারও কথা বলে গিয়েছিলেন তিনি। প্রসঙ্গত সুভাষ ‘পগার পার’ হয়ে যাওয়া মানে আফগান সীমান্ত পেরিয়ে তদানীন্তন সোভিয়েত টেরিটরির মধ্যে প্রবেশ করাকেই বুঝিয়েছিলেন। যাই হোক সুভাষের কৌঁসুলি দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সে যাত্রায় অবশ্য সুভাষ রক্ষা পেয়ে গিয়েছিলেন। কারণ দেবব্রত বাবু ম্যাজিস্ট্রেটকে বুঝিয়ে আরও এক সপ্তাহ সময় চেয়ে নিয়েছিলেন তাঁর ছদ্ম গৃহ বন্দী মক্কেলের জন্যে। পরে জানা গেছে, পেশোয়ার থেকে আফগান সীমান্ত পেরোতে সত্যি সত্যিই কয়েকদিন দেরী হয়ে গিয়েছিল সুভাষের।

যাই হোক, ২৬ তারিখে যেদিন ঘটনা জানাজানি হোল, পূর্ব পরিকল্পনা মতো সুভাষের মেজদা বাড়িতে ছিলেন না। রিষড়ার বাগান বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন, সপ্তাহন্তের ছুটি কাটানোর নাম করে। দিনটি ছিল রবিবার।  প্রসঙ্গত শিশির কুমার বসুও সেদিন তাঁর বাবার সঙ্গে রিষড়ার বাগানবাড়িতেই ছিলেন। যথারীতি জানাজানি হওয়ার পরে, রিষড়ায় খবরটি এসে পৌঁছতে প্রায় বেলা দু টা বেজে যায়। খবর নিয়ে আসে, শিশির কুমার বসুর অন্য দুই খুড়তুতো ভাই অরবিন্দ এবং গণেশ। এসেই বলতে শুরু করে, “ভয়ঙ্কর খবর; রাঙাকাকাবাবুকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না”। বলাই বাহুল্য, খবর পাওয়ার পরেই মেজদা শরৎ বসু চলে আসেন এলগিন রোডের বাড়িতে।  আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব সবাই এসে পৌঁছায় একে একে। এসে পৌঁছায়, খবরের গন্ধ  পাওয়া কিছু সাংবাদিকেরাও।  এদের মধ্যে আনন্দবাজার পত্রিকার সুরেশ চন্দ্র মজুমদার, নৃপেন্দ্রচন্দ্র মিত্র ও এ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের নৃপেন ঘোষরা ছিলেন অন্যতম।
যদিও সুভাষের গৃহত্যাগের ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক ভাবে জানানো হয় আরও একটু পরে। পাকাপাকি ভাবে এই নিয়ে কথা বলতে, সেইদিনই সন্ধ্যায় শরৎ বসু তাঁর ১ নং উডবার্ন পার্কের বাড়িতে ডেকে নেন দুজন সাংবাদিককে। একজন আনন্দবাজারের সুরেশ চন্দ্র মজুমদার এবং অন্য জন হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ডের। স্বভাবতই খবর কাগজে সুভাষের গৃহত্যাগ সংক্রান্ত খবরটি ছেপে বেরোয় ২৭ শে জানুয়ারীর সকালে। উল্লেখ্য আনন্দবাজার পত্রিকা এবং ইংরেজি দৈনিক হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ড ব্যতীত অন্য কোনো পত্রিকায় কিন্তু এই খবরটি প্রকাশিত হয়নি। সম্প্রতি নেতাজী ভবন মেট্রো স্টেশনের দেওয়ালে এই দুটি পত্রিকার পেপার কাটিং দেখতে পেয়ে যারপরনাই অবাক হয়ে যাই আমি। কারণ খবরটি প্রকাশিত হওয়ার দিন ছিল মহানিষ্ক্রমণের দশ দিন পরে অর্থাৎ ২৭ শে জানুয়ারীর ভোরে।  খবরে কি লেখা হয়েছিল সেটা বলার আগে জেনে নেবো সাধারণ মানুষ এবং বিশেষ করে পুলিশের কানে খবরটি এসে পৌঁছানোর আগে বাড়ির লোকেরা ঠিক কি কি ভাবে সুভাষকে খোঁজার চেষ্টা করেছিল। এই প্রসঙ্গে বলে নেই, সুভাষ কোথায় চলে যেতে পারে এই প্রশ্নে বাড়ির বেশিরভাগ লোকেরই মত ছিল কোনো মন্দির অথবা তীর্থস্থান গুলোতে থাকতে পারে সুভাষ। সেই মতো দল বেঁধে কেউ গেছে কালীঘাট মন্দিরে তো কেউ কেওড়াতলা মহা শ্মশানে। কয়েকজন তো বেশ জোরের সঙ্গে বলে দিয়েছিলেন - কোথাও না পাওয়া গেলে হাজারীবাগের ছিন্নমস্তার মন্দিরে ঠিক খুঁজে পাওয়া যাবে সুভাষকে। অনেকে আবার “উত্তর ভারতের তীর্থস্থানগুলোতে খোঁজ করা হোক” বলে মত প্রকাশ করেছিলেন। এর মধ্যে, বেশ কয়েকটি জায়গায় টেলিগ্রামও পাঠিয়ে রাখছিলেন শরৎ বসু; বেশির ভাগই কোনো না কোনো মঠ বা আশ্রমে। তার মধ্যে কোনটা গেল পন্ডিচেরীতে, কোনটা আনন্দময়ী মায়ের আশ্রমে। বলাই বাহুল্য, শরৎ বসু এই সব করে যাচ্ছিলেন যাতে কেউ না ধরতে পারে যে সুভাষের গৃহত্যাগের খবরটি তাদের কাছে আগে থেকেই জানা ছিল। কিন্তু যিনি ঘুণাক্ষরেও কিছু জানতেন না এই ব্যাপারে সেই প্রভাবতী দেবী অর্থাৎ সুভাষের মা যখন জানলেন সুভাষের গৃহত্যাগের খবর তখন তাঁর কি প্রতিক্রিয়া হয়েছিল? শিশির কুমার বসু তাঁর লেখা ‘বসু বাড়ি’ তে লিখছেন, “ মাজননীর (প্রভাবতী দেবী) মনের কথা ঠিক কখনো ধরতে পারিনি। তাঁর চিন্তার শেষ ছিল না, কিন্তু তিনি স্থির ও অবিচল ছিলেন”। প্রসঙ্গত, পুলিশও এ ব্যাপারে প্রথম থেকেই অন্ধকারে ছিল। পুলিশের টনক নড়েছিল ২৭ শে জানুয়ারীর বিকেলে, অর্থাৎ ভোরে খবর কাগজের পাতায় সুভাষের গৃহত্যাগের সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পুরো এক বেলা পরে। এই প্রসঙ্গে বলে নেওয়া ভালো, সর্ব সমক্ষে এই খবর চলে আসার পরে পুলিশের সঙ্গে সঙ্গে তদানীন্তর ব্রিটিশ প্রশাসনের অন্য নানা দপ্তরেরও ঘুম ছুটে গিয়েছিল। ২৭ তারিখের সন্ধ্যায় অল ইন্ডিয়া রেডিওর স্পেশাল বুলেটিনে সুভাষের ঝরিয়ার কাছে গ্রেপ্তার হওয়ার খবর প্রচার করে খানিকটা বাহাদুরি নেওয়ারও চেষ্টা করেছিল তখনকার উদভ্রান্ত প্রশাসন। যদিও খবরটি সত্য ছিল না বলে পরে তুলে নেওয়া হয়। প্রসঙ্গত, সুভাষের গ্রেপ্তারী সংক্রান্ত খবরটির যে পুরো দস্তুর একটি মিথ্যে রটনা ছিল সেটি সুভাষের মা কে অবগত করানোর দায়িত্ব পড়েছিল শিশির বসুর ওপরেই। ‘বসু বাড়ি’ তে শিশির বসু লিখছেন, “মাজননী শুনলেন, কিন্তু বিশেষ কিছু মন্তব্য করলেন ন”।  এখানেও সেই হিরন্ময় নীরবতা, কোনোভাবে নিজের মানসিক উদ্বেগকে প্রকাশ্যে আসতে না দেওয়ারই প্রচেষ্টা লক্ষ করা যায় প্রভাবতী দেবীর মধ্যে।
বলাই বাহুল্য, সুভাষের মহানিষ্ক্রমণের পরের দশ দিন অর্থাৎ ১৬ই জানুয়ারীর রাত থেকে ২৫ শে জানুয়ারী পর্যন্ত সে অর্থে ঘরে বাইরে কারোর মনেই সুভাষকে নিয়ে কোনো হেলদোল ছিল না। ২৬ তারিখে প্রথম বাড়ির লোক এবং আত্মীয়স্বজন বন্ধু বান্ধবেরা জানতে পারেন যে সুভাষ বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু আসল বিস্ফোরণটি ঘটে ২৭ শে জানুয়ারীর ভোরে, সংবাদ পত্রের পাতায় সুভাষের গৃহত্যাগের খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পরে। ভিত কেঁপে যায় প্রশাসনের। কি লিখেছিল সেদিন খবর কাগজে?
আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছিল, “গত রবিবার অপরাহ্ন হইতে শ্রীযুত সুভাষচন্দ্র বসুকে তাঁহার বাসভবনে আর দেখিতে না পাওয়ায় তাঁহার বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজনবর্গের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সঞ্চার হইয়াছে সকলেই ইহা অবগত আছেন যে তিনি অসুস্থ হইয়া পড়িয়াছিলেন গত কয়েকদিন যাবত তিনি সম্পূর্ণ মৌনাবলম্বন করেন এবং সকলের সহিত এমনকি আত্মীয়স্বজনের সহিত ও দেখাসাক্ষাৎ বন্ধ করিয়া ধর্মচর্চায় সময় অতিবাহিত করিতেছিলেন তাঁহার স্বাস্থ্যের বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করিয়া উদ্বেগের মাত্রা অধিকতর বৃদ্ধি পাইয়াছে বিভিন্ন স্থান অনুসন্ধান করিয়া কোনো ফল হয় নাই সংবাদ ছাপিতে দেওয়ার সময় পর্যন্ত গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন নাই বলিয়া জানা  গেছে
আগেই বলেছি, আনন্দবাজার পত্রিকা এবং ইংরেজি দৈনিক হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ডেই কেবলমাত্র এই খবর বেরিয়েছিল। হিন্দুস্থান স্ট্যান্ডার্ডে হেডিং হয়েছিল - What Has happened to Subhas Ch. Bose? Unexpected exit from Home.  বাকি খবরের বয়ান কম বেশী আনন্দবাজার পত্রিকার মতনই ছিল। আসলে খবরের খসড়াটিও লেখা হয়েছিল শরৎ বসুর ১ নং উডবার্ন পার্কের বাড়িতে।  ‘বসু বাড়ি’ তে শিশির কুমার বসু পরিষ্কার লিখেছেন সে কথা। “সকলে চলে যাবার পর বাবা সুরেশবাবুকে (সুরেশ চন্দ্র মজুমদার) সঙ্গে নিয়ে দক্ষিণের বারান্দায় বসলেন খবরের কাগজে পরের দিন সকালে কী লেখা হবে তার আলোচনা করলেন এবং আমার বিশ্বাস একটি খসড়াও তৈরি করলেন আনন্দবাজার অফিসে একটা টেলিফোন করার পর সুরেশবাবু চলে গেলেন”।
এর প্রায় দু মাস পরে, ১৯৪১ এর ৩১ শে মার্চ উডবার্ন পার্কের বাড়িতে দুজন অবাঙালি মানুষ এলেন সুভাষের সংবাদ নিয়ে। কিন্তু সে অন্য গল্প। 


মহানিষ্ক্রমণের প্রথম পর্ব পড়ুন নীচের লিঙ্কে ক্লিক করে! 

মহানিষ্ক্রমণের পরেঃ ১৬ থেকে ২৬শে জানুয়ারী! 


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট, কোথায় ছিলেন গান্ধীজী?

১৫০/বি বেলেঘাটা মেন রোড। শিয়ালদহ স্টেশন ও ই-এম বাইপাস এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন কারী মূল রাস্তা - বেলেঘাটা মেন রোড তথা সুরেশ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় রোডের ওপর পড়া এই বিশেষ ঠিকানা টি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে এক গৌরবময় স্মৃতির সাক্ষ্য বহন করছে । বিশেষ করে, প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময় আসন্ন হলে, এই ঠিকানার কথা স্মরণ না করে থাকা যা য় না। কারণ ১৯৪৭ এ গোটা দেশ যখন স্বাধীনতার আনন্দ উদযাপনে ব্যস্ত, বিশেষ করে রাজধানী দিল্লিতে স্বাধীনতা লাভের (১৫ ই আগস্ট) দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখতে আয়োজিত হয়েছে অভূতপূর্ব রাজকীয় সমারোহের - যার শুভ সূচনা হয়েছে, ১৪ ই আগস্টের মধ্যরাতে; ১৫ তারিখ পদার্পণ করতেই দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর ঐতিহাসিক বক্তৃতা দিয়ে শুভারম্ভ হয়েছে স্বাধীনতা দিবস পালনের মহা নির্ঘণ্ট। এই উচ্ছ্বাস যদিও কাঙ্ক্ষিতই ছিল। কারণ দীর্ঘ ২০০ বছরের পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরেই দেশবাসীর কাছে এসে পৌঁছেছিল সে বিরল মাহেন্দ্রক্ষণ। সমাগত হয়েছিল সেই মহা মুহূর্ত যখন প্রায় শত বর্ষ ধরে চলা স্বাধীনতাকামী মহাযজ্ঞে মুক্তিলাভের সিদ্ধি স্পর্শ করছিল তার চূড়ান্ত শিখর দেশ। কিন্তু এই যজ...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...