সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রবীন্দ্রনাথের বাল্মীকি প্রতিভা ও আইরিশ মেলোডিস!

তখন সদ্য পেরিয়েছেন টিন এজ এর গণ্ডী এর মধ্যে ১৭ বছর বয়সে প্রথম বিলেত যাত্রা এবং বিলেত থেকে পুনরায় দেশে ফেরা, তাও সম্পন্ন হয়েছে  নির্বিঘ্নে কিন্তু কেমন ছিল রবীন্দ্রনাথের টিন এজ পেরোনোর দিন গুলি? এই প্রসঙ্গে বলে রাখি, মাত্র ২০ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ তাঁর জীবনের প্রথম, রবীন্দ্রনাথ যাকে  সুরে নাটিকাবলে অভিহিত করেছিলেন, সেই বাল্মীকি প্রতিভানামক গীতিনাটকটি লিখে ফেলেছিলেন  ১৯ পেরিয়ে ২০ তে পা দেওয়ার সেই সন্ধিক্ষণে, রবীন্দ্রনাথের বাল্মীকি প্রতিভালেখার পেছনে কি ধরনের প্রণোদনা কাজ করেছিল সেটারই তত্ত্ব তালাশ করবো আজকের নিবন্ধে 


কোলকাতা, রবীন্দ্রসরোবরে রবীন্দ্র মূর্তি 

এই প্রসঙ্গে স্বনামধন্য আইরিশ কবি ও সুর স্রষ্টা টমাস ম্যুরের বিখ্যাত কাব্য গ্রন্থ আইরিশ মেলোডিসএর শব্দ নির্ঝর এবং তার অন্তরলীন সুর মূর্ছনা যে তরুন রবীন্দ্রনাথের সমগ্র চেতনাকে বাল্মীকি প্রতিভার মতো একটি গানের সূতায় গাঁথা নাটকের মালানির্মাণে বাধ্য করেছিল সেই আখ্যানও যথেষ্ট চাঞ্চল্যকর  ৪৯ বছর বয়সে লেখা (১৯১২ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত) তাঁর আত্মজীবনী জীবন স্মৃতিতে সেই প্রভাবের কথা, অকপটে উল্লেখ করেছেন রবীন্দ্রনাথ কৈশোরেই রবীন্দ্রনাথের সঙ্গেআইরিশ মেলোডিসএর পরিচয় "আমার বাড়িতে পাতায় পাতায় চিত্রবিচিত্রকরা কবি ম্যুরের রচিত একখানি আইরিশ মেলোডিস ছিল।" 'জীবন স্মৃতির পাতায় রবীন্দ্রনাথ জানিয়েছেন সে কথা  লেখক অক্ষয় কুমার দত্তের কণ্ঠে আইরিশ মেলোডিসএর মুগ্ধ আবৃত্তি যে তার মনে সুরের মোহ জাল বুনে দিয়েছিল সে কথা বলাই বাহুল্য যার ফল - বিলেতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথআইরিশ মেলোডিসএরমিষ্ট, করুন এবং সরলসুরে গাঁথা শব্দাবলীর আস্বাদন করতে ভোলেননি  
বিলেত থেকে ফিরেও আইরিশ মেলোডিসএর সুর যে রবীন্দ্রনাথের হৃদয়কে পুরো অধিকার করে ছিল তার  প্রমাণ পাওয়া গেছিল ‘স্বজনসমাজে’ গাওয়া তাঁর গানের মধ্যে বিলাতি সুরের ধিপত্য দেখে। শুধু তাই নয়, এই সমস্ত বিলাতি গান গাইতে যে ধরনের স্কেলে গলাকে সাধতে হয়, তরুন রবীন্দ্রনাথ যেন ক্রমশই তাঁর কণ্ঠকে সেই স্কেলে অভ্যস্ত করে ফেলেছিলেন। এর ফলে তাঁর স্বাভাবিক কথা বলার মধ্যেও একটা পরিবর্তন চলে এসেছিল। অনেকেই তখন বলতে শুরু করেছিলেন, "রবির গলা কেমন যেন বিদেশী রকমের মজার রকমের হইয়াছে।"
তবে ‘বাল্মীকি প্রতিভা’ কে সদ্য বিলাত ফেরত রবীন্দ্রনাথ ইউরোপীয় অপেরার ছাঁচে ঢালার চেষ্টা করেননি।  অপেরায় যেভাবে, রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘নাটকের সূতায় গানের মালা’ গাঁথা হয় অর্থাৎ সঙ্গীতই সেখানে মুখ্য, ‘বাল্মীকি প্রতিভা’য় কিন্তু গান সেভাবে প্রাধান্য লাভ করে নি। অনেকটা কথকতার ধাঁচে, নাটকের পুরো অভিনয়কেই সুরের মাধ্যমে প্রকাশ করার চেষ্টা করেছেন তিনি।  অর্থাৎ সুর আছে কিন্তু তা কেবল মনের অন্তরলীন আবেগকে পরিস্ফুট করার জন্যে, রাগ রাগিনী বা তালের বিশুদ্ধতা রক্ষা করার দায় তার নেই। রবীন্দ্রনাথ যাকে বলেছেন, "ছন্দ হিসেবে অমিত্রাক্ষর ছন্দ যেমন, গান হিসেবে এও সেইরূপ – ইহাতে তালের কড়াক্কড় বাঁধন নাই।"   
কিশোর বেলায় রবীন্দ্রনাথ ‘আইরিশ মেলোডিস’ যখন শুনেছেন তখন তা একান্তই কবিতার মতো করে; এর মুগ্ধ শব্দগুলো তাঁর মনের মধ্যে এক কল্পিত ‘মায়ালোক’ এর সৃজন করেছিল। পরে বিলাতে গিয়ে তিনি এর সুরারোপিত রূপের আস্বদন করেছিলেন। এবং বলাই বাহুল্য, সদা সৃজন উন্মুখ রবীন্দ্র মনন তখন থেকেই নিজ সৃষ্ট কোনো সাহিত্য কর্মে সুর সংযোজন করার অপেক্ষায় অধীর হয়ে উঠেছিল।
সেই সুযোগ অবশ্য অচিরেই পেয়ে যান রবীন্দ্রনাথ।
 জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে তখন প্রায়শই সাহিত্য বাসরের আয়োজন হত।  তেতলার ছাদে রীতিমতো স্টেজ খাটিয়ে, সাহিত্য কলা ও সঙ্গীতের নানা দিক পরিবেশিত হত সমাগত বিদ্বজ্জনেদের সামনে। রবীন্দ্রনাথ বিলাত থেকে ফেরার পরে এইরকম এক সাহিত্য সম্মিলন উপলক্ষে ‘বাল্মীকি প্রতিভা’ গীতিনাটকটি লেখেন। প্রসঙ্গত, রবীন্দ্রনাথ এই সুত্রে কিছু ছক ভাঙা উপস্থাপিত করতে চেয়েছিলেন গুণীজনদের সামনে। তাই কৃত্তিবাসী রামায়ণের একেবারে সূচনা লগ্নে বিবৃত, দস্যু রত্নাকরের ঋষি বাল্মীকি হয়ে ওঠার কাহিনীকেই উপজীব্য করার পরিকল্পনা করলেন। এবং তার পেছনেও ‘আইরিশ মেলোডিস’ এরই প্রভাব রয়েছে বলে ভাবা খুব একটা অসংগত হবে না। কারণ রামায়ণের গীতিধর্মীতা। যাকে সুরের চলনে বাঁধা অপেক্ষাকৃত সহজ। টমাস ম্যুর যদি সুরে কবিতা লেখার পথ প্রদর্শক হন তবে রবীন্দ্রনাথ ও ‘বাল্মীকি প্রতিভা’র মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যের আকাশে সুরে নাটিকা লেখার পথিকৃৎ হয়ে রইলেন। ‘জীবন স্মৃতি’ তে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, কিভাবে সঙ্গীতকে তার বৈঠকখানার ইমেজ থেকে বার করে তাকে নাট্য কাহিনী গ্রন্থনের কাজে লাগিয়েছিলেন এবং সঙ্গীতের এই ‘বন্ধনমোচন ও তাকে নিঃসংকোচে সকল প্রকার ব্যবহারে লাগাবার আনন্দ তাঁর মনকে কি ভাবে অধিকার করেছিল’।   "উড়িয়া চলা যাহার ব্যবসায় তাহাকে মাটিতে দৌড় করাইবার কাজে লাগানো গিয়াছে। যাহারা এই গীতিনাট্যের অভিনয় দেখিয়াছেন তাহাঁরা আশা করি এ কথা সকলেই স্বীকার করিবেন  যে, সঙ্গীতকে এইরূপ নাট্যকার্যে নিযুক্ত করাটা অসংগত বা নিষ্ফল হয় নাই।"
উল্লেখ্য, ‘বাল্মীকি প্রতিভা’য় বেশীরভাগ গাণের সুরই কিন্তু দেশীয় তেলেনা অঙ্গের বৈঠকি গান ভেঙে তৈরি করা।  রবীন্দ্রনাথ ‘জীবন স্মৃতি’ তে নিজেই জানিয়েছেন সে কথা। কিছু গান মেজদাদা জ্যোতিরিন্দ্র নাথের গতের সুর থেকে নেওয়া। কিন্তু সুর সংযোজনার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ,  বিলাতি সুরের প্রভাব থেকে সম্পূর্ণ ভাবে মুক্ত হতে পারেননি। বিশেষ করে আইরিশ লোকায়ত সুরের রেশ তাঁর মন কে তখনো আচ্ছন্ন করে রেখেছিল। তাই ‘বাল্মীকি প্রতিভা’র  অন্যতম উল্লেখযোগ্য গান - বনদেবীর বিলাপগানে, অবলীলায় তিনি আইরিশ সুর ব্যবহার করেছিলেন।  প্রসঙ্গত ‘বাল্মীকি প্রতিভা’ গীতিনাটকটি শুরুই হয় সমবেত বনদেবীগণের বিলাপ দিয়ে,  ‘সহে না, সহে না কাঁদে পরান।/ সাধের অরণ্য হল শ্মশান।।/ দস্যুদলে আসি শান্তি করে নাশ, / ত্রাসে সকল দিশ কম্পমান।" উল্লেখ্য, নাটকটির চতুর্থ দৃশ্যে আরও একবার বনদেবীগণকে বিলাপ করতে দেখা যায়, "কে এল আজি এ ঘোর নিশীথে/ সাধের কাননে শান্তি নাশিতে।/ মত্ত করী যত পদ্মবন দলে/ বিমল সরোবর মন্থিয়া।" ‘জীবন স্মৃতি’ তে উল্লিখিত, ‘বাল্মীকি প্রতিভা’র একটি বিলাপগান আইরিশ সুরের অবলম্বনে রচিত বলে আসলে রবীন্দ্রনাথ ঠিক কোন গানটিকে বুঝিয়েছেন সেটা পরিষ্কার নয়।
তবে রবীন্দ্রনাথ যে তাঁর এমন ছক ভাঙা প্রয়াসের সার্থক রূপায়ণে যারপরনাই আহ্লাদিত হয়েছিলেন সে নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই।  প্রাচ্যের এক মহাকাব্যাশ্রিত গীতধর্মী কাহিনী খণ্ডকে তিনি যে শুধু নাট্যারূপ দিলেন তাই নয়, পাশ্চাত্যের সুর সংযোজনায় তাকে দিলেন অন্য মাত্রা। তৈরি হোল গীতিনাট্যের স্বতন্ত্র এক ধারা। রবীন্দ্রনাথ যথার্থ ভাবেই ‘বাল্মীকি প্রতিভা’র সাফল্যকে ‘দস্তুরভাঙা গীত বিপ্লবের প্রলয়ানন্দ’ বলে  অভিহিত করতে দ্বিধা করলেন না। এবং এই আনন্দ স্রোতের  অমোঘ টানে ভেসে ‘বাল্মীকি প্রতিভা’ র পিঠোপিঠি রচনা করলেন আরও একটি গীতিনাট্য – ‘কাল মৃগয়া’। উল্লেখ্য ‘কাল মৃগয়া’ ও ছিল রামায়ণের কাহিনী আশ্রিত; রাজা দশরথ কর্তৃক অন্ধমুনির পুত্র বধ ছিল তার বিষয়। কিন্তু লক্ষণীয় ভাবে ‘কাল মৃগয়া’ তেও রবীন্দ্রনাথ আইরিশ সুরের মোহ জাল থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেননি।


'বাল্মীকি প্রতিভা'য় রবীন্দ্রনাথ

‘কাল মৃগয়া’য় তাই,  দুটি আইরিশ গান – যথাক্রমে ‘The Vicar of Bray’লেডি ক্যারোলিন কেপেল রচিত ‘Robin Adair’ অবলম্বনে দুটি গান  ‘ও দেখবি রে ভাই আয় রে ছুটে’ ও ‘সকলি ফুরালো, স্বপনপ্রায়’ অন্তর্ভুক্ত করেন রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু আইরিশ সুর বিশেষ করে টমাস ম্যুর কৃত ‘আইরিশ মেলোডিস’ এর সুর মূর্ছনা যে রবীন্দ্রনাথের হৃদয় থেকে কোনোদিনই অপসৃত হয় নি তার প্রমান পাওয়া যায় ‘বাল্মীকি প্রতিভা’ এবং ‘কাল মৃগয়া’র ও অনেক পরে লেখা গীতিনাট্য ‘মায়ার খেলায়’। সেখানে নাটকের সপ্তম দৃশ্যে গীত ‘আহা আজি এ বসন্তে’ গানটিতে  টমাস ম্যুরের ‘Go where glory waits thee’  এর ছায়া ফুটে উঠতে দেখা যায়।
উল্লেখ্য, রবীন্দ্রনাথ ‘বাল্মীকি প্রতিভা’ গীতিনাট্যে বাল্মীকির ভূমিকায় এবং তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্রী প্রতিভা দেবী সরস্বতীর ভূমিকায় অভিনয় করেন।


'বাল্মীকি প্রতিভা'য় রবীন্দ্রনাথ এবং ভ্রাতুষ্পুত্রী প্রতিভা দেবী
যথাক্রম বাল্মীকি এবং সরস্বতীর ভূমিকায়।

রবীন্দ্রনাথকে সেই প্রথম জোব্বা এবং গলায় রুদ্রাক্ষের মালা পরে সর্ব সমক্ষে উপস্থিত হতে দেখা যায়। দিনটি ছিল, ১৮৮১ সালের ২৬ শে ফেব্রুয়ারি।  তবে প্রচলিত ধারনা অনুসারে, রবীন্দ্রনাথ ‘বাল্মীকি প্রতিভা’ তেই  প্রথম নাট্যাভিনয় করেন – কথাটা ঠিক নয়। মেজদা জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা প্রহসন ‘এমন কর্ম আর করবো না’ তেই রবীন্দ্রনাথের প্রথম নাট্যাভিনয়ে অভিষেক হয়। ‘জীবন স্মৃতি’ তে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন সে কথা, "প্রহসনে আমি অলীক বাবু সাজিয়াছিলাম।" কিন্তু সে অন্য প্রসঙ্গ।  






কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ

জীবন-স্মৃতি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
বাল্মীকি প্রতিভা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট, কোথায় ছিলেন গান্ধীজী?

১৫০/বি বেলেঘাটা মেন রোড। শিয়ালদহ স্টেশন ও ই-এম বাইপাস এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন কারী মূল রাস্তা - বেলেঘাটা মেন রোড তথা সুরেশ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় রোডের ওপর পড়া এই বিশেষ ঠিকানা টি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে এক গৌরবময় স্মৃতির সাক্ষ্য বহন করছে । বিশেষ করে, প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময় আসন্ন হলে, এই ঠিকানার কথা স্মরণ না করে থাকা যা য় না। কারণ ১৯৪৭ এ গোটা দেশ যখন স্বাধীনতার আনন্দ উদযাপনে ব্যস্ত, বিশেষ করে রাজধানী দিল্লিতে স্বাধীনতা লাভের (১৫ ই আগস্ট) দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখতে আয়োজিত হয়েছে অভূতপূর্ব রাজকীয় সমারোহের - যার শুভ সূচনা হয়েছে, ১৪ ই আগস্টের মধ্যরাতে; ১৫ তারিখ পদার্পণ করতেই দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর ঐতিহাসিক বক্তৃতা দিয়ে শুভারম্ভ হয়েছে স্বাধীনতা দিবস পালনের মহা নির্ঘণ্ট। এই উচ্ছ্বাস যদিও কাঙ্ক্ষিতই ছিল। কারণ দীর্ঘ ২০০ বছরের পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরেই দেশবাসীর কাছে এসে পৌঁছেছিল সে বিরল মাহেন্দ্রক্ষণ। সমাগত হয়েছিল সেই মহা মুহূর্ত যখন প্রায় শত বর্ষ ধরে চলা স্বাধীনতাকামী মহাযজ্ঞে মুক্তিলাভের সিদ্ধি স্পর্শ করছিল তার চূড়ান্ত শিখর দেশ। কিন্তু এই যজ...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...