স্থাপন করার শৈলীই হলো স্থাপত্য শৈলী। মানুষ যবে থেকে বাসস্থান নির্মাণ করা শুরু করেছে তবে থেকেই কোনো না কোনো স্থাপত্য শৈলীর প্রয়োগ করে আসছে। বছরের পর বছর ধরে প্রস্তর খন্ড জমতে জমতে গড়ে ওঠা পাহাড়ের চূড়া হল অসাধারণ এক প্রাকৃতিক স্থাপত্য শৈলীর নমুনা। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন রাজ প্রাসাদ থেকে ধর্মীয় উপাসনালয়; স্মৃতি সৌধ থেকে দুর্গ এমনকি সমাধি স্থল নির্মাণে বিশেষ বিশেষ স্থাপত্য সৌকর্যের ধারা গড়ে উঠতে দেখা গেছে যুগের পর যুগ ধরে। তাদের মধ্যে রোমান গথিক, ইতালীয় রেনেসাঁ, ইন্দো সেরেসানিক, ইন্দো ইসলামী ও মুঘল স্থাপত্যের নাম জগৎজোড়া। কে না জানে গম্বুজ কিংবা খিলান মনুষ্য সৃষ্ট উজ্জ্বল স্থাপত্য কীর্তি গুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ তম। আমাদের দেশের আটচালার ঘর থেকে শুরু করে সুমেরীয় এস্কিমোদের গৃহ নির্মাণ - সবেতেই স্থাপত্য প্রকৌশলের সুনিপুণ প্রয়োগ লক্ষ করা যায়। যেমন প্রচ্ছদের ছবিতে - মুসাম্বি লেবু গুলোকে, শোকেসের মধ্যে, একটার মাথায় একটা সাজিয় রাখতে যে চমকপ্রদ কলাকৌশলের প্রয়োগ করা হয়েছে তাকে কি ধরনের স্থাপত্য রীতি বলে অভিহিত করা যায়।
একনজরে অনেকটা মোজাইক এর মতো দেখতে লাগছে। পৃথিবীতে মোজাইক আর্ট অনেক পুরোনো। মেসোপটেমিয়া, বাইজেন্টাইন হয়ে মধ্যপ্রাচ্যের ইসলামি সৌধ গুলির গায়ে এই মোজাইক আর্টের উৎকর্ষ দেখা গেছে। তার মধ্যে, কুব্বাতুস সাখর বা শিলার গম্বুজ নামের ইসলামি ধর্মীয় স্থাপত্যের গায়ে মোজাইকের কাজ বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। এটি, পুরনো জেরুজালেমের টেম্পল পর্বতের ওপর অবস্থিত। এছাড়া, ৬৩৪ সালে প্রতিষ্ঠিত, পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম মসজিদ উমাইয়া মসজিদের গায়েও এই মোজাইক শিল্পের নমুনা দেখা যায়। প্রসঙ্গত উমাইয়া মসজিদ বর্তমানে সিরিয়ার রাজধানী, দামেস্কেতে অবস্থিত।তবে মোজাইক সাধারণত বর্গক্ষেত্রেআকার
এবং সমতল কাঁচ বা পাথরের টুকরোকে একটার পিঠে একটা বসিয়ে তৈরি করা হয়। কিন্তু মুসাম্বি তো গোলাকার এবং বক্র তল বিশিষ্ট। তবে পৃথিবীতে গোল পাথর দিয়েও মোজাইক করার রীতি রয়েছে। যাকে নুড়ি মোজাইক বলা হয়ে থাকে। প্রসঙ্গত নুড়ি বা টায়রান মোজাইকের উৎকৃষ্ট নিদর্শন দেখতে পাওয়া যায় প্রাচীন গ্রীসের ক্যাথলিক গির্জা ভবনগুলিতে। তাই সবদিক ভেবে একে মুসাম্বি মোজাইক নামে ভূষিত করার সিদ্ধান্ত নিলাম।
যাই হোক এই অনবদ্য মুসাম্বি মোজাইক দেখার জন্য দিল্লি বাগদাদ বা অন্য বেশিদূর যেতে হবে না। কোলকাতার ধর্মতলায় মেট্রো চ্যানেলের সামনে - শিমুল তলার ফলের জুসের দোকানে গেলেই হবে। অবশ্যই এর নির্মাতা রসের দোকানের মালিক স্বয়ং রসুল খান।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন