সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বনে সুন্দর বিয়ার, টেডি বিয়ার শিশুর কোলে!

আমার বাড়ি যেখানে সেই কাঁথিতে, স্থানীয় ভাবে অনেকগুলি দৈনিক সংবাদ পত্রিকা প্রকাশিত হতো। এখনোও হয়, দীর্ঘদিন ধরেই তা হয়ে আসছে। কিন্তু সব টুথপেস্ট যেমন কোলগেট নয় তেমনি কাঁথি থেকে প্রকাশিত সমস্ত দৈনিক পত্রিকার নাম 'দৈনিক চেতনা' না হলেও আমরা ছোটবেলায় খবরকাগজ বলতে 'চেতনা'কেই বুঝতাম। 

সূচনায় এই কথা বলার কারণ, রঙীন পশম বা তুলো দিয়ে তৈরি ফুলোফুলো যে সব খেলনা পুতুল গুলো সচরাচর আমরা দেখি তা নির্দিষ্ট ভাবে ভালুকের মতো দেখতে না হলেও আমরা কিন্তু এগুলিকে টেডি বিয়ার বা সংক্ষেপে টেডি বলে থাকি। এই টেডি বিয়ার কিন্তু যিনি প্রথম বানান সেই আমেরিকাবাসী খেলনা কারিগর মরিস মিসকম, এটি বানানোর কথা ভেবেছিলেন, ১৯০২ সালের ১৬ ই নভেম্বর তারিখে 'দা ওয়াশিংটন পোস্ট' পত্রিকায় প্রকাশিত একটি কিউট কার্টুন দেখে।
বলাই বাহুল্য এই কার্টুনটি ছিল একটি মিষ্টি মিষ্টি দেখতে আমেরিকান কালো ভালুকের। এটি এঁকেছিলেন বিখ্যাত কার্টুনিস্ট ক্লিফোর্ড বেরিম্যান। বেরিম্যানের আঁকা এই কার্টুনটির নাম ছিল টেডি'স বিয়ার। অর্থাৎ টেডির বিয়ার। কিন্তু কে এই টেডি?
শুনলে অবাক হবেন ইনি ছিলেন তখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট থিওডোর রুজভেল্ট, যার ডাক নাম ছিল টেডি।  কিন্তু হঠাৎ রুজভেল্টের ডাকনাম কেন? এর পেছনে অবশ্য একটা মজার গল্প আছে। ১৯০২ এরই নভেম্বর মাসের গোড়ার দিকের কথা। রুজভেল্ট সেবার মিসিসিপির গভর্ণর অ্যান্ড্রু এইচ লঙ্গিনোর আমন্ত্রণে ভালুক মৃগয়ায় গিয়েছিলেন সেখানকার এক পাহাড়ি উপত্যকায়। উল্লেখ্য, সেখানে সকলেই কমবেশি ভালুক শিকার করতে সমর্থ হলেও রুজভেল্ট কিন্তু কোনোভাবে সফল হননি। তা ব্যর্থ রুজভেল্টকে খুশী করার জন্য ওঁর কিছু সহচর একটা ভালুককে আগে থেকে ধরে একটা উইলো গাছের গুঁড়ির সঙ্গে বেঁধে রেখেছিলেন, যাতে রুজভেল্ট সহজেই তা শিকার করে নিজের দূর্নাম ঘোচাতে পারেন। যদিও রুজভেল্ট এইভাবে মিথ্যে গৌরবের অধিকারী হতে সম্মত হননি। তবে নিজে না মারলেও তাঁর সহচরদের নির্দেশ দেন আধমরা এই ভালুকটিকে মেরে ফেলার জন্য। যে ঘটনাটি জানাজানির পর ক্লিফোর্ড কার্টুনটি এঁকেছিলেন, যে ঘটনার কথা আগেই বললাম। বাস্তবে খেলনা কারিগর মিসকমকে কিন্তু অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল তাঁর তৈরি ভালুকছানার পুতুলটিকে - টেডি বিয়ার নামে অভিষিক্ত করতে। কারণ, টেডি নামটি কোনো সাধারণ মানুষের নাম ছিল না, স্বয়ং আমেরিকান প্রেসিডেন্টের ডাকনাম এটি; শোনা যায় রুজভেল্ট নাকি তাঁর এই ডাকনামটিকে তেমন পছন্দ ও করতেন না।  সর্বোপরি, কোনো প্রেসিডেন্টের ডাক নামে কোনো ভালুকছানার মতো দেখতে পুতুলের নাম রাখা একেবারেই সহজ কাজ ছিল না। তাই সব দিক বুঝে, মিসকম প্রথমে একটি সুন্দর দেখে নরম, তুলতুলে ভালুকের পুতুল পাঠিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের কাছে এবং পরবর্তী ধাপে তাঁর ডাক নাম ব্যবহার করে ভালুক পুতুলের নাম রাখার আবেদন জানিয়েছিলেন।  বলাই বাহুল্য, রুজভেল্ট তাতে নিমরাজি হননি। একই সময়ে জার্মানিতেও টেডি বিয়ার তৈরি করেছিলেন আর এক খেলনা কারিগর - রিচার্ড স্টিফ। ক্রমে ক্রমে টেডি বিয়ার, আমেরিকা ইউরোপেরও সীমানা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল বাকি গোটা বিশ্বে। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে, গোটা বিশ্বের সমস্ত শিশুদের কাছেই টেডি বিয়ার একটি অতি প্রিয় খেলার সাথী হিসেবে তার স্থান পাকা করে নিয়েছে। 
তাই তো কোলকাতার এক টেডি বিক্রেতা একসাথে বিড়াল, ইঁদুর, খরগোশ মুখো পুতুল গুলোকে এক সুতোয় বেঁধে এমনভাবে ঝুলিয়ে রেখেছেন যে আসল ভালুক-মুখো টেডি খুঁজে বার করা খুব দুষ্কর। এর মধ্যে কিন্তু অন্য মানে খুঁজবেন না প্লিজ।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট, কোথায় ছিলেন গান্ধীজী?

১৫০/বি বেলেঘাটা মেন রোড। শিয়ালদহ স্টেশন ও ই-এম বাইপাস এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন কারী মূল রাস্তা - বেলেঘাটা মেন রোড তথা সুরেশ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় রোডের ওপর পড়া এই বিশেষ ঠিকানা টি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে এক গৌরবময় স্মৃতির সাক্ষ্য বহন করছে । বিশেষ করে, প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময় আসন্ন হলে, এই ঠিকানার কথা স্মরণ না করে থাকা যা য় না। কারণ ১৯৪৭ এ গোটা দেশ যখন স্বাধীনতার আনন্দ উদযাপনে ব্যস্ত, বিশেষ করে রাজধানী দিল্লিতে স্বাধীনতা লাভের (১৫ ই আগস্ট) দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখতে আয়োজিত হয়েছে অভূতপূর্ব রাজকীয় সমারোহের - যার শুভ সূচনা হয়েছে, ১৪ ই আগস্টের মধ্যরাতে; ১৫ তারিখ পদার্পণ করতেই দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর ঐতিহাসিক বক্তৃতা দিয়ে শুভারম্ভ হয়েছে স্বাধীনতা দিবস পালনের মহা নির্ঘণ্ট। এই উচ্ছ্বাস যদিও কাঙ্ক্ষিতই ছিল। কারণ দীর্ঘ ২০০ বছরের পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরেই দেশবাসীর কাছে এসে পৌঁছেছিল সে বিরল মাহেন্দ্রক্ষণ। সমাগত হয়েছিল সেই মহা মুহূর্ত যখন প্রায় শত বর্ষ ধরে চলা স্বাধীনতাকামী মহাযজ্ঞে মুক্তিলাভের সিদ্ধি স্পর্শ করছিল তার চূড়ান্ত শিখর দেশ। কিন্তু এই যজ...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...