শিব দুর্গা ঘুরছেন, বাজারে। দুপাশে সারি সারি দোকান, মাঝখানে যেটুকু পথ রয়েছে তাতে আবার পাতাই পেতে সারিবদ্ধভাবে
ফল, সব্জী আবার কোথাও কোথাও গামছা, কাপড় ইত্যাদি নিয়ে বসেছে খুচরো দোকানদারেরা।
বৈশাখ মাস, দুপুরে এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। তাই কাঁথি সুপার মার্কেটের ভেতরকার রাস্তাগুলো - ধুলো জলে মাখামাখি হয়ে বেশ কাদা কাদা হয়ে গেছে। শৌখিন ক্রেতারা তাদের জামা কাপড় গুলোকে পা থেকে খানিকটা ওপরে তুলে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
তার মধ্যেই কেনাকাটা, দরদাম চলছে বেশ। একশো করে কিলো, মিষ্টি বেগুনফুলি আম - দোকানদারের হাঁক ডাকে সরগরম হয়ে উঠেছে বাজার। এক আধটা রিক্সা, সাইকেল ঢুকে পড়লে বেশ গোলযোগ বেধে যাচ্ছে। মশলা মুড়ি বিক্রি হচ্ছে, বাখারির মড়ার ওপরে রাখা গোল ঝুঁড়িতে সাজানো রয়েছে ছোলা, মটর, ঝুরি ভাজা, আঁচার তেল, পেঁয়াজ লঙ্কা কুঁচির বিভিন্ন আকৃতির কৌটা গুলো। খুব ব্যস্ততা; দোকানের চারিদিকে ইয়ং ছেলে মেয়েদের ভিড় জায়গাটিকে আরোও সংকীর্ণ করে দিয়েছে।
একটু দাঁড়ান প্লিজ। শিব ঠাকুর থামতেই দুর্গা ও দাঁড়িয়ে পড়লেন পাশাপাশি। স্বাভাবিক। দুর্গার হাতে দেখি এক মানুষ সমান বড় একটা ত্রিশূল ধরা; সি এফ এল লাইটের আলো পড়ে চকচক করছে তার ফলা। শিব আবার ত্রিশূল ছেড়ে সানাই বাঁশি হাতে ধরে আছেন।
সামনে পেছনে সন্ন্যাসী ভক্তদের লাইন। সাদা ধুতির ওপরে কায়দা করে গামছা আঁটা। কাঁধ বেয়ে পৈতের মতো সুতোর গাছা ঝুলছে পেটের ওপরে। একজন ভক্তর হাতে দেখি - জরিকাগজ, ফুল এবং অনেকগুলো গামছা বাঁধা একটা মস্ত বাঁশের দন্ড ধরা, একে দেউল বলে। মার্কেটের বড় বড় দোকানের সামনে, সেই দেউলকে কাঁধ থেকে নামিয়ে মাটিতে রাখছেন সন্ন্যাসীরা। তারপরে দোকানদারের মঙ্গল কামনায় ফুল পাতা তন্ডুল নিবেদন করছেন মহাদেব শিবের উদ্দেশ্য। সঙ্গে রয়েছেন এই সঙ সাজা শিব দুর্গা দুজন; গাজনে সঙ সাজা একটা বহু পুরনো রীতি। বিশেষ করে শিব ও দুর্গার মান অভিমান ও তাঁদের একে অপরের মান ভাঙানোর গানই গাওয়া হয় গাজনে। যার ফলে গাজনে শিব দুর্গার সঙ সাজাটা বাধ্যতামূলক। এছাড়াও, বাঁকা একটা বেল গাছের ডালকে ঘোড়ার মতো করে, বাজনার তালে তালে নাচ দেখান যিনি সেই গদাধর ভুঁইয়াও রয়েছেন সন্ন্যাসীদের সঙ্গে। অনেক কাল ধরে তিনি এই কাজ করছেন। কাঁথি শহরের অদূরে, বিল চালতি গ্রামের প্রতিষ্ঠিত শিব মন্দিরে, দু মাস ধরে চলে গাজন। এই সময়ে প্রতিদিন সন্ধ্যায় সন্ন্যাসীরা ঘর ঘর ঘুরে মাধুকরী করেন। কখনোও বা আসেন বাজারে। চৈত্র সংক্রান্তির দিন সব জায়গাতে চড়ক হয়ে গেলেও, এখানে হয় নি। যেদিন হবে, স্থানীয় ভাবে তাকে বড়ভোগের দিন বলা হযে থাকে। সেদিন মন্দির প্রাঙ্গণে বসবে মেলা, গাজন গান হবে এবং সন্ন্যাসীদের নানারকম কষ্টকর কসরৎ দেখা যাবে, তার মধ্যে আগুনে গড়াগড়ি খাওয় থেকে শুরু করে বটি কাতান, দা’য়ের ওপর ঝাঁপ দেওয়ার রোমহর্ষক ব্রত খেলাও রয়েছে।
তা বেশ, শিব দুর্গা যেই না পাশাপাশি দাঁড়িয়েছেন,
সটান শুরু হয়ে গেল ফটো সেশনের পালা। ক্লিক ক্লিক শব্দে, সঙ সাজা শিব দুর্গা দুজন, সোজা মোবাইলের ইমেজ গ্যালারীতে ঢুকে পড়লেন।
জিজ্ঞাসা করলাম, নাম কি? শিব বললেন তাঁর নাম দিবাকর ঘোড়াই।
দুর্গাকে জানতে চাইলাম, আপনার নাম? রামপদ ঘোড়াই।
আপনারা কি একই পাড়ার? হ্যাঁ আমরা দুজন বন্ধু।
সঙ সাজায় এখনোও পর্যন্ত পুরুষ লোকেরাই মহিলা সাজেন। আগের দিনে যাত্রা পালা গুলোয় এমনটা দেখা যেতো। সেই চল এখনোও রয়ে গেছে চৈত্র মাসের এই গাজন যাত্রায়।
এত কথা শোনার পর, দুর্গা বেশী রামপদ ঘোড়াই বললেন কি, ছেড়ে দাও, ছেড়ে দাও হেভি লাইক কমেন্টস পাবে।
অগত্যা, তাই করলাম। দুর্গা মা থুড়ি দুর্গা বাবার আদেশ অমান্যি করবো অত সাধ্যি কোথায়!
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন