বহুদিন আগে 'তকদিরওয়ালা' বলে একটা হিন্দি সিনেমা দেখেছিলাম, তাতে জনপ্রিয় চরিত্রাভিনেতা
কাদের খাঁন যমরাজের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। ছবিতে, সর্বক্ষণ একটা গদা কাঁধে করে, জমকালো পোষাক পরা কাদের খানের সেই বিখ্যাত সংলাপ, "হাম হ্যায় যম" আজোও মনের মধ্যে গেঁথে বসে আছে।
তবে যমরাজ, সে যতই সবসময় গদা কাঁধে নিয়ে ঘুরে ঘুরে বেড়ান না কেন, গদাধর উপাধি কিন্তু ভগবান বিষ্ণুর জন্যই শুধু বরাদ্দ থাকে।
আর সেই গদাধর বিষ্ণুকে দেখে কে না ভক্তিতে গদগদ হয় বলুন। তবে বিষ্ণুর গদা কখনো কাঁধে শোয়ানো থাকে না। গদার গজাল যুক্ত গোলাকার, মুগুর সদৃশ অংশটি যদি মাথা হয় এবং দন্ডাকার ধাতব অংশটি যদি পায়ের দিক হয় তবে বিষ্ণুদেবের বাঁম হাতে ধরা গদাটি সর্বদাই হেঁট মুন্ড ঊর্দ্ধ পদ অবস্থায় থাকে। অর্থাৎ যুদ্ধ নয় যুদ্ধ বিরতির আভাস থাকে তার মধ্যে।
এনি ওয়ে, বর্তমান দিনে গদার মতো এমন মাথা মোটা অস্ত্রের চল যে আর নেই সে কথা বলাই বাহুল্য। তবে একটু ছিমছাম শরীরের হকি স্টিক কিন্তু গদার আধুনিক সংস্করণ বলেই মনে হয়। চিন্তা করুন বর্তমান দিনে পুলিশকে যদি আইন শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে সেই পবন পুত্র, ভগবান হনুমানের মতো ইয়া বড় ভারী একখানা পেতলের গদা নিয়ে চারিদিকে ঘুরে বেড়াতে হতো তাহলে ব্যাপারটা কিরকম হতো। তবে গদা সে যতই ব্যাকডেটেড অস্ত্র হোক না কেন, কাউকে মেরে মাথা ভেঙে দেওয়ার হুমকি কিন্তু সেই গদার কথা মাথায় রেখেই করা হয়ে থাকে। পুরানে রয়েছে ভগবান বলরাম জরাসন্ধকে বধ করেছিলেন গদা দিয়ে, তার মানে তিনি গদা চালনায় যথেষ্ট দক্ষ ছিলেন কিন্তু তাতে কি, জনমানসে কিন্তু তাঁর সেই হলধর হয়ে থাকার ভবিতব্য কেউ কাটাতে পারে না।
এমনকি মহিষাসুর বধে যাওয়ার আগে, মা দুর্গাকে তাঁর দশ হাতে যে দশ আয়ুধ দিয়ে রণ সাজে সজ্জিত করা হয়, তার মধ্যে যমরাজ প্রদত্ত গদা ছিল অন্যতম। তাও যমরাজ কিন্তু গদাধর হিসেবে কোনোদিন কোনো পরিচিতি পান নি। গদাধর হিসেবে সেলিব্রিটির মর্যাদা যদি কেউ পেয়ে থাকেন তবে তিনি হলেন গদাধর বিষ্ণু। তার মানে গদা নিলেই যে আপনি গদাধর হতে পারবেন তা কিন্তু নয়, বড়জোর গদওয়ালা হতে পারবেন। তবে গদা নিয়ে বলছি মানে ভাববেন না যে গদা শুধুই শক্তি বা পৌরুষকারের প্রতীক, কারণ বিষ্ণু পুরানে আবার গদাকে দেবী হিসেবেও বর্ণনা করা হয়েছে। গদা দেবী। ভাবুন একবার। প্রচ্ছদের ছবিতে, যে ছেলেটি গদা কাঁধে দাঁড়িয়ে আছে নরেন্দ্রপুর স্টেশনে সে তারকেশ্বর যাবে শিবের মাথায় জল ঢালতে। যদিও শিবের সঙ্গে গদার সম্পর্ক খুঁজে লক্ষ লক্ষ আলোকবর্ষ ভ্রমণ করে ফেললেও কোনো যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায় না।
জিজ্ঞাসা করলাম ভাই শিবের তো ত্রিশূল, তা তুমি গদা নিয়ে যাচ্ছো। বললো, গদাটাই এখন ট্রেন্ড। তা যাই হোক, ট্রেন্ড যখন মানতেই হবে। জিজ্ঞাসা করলাম, তাহলে কি এটি, কোনো যাত্রা পার্টি থেকে ভাড়ায় নিয়ে এসেছো? কারণ পৌরাণিক যাত্রা পালায় এখনোও সাজঘরে গদার উপস্থিতি অনিবার্য। উত্তরে বললো না এটা ওদের নিজেদের। তবে এই প্রসঙ্গে আর একটা কথা না বললেই নয়, সেটা হলো - শিব গদা নেন না ঠিক, তবে ভগবান বিষ্ণু গদা নিলেও সেটি কিন্তু যে সে গদা নয়। যেমন তাঁর হাতে ধরা শঙ্খ হলো - পাঞ্চজন্য শঙ্খ, চক্র - সুদর্শন চক্র তেমনি তাঁর হাতে থাকে স্পেশাল গদা - যার নাম কৌমদকী। কুমুদ বা নিলোৎপল থেকে কৌমদকী কথাটি এসেছে। যাক গদার কথা বলতে গিয়ে গাদা গাদা ফালতু কথা বলা হয়ে গেল। তো আর বকবক না করে শেষ করছি এখানে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন