সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বঙ্কিমচন্দ্রে পূর্ণ জ্যোতি!

বঙ্কিমচন্দ্রের জন্মদিন (১৮৩৮, ২৬ শে জুন) এলেই অনেকগুলো ধৃষ্টতার কথা ভেসে ওঠে স্মৃতির পর্দায় সাহিত্য সম্রাট যার উপাধি, সেখানে আমি নিতান্তই সেই সাম্রাজ্যের একজন হতদরিদ্র প্রজা হিসেবে তাঁর কথা স্মরণ করার মধ্যে বড় কোনো অন্যায় না দেখলেও, কারো কারোর কাছে তা অনধিকার চর্চা বলে প্রতিভাত হতে পারে তবে, জন্মদিনে শ্রদ্ধাবনত শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে কেনই বা এই রাজা প্রজা অনুষঙ্গ টেনে আনা - তার কারণ খুলে বলার দরকার রয়েছে  
প্রথমত বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, তদানীন্তন ব্রিটিশ রাজত্বের একজন রাজ প্রতিনিধি হয়ে কাঁথিতে পদার্পণ করেছিলেন সেই ঊনবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দশকে; তিনি তখনকার দিনের ওড়িশা এবং বাংলার বেশ কিছু অঞ্চল জুড়ে গঠিত নেগুয়া নামের এক জেলা ভূমি ক্ষেত্রের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হয়ে পৌঁছেছিলেন কাঁথি তে। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বাধীন ছিল-  জেলার ভূমি দপ্তর। স্বভাবতই ১৮৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত, অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার দ্বিতীয় প্রাচীনতম বিদ্যালয়, কাঁথি হাই স্কুলের স্থাপনকল্পে - প্রয়োজনীয় জমির ব্যবস্থা করার পেছনে তাঁর অবদান ছিল অনস্বীকার্য। অর্থাৎ, ঐতিহ্যবাহী কাঁথি হাই স্কুলের ভূমি দাতা হিসেবে, শ্রীমান ভূমি আধিকারি শ্রী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নাম জুড়ে রয়েছে অবধারিত ভাবে। আর আমি কাঁথি হাই স্কুলের একজন প্রাক্তন পড়ুয়া হিসেবে, যখনই বঙ্কিমচন্দ্রকে স্মরণ করতে বসি তখনই তাঁকে একজন ভূমি দাতা, জমিদারের আসনে উপবিষ্ট করে ফেলি।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
হেন বঙ্কিমচন্দ্রের প্রেমে পড়া, তাও কিশোরবেলায়, সেটি ছিল আর একটি ধৃষ্টতা। ক্লাস সেভেনে পড়ি, যতদূর মনে পড়ছে, আমার হাতে একটি রাজপ্রাসাদীয় আয়তনের বঙ্কিম উপন্যাস সমগ্র এসে পড়ে। বাবা, কাঁথি ক্লাব লাইব্রেরী থেকে নিয়ে এসেছিলেন পড়বেন বলে। পড়া হয়ে গেলে, ফেরত দিয়ে আবার একটা নতুন বই আনবেন। এরকমই নিয়ম। ক্লাবের সদস্যরাই বাড়িতে বই নিয়ে আসতে পারতেন। যাই হোক, সেদিন ছিল এমনই এক বৃষ্টির দিন। স্কুলে যেতে পারিনি। দুপুর বেলায়, সুযোগ খুঁজে, বইটিকে প্রায় বগলদাবা করে, সোজা পালিয়ে গিয়েছিলাম চিলেকোঠার ছাদে। সে এক আলাদা রোমাঞ্চ। সূচিপত্রের প্রথমেই 'কপালকুন্ডলা', রসুলপুর নদীর মোহনায় এসে ঠেকলো, গঙ্গা সাগর মেলা ফেরত নবকুমারের নৌকা। বুকের ভেতর, পুরো অ্যাডভেঞ্চারের অনুভূতি এই প্রসঙ্গে বলে নিই, বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা প্রথম উপন্যাস 'কপালকুণ্ডলা' পটভূমিও ছিল কাঁথি মহকুমার সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চল দারিয়াপুরে, যেখানে আবার আমার মামার বাড়ি। বঙ্কিমচন্দ্র, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে প্রায়ই ছুটি কাটাতে যেতেন দারিয়াপুর স্থিত সরকারি বাংলোয়, যা আজ ভগ্নপ্রায়। চারিদিকের গাছ গাছালি ঝড় বাতাসে বিধ্বস্ত, নতুন করে গাছ লাগানো হয়নি। পুরনো বাড়িটাও ভেঙে পড়েছে, রক্ষনাবেক্ষণের কোনো চিহ্ন নেই। সেখানেই তিনি শুনতে পান সেই রোমহর্ষক কপালকুণ্ডলে হুঙ্কার, বাকি কাহিনীর সম্পূর্ণটাই তাঁর মানসালোক উদ্ভুত। গভীর রাতে, বালিয়াড়ি ঘেরা ঘন জঙ্গল থেকে ওরকম ডাক শুনে, বঙ্কিমচন্দ্রের ঘুম ভেঙে যায়।
ছোটবেলায় যখন মামার বাড়ি যেতাম, তখন বাংলোর ফাঁকা মাঠে দিব্যি ঘুরেছি, গরু চরে বেড়ায়, পরে যখন জেনেছি তখন ভগ্নাবশেষ দেখে আমার করুনা ছাড়া অন্য কিছু মনে আসে নি।এটাও একটা ধৃষ্টতা।
কিন্তু অত ছোট বয়সে বাংলা ভাষার সেই এক এবং অদ্বিতীয় বঙ্কিমীয় সাহিত্য কৃতির আস্বাদনে ব্রতী হওয়ার পেছনে যে কি নিদারুন দুঃসাহস কাজ করেছিল তা এত গুলো বছর পেরিয়ে আসার পরে বেশ বুঝতে পারি।
চিলে ছাদে বসে, একা, পরম নিভৃতে পড়ছিলাম “কুজ্ঝটিকার অন্ধকার রাশি হইতে দিঙমণ্ডল একেবারে বিযুক্ত হইয়াছে"। ততদিনে বিদ্যাসাগর মহাশয় প্রণীত বর্ণপরিচয় (দ্বিতীয় ভাগ) এর দৌলতে কুজ্ঝটিকা শব্দটি যে কুহেলিকাময় আচ্ছন্নতা তৈরি করে রেখেছিল মনে, বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা পড়ার পর যেন সেই ধোঁয়াশা ধীরে ধীরে কেটে যেতে থাকলো, কিশোর হৃদয়ের ‘দিঙমণ্ডলে’ যেন নতুন অরুন উদ্ভাসিত  হতে থাকলো, অনুভূত হতে থাকলো নব বোধোদয়ের বাঁধ ভাঙা প্লাবন।   
‘তরঙ্গান্দোলনকম্প’ বা ‘চঞ্চলরবিরশ্মিমালা’ জাতীয় শব্দ গুলো যেন গ্রন্থিত ফুল মালার মত আমার কিশোর মনের অলিন্দে ঢুকে আলোড়ন ফেলে যাচ্ছিল, আর আমি মহা উল্লাসে সেই মালা থেকে এক একটা ফুলকে বিচ্ছিন্ন করে তাদের সুবাস টেনে নিচ্ছিলাম পরম আগ্রহে। এই বিভোর মগ্নতা যে ক্রমশ আমাকে নেশাগ্রস্থের মতো, শ্রীমান বঙ্কিম চন্দ্র সৃজিত শব্দ মাধুর্য পান থেকে বিচ্যুত হতে দিচ্ছিল না, তখন তা বুঝতে না পারলেও পরে বিশ্লেষণ করে দেখেছি, কিশোর বেলার সে মোহ পাশ অনেকটা প্রথম প্রেমে পড়ার মতোই অপ্রতিরোধ্য ছিল।  খেয়াল নেই। দুপুর পেরিয়ে কখন সাঁঝ নেমেছে। সন্ধ্যার অন্ধকার বইয়ের পাতায় নামতেই, সম্বিৎ ফিরল।  তখন আটের দশক, বিগত শতাব্দীর। বিদ্যুতের আলো পৌঁছায়নি। কিন্তু বরাদ্দ হ্যারিকেনের আলোয়, ক্লাসের বই পড়ার নাম করে বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস সমগ্র নিয়ে বসলাম।
 “পথিক তুমি কি পথ হারাইয়াছ?” কপালকুণ্ডলার করা এই প্রশ্ন যেন উপন্যাসের নবকুমারের মত আমাকেও একই ভাবে বিদ্ধ করছিল, কারণ একই সঙ্গে পড়তে বসা আমার ছোট ভাই এবং আমার ছোট পিসিমা, ক্রমাগত আমার দিকে তির্যক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে যাচ্ছিল; আসলে ওদের নজর এড়িয়ে পড়ার কোনো সম্ভাবনাই ছিল না   তবে সেদিন বদান্যতা দেখিয়ে, তারা যে কেন সে খবর বাড়ি সুদ্ধু চাউর করেনি, সেটা বুঝলাম পরের দিন ভোরে।
যাই হোক, বইটি হাতে আসা ইস্তক ‘আনন্দমঠ’ পড়ার জন্য একেবারে মুখিয়ে ছিলাম, কারণ ততদিনে জেনে গিয়েছিলাম, স্কুলে যে প্রার্থনা সঙ্গীত গাওয়া হয় সেই বন্দেমাতরম গান,
 বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর এই উপন্যাসেই প্রথম লিখেছিলেন। তাই ‘দুর্গেশনন্দিনী’ বা ‘বিষবৃক্ষ’ ইত্যাদি আরও উপন্যাস ফেলে ‘আনন্দমঠ’ পড়া শুরু করলাম। বাংলা সাহিত্যে প্রথম নভেল লেখার কৃতিত্ব বঙ্কিমচন্দ্রের দিকে গেলেও তাঁর লেখা বাক্যগুলি তখনও - তথাকথিত তৎসম শব্দের ভিড় মুক্ত হতে পারে নি। আর সেটাই আমার বঙ্কিমচন্দ্র পড়ার মূল আকর্ষণ ছিল। ‘ফুল্লকুসুমিত দ্রুমদলশোভিনীম’ যে কি তুমুল হর্ষ উন্মাদনা জাগিয়ে তুলেছিল মনের মধ্যে তা বলে বোঝাতে পারবো ন। যদিও, হৃদয় নদীতে সে উত্তাল স্রোত আজও একইভাবে বহমান।
একাধিক সংযোজিত শব্দের সন্ধি বিচ্ছেদ করে তাদের মধ্যে সম্পর্কের রসায়ন অনুধাবন করার প্রয়াস, আমার কাছে কোনো অ্যাডভেঞ্চারে যাওয়ার থেকে কম ছিল না।
  কিশোর বয়সে আপাত খটমট এই সাহিত্যরস পানের ঔদ্ধত্য যে যথেষ্ট ধৃষ্টতার পরিচায়ক ছিল সে কথা জেনেও, বঙ্কিম উপন্যাস পড়ার সুবাদে একধরনের যুদ্ধজয় সুলভ অনুভুতি যেন আমাকে নিশ্চেষ্ট হতে দিচ্ছিল না কোনোভাবে।  বঙ্কিমীয় ধ্রুপদী সাহিত্য পড়ার মধ্য দিয়ে, অন্যাহ্য হলেও তথাকথিত সাহিত্য রস বোদ্ধা হয়ে ওঠার কৌলীন্য অর্জনের আকর্ষণ যেন, ভূতের মতো চেপে বসেছিল আমার মাথায়।
কাঁথি হাই স্কুলের অনতিদূরে একটি বিশাল পুকুর ছিল, অবশ্য আজও তার অস্তিত্ব বিদ্যমান, পুকুরটির নাম কৃষ্ণকান্তের পুকুর। পুকুর পাড়ের পাশ দিয়ে একটি রাস্তা সোজা চলে গেছে দক্ষিণে মাঠের দিকে, বাকি তিন দিক - কলা, বাঁশ গাছ ইত্যাদিতে ভরা। পুকুরটি খনন করেছিলেন কৃষ্ণকান্ত নামের স্থানীয় এক জমিদার, তারই নামানুসারে পুকুরের নাম। জায়গাটির নামও কৃষ্ণকান্তের আড়া বলে পরিচিত। ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট,  বঙ্কিম বাবুর বহু পঠিত উপন্যাস ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’ এ ছিল উক্ত জমিদারের ছায়া।  বাবার মুখে শুনেছিলাম সে কথা। তাই পড়া শুরু করলাম ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’। কিন্তু শেষ কি আর হয়!
পরের দিন ভোরে, মাস্টারমশাই নীলমাধব বাবু এসে পৌঁছালেন। গণিতে স্নাতকোত্তর।  চাকরি পাননি। গৃহ শিক্ষকতা করেন। খুব কড়া। পড়া না করে রাখলে বেত্রাঘাত অবশ্য প্রাপ্য ছিল।
যথারীতি, সাইকেলের বেল বাজতেই আমরা যে যার সতর্ক হয়ে, বই খাতা নিয়ে মনোযোগী ছাত্রের মত বসে রইলাম। দীর্ঘকায় নীলমাধব বাবু, সাধারণত পায়জামার ওপরে ফুল শার্ট পরে পড়াতে আসতেন। তা সেদিনও তার ব্যত্যয় হয় নি। তাঁর নিয়ম ছিল, এসেই পড়া ধরতেন। সেদিন আমাকে দিয়ে শুরু করলেন। “কি, অঙ্ক গুলো সব করেছিস তো? খাতা বের কর, দেখি তো…।”  
আমি তো অধোবদনে বসে আছি, মুখে টুঁ শব্দটি নেই। “কি হোল, দেখা!”
চুপ করে বসে থেকে, মাস্টারমশাইয়ে কথার উত্তর না দেওয়াটা ছিল আর একটা ধৃষ্টতা। কিন্তু আমি নাচার। বিরক্ত নীলমাধব বাবু এবার আমার ছোট পিসিমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, “কি হয়েছে ওর, কথা বলছে না!”
বাধ্য হয়ে পিসিমা এবার মুখ খুললেন, “স্যার, ও তো সারাদিন অন্য একটা বই নিয়ে পড়ছিল।" “অঙ্ক করবে কখন!”
“অন্য বই পড়ছিল, মানে?” নীলমাধব বাবুর ঠোঁটের কোনায় সরস জিঘাংসা। “মোটা একখানা বই, সারাদিন ওটা নিয়েই বসেছিল চিলেকোঠার ছাদে …!”
“কি বই?” স্যার এবার ধৈর্য হারালেন, কণ্ঠায় ঈষৎ কর্কশ স্বর।  “বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস সমগ্র!’ কাঁপা কাঁপা গলায় পিসিমা বলতেই, চমকে উঠলেন শ্যাম বর্ণ, নীলমাধব স্যার।
“অ্যাঁ… কি বললি, বঙ্কিমচন্দ্র?” রাগী স্যারের মুখে এবার আকর্ণ বিস্তৃত, পূর্ণ গাল হাঁসি। কোনো কথা বলছেন না। খালি আমাকে দেখে চলেছেন। আমরা সকলেই তটস্থ, এবার তিনি কি রিয়াকশন দেন এই ভেবে।
শেষে, পিঠে একখানা আস্ত থাবড়া মেরে বললেন, “বা!”
“আজকে, মাফ করে দিলাম তোকে!”
“স্যার, এখনও যে অনেক বাকি আছে শেষ হতে।”
সাহস করে এবার, স্যারের চোখের দিকে তাকালাম। “বই টি যতদিন না পুরো পড়া শেষ করছিস, ততদিন তোকে কোনো পড়া দেবো না!”

বঙ্কিমচন্দ্রে পূর্ণ জ্যোতি! 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

'জল পড়ে, পাতা নড়ে' ঃ রবীন্দ্রনাথ না বিদ্যাসাগরের লেখা?

জল পড়ে, পাতা নড়ে - সহজ অথচ অমোঘ এমন দুটি লাইন মনে হয় কোনো উপনিষদীয় ঋষির স্বর্গীয় কাব্য সিদ্ধির অনুপম ফসল ছাড়া কিছু হতে পারে না।  বৃষ্টিপাতের সঙ্গে অনিবার্য ভাবে উচ্চারিত হওয়া এই শ্লোক কেবল সৃষ্টির আপন খেয়ালেই রচিত হতে পারে। সেই কবে থেকে এর অনন্য স্বাদ মস্তিস্কের কোষে কোষে এক অদ্ভুত ভালোলাগার মোহ তৈরি করা শুরু করেছিল তা আজও অটুট এবং সমানভাবে সক্রিয় , মোহ ভঙ্গের নামই নেই। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত এর জাদুময় মোহপাশ থেকে মুক্ত হতে পারেন নি। যদিও রবীন্দ্রনাথই প্রথম এই দুটি লাইন লেখেন ‘জীবন স্মৃতি’ র পাতায়। মনে হয় স্রষ্টা যেন নিজেই তাঁর সৃষ্টির মহিমায় হতবাক হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু এখানে একটা টুইস্ট আছে। কারণ রবীন্দ্রনাথ এই দুটি লাইন লিখলেও লেখার শ্রেয় কিন্তু তিনি দিয়েছেন বিদ্যাসাগরকে। এখন প্রশ্ন, কেন! উত্তর - ভ্রান্তি সুখে। কিন্তু সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ‘জীবন স্মৃতি’ তে তাই দেখা গেল যতবার তিনি ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’ লিখেছেন ততবারই তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রেখেছেন। অন্য কারোর লেখা লিখলে তাকে উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে রাখাই দস্তুর। কিন্তু তাতে কি! শিশুবেলার মুগ্ধতা যেন কিছুতেই প্রশমিত হতে পারে...

রবীন্দ্রনাথের চোখে বিদ্যাসাগর এবং দুজনের প্রথম সাক্ষাৎ!

রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং যাকে আদিকবির আখ্যায় ভূষিত করেছেন, যার লেখা বইয়ের (বর্ণ পরিচয়) হাত ধরে তাঁর প্রথম পরিচয় বাংলা বর্ণ যোজনার সঙ্গে, মাত্র চার বছর বয়সে পড়া যার লেখার প্রভাব থেকে কোনোদিন পারেননি মুক্ত হতে, ৫১ বছর (১৯১২) বয়সে লেখা 'জীবন স্মৃতি' তে তাই যার লেখার কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেন ‘জল পড়ে, পাতা নড়ে’ র মত বাংলা কাব্যের ইতিহাসে চির কালজয়ী দুটি লাইন সেই ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়েছিল মেট্রোপলিটন স্কুলে।   ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর বিদ্যাসাগর তখন মেট্রোপলিটন স্কুলের সভাপতি আর সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামসর্বস্ব ভট্টাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথের সংস্কৃত ভাষার গৃহ শিক্ষক। রামসর্বস্ব পণ্ডিত ছোট্ট রবীন্দ্রনাথ কে ‘ম্যাকবেথে’র বাংলা অনুবাদ  করে শোনাতেন, আর তা শুনে বাংলায় লিখিত তর্জমা করতে হত রবীন্দ্রনাথকে। তর্জমা সম্পূর্ণ হলে তার গুনমান বিচার করতে রামসর্বস্ব ছাত্র রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে শরণাপন্ন হলেন বিদ্যাসাগরের কাছে। কেমন ছিল সেই প্রথম সাক্ষাৎ পর্ব! রবীন্দ্রনাথ তার আত্মজীবনী ‘জীবনস্মৃতি’ তে সে কথা লিখেছেন বিস্তারিত। ‘জীবন স্মৃতি’র ‘ঘরের পড়া’ অধ্যায়ে লেখা সে কাহ...

১৯৪৭ এর ১৫ই আগস্ট, কোথায় ছিলেন গান্ধীজী?

১৫০/বি বেলেঘাটা মেন রোড। শিয়ালদহ স্টেশন ও ই-এম বাইপাস এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন কারী মূল রাস্তা - বেলেঘাটা মেন রোড তথা সুরেশ চন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় রোডের ওপর পড়া এই বিশেষ ঠিকানা টি ভারতবর্ষের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে এক গৌরবময় স্মৃতির সাক্ষ্য বহন করছে । বিশেষ করে, প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের সময় আসন্ন হলে, এই ঠিকানার কথা স্মরণ না করে থাকা যা য় না। কারণ ১৯৪৭ এ গোটা দেশ যখন স্বাধীনতার আনন্দ উদযাপনে ব্যস্ত, বিশেষ করে রাজধানী দিল্লিতে স্বাধীনতা লাভের (১৫ ই আগস্ট) দিনটিকে স্মরনীয় করে রাখতে আয়োজিত হয়েছে অভূতপূর্ব রাজকীয় সমারোহের - যার শুভ সূচনা হয়েছে, ১৪ ই আগস্টের মধ্যরাতে; ১৫ তারিখ পদার্পণ করতেই দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরুর ঐতিহাসিক বক্তৃতা দিয়ে শুভারম্ভ হয়েছে স্বাধীনতা দিবস পালনের মহা নির্ঘণ্ট। এই উচ্ছ্বাস যদিও কাঙ্ক্ষিতই ছিল। কারণ দীর্ঘ ২০০ বছরের পরাধীনতার কৃষ্ণ কাল অতিক্রম করার পরেই দেশবাসীর কাছে এসে পৌঁছেছিল সে বিরল মাহেন্দ্রক্ষণ। সমাগত হয়েছিল সেই মহা মুহূর্ত যখন প্রায় শত বর্ষ ধরে চলা স্বাধীনতাকামী মহাযজ্ঞে মুক্তিলাভের সিদ্ধি স্পর্শ করছিল তার চূড়ান্ত শিখর দেশ। কিন্তু এই যজ...